আদর্শটাকে আপাতত তালাবদ্ধ করে রেখেছি...
ব্লগে মাসুম ভাইকে দেখতাম মুভি নিয়ে পোষ্ট দেন। তার ব্লগ খেয়াল করলে ভাল ভাল মুভির সন্ধান পাওয়া যায়, তারপর দেখলাম আরও অনেকেই আসলে ব্লগে মুভি নিয়ে পোষ্ট দেন, হাসান বিপুল , দারাশিকো , ফাহমিদুল হক , দুরন্ত , মেহরাব আরও অনেকে। সিনেমাখোর নামে চমৎকার একটা গ্রুপও হয়েছে। সেখানে ভীষন ভাল ভাল পোষ্ট। ভয়ংকর ভাল লাগছে আসলে এসব দেখে।
আমি নিজে ওতটা সিনেমাখোর নই। সিনেমা দেখার সময় করে উঠতে পারি না তেমন একটা ছাইপাশ নানা হাবিজাবি করে। তবুও মাঝে মাঝে একটা দুটা সপ্তাহান্তে দেখার চেষ্টা করি, মাঝে মাঝে অনেক ভাল মুভি দেখা হয়ে যায়, মাথাটা কিছুক্ষন ঝিম ঝিম করে। মনে হয় দুনিয়ায় কতকিছুই না হয়ে যাচ্ছে তার কটা খবরই বা রাখছি, দেখছি। মানুষ কেমনে বানায় এসব!
সে যাই হোক, চিন্তা করছি মাঝে মাঝে নিজের দেখা কিছু মুভি নিয়ে একটু গপশপ করব ব্লগে পোষ্ট দিয়ে।
কারনটা সহজ, ব্লগই এমন একমাত্র জায়গা, যেখানে আমি আজাইরা কিছু বলতে গেলেও কেউ মানা করবে না। তাই বলতে যাচ্ছি ছাইপাশ।
এই সেদিন দেখলাম ফ্রান্সিস ট্রুফোর দ্যা ৪০০ ব্লোজ। এটি ফ্রেন্চ এই চিত্রপরিচালকের ফরাসী মুভির ইংরেজি নাম। আসল নামটা এত খটমটে যে বলতে গিয়ে দাত ভেঙে যাবে।
ট্রুফোর প্রথম ছবি যা সমালোচকদের দৃষ্টি দারুন ভাবে কেড়েছিল। আধুনিক চলচিত্রে এ মুভি বেশ আলোরনই তুলেছিল। এই মুভিতেই ট্রুফো তৈরি করেন তার বিখ্যাত সিনেমাটিক চরিত্র এনটইন ডনিয়েল। এই চরিত্র নিয়ে ট্রুফো ২০ বছর ধরে মুভি বানিয়েছেন। সিনেমার ইতিহাসে বন্ড, স্পাইডারম্যান এ জাতীয় সুপারহিরো ছাড়া এমন সিরিয়াল মুভি বিরল।
৪০০ ব্লোজ মুভিতে এনটন ডনিয়েল একজন ১২/১৩ বছর বয়সের কিশোর, যে কিনা প্যারিসের একটা ছোট্ট জীর্নশীর্ণ এপার্টমেন্টে মা আর সৎবাবার সাথে বসবাস করে, যে কিনা তার মায়ের বিয়ের আগে অবিবাহিত মায়ের গর্ভে জন্মেছিল যে কারনে তার মা তাকে ওতটা পছন্দ করে না, তার মা চায় নি সে জন্মাক। তার সৎবাবা তার সাথে ভাল ব্যবহার করলেও অভাবের সংসারে তার প্রতি আসলে স্বাভাবিক কিশোরদের মত আচরন হয় না। তাকে শুতে হয় তাদের এপার্টমেন্টের বারান্দায় স্লিপিংব্যাগের ভেতরে।
স্কুলেও তার একই দশা। তার ক্লাসটিচার তাকে কোন কারন ছাড়াই গালমন্দ করে, তার দোষ ধরে এবং হাস্যকর বানিয়ে ফেলে।
এইসমস্ত কারনে ডনিয়েল তার বন্ধু রেনের সাথে স্কুল পালিয়ে ঘুরে বেড়ায়, সিনেমা দেখে রাইডে চড়ে, স্কুল ফাকি দিয়ে ডনিয়েল একদিন দেখতে পায় তার মা অফিস কলিগের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। সবকিছু তার মনকে পরিবার সমাজের প্রতি বিতশ্রদ্ধ করে তোলে। একদিন ডনিয়েল ও তার বন্ধু রেনে ডনিয়েলের সৎবাবার অফিস থেকে টাইপরাইটার চুরি করে, পরে তা বিক্রি করতে না পেরে ফেরত রাখতে গিয়ে ধরা পড়ে। তার সৎবাবা তাকে পুলিশ স্টেশনে দিয়ে আসে। সেখান থেকে তাকে সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
তার বাবা তাকে আর পরিবারে নিতে অস্বীকার করে। তার মা কতৃপক্ষের কাছে একটিই অনুরোধ করে তাকে যেন সমুদ্রের কাছের কোন ওয়ার্ক ক্যাম্পে দেয়া হয়, কেননা ডনিয়েল কখনও সমুদ্র দেখেনি।
পুরো মুভিটি দেখতে দেখতে ডনিয়েলের প্রতি সবার মায়া জন্মাবেই। একটি কিশোরের ভাগ্যে যা ঘটা উচিত ছিল না তাই ঘটে তার জীবনে। মুভিটির শেষ হয়ে গেলেও দর্শকের মনে এর পরবর্তী সিকুয়েল গুলো দেখার ইচ্ছে জাগবেই।
ট্রুফো পরবর্তী বিশ বছরে এনটন ডনিয়েল সিরিজের আরও চারটি ফিল্ম তৈরি করেছেন। এগুলো হল এনটইন এন্ড কলেইট, স্টোলেন কিসেস, বেড এন্ড বোরড এবং লাভ অন দ্যা রান।
প্রত্যেকটি মুভিরই ফ্রেন্চ নাম আছে এত কটমটে গুলো উল্লেখ করলাম না। সাবটাইটেল সহ দেখতে মুভিগুলোর স্বাদ এতটুকুও কমে না। যারা ৪০০ ব্লোজ বা স্টোলেন কিসেস দেখবেন তারা টুফ্রোর আর সব মুভি গুলো দেখার জন্য উদগ্রীব হবেন তাতে কোন সন্দেহ নাই।
তবে আমার মনে হয় ৪০০ ব্লোজ থেকেই ট্রুফো দেখা শুরু করা উচিত।
মুভিটি দেখতে পারেন এখান থেকে
অথবা টরেন্ট লিংক ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।