munirshamim@gmail.com
সংবাদ: ছাত্রলীগ সিলেট মেডিকেল কলেজের দু'টি ছাত্রী নিবাস থেকে সাবেক প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের নাম মুছে দিয়ে নতুন নাম করণ করেছে (তথ্য সূত্র: শেষ পৃষ্ঠা, দ্যা ডেইলী স্টার, ১৯ জানুয়ারি, ২০০৯) ।
না, ছাত্রলীগ তাদের মুরুব্বী সংগঠনের কোন নেতা, মন্ত্রীর নামে নতুন নামকরণ করেন নি। পরিবর্তে বেছে নিয়েছেন দু’জন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব। একজন বিশ্ব মুসলিমের কাছে অতি সম্মানিত এবং শ্রদ্ধার। তিনি বিবি আয়েশা।
অন্যজন শাহ পরান। তিনি বিশ্ব মুসলিমের কাছে নন, তবে উপমহাদেশ, বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেটে আধ্যাত্ত্বিক পীর হিসেবে পরিচিত, সম্মানিত। সিলেটে তার মাজার রয়েছে।
লেখার শুরুতে একটা কৈফিয়তা দেয়া জরুরি। নেতার নামে সড়ক, ভবন, ছাত্রাবাস এর নাম করণ, সরকার পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় পূর্ব নাম মুছে নতুন নাম করণের যে বহুল চর্চিত আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিদ্যামন রয়েছে সে প্রক্রিয়ায় সিলেট মেডিকেল কলেজের দু’টি ছাত্রী নিবাসের পূর্ব নামকরণ যাচিত প্রক্রিয়ায় নাকি অযাচিত প্রক্রিয়ায় হয়েছে সেটি এ লেখার বিষয় নয়।
এ বিষয়ে বিস্তর বিতর্ক হতে পারে। বিতর্ক করার সুযোগ রয়েছে জেনেও অন্তত এ পোস্টটিতে আমি সে বিষয়ে মনযোগ দিতে চাই না। বরং আমি ছাত্র লীগের ধর্মাশ্রিত কৌশলটি নিয়ে কিঞ্চিত আলোকপাত করতে আগ্রহী।
ডেইলী স্টার এর প্রতিবেদন থেকে যতটুকু জেনেছি তাতে এটি নিশ্চিত যে, সিলেট মেডিকেল কলেজের ছাত্রী নিবাস দু’টি নতুন নাম করণ কর্তৃপক্ষ করেনি। এটি করেছে ছাত্র লীগ।
এবং ছাত্র সংগঠন হিসেবে এটি ছাত্র লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমের মধ্যে পড়ে না। সুতরাং বলা যায়, ছাত্র লীগ এটি করেছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর চুড়ান্ত ক্ষমতা চর্চার বহি:প্রকাশ হিসেবে। কিন্তু এ ক্ষমতা চর্চায় সাধারণ নাগরিক বিশেষ করে সিলেট বাসির মৌন সমর্থন পাবার প্রত্যাশাও তারা ছাড়ে নি। ফলে কৌশল হিসেবে তারা দলীয় কোন নেতার নাম ব্যবহার না করে দু’জন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ত্ব কে বেছে নিয়েছে। হজরত আয়েশা বা শাহ পরাণ এর নাম বসিয়ে দিলে সাধারণ সিলেটবাসী বিষয়টি সমর্থন না করলেও প্রকাশ্যে আপত্তি করবে না এ রকম একটি বিশ্বাস ছাত্রলীগ কর্মীদের মনে কাজ করেছে বলে সিদ্ধান্ত টানলে অন্যায় হবে বলে মনে হয় না।
এমনকি নাম পরিবর্তন নিয়ে প্রতিবাদ করলেও নতুন নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে মত প্রকাশ ও দাবি উঠাবার ব্যাপারে ছাত্রদল এবং বিএনপিও বেকায়দায় পড়বে। সুতরাং দু'জন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে গভীর মমতা ও আন্তরিকাবোধ থেকে ছাত্রলীগ কর্মীরা এটি করেছে এ রকম মনে করার কোন কারণ নেই। তাছাড়া মেডিকেল কলেজের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী নিবাসের নামকরণ কোন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বে নামে নাম দেয়ার ব্যাপারে ছাত্রলীগের মতো সংগঠনের কঠোর আপত্তি থাকবার কথা। কারন ঐ ছাত্রী নিবাসগুলোতে নিশ্চই অন্য আরও ধর্মের অনুসারী ছাত্রীরাও থাকবে। অতএব এটিও রাজনীতিতে ধর্মের বহুল মতলবী ব্যবহারের একটি আপাতত সফল উদাহরণ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মের মতলবী ব্যবহার নতুন নয়, অনেক পুরনো। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় এর ভূরী ভূরী উদাহরণ রযেছে। বিগত নির্বাচনে জামাত-বিএনপি ইসলাম ধর্মকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করেছে। খুব অযাচিতভাবে। এমনকি বিএনপির নির্বাচনী মেনিফেস্টো প্রণেতাদের একজন প্রকাশ্যে বলেছেন নির্বাচন নাকি ইসলাম ও জাতীয়তাবাদের সাথে ভারত ও বাইরের শক্তির প্রতি অনুগত শক্তির নির্বাচন।
কিন্তু সে ধরনের প্রচার কাজে লাগেনি। সাধারণ জনগণ ঐসব প্রচারণা গ্রহণ করেনি। জনগণ তাদের পর্যবেক্ষণ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বিএনপি-জামাত জোটের বিপক্ষে রায় দিতে দিয়ে একমাত্র বিদ্যমান বিকল্প হিসেবে আ’লীগ বা মহাজোট কে বেছে নিয়েছে।
আ'লীগ ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়।
তাদের দলীয় লিখিত গঠনতন্ত্রে সেটি বলাও আছে। ছাত্রলীগও প্রচার-প্রচারণায় ধর্মনিরপেক্ষ ছাত্রসংগঠন হিসেবে নিজেদের তুলে ধরার চেষ্টা করে। আবার সে ছাত্রলীগই যখন নিজেদের অযাচিত রাজনৈতিক আচরণ এবং পেশীশক্তির চর্চাকে হালালীকরণের প্রক্রিয়া হিসেবে ধর্মের আশ্রয় নেয়, ধর্ম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের মনে মনোজাগতিক প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে তখন এটি শুধু ছাত্রলীগের দলীয় ইমেজকে বিতর্কিত করে না, একই সাথে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির পক্ষে যে নিরন্তর হেটে চলার প্রয়াস তাকেও হুমকীর সম্মুখিন করে তোলে। নাগরিক হিসেবে আমাদের সব চেয়ে বড় ভয়টা সেখানে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।