সুমন রহমান এবং আরজুর পোস্ট পড়লাম, এরপর আরো কিছু পোস্ট/কমেন্ট পড়ে রিফাত হাসানের পোস্ট গুম হওয়া বিষয়ে কিছু বলা কর্তব্য মনে করছি।
প্রথমে অন্যদের কথা খানিক টানি। পোস্ট গায়েব প্রসঙ্গে সুমন বলছেন, সামহোয়ার 'একমত একমত' মার্কা ব্লগে পরিনত হইছে। খুব আন্তরিক ভাবেই রিফাতের গায়েব পোস্ট ফেরত দেবার দাবিও জানাইছেন আশা না হারায়ে। একই ব্লগের কমেন্টে রিফাতের বিরুদ্ধে বিতর্কে অবতীর্ন হবার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় সামহোয়ারকে দুষেছেন আবদুর রাজ্জাক শিপন।
অবিচার শুধু রিফাতের উপর না, তারও সাথে। একইভাবে আরো পাঠক যারা আগ্রহ ভরে অপেক্ষা করেছেন তাদের সাথেও। এটা 'গুম' হওয়া মনে করছেন জাতেমাতাল। মুসতাইন ব্লগীয় ব্যাপারের বাইরে এসে সামহোয়ারের রাজনৈতিক মেটামরফসিসের ইঙ্গিত দিছেন, ইসরাঈলী গণহত্যার বিরোধীতাই পোস্ট ডিলিটের মূল কারণ বলে তিনি মনে করছেন। একই বিষয়ে অন্য এক পোস্টে আরজু মনে করেন মডারেটররাই যত নস্টের গোড়া।
আরো অনেকেই একই সুরে কথা কইছেন। মজার ব্যাপার ইনাদের কাউরেই রিফাতের সাথে একমত একমত করতে দেখি নাই, যুদ্ধপরাধের বিচারের বিরোধীতা করতে দেখি নাই, তারপরও সামহোয়ারের এহেন আচরণের বিরোধীতা করছেন তারা। এদের মধ্যে খোমেনীর পজিশনটা একটু অন্যরকম, কারণ সামহোয়ারকে ফ্যাসিবাদের সমার্থক বলে ভাবলেও, এর বিরোধীতাকে উনি ভদ্রলোকি প্রতিবাদ মনে করেন। বেশীরভাগ ব্লগার যখন সামহোয়ারের কাছে ভালো কিছু এখনও আশা করেন সেখানে তাকে খুব হতাশ মনে হচ্ছে। সামহোয়ারের শিকড় চেনার চেস্টা করলেও শেষ চেষ্টাটা আমাদের দিক থেকে কি হওয়া উচিৎ এখানে খোমেনীর তেমন কোন কথা নাই।
এখানেই আমার কথা বলা শুরু। যার যেই পলিটিক্সই থাকুক না কেন একটা ব্লগে সবাই ব্লগিংই শুধু করে। ব্লগ-ব্লগার-ব্লগিং, এটা একটা সাধারণ দিক। এখানে ব্যতিক্রম সামহোয়ার কর্তৃপক্ষ, তারা নিয়ন্ত্রণকারী। ক্ষমতা তার হাতেই যখন, তখন সেখানে তার পলিটিক্সের ক্ষমতা প্রদর্শন যেকোন ভাবেই থাকতে পারে- এমনটা ভাবা যৌক্তিক হলেও, তার আগেও কথা আছে।
এই মহা ক্ষমতাবান কর্তৃপক্ষও এসব যখন করে তখন একটা কিছুর বরাত(!) তাকে দিতে হয়। বরাত হাওয়াই হলেও তাকে ছাড়া চলে না। বলাই বাহুল্য সামহোয়ারের হাওয়াই বরাত হলো তার নীতিমালা, রাস্ট্রের কাছে যেমন সংবিধান। যত যাই হোক এই বরাতে ইমান এনেই সামহোয়ার নামক সিসটেমের ভিতরে আমাদের যত কায়কারবার। সিসটেমের কন্ট্রোলও আমাদের আদর করুক, চুমা দিক বা যতই কোপাক না কেন, নিয়মের কথা বলেই তাকে তা করতে হবে।
পাঠক খেয়াল করবেন নিয়ম ভালো না খারাপ এই আলাপ আমি করছিনা। ক্ষমতা দিয়ে যা ইচ্ছা তা করলেও বরাতের কথা বলতেই হবে এমনকি নতুন বরাত তৈরী করে হলেও বলতে হবে। সামহোয়ারসহ যে কোন সিসটেমের কনট্রাডিকশন ধরতে এই দিকটাকে আলগা করা খুব দরকারি মনে করি আমি, যদিও অন্যান্য দিকও গুরুত্বপূর্ণ। এটা না বুঝলে সিসটেমের বর্ডার হিসেবে আমাদের কর্তব্য কী সেটা ফকফকা হবে না।
এখানে ঘটনা পরিস্কার।
রিফাত হাসানের পোস্ট গুম হওয়া। কারণ খুঁজতে দেখলাম সামহোয়ারের মডারেটররা অথবা সামহোয়ারের জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ফ্যাসিস্ট বা সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতি এমনকি ইদানিং ঘটে যাওয়া একমত একমত মার্কা কোন মেটামরফসিসের কথা বলছেন সবাই। কিন্তু নিক রেজিস্ট্রশনের সময় বুঝে বা অবুঝে আমরা প্রথমেই 'একমত' হয়েই যার যার বারামখানার চাবিটা সামহোয়ারের কাছে তুলে দিয়ে আসছি আমরা সবাই। যেই বেহেশতের স্বপ্ন সামহোয়ার দেখাইছে তাতে প্রথমেই সবার সম্মতি খোদাই করা হইছে। সামহোয়ারের ফ্যাসিজমের মেওয়ায় তো ভাই আমাদের সবার শেয়ার আছে তাইলে দেখা যাচ্ছে।
তাইলে এখন কি সব কথা বৃথা? তাইলে আবার কিসের মেটামরফসিস অথবা নতুন করে একমত, আগেই তো সব ঠিকঠাক। এখন কি তাইলে বসে বসে সব মেনে নেওয়া? এইখানে বুঝা যায় 'ছাগু' আর 'অছাগু' সবাই সমান। আবার আসব এইখানটায়।
এখন আপনারা একখান জিনিস দেখেন-
সামহোয়ার রিফাতের উপর কোপটা দিছে যেই নিয়মের বরাত দিয়া সেটা, আরজুর ব্লগে রিফাতের কমেন্ট থেকে পাওয়া, হলো:
"3j. posts which are denying, opposing, ridiculing or twisting facts about the freedom and sovereignty, history or religion of bangladesh or any other recognized nation may be deleted and the privileges of the blogger withdrawn temporarily or permanently"
আবার তাদের পয়লা কথা হলো:
1a. Free voice:
somewhere in…blog was created as a platform where general people can share their ideas, opinion, creativity and so on. We support freedom of thought and expression no matter how radical or conservative it maybe, as long as it does not interfere with the law of the nation.
তাহলে যা দাড়ায় তা হলো, আমরা একমত হইছি এমন কিছুর সাপেক্ষে যার নিজের মধ্যেই বিশাল বিরোধিতা। তাহলে সামহোয়ারের জাজমেন্ট যেমন কনট্রাডিকটরি, এর সাথে আমাদের অরিজিনাল সিন অর্থাৎ সর্বাগ্রে একমত হওয়াটাও অর্থহীন।
কেননা দুই পরস্পর বিরোধী প্রস্তাবে একসাথে আমাদের একমত হওয়া অর্থহীন। কাজেই ব্লগারদের ব্লগিং আর ব্লগের মডারেশনের সত্যিকার দার্শনিক ভিত্তি হলো একটা ঘোড়ার ডিম। এইকথা হলো সকল ব্লগিং/মডারেশন বিষয়ে সকল সমালোচনার পূর্বগামী। তাইলে এই সত্য একটু মনে রাখলে একটা মজা ঘটে। আমরা যখন রিফাতের পোস্ট গুম হওয়ার বিচার করি তখন বলি কই রিফাততো 3j নিয়ম তো ভঙ্গ করে নাই, কিন্ত্তু এটা কখনও ভাবি না 3j নিয়মটারই বা ন্যায্যতা কোথায়।
মডুদের এসব ভাবার টাইম নাই। তারা ব্লগারদের মু্ক্ত ব্লগিং এর প্লাটফর্মের
স্বপন দেখানর কাজে ব্যস্ত থাকেন আর মোছামুছি করেন। অহংকারে মাটিতে তাদের পা পরে না। 'নিরাপদ', 'সাধারন' এইসব ক্যাটাগরী চালু রেখে শুরুতেই সিসটেম হওয়া ব্লগারদের খাতনা স্কীম অনন্তকালের জন্য জারী রাখা হইছে। সামহোয়ার যদি অনিরাপদ ব্লগ হয় তাইলে তার সাথে ব্লগারদের সম্পর্ক ডায়ালজ্যিকাল না হয়ে হয়ে যায় ডায়াবলিকাল।
তারপরও সত্যটা হইলো ঐ যে বল্লাম- ঘোড়ার ডিম।
এখন শর্ষের ভিতরেই যে ভুত তারে তাড়াই কেমনে? সামহোয়ারের অহংকারে ছাই পড়লেও, তাকেও একটা উপায় বাতলে দেয়া উচিৎ। এক কাজ করেন, 1a. সহ অন্যান্য একই রকম নিয়ম গুলিও মুছে ফেলেন। ভেজাল ফ্যাসিস্ট হয়ে কী লাভ? অরিজিনাল ফ্যাসিস্ট হন। তাইলে পোস্ট গুম খুন করার জন্য আর কোন নিয়মের বরাত আপনাদের দিতে হবে না।
আর যদি উল্টা দৃষ্টান্ত দেখাইতে চান তাইলে রিফাতেরটা সহ সকল গুম হওয়া পোস্ট ফেরৎ দেন। আর ব্লগারদের বলেন নতুন নীতিমালা খসরা তৈরী করতে- আপনারাও অংশ নেন। ব্লগার-ব্লগিং-ব্লগ সম্পর্ক একমাত্র পারে ঘোড়ার ডিম প্যারাডক্স মুক্ত হতে আর মুছে যাবে সকল আদিপাপ।
ততদিন গোপন ফ্যাসিজমের সাথে শুরুতে যতই একমত হন ব্লগারকুল, সত্যকথা চালায়া যান। কোনকিছু মেনে নেয়ারও দরকার নাই, অপেক্ষা করারও দরকার নাই।
অন্যান্য সকল প্যারাডক্সের কথা প্রকাশ করেন। তাতে ব্যান খেতে পারেন হয়ত, কিন্ত্তু ডায়াবলিকাল কর্তৃপক্ষের মত আদিপাপ বা ঘোড়ার ডিমের বোঝা হতে মুক্ত হতে পারবেন অবশ্যই।
পুনশ্চ: @সামহোয়াইন:এত কথার পরও যদি রিফাতের গুম হওয়া পোস্ট ফেরৎ না দেন তাইলে israelblog একেবারে বন্ধ করেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।