বার বার মনে পড়ে সোনালী সেই দিন গুলো...
সকালে মাকে এক দফা বিরক্ত করা রকির রুটিন ওয়ার্ক বলা চলে। প্রতিদিন কোন-না কোন আবদার করে বসবে। বিরক্ত হয়ে মা দাত কামড়াবে। অবশ্য এর আগের রুটিন ওয়ার্কটা মাকে এতোটা পিড়া দেয় না। মায়ের সাথে ঘূম ভাঙ্গার পর দাত ব্রাশ করার সময় প্রতিদিনই টুথপেস্ট খেয়ে ফেলে।
পরোক্ষনেই বলবে মা পেষ্ট দাও পেষ্ট বেসিনে পড়ে গেছে। দু’বার তিন বার খাওয়ার পর বাধ্য হয়ে মা নিজে ব্রাশ করিয়ে দিবেন। তারপর মার সাথে কিচেনে বসে রুটি বানানো দেখবে। কি দিয়ে রুটি খাবে তার ম্যানু ঠিক করবে। আজ রকি গো ধরেছে প্রতিদিন রুটি খেতে ভালো লাগে না আজ পরোটা খাবো।
মা বাধ্য হয়ে তার জন্য আলাদা করে তেলে ভেজে দেয় পরোটা। অর্ধেক পরোটা না খেতেই বলে আমার কি দিয়ে যেন পরোটা খেতে মন চায়।
মাঃ কি দিয়ে খেতে মন চায় ?
রকিঃ তাইতো ভাবছি। কিন্তু মনে করতে পারছি না।
মাঃ ডিম, ভাজি, হালুয়া, জেলি, মাখন, মাংস।
রকিঃ না, মনে করতে পারছি না।
মা মনে পড়েছে, ইয়ে দিয়ে খেতে মন চায়।
মাঃ ইয়ে দিয়ে মানে কি ?
রকিঃ ইয়ে দিয়ে মানে ইয়ে দিয়ে।
কিছুক্ষন ভেবে আর বের করতে পারছেনা সে আসলে কি বলতে চায় বা কি বুঝাতে চায়।
মাঃ দেখ রকি এখন বিরক্ত করিস না।
কি খেতে মন চায় বল না হয় চুপ করে বস। আমাকে আমার কাজ করতে দে। নাস্তা বানানোর পর আমার অনেক কাজ আছে। তোর বাবা ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাবে। আমাকে বিরক্ত করিস না।
ছোট হলেও তার অপমান বোধ বেশ প্রবল। সে বুঝে কে তাকে ভালো বললো কে মন্দ বললো। মুখ ফুলিয়ে চলে গেল শোবার ঘরে। বাবার গা ঘেসে সাপের মতো ফুস ফুস করছে রকি। বাবাকে ডাকার সাহস পাচ্ছে না।
বাবা জাগলে মায়ের নামে কমপ্লিন করবে। সাপের মতো আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গে বাবার। চোখ কচলাতে কচলাতে দেখে ছেলে মুখ ফুলিয়ে আছে।
বাবাঃ কি হয়েছে আব্বু, এই সাত সকালে কে বকলো তোমাকে?
রকিঃ (চোখে পানি ছেড়ে দেয়) কাদো কাদো গলায় বলে, মা।
বাবাঃ কেন কি হয়েছে।
আর কথা বলে না। ছেলেকে কোলে নিয়ে কিচেনে যায় রকির বাবা। স্ত্রীর কাছে জানতে চায় কি হয়েছে। রকির মা জানান শুধু শুধু বিরক্ত করে। আজকাল বেশি বিরক্ত শুরু করেছে ছেলেটা।
কথা বললে কথা শোনেনা।
বাবা অফিসে যাওয়ার পর আবার বিরক্ত করছে মাকে। কোন কাজ করতে দেবে না। বিরক্ত হয়ে মা কষে থাপ্পর মারে রকিরে। চিৎকার করে পুরো বাড়ী জাগিয়ে তুলে রকি।
ভাগনের চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যায় টিপুর। কি হয়েছে এই সাত সকালে রুম থেকে বেরিয়ে জিগ্যেস করে টিপু। ভাগনেকে কোলে নিয়ে এটা দেয় সেটা দেয় তার কান্না থামে না। বাচ্চাদের কান্না পছন্দ না টিপু। তার কথা বাচ্চারা হাসবে খেলবে।
যৌক্তিক কারন ছাড়া কাঁদবে কেন ? অনেক কিছু দেয়ার পরও ভাগনের কান্না না থামায় প্রচন্ড বিরক্ত টিপু। বিরক্ত হয়ে বলে কিচ্ছু খাবিনা তবে কি ঘোড়ার ডিম খাবি ? এবার যেন কিছু একটা খুজে পেল রকি। হয়তো তার চাওয়াটা এমনই ছিলো। রকি কান্না থামিয়ে বলে হ, মামা আমি ঘোড়ার ডিম খাবো। এবার চক্ষু চড়ক গাছ টিপু এবং রকির মায়ের।
এক জন অন্যজনের দিকে তাকাচ্ছে। কি হবে তার উত্তর, তা জানা নেই রকির মা কিংবা মামার। কিছুক্ষন নিঃশব্দ কেটে গেল এইখানটায়।
রকিঃ ও মামা, আমি ঘোড়ার ডিম খাবো।
রকির মাঃ (হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায়) এইবার বোঝ ঠেলা।
তুই কেন বললি এই কথা, এইবার তুই সামলা।
রকিকে কোল থেকে ফেলে দেয়ার উপক্রম টিপুর। তারপরও ভাবছে এবার কি করা যায়। বিভিন্ন খেলনা কিনে দেয়ার আশ্বাস দেয়। চিপস, জুস কিনে দেয়ার লোভ দেখায়।
কিন্তু কিছুতেই কোন কাজ হয় না। কিচেনে নিয়ে গিয়ে র্যাক থেকে একটা ডিম নিয়ে বলে নে এটা ঘোড়ার ডিম।
রকিঃ আমাকে বোকা পাইছো না, এইটা মুরগির ডিম।
ফ্রিজ থেকে আর একটা বড় সাইজের ডিম বের করে দেয়। সেটাতেও সন্তুষ্ট নয় সে বলে এটা হাসের ডিম।
এবার পরে মহা ফাপরে। কি করা যায় ভাবছে। এর মধ্যে আবার কান্না শুরু করে রকি। আর বলতে থাকে মামা আমি ঘোড়ার ডিম খাবো। রকির মা বলে ঘোড়ার ডিম এবার কোত্থোকে আনবি এনে দে, আমার পোলারে কইছোস কেন।
তুই নিয়ে যা, যেখান থেকে পারিস ঘোড়ার ডিম খাওয়া। সাড়ে তিন বছরের ভাগনের কাছে নিরূপায় টিপু। বুদ্ধি যেন কাজ করছে না, কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা। হঠাৎ লাফিয়ে উঠে বলে চল বাবা তোকে ঘোরার ডিম দিচ্ছি। তার রুমে নিয়ে গিয়ে ব্যাগ থেকে লাল তুলনামূলক বড় আকৃতির পাহাড়ী একটা ফল বের করে বলে নে বাবা তোর জন্য পাহাড় থেকে এনছি।
লাল ঘোড়ার ডিম। কান্না থামিয়ে রকি হেসে উঠে। প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, মামা এটা সত্যি সত্যি ঘোড়ার ডিমতো। জ্বী বাবা এটা সত্যি সত্যি ঘোড়ার ডিম, জবাব দেয় টিপু।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।