যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি গতকালই ঘোষনা করা হয়ে ছিলো আজ মানববন্ধন হবে। মুল উদ্যোগটা নিয়েছে ইয়াং বাংলাদেশী টরন্টোনিয়ান নামের একটা সংগঠন। আলোচনার সময় নিশ্চয় ওরা চিন্তা করেছিলো উইকডেতে হয়তো জনসমাগম কত হতে পারে - কিন্তু তারুন্য মানে কোন নিয়ম - উইকডেতেই হবে মানব বন্ধন - কারন শাহবাগের প্রানের ছোঁয়ায় আন্দোলিত এই তরুনরা। কিন্তু আজ যে তুষার ঝড়ের সতর্কবার্তা আবহাওয়া দফতর দিয়ে রেখেছে - তা হয়তো তরুনরা লক্ষ্য করেনি - করার কথাও না। কারন ওদের চোখে তখন শাহবাগের বিশাল জনসমাবেশ - মনে বাজছে উদ্দীপনার গান আর রক্ত গরম হওয়া শ্লোগানগুলো।
ঠিক চারটা তুষার ঝড় শুরু হলো - ভাবলাম হয়তো প্রোগ্রাম বাতিল হয়ে গেছে। কারন আমরা যখন কোন প্রোগ্রাম রাখি - সেইটা সাধারনত উইকএন্ডের বিকেলে রাখি - সংসার জীবনের শত চাহিদার কিছু পুরন করেই যাই সেই প্রোগ্রামগুলোতে। কিন্তু তরুনদের জন্যে সময় কোন বিষয়ই না। তাই দেখলাম একদল তরুন চলে এসেছে - হাতে প্লাকার্ড - কারো মাথায় বাংলাদেশের পতাকা বাঁধা - কারো বা বুকে বেঁধে রেখেছে বাংলাদেশের পতাকা। এসেছেন তরুনীরাও - সাথে এসেছে মা তার ছেলেকে নিয়ে - মা ছেলে প্রচন্ড শীতে জড়াজড়ি করে দুই্টা প্লাকার্ড নিয়ে দাড়িয়ে আছে প্রচন্ড শীতের বাতাসে।
তাপমাত্রা মনে হয় ছিলো হিমাংকের নীচে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস ( অনুভুত হচ্ছিলো মাইনাস ১৩ ডিগ্রীর মতো ) । এসেছে মুক্তিযোদ্ধা, এসেছে সাংবাদিক এসেছে ছোট বাচ্চারও।
এতো প্রতিকূল আবহাওয়ায় দাড়িয়ে সবাই সমবেত কন্ঠে গাইছিলেন দেশের গান - বুকে ঝুলানো প্লাকার্ডে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবী। ব্যস্ত ডেনফোর্ত এভিনিউ দিয়ে দ্রুত ধাবমান গাড়ীগুলো থেকে হর্ন দিয়ে সমর্থন জানাচ্ছিলো অচেনা নাগরিকরা। এক সময় মনে হচ্ছিলো আমরা সবাই শাহবাগের জনস্রোতের মাঝে মিশে গেছি।
আয়োজক তরুনদের জন্যে রইল শুভেচ্ছা এবং সংগ্রামী অভিনন্দন। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর যুদ্ধাপরাধীর বিচারের মাধ্যমে আমরা একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি - মুক্তিযোদ্ধারা বয়োবৃদ্ধ হয়ে গেছেন - অনেকেই জীবনের তাগিদে নানান ভাবে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। বিশেষ করে ৭৫ এর পর বৈরী পরিবেশে মুক্তিযুদ্ধাদের মনোবল অনেক ক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু তরুন প্রজন্মের এই এগিয়ে আসা এবং রীলে রেইসের মতো ব্যটনটা সময় মতোই নিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যে প্রজন্মান্তর হচ্ছে - তা দেখে নিশ্চয় মুক্তিসংগ্রামী বীরের প্রশান্তি লাভ করবেন - আর শহীদদের আত্না নিশ্চয় শান্তি লাভ করবে এই ভেবে যে - তাঁদের জীবন দেওয়া বৃথা যায়নি - শত চেষ্টা করেও পরাজিত শক্তি মুক্তিযুদ্ধের গৌরবকে ভুলিয়ে দিতে পারেনি। আজ শাহবাগ থেকে টরন্টো পর্যন্ত নতুন প্রজন্ম চিৎকার করে জানিয়ে দিচ্ছে - কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই - যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসী চাই।
বাংলার মাটিতে রাজাকারদের ঠাঁই নাই। চমৎকার এই দৃশ্য দেখে চোখ জলে ভরে উঠে - যখন দেখি একজন তরুন প্রচন্ড গৌরবের সাথে মুক্তিযুদ্ধকে ধারন করে মিছিলে যাচ্ছে - রাজাকারদের সংগঠনগুলো হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে যে সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরী করেছে তার বিপরীতে এই উদ্দীপ্ত তরুনদের হূদয় থেকে উৎসরিত শ্লোগান যে কত গভীর আবেদন সৃষ্টি করে বলার মতো ভাষা থাকে না।
আর শাহবাগের জমায়েতের সাথীদের জন্যে নিশ্চয় টরন্টোর শীতার্ত মানববন্ধনের উত্তাপটা অনুভুত হবো। টরন্টোর মানব বন্ধনের চেতনাটাও যেন শাহবাগের মুল চেতনার সাথে মিলে মিশে এক হয়ে একটা বিরাট কন্ঠস্বরে পরিসত হয় - যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের চুড়ান্ত শাস্তি চাই - বাংলার মাটিতে রাজাকারদের ঠাঁই নেই - স্বাধীনতার শত্রুদের বাংলার মাটিতে ঠাঁই নেই।
টরন্টোর মানববন্ধনের ছবি:
ফেইস বুকের লিংক ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।