তাকে আমি আখ্যায়িত করছি” চাষা”বলে। মাটির টানে,দেশের টানে মমতার পরশে গভীর ভাবে আত্নতৃপ্ত হয়ে বিনিদ্রিত রজনী অতিবাহিত করেছেন তিনি মোহনগঞ্জবাসীর সংস্পর্শে। উপলক্ষ একটাই যে কোন মূল্যে “শিয়ালজানি”খালকে করতে হবে নব যৌবনে উন্মোচন। কাঠ ফাটা ঘর্মাক্ত তপ্ত রৌদ্রে রৌদ্রস্নানে গা ভাসিয়ে নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে কঠিন মাটির বুকে শক্ত হাতে লাঙ্গলের ফলা চালিয়ে মাটির বুক চিরে যেভাবে চাষী বের করে আনে বিপুল ফসলের সম্ভার ঠিক তেমনি ভাবে কাজী আবেদ হোসেনের চরণ দু’খানি রজনীর পর রজনী চষে বেড়িয়েছে পুরো মোহনগঞ্জের গ্রামের পর গ্রাম জুড়ে ঘরে- ঘরে ,দুয়ারে -দুয়ারে। এই কঠিন কার্যক্রম তখনই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় যখন সত্যিকার অর্থে হৃদয়ের গভীরে গভীরভাবে মাটির টান অনুভূত হয়।
সত্যিকার অর্থে তিনি মাটির মানুষ,মাঠের মানুষ। তার কর্মময় জীবনও মাঠ কেন্দ্রিক তাই মাঠকে আর মাঠের মানুষকে তিনি জয় করলেন অতি সহজে নিজ দক্ষতায়। মানুষকে” খাল” খনন কাজে উদ্বুদ্ধ করতে তিনি যে সকল মৌলিক গান,কবিতা আর নাটক প্রচারের প্রচারণা চালিয়ে ছিলেন তা জনমনে বেশ প্রভাব ফেলল। জনগণ তার সুশীতল ছায়ায় অনুপ্রবেশিত হয়ে খাল খননে অনুপ্রাণিত হল। অক্লান্ত পরিশ্রমকে সঠিক সম্ভাবনায় পৌঁছাতে এবার তিনি দ্বিধাহীন,সংশয়হীন।
এবার তিনি গ্রামবাসীকে বললেন নির্দিষ্ট একটা দিন ঠিক করে আমরা সম্মিলিত হয়ে খাল খনন করব কিন্তু খাল জুড়ে রয়েছে “কংকন”সিনেমা হল,সুপার মার্কেট,সিনেমা হল সংলগ্ন ৮-১০ টি দোকান,বাড়িঘর এগুলো স্থান্তরিত না করলে আমাদের কার্যক্রম ব্যাহত হবে এটা যেমন ঠিক তেমনি এগুলো স্থান্তরিত করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। গ্রামবাসীর মনোবল যাতে অক্ষুন্ন থাকে সে দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বললেন ,আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন দেখি কি করা যায়?কেউ কেউ বলতে লাগলেন প্রভাবশালী লোকেরা নিজেদের স্বার্থ ব্যতিরেকে নিশ্চয়ই খালের কথা ভাববেন না?এমন সময় তিনি গ্রামবাসীকে উদ্দেশ্য করে বললেন,”শিয়ালজানির গর্বের শির খর্ব করেছে যারা,তাদের আমি ভয় পাই না ,হোক না তাদের হাত যতই লম্বা”। সভা শেষ করে যখন তিনি ভাবছিলেন কি করা যায়? তখন তার কাছে একটি ফোন এল। আমি জাতীয় এক পত্রিকায় পড়েছি ফোনটি ছিল এমন-”বাঘের মুখের ভেতর হাত দিয়ে কলিজা চেপে ধরলে হাতের যেরূপ অবস্থা হয়,শিয়ালজানি খালে হাত দিলে হাতের অবস্থা অনুরূপ হবে। ”তিনি নির্ভীক তাই ভয়কে জয় করে চায়ের আহ্বান জানালেন সিনেমা হল কর্তৃপক্ষকে।
তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন-"সত্যিকার অর্থে ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে এত সঞ্চয় আর সম্পদ দিয়ে আসলে কি হয়?সেই তো কালের স্রোতে বৃদ্ধ হওয়া,মায়া-মমতার বাঁধন শিথিল করে ব্যস্ত রোদসীতে নিঃসঙ্গ নিথর হওয়া,এক সময় চিরতরে পরপারে চলে যাওয়া,ক'বছর পর আলোচনারও ওপারে হারিয়ে যাওয়া"। সন্তান-সন্ততি,নিকট আত্নীয়-স্বজন আর কিছু পরিচিত জন ছাড়া কি বা থাকে ধরণীর বুকে?ক'দিনই বা আপনার স্মৃতিটুকু টানবে তাদের?বরং কিছু যদি থাকে তা থাকবে ত্যাগে। দেশের জন্য কিছু করলে, দেশের মানুষের জন্যে কিছু করলে তা আপনাকে অমর করে রাখবে যুগ যুগ ধরে। তার এই কথা তারা মন দিয়ে শুনছিলেন এবং কিছু না বলে চলে গেলেন। তার কথায় এমনই যাদু ছিল যে ,তারা কাজী আবেদ হোসেনকে অবাক করে দিয়ে নিজেদের উদ্যেগে নিজেদের অর্থ ব্যয়ে [অর্থের পরিমাণ ২,০০,০০০টাকা] ৮টি দোকানসহ সিনেমা হলের অবৈধ অংশ ভেঙ্গে ফেলল।
এই ঘটনা সবার হৃদয়কে স্পর্শ করল। গ্রামবাসী অবাক দৃষ্টিতে কৃতজ্ঞতার সাথে কাজী আবেদ হোসেনের দিকে তাকাচ্ছিল। এই ঘটনা পড়ে আমি নিজেও নির্বাক । ঘটনাটা লিখার সময় আমার চোখ বারবার ভিজে আসছিল। আমার মনে হচ্ছে “কাজী আবেদ হোসেন সেই পুরুষ যাকে কোন বিশেষণে ভূষিত করার ক্ষমতা আমার কলমেরও নেই”।
কেননা সকল বিশেষণের ঊর্ধ্বে তার অবস্থান তার কর্মই তার প্রমান।
(চলবে)
বিঃদ্রঃ[তথ্যসূত্র লেখণীর শেষপর্বে প্রকাশ হবে। ]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।