দূনীতি আজ একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ। যে কোন সমস্যার কারণ এবং সমাধান এই দুনীতিতেই যেন নিহিত। অবশ্যই আমিও দুনীতির পক্ষে নই। আমি এ নিমূলের পক্ষপাতী। কিন্তু আমরা সমস্যা বা খটকা বাধে তখন যখন মাত্র একটি ক্ষেত্রেই চিহ্নিত করা হয় এবং স্টিম রোলার চালানো করা হয়।
আর এই ক্ষেত্রে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সেবা প্রতিষ্ঠান বা সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলো। এ সংস্থাগুলোতে দূনীতি আছে যেমন সত্য তেমনি সত্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ এ দুনীতি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালণ করছে। দূনীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহের উপরই খরগ নেমে এসেছে। শুধিচারনের অজুহাত তুলে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেগুলো বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। এটি একটি অনেক দিন যাবত চলমান প্রক্রিয়া।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো দুনীতি বন্ধে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করা হলেও বেসরকারী ক্ষেত্রে কেন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। আর বিদেশী কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রেও চোখ বন্ধ করা হচ্ছে।
বিষয়টি আরো পরিষ্কার করার জন্য সমপ্রতি একটি উদাহরণ দেয়া প্রয়োজন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায় ভিওআইপি সাথে জড়িত থাকার জন্য এশিয়ার টেল নেটওয়ার্ক নামক একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে, অপর দিকে গ্রামীণ, সিটিসেল, একটেলের মতো কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ভিওআইপির প্রমান থাকা স্বত্বেও তাদের জরিমানা করা হয়েছে। পূর্বে যা বলেছিলাম অনেক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দুনীতিমুক্ত এবং সেবার মান বৃদ্ধির নামে বেসরকারী করার পূর্বধাপ হিসেবে কোম্পানি করা হয়েছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছে।
আদমীর মতো প্রতিষ্ঠানে যেখান লক্ষ লোকের জীবিকা ছিল, সেই প্রতিষ্ঠানকে দুনীতি ও লোকসানী খাত হিসেবে চিহ্নিত করে বন্ধ করা হয়েছে। অথচ মোবাইল কোম্পনিগুলোর বিরুদ্ধে ভিওআইপির মাধ্যমে অর্থ প্রচারের অভিযোগ থাকা স্বত্বেও, শুধুমাত্র জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু এই বৈষম্য কেন? কোন স্বার্থে? জনগনের প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংশ বা ব্যক্তির হাতে তুলে দেয়া হয় দুনীতির অভিযোগে অপর দিকে বেসরকারী কোম্পানিগুলোর হাজার কোটি টাকার দুনীতিকে নামমাত্র টাকা জরিমানা দিয়ে বৈধ করা হয়। বিষয়টি সত্যিই বিস্ময়কর।
একটি বিষয়ে আমাদের সকলের নজর দেয়া প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দূনীতি করা হয় ব্যক্তি পর্যায়ে।
কিন্তু বেসরকারী খাতে দূনীতি করার হয় কোম্পানির মাধ্যমে। যেমন মোবাইল কোম্পানি বা তেল কোম্পানিগুলো যে দুনীতি করেছে তা সংঘবদ্ধ এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ। আর এ অপরাধের শাসত্দি কোনভাবেই জরিমানা হতে পারে না। যদি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দুনীতিমুক্ত করার শাসত্দি হিসেবে বেসরকারীকরন হয়, বেসরকারী কোম্পানিগুলোর শাসত্দি লাইসেন্স বাতিল ও রাষ্ট্রীয়করণ হওয়া প্রয়োজন।
ঋণপ্রদানকারী সংস্থাগুলো কেন রাষ্ট্রীয়খাতের দূনীতিকে বেশি বেশি প্রচার করে এবং দূনীতি রোধে অর্থ প্রদান করে তা খুব সহজেই পরিষ্কার বোঝা যায়।
যে সকল খাতে দুনীতি রোধের নামে শুধিচালন করে এ সকল খাতেই বিদেশী কোম্পানির ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ তৈরি এবং পরবর্তীতে ঋণ মাধ্যমে এ সকল খাতের সংস্কার। সকল অর্থই পরিশোধিত হয় জনগনের টাকা। কিন্তু এ সকল কিছু করার পর নামমাত্র মুল্যে ব্যবসা করে কোম্পানিগুলো। উন্নয়নশীল সকল দেশকেই এ ভাগ্য বরন করতে হয়।
ঋণ প্রদানের মাধ্যমে বিদেশী কোম্পানিগুলোর ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরি একটি অগ্রগামী পদক্ষেপ মাত্র। রাষ্ট্রীয় সম্পদগুলো উন্নয়নের মাধ্যমে জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠা বা সেবা প্রদান এ ক্ষেত্রে প্রধান্য পায়।
ঋণপ্রদানকারী তথা দাতা গোষ্ঠীর রাষ্ট্রীয়খাতের দূনীতিকে উজ্বীবিত করার কারণ আমাদের জানা হলেও। একটি বিস্ময়ের বিষয় দেশী ও আনত্দর্জাতিক দূনীতি বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোও বেসরকারী খাতের দুনীতি বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালণ করে। বিশেষ করে মোবাইল ও তেল কোম্পানিগুলোর বহুল আলোচিত দুনীতির বিষয়ে কোন ধরনের কোন মনত্দব্য করেনি।
কিন্তু কেন ? এ সকল প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের ভূমিকাও একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। তবে কি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংশের জন্য সংঘবদ্ধ প্রয়াস চালনা করা হচ্ছে? এ প্রশ্ন অবানত্দর নয়। রাষ্ট্রীয়খাতগুলোর উন্নয়নের কথা না বলে শুধু কেন দুনীতিকে প্রধান্য দিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা করা হয। আবার যে সকল খাতে মূল দূনীতি হয় বা যে সকল বিষয়গুলোকে প্রধান্য দেয়া হয় না। যেমন স্বাস্থ্যখাতে দুনীতি হয় উপরের পর্যায়ে যেমন উপকরণ ক্রয় বা অবকাঠামো সংস্কার।
অথচ ডাক্তার সময় মতো আসে না বা ঔষধ ঠিক মতো পাওয়া যাচ্ছে না এই বিষয়গুলোকে দুনীতি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এই বিষয়গুলো দুনীতির হিসেবে চিহ্নিত না করে বরং অব্যবস্থাপনা হিসেবে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। বিমানের দূনীতি বিষয়ে অনেক সমলোচনা করা হয়েছে। বিমানকে উন্নয়নের নামে কোম্পানি করা হয়েছে এবং কয়েক হাজার লোক েবাধ্যতামূলক অবসরের নামে চাকরিচূ্যত করা হয়েছে। সমপ্রতি ভোজ্যতেল আমদানির ক্ষেত্রে পাচটি বেসরকারী ব্যাংকের দূনীতির অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
কিন্তু দুনীতি বিরোধী সংস্থাগুলো নিশ্চুপ। বিদেশী এবং বেসরকারী ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত সারচার্জ, মোবাইল কোম্পানিগুলোর অনৈতিক বিল বা বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে এ সংস্থাগুলোর ভূমিকা সত্যিই বিস্ময়ের বিষয়। রাষ্ট্রীয় সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ থাকলেও, বেসরকারী খাতের বিষয়ে নীরব ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু কেন? রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি ঋণপ্রদানকারী সংস্থা এবং দুনীতি বিরোধী সংস্থাগুলোর কার্যক্রম এবং বেসরকারী খাতের প্রতি তাদের উদাসীনতা বিভিন্ন সন্দেহের সৃষ্টি করে। তবে কি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাষ্ট্রের হাত হতে ছাড়িয়ে নিতে তাদের অবস্থান?
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এই দেশের জনগনের কষ্টের অর্থে নির্মিত।
এই প্রতিষ্ঠানের সংস্থাগুলোর সংস্কার/উন্নয়নের নােেম অহেতুক যে ঋণ নেওয়া হয় তাও পরিশোধ করতে হয় জনগনকে। সরকারকে ব্যবস্থাপক হিসেবে এই সংস্থাগুলোকে পরিচালনার জন্য একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে দায়িত্ব প্রদান করা হয। কিন্তু সরকার জনগনের কথা না শুনে ঋণপ্রদানকারী সংস্থার পরামর্শে বেসরকারী করা হয়। জনগনের কষ্টের অর্জিত সম্পদরে ভোগ করে কোম্পানিগুলো। জনগনকে আবার কোম্পানি হতে সেবা ক্রয় করতে হয়।
আর এই হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা। জনগনের কষ্ট অর্জিত অর্থের লাভ নিয়ে যায় কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু এ অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। দুনীতির দোহাই তুলে পক্ষপাতিত্বমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারী করার জন্য সকল পদক্ষেপ বন্ধ করার দাবি করা প্রয়োজন। দেশের সুশীল সমাজ, মিডিয়া এবং সাধারন জনগনের প্রশ্ন করা প্রয়োজন এ সকল ঋণ প্রদানকারী সংস্থা এবং পক্ষপাতিত্বমূলক দুনীতি বিরোধী সংস্থাগুলোর কার্যক্রম নিয়ে।
আসলেই তাদের এ ভূমিকা উদ্দেশ্য কি?
এ রাষ্ট্র আমাদে,র দূনীতি বিরোধী সংস্থাগুলোর সুচক তৈরি করবে, ঋণপ্রদানকারী সংস্থাগুলো ঋনের ক্ষেত্র তৈরি করবে। কিন্তু মানুষের অধিকার বা সেবা মান বৃদ্ধি তাদের দিয়ে অদৌ হবে না। কারণ বিগত দিনের তাদের পক্ষপাতিত্বমূলক কার্যক্রম তাই আবাস দেয়্। তাই এদেশের মানুষকে ভাবতে হবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিভাবে জনগনের সেবা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে বেসরকারীকরণ কোন সমাধান নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।