আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরান ঢাকার বিরানি, স্টার হোটেল, আর কিছু হাবিজাবি...

পুরা ফাউল পাবলিক

পুরান ঢাকার বিরানীর কথা লোকমুখে অনেক শুনেছি। কিন্তু চেখে দেখা হয় নি। যখনকার কথা বলছি তখন আমি লেভেল - ১,টার্ম- ২ তে পড়ি। আমি আর আমার বন্ধু রিফাত মিলে আরেক বন্ধু শাবাব কে ধরলাম "গত টার্ম এ ত ভালই রেজাল্ট করলি কিন্তু এখনো তো খাওয়াইলি না, দেখা যাবে যে পরের টার্ম এ ল্যাগ খাইয়ে বইসে আসিস। " তো পরের টার্ম এ ল্যাগ খাওয়ার ভয়েই হোক আর যে কারনেই হোক শাবাব রাজি হইল খাওয়াইতে।

বলল যে এমন জায়গায় খাওয়াবো যেখানে আগে খাস নাই। ঠিক আছে চল। আমি আবার তখন 'হাইজিনিক কন্ডিশন নিয়ে কিঞ্চত খুতখুতে ছিলাম (এখন অবশ্য এ জিনিস টা বলতে গেলে নাই ই )। তো আমি রিফাত আর শাবাব রওনা দিলাম পুরান ঢাকার উদ্দেশ্যে। গন্তব্যঃ হোটেল সুপার, জয়কালি মন্দির।

আমি তো একটু চিন্তিত যে না জানি কি অবস্থা হয় হোটেল এর। যাবার পথে রাস্তায় একটা ভাগাড় পড়ল, গন্ধে তো মনে হল পেটের নাড়ি , ভুড়ি , মুখে ভাতের সময় যা খেয়েছিলাম সব এ বের হয়ে আসবে। তো অবশেষে পৌছালাম হোটেল সুপার এ। নাহ , যেরকম মনে করেছিলাম তার থেকে অনেক ভাল অবস্থা, বেশ ভাল হোটেল। কাচ্চি বিরানীর অর্ডার করা হল।

কিছুক্ষন পরে চলে এল বিরানী। চমৎকার ঘ্রান, মুখে দিয়ে অনুভব করলাম এতদিন দুনিয়ার কত স্বাদ, আহ্লাদ থেকে বঞ্চিত ছিলাম। দুনিয়ার এই স্বাদ আহ্লাদ চব্য, চোষ্য , লেহ্য, পেয় সকল উপায়েই উপভগ করলাম। ইট ওয়াজ রিয়ালি গুড। ব্লগের শিরোনাম এ স্টার হটেল এর কথা বলা হলেও সেটা নিয়ে এখনো কিছু বলা হয় নি।

সুপার এর ঘটনার কিছুদিন পরেই আবার আমরা তিনজন খেতে গেলাম ঠাটারি বাজার এর হোটেল স্টার এ। এদের বিশার ব্যাবসা। ধানমন্ডি তে স্টার হোটেল,বেকারী, ২ টা কাবাব ঘর, আর পুরান ঢাকায় আদি দোকান তো আছেই। ষাটের দশক থেকে এদের ব্যাবসা। স্টার এর কাচ্চি বিরানী টাও অসাধারন।

যদিও রিসেন্ট টাইম এ দাম টা বেশী রাখে , মান টা মনে হয় আগের থেকে একটু ড্রপ করেছে। তবে বুয়েট এ পড়ে আর স্টার এ খায় নাই এরকম পাবলিক মনে হয় কম এ আছে। আমরাই অনেক সময় আমাদের স্যারদের কেও দেখেছি দল বেধে খেতে আসতে এখানে। কাচ্চি ছাড়াও পরোটা / নান এর সাথে চিকেন ঝাল ফ্রাই / খাসির রেজালা এই কম্বিনেশন টাও জোস। কয়দিন আগে আমি আর আমার এক দোস্ত ৭০ টাকা দিয়ে পুরা লাঞ্চ করে ফেলসি এই আইটেম দিয়ে।

স্টার এর রূপচাঁদা মাছ টা ও বেশ ভাল। লেভেল - ১,টার্ম - ২ থেকে যে বিরানী খাওয়ার 'সিলসিলা' শুরু হয়েছিল সেটা মোটামুটি লেভেল - ২, টার্ম-২ পর্যন্ত একদম কোপাইয়ে চলে। অধিকাংশ সময়ে আমার খেতে যাবার পার্টনার ছিল শাবাব। তখন তো টিউশনি করতাম সেজন্য টাকার চিন্তা খুব একটা করতাম না। তবে রেগুলার বেসিস এ খাবার দাবার এর জন্য আমার ভুড়ির একটা পলিনমিয়াল রেট এ রাইজ ঘটে।

তো সেজন্য লেভেল - ৩, টার্ম - ১ থেকে খাবার দাবার এ একটু লাগাম দিতে হল। তখন অবশ্য আবিষ্কার হল যে লালবাগ চৌরাস্তার কাছে একটা দোকান হয়েছে, "নান্না মিয়ার শাহী মোরগ পোলাউ"(এটা হল নক্ল নান্না, আসল নান্নার দোকান হল বেচারাম দেউড়ী, জেলখানার কাছে), বেশ ভালই সস্তা। ৫৫ টাকায় কাচ্চি পাওয়া যেত(এখন সেটা ৬৫ টাকা), টেস্ট ও ছিল জোস। তবে আসল নান্নার কথা না বললে পোস্ট টা অপুর্ন থেকে যাবে। জেলখানা থেকে একটু সামনে আসল হাজি নান্না মিয়ার শাহী মোরগ পোলাও এর দোকান।

এদের মোরগ পোলাও টা একটু গ্রেভী হয়, এটাই এর প্রধান বৈশিষ্ট। জিনিসটা এক কথার অসাধারন। আমি আর আমার এক দোস্ত এর বান্দা কাস্টমার। যত ব্যাস্ততাই থাকুক না কেন চান্স পাইলেই চলে যাই খাইতে। আজকাল অবশ্য মোটামুটি ফকিরের বাদশাহ হয়ে গেছি, তারপরও ভাল খাবার মিস করি না।

আফটার অল বাদশাহ তো, মনটা বড়ই উদার । হাজির বিরানীর কথা অনেক শুনেছি, অনেক আগ্রহ নিয়ে আমি আর আমার দোস্ত খেতে গিয়েছিলাম কিন্তু জিনিস টা ভাল লাগে নাই এক্টুও। এটা নিয়ে বেশি কিছু বলার নাই। বিরানীর কথা বলতে গেলে আরেকটা নাম না বললেই নয়। কলাবাগান এর 'বিক্রমপুর বিরানী হাউজ'।

ছোটোখাট একটা দোকান, খুব যে ভিড় হয় তাও না, কিন্তু এদের বিরানী টা অসাধারন। আমার দোস্তকে অনেক ধন্যবাদ, ও বলেছিল দেখেই এখানে খাওয়া স্টার্ট করেছিলাম। একদম পারফেক্ট কাচ্চি, মাংশটা একটু ভাজা ভাজা, চাল টাও ঠিক মতো সিদ্ধ হওয়া, সব কিছুর প্রপরশন এ ঠিক মত। থ্যাঙ্কস দোস্ত আইডিয়া টা দেবার জন্য। অনেক তো খাবার দাবার এর ঘটনা বলা হল।

এবার এ রিলেটেড এ একটু অন্য ধাচের ঘটনা। ১৪ ফেব্রুইয়ারী, ২০০৭, বিশ্ব ভালবাসা দিবস। সবার মনেই একটু রোমান্টিক রোমান্টিক ভাব। চারিদিকে ফুল ফল পাখির কলকাকলি। এর মধ্যে আমরা কতিপয় গে(??) বন্ধু(৮ জন মনে হয়) মিলে ঠিক করলাম আজকে "ক্যাসিনো রয়্যাল" দেখতে যাব স্টার সিনেপ্লেক্স এ।

আমি আর শাবাব গেলাম টিকেট কিনতে। কিনার পরে মনে হল যে স্টার এ ইকটু ঢু মাইরে গেলে হয় মনে হয়। পকেট এ টাকা বলতে টিকিট কিনার পরে মানুষজন কে ফেরত দেয়ার জন্য যে টাকা সেটা। তো সেই ভরসাতেই গেলাম স্টার এ। দুই জন এ ভালই খাইলাম।

বিল দেয়ার সময় দেখলাম আমার পকেট এর টাকা গুলা আমার উপরে রাগ কইরে কই জানি চইলে গেসে, কিছু খুচরা টাকা ছাড়া কিছুই নাই। শাবাব কে বললাম যে দোস্ত কাহিনী ঘটসে। কাহিনী শুনে তো শাবাব ও টাশকি। শেষে আমি আর শাবাব আমাদের কাছে যা খুচরা ছিল সব একসাথে করে দেখি যে এখনো ১০ টাকা কম পড়ে। ওইখানকার মামা রা মনে হয় আমাদের অবস্থা আন্দাজ করতে পেরেছিল, তারা আমাদের কাছ থেকে অই টাকা নিয়ে বলল যে মামা হইসে আর লাগবে না এখন যান।

তো কোনরকমে পার হয়ে বের হইলাম আর আবিষ্কার করলাম যে বুয়েট এ ফেরত যাবার কোন টাকা নাই। একদম ন্যাংটা ফকির। হাবিব কে ফোন দিয়ে বললাম ফে দোস্ত টাকা নাই হলে আইসে ভাড়া দিতে হবে। তো হল এ যেয়ে ভাড়া দেয়া হল। মুভি দেখতে গেলাম ভান্দারির টাকায়, আর বাসায় গেলাম রিফাতের টাকায়।

আল্লাহ বাচাইসে যে থালা বাসন ধোয়া লাগে নাই। আমি অবশ্য মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম থালা বাটি ধোয়ার ..শাবাব আর আমার ভ্যালেন্টাইন্স ডে এর ডেটিং টা একেবারে মাঠে মারা গেল.....ড্যাম.... খাওয়া দাওয়া নিয়ে আরও কথা পরে কোন এক সময় বলব।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।