পরিদৃশ্যমান সত্তা
গেওর্গে আব্বাস
... ঐ নদীতীরে প্রতিবছর কবিতার মেলা হয়, হলুদিয়া কবিতা উৎসব। বাংলাদেশ সহ কলকাতা, করিমগঞ্জ, গৌহাটীর অনেকেই মেলায় সম্মিলিত হন। ভীনদেশী ভীনভাষী বেশ কিছু কবি-শিল্পীদেরও আগ্রহ আছে হলুদিয়া উৎসবে। ঠিক এই মাসে নয়, পরের মাসের মাঝামাঝি সময় বের হবে অনুষ্টুপ, অষ্টরাগ ইত্যাদি। কবিকণ্ঠ বের হয় উনচল্লিশ বছর ধরে।
বন্ধুবর ব্রজ (কবি ব্রজকুমার সরকার) আরও বললেন--- জলপাইগুঁড়ি, সে-তো বহুদূর। ব্রজকুমারের সব কথা মুহুর্তে ম্লান হয়ে গেলে শূন্যতায় ঝুলে থাকলো কেবল একটিমাত্র শব্দ ‘বহুদূর।
আমার জানতে ইচ্ছে হল না আর--- জেলা দূর্গাপুর হতে কৃষ্ণনগরের দূরত্ব ঠিক কতটুকু। আপাততঃ কৃষ্ণনগরের কবি সুবোধ সরকার-এর কথা ভুলে গিয়ে চলে যাই অন্য এক দৃশ্যান্তরে---ঘন কুয়াশার মাঠ; দূর্গাপুরের ঐ মাঠের প্রান্তসীমার দাঁড়িয়ে রয়েছে আমাদের প্রাচীন পৃথিবীর কোনো এক কৃষ্ণ কিশোর, যার চক্ষুদ্বয় কেবলই ডানা ঝাপটায় অলীভ বৃক্ষের নিচে, পাতায়-পাতায়। প্রিয় ব্রজকুমার কি জানেন, বালকের চোখের সামনে জেলা জলপাইগুঁড়ির দূরত্বে সাতশত কিলোমিটার কুয়াশা কি রকম স্থির হয়ে আছে।
প্রিয় তনুশ্রী (কবি তনুশ্রী পাল) থাকেন জলপাইগুড়িতে। তাদের পাঠশালার মাঠে, তৃণখন্ডের ওপর দাঁড়ালেই দেখা যায় বাঁ দিকে তিস্তা নদী; উত্তরে কাঞ্চনজঙ্ঘা, হিমালয় আর কদমতলা; ঘাড় বাঁকিয়ে দক্ষিণে তাকালেই করলা নদী। আর জিরাফের মত ঘাড় উঁচু করলেই তো মিটিমিটি দেখা যাবে হরিয়ানা-পাঞ্জাব। আর আমার কেবল জানতে ইচ্ছে করে এরকমই কি বহুদূর দেখে নেয় তারা প্রিয় গৌতম (কবি গৌতম গুহ রায়) আরোহিনী (কবি আরোহিনী মুখার্জি)...
দূর্গাপুর হতে চন্দ্রিমার বাড়ি(কবি চন্দ্রিমা দত্ত) আরো দূর, বহুদূর... প্রায় দেড় হাজার কিলোমটিার দূরত্বে করিমগঞ্জের কোনো এক সরকারী দীঘিতে একটা মাত্র লাল পদ্ম ফুটে আছে। চন্দ্রিমা, সে বড় পুস্পবিলাসিনী; আর তারই সর্বপ্রিয় মন্দিরা পাল (কথাশিল্পী মন্দিরা পাল) মহারাষ্ট্রে মরুঝড়ে, বিজ্ঞান-পল্লীতে একা।
তাকে আমার শুভেচ্ছা পৌঁছে দিয়ো চন্দ্র।
প্রিয় ব্রজকুমার, সে-এক নিধুয়া বান্ধব প্রায়শ অনুযোগ করে--- আমি কেন পত্র লিখি না। আমার হস্তলেখা তার বড় প্রিয়। অথচ তাকেই লিখতে চাই---তোমার কবিতা একদিন পৃথিবীর প্রাচীনতম অন্ধকারে ছড়িয়ে দিক সুমেরুপ্রভা। আর পোড়া বনভূমের উপর দিয়ে নিঃশব্দে উড়ে যাক লাল পালকযুক্ত থ্রাশ ও অন্যান্য উড়াল।
আমি চাই বা না চাই, ধূমময় তোমার কবিতায় যেনো শুনা যায় পৃথিবীর মৃত আত্মার পুনধ্বনি আর চিরদুঃখের রাতে শুধু তোমার কবিতা শুনে সেই একটা মাত্র টিকটিকি, পুরনো পলেস্তার দেহে বিঁধে-থাকা, যেনো লেজ খসিয়ে দেয় সন্তর্পনে। আর আমি কেবল ভাবিত হব আর তোমাকে হয়তো জিজ্ঞেসও করব ঐ টিকটিকি শুধুই কি দেহ হতে দেহ খসিয়ে দিল না কি অবশিষ্ট ভালবাসাটুকু...
প্রিয় ব্রজকুমার, প্রার্থনা শব্দটির সঙ্গে আমার তেমন কোনো সখ্য নেই তারপরও এ আমার মনোবাঞ্ছা--- শুধু কবিরাই যেন তন্দ্রালু থাকে ত্রিভূজ আলোয়, তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য-অন্ধকারে; তারা যেনো শ্মশান ও গোরস্থান হতে কুড়িয়ে আনে মানুষের সবুজ ছায়া। বন্ধুরা যেন বুদ্ধিমান, চালাক, অর্ধপন্ডিত না হয়, পামর ও মিস্ত্রিবিদ্যক না হয়। বন্ধুরা যেন কবি হয়। আর তো জানি চন্দ্রালোকে অথবা ঘোর অমাবশ্যায় যে-সকল দূরপাল্লার পাখিরা সমুদ্রের উপর দিয়ে উড়তে শুরু করেছিল, তাহাদের দিকচিহ্নহীন উড়াল-পথে দূরের নক্ষত্ররাজি ইঙ্গিত করে করে পাখিদের পৌঁছে দেয় দূরের উপত্যকায়।
নক্ষত্রের ইশারা মানুষ বুঝতে পারে না; মানুষ কবি হয়ে-উঠলে ধারণ করে পাখির পরাণ। অতঃপর যাত্রা শুরু হয় কবিতার পথে।
তনুশ্রী পাল দূরে যাবে। একদিন খুব নিভৃতে নিমাই সন্ন্যাসীর মতো গভীর নিশিতে চলে যাবে হিমালয়ে। ঐখানে গাড়ওয়াল পল্লীর পাশে ফুটে আছে কবিতা ও ব্রহ্মকমল।
হিমালয় কতদূর তনুশ্রী!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।