বুধবারের এই হত্যাকাণ্ডের জন্যও তালেবান গোষ্ঠীকেই দায়ী করছে আফগানিস্তান পুলিশ। পাকতিতা রাজ্যে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে সুস্মিতাকে (৪৯) হত্যা করা হয় বলে বিবিসি জানিয়েছে।
কলকাতার মেয়ে সুস্মিতা ১৯৭৯ সালে আফগান ব্যবসায়ী জানবাজ খানকে বিয়ে করে আফগানিস্তানে পাড়ি জমান।
১৯৯৩ সালে দেশটিতে তালেবানি শাসন শুরুর পর তাদের রোষানলে পড়েন সুস্মিতা। পরে বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালিয়ে দুই বছর পর পালিয়ে ভারতে যেতে পেরেছিলেন তিনি।
এই অভিজ্ঞতা নিয়ে বাঙালি এই নারী ‘এ কাবলিওয়ালাস বেঙ্গলি ওয়াইফ’ শিরোনামের একটি স্মৃতিকথা লেখেন, যা ভারতে সর্বোচ্চ বিক্রিত বইয়ের তালিকায় স্থান পায়।
বইটি অবলম্বনে ২০০৩ সালে বলিউডে ‘এসকেপ ফ্রম তালেবান’ নামের একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়, যাতে অভিনয় করেন মনীষা কৈরালা।
তালেবান শাসনের অবসানের পর সম্প্রতি সুস্মিতা আবার আফগানিস্তানে তার স্বামীর কাছে ফিরে গিয়েছিলেন। স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজও করছিলেন তিনি।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, তালেবান জঙ্গিরা পাততিকা প্রদেশের রাজধানী কারানায় বাড়িতে ঢুকে স্বামীসহ পরিবারের লোকজনের হাত-পা বেঁধে রেখে সুস্মিতাকে নিয়ে যায়।
পরে গুলি চালিয়ে হত্যার পর একটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে লাশ ফেলে যায়।
পালিয়ে আসার স্মৃতি
সুস্মিতা ভারতের আউটলুক সাময়িকীতে এক লেখায় আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তার দুঃসহ স্মৃতি তুলে ধরেছিলেন।
সেখানে তিনি লেখেন, ৯৩ সালে তালেবানরা ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত আফগানিস্তানের মাটিতে তার জীবন-যাপন ছিল সহনীয়।
কিন্তু তালেবান শাসকরা এসে ‘ভ্রষ্ট নারী’ আখ্যা দিয়ে তার একমাত্র ওষুধের দোকানটি বন্ধ করে দেয়।
১৯৯৪ সালের সুস্মিতা একবার পালিয়ে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতবাসের কাছে গিয়েছিলেন।
কিন্তু তার দেবরসহ শ্বশুড় বাড়ির লোকজন সেখান থেকে তাকে ধরে আবার আফগানিস্তানে নিয়ে যায়।
“তারা আমাকে ভারতে পাঠাবে বলে তখন কথা দিলেও আফগানিস্তান নিয়ে গৃহবন্দি করে রাখে। আমাকে চরিত্রহীন নারী বলে গালি দিতে থাকে। তালেবানরা আমাকে ‘শিক্ষা’ দেয়ার হুমকি দেয়। ”
“তখন বুঝেছিলাম, আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে।
”
এক রাতে ঘরের মাটির দেয়ালে একটি সুড়ঙ্গ করে বেরিয়ে পড়েন সুস্মিতা। সেখান থেকে কাবুলে পালিয়ে গেলেও সেবার ধরা পড়েন তালেবানের হাতে।
“১৫ জন তালেবান সদস্য আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমি স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার কারণে তারা আমাকে হত্যার করার হুমকিও দেয়। ”
তখন নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তুলে ধরেন সুস্মিতা, তার দেশে ফেরার অধিকারের কথাও তালেবানকে বলেন তিনি।
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে তখন দেশে ফিরতে পেরেছিলেন সুস্মিতা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।