প্রতিবার বছর শেষের এই মুহুর্তটা আসলেই পেছনের কথা মনে পড়ে যায়।
সেই ক্লাশ ফাইভ থেকেই মাঝে মাঝে ডায়রি লিখতাম; সেটা প্রায় কলেজ জীবন শেষ হওয়া পর্যন্ত নিয়মিতই ছিল। কিন্তু পড়াশুনার ঝামেলায় আর হয়তো জীবনাত্রা কিছুটা বহির্মুখী হয়ে পড়ায়, অভ্যাসটা অনেকটাই ছুটে গেলো। কিন্তু ঠিক বছর শেষের দিনটাতে আমার সেই ডায়েরিটা নিয়ে বসতাম।
হয়তো সময়টা তখন রাত ১১- ৩০ বা আরেকটু বেশী।
একটু একটু করে লিখতে থাকতাম অনুভুতি গুলি। সেইসব দিন গুলিতে, চারদিকে- পুলিশের এতো রক্তচক্ষু চোখে পড়তো না। রাস্তা থেকে ভেসে আসতো কিশোর তরুণদের হুল্লোর। মাঝে মাঝে বাজি ফোটার শব্দ। আমার রুমটা ছিল একটু চিলেকোঠার মতোন; পাঁচতলার ছাদে।
শীতের রাতে, অনেক দূর থেকে ভেসে আসতো শব্দরা। মাঝে মাঝে কোথা থেকে যেন গায়ে হলুদের গান ভেসে আসতো। ঠিক ১২ টার একটু আগে হঠাৎ সব চুপ। জানালার খড়খড়ির ফাঁকে উকি মেরে যাওয়া হিম বাতাসও যেন নিস্তব্ধতা ভেঙে বিব্রত। ঠিক ১২টার সময় বাজি ফুটার শব্দে চারদিক উম্মাতাল।
মিনিট পনের ধরে বেশ হৈচৈ। তারপর আবার ধীরে ধীরে নিস্তব্ধতা নেমে আসতো চারপাশে। এই সব লেখা দিয়েই ভরে উঠতো পাতাগুলি। কোন কোন বছর একেবারেই আঁচড় পড়তো না।
বুয়েটে এসে, আমাদের বর্ষবরণ মানে ছিল, ১২ টা বাজার সাথে সাথে রুম থেকে বের হয়ে স্টিলের থালা বাটি পিটিয়ে শব্দ করা।
তারপর লাইট নিভিয়ে পাশে মেডিক্যাল হোস্টেলের 'কবিরাজ'দের ব্যাপক গালাগলি!! ওরাও অবশ্য বেশ আগ্রহ নিয়েই এতে অংশ গ্রহন করতো। সেসব বাক্য বিনিময়ের কণামাত্রও ব্লগে পেশ করলে, চিরতরে ব্যান খাবার সম্ভাবনা আছে!
রাত আরেকটু বাড়লেই হলের বিশেষ কিছু মার্কা মারা রুমে রঙিন পানির আয়োজন। আর্কির ছেলেপিলেদের এ ব্যাপারে বেশ সুনাম ছিল
মনে পড়ে, তখনও মাঝে মাঝে একটু সরে এসে ডায়রি নিয়ে বসতাম।
দিন বদলে যায়।
এখন মোবাইলগুলি বাজতে থাকে অবিশ্রান্ত।
এস এম এস এর শব্দে ভরে থাকে রাতের নিস্তব্ধতা। জুটিরা মেতে থাকে মোবাইল সংলাপে, চ্যাট রুমে।
বছর শেষ আর অল্প কিছু পরেই। জানি, অনেক পাওয়া না পাওয়ার হিসেব মেলানো যায় না, যাবেও না। কিছু কিছু অলঙ্ঘনিয় বিষন্নতা এড়ানোর উপায় নেই।
কিছু সম্ভাবনা আর কিছু অপ্রাপ্তির সূচনা নিয়েই আসছে আরেকটি বছর।
তবুও আশায় বুক বাঁধা , নতূন সূর্যের স্বপ্ন দেখা; নতুন আলোয় পুরনোকে চিনে নেয়ার চেষ্টা করা। আসলে, আমরা সবাই জীবন টাকে খুব ভালোবাসি। বাসবো না ই বা কেন? জীবন কি আমাদের কম দিয়েছে? অনেকের অনেক অপ্রাপ্তির তুলনায়, আমরা কি সৌভাগ্যবান নই?
কষ্ট করে এই অগোছালো আবোল তাবোল পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
শুভকামনা;
২০০৯ নববর্ষের শুভেচ্ছা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।