আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে

জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত সমঝোতা না হলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই হবেন আগামী নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান। সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনার অধীনে বর্তমান মন্ত্রিসভাও বহাল থাকবে। তবে তা বিশাল পরিসরে নয় বরং খুবই সীমিত হবে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রমতে, নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা হতে পারে অনূধর্্ব ১১। নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশেই গঠিত হবে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা এবং সেক্ষেত্রে একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকবেন মন্ত্রীরা।

তবে প্রধান বিরোধী দল সংবিধানমতে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে এলে মন্ত্রিসভায় বিএনপিও প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এ ব্যাপারে সরকারের নীতিনির্ধারকরা নীতিগতভাবে একমত। সেক্ষেত্রে আলোচনার ভিত্তিতেই হবে নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো। সূত্রমতে, বিগত নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে ভোটের আনুপাতিক হিসেবেই বিএনপি প্রতিনিধিরা ঠাঁই পাবেন নির্বাচনকালীন সরকারে। সূত্রমতে, নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতেই স্বরাষ্ট্র, অর্থ, তথ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।

তবে রুটিনওয়ার্ক চালিয়ে যাবেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা। মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরাও কেবল রুটিনওয়ার্ক করবেন, সচিবালয়ে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়েও তারা বসতে পারবেন। তবে নির্বাচনকালীন সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা কোনো উন্নয়নমূলক কাজের ফলক উন্মোচন করতে পারবেন না। এমনকি নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রচার কাজেও অন্য প্রার্থীদের তুলনায় বাড়তি কোনো সুযোগ পাবেন না। মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী বিধি মেনেই চলতে হবে।

সেক্ষেত্রে সরকারি দলের সদস্য এবং বিরোধী দলের সদস্যরা একইরকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। বাড়তি কোনো সুবিধা মন্ত্রী কিংবা সংসদ সদস্যরা পাবেন না। এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে নির্বাচন কমিশন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালিত হলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) থাকবে স্বাধীন এবং শক্তিশালী। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারের নীতিনির্ধারণীমহলেও চলছে নানান সমীকরণ।

নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার স্বার্থে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ রদবদলও হবে নির্বাচন কমিশনের সুপারিশে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ন্যস্ত হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া যে কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা প্রার্থী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তা খতিয়ে দেখবে নির্বাচন কমিশন এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করবে। নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো কেমন হবে জানতে চাইলে সরকারের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ পাশর্্ববর্তী ভারত ও ইংল্যান্ডে যেভাবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, একইভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আমাদের দেশেও। বিদ্যমান সংবিধানের আলোকেই নির্বাচনী আইন ও বিধিমালা অনুসরণ করবে নির্বাচন কমিশন।

এদিকে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) জাবেদ আলীও গতকাল কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের উন্নত দেশের আদলেই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন।

সরকারের নীতিনির্ধারণী সূত্রমতে, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে সরকারের আইনমন্ত্রীসহ আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা গত কয়েকদিন কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞ ও সিনিয়র নেতারা এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন। সম্প্রতি রাজধানীর ইন্দিরা রোডে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের বাসায় দলের ৫ উপদেষ্টাসহ অন্যারা বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকেই নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো নিয়ে প্রাথমিকভাবে যে প্রস্তাবনা এসেছে তা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে।

গত বুধবার গণভবনে কয়েকটি জেলার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে দলেল দুই নেতা ও প্রখ্যাত আইনজ্ঞের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন বলেও জানা গেছে। সূত্রমতে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো আগামী দুই-এক সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত করবে সরকার ও দলের নীতিনির্ধারকরা। সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রমতে, সংবিধানের প্রদত্ত ক্ষমতাবলেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরাও এর বাইরে অন্য কোনো ফর্মুলায় নির্বাচনে যেতে রাজি নন। নির্বাচনকালীন সময়ে কত সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভা হবে সে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি এখনো।

নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো কেমন হবে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান মন্ত্রী পরিষদ ভেঙে দিয়ে ছোট আকারে মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। তারা দৈনন্দিন কাজ কর্ম করবেন, কিন্তু কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন না। ওই মন্ত্রিসভায় কারা থাকবেন জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানমন্ত্রী হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কাকে নেবেন বা নেবেন না এটা তার এখতিয়ার। প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ মন্ত্রিসভা সাজাবেন বলেও জানান তিনি।

নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো কেমন হবে জানতে চাওয়া হলে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, সরকারের প্রধান নীতিনির্ধারক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই তা বলে দিয়েছেন। আমার নতুন করে বলার কিছু নেই এবং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা আইনমন্ত্রী হিসেবে আমি দিতেও পারি না। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে, ভেঙে যাওয়ার দিন থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে আগামী ২৪ জানুয়ারির আগেই পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পরের ৯০ দিনে নির্বাচন হলে বিরোধী দল অপেক্ষাকৃত কম বৈষম্যের শিকার হবে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.