আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বাচনকালীন মন্ত্রীসভার শপথ

প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বিরোধিতার মুখে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গতকাল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে নতুন ছয়জন মন্ত্রী ও দুজন প্রতিমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন।

সর্বদলীয় সরকারের নতুন মন্ত্রীরা হলেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম রওশন এরশাদ, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার। প্রতিমন্ত্রীরা হলেন- জাতীয় পার্টির মজিবুল হক চুন্নু ও অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। বিকাল ৩টা ১২ মিনিটে বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের শপথ পড়ান। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলুকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন বাবলু এর আগে এরশাদ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।

এই শপথ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভার অবসান হলো। তবে শেখ হাসিনাই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী থাকছেন। শপথ গ্রহণ শেষে নতুন মন্ত্রীরা জানান, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করতেই নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দিয়েছেন তারা।

শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা। তিনি জানিয়েছেন, আজ মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে দফতর পুনর্বণ্টন করা হবে। শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এবং আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভায় যোগদান করেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৮ অক্টোবর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব দেন এবং বিরোধী দলকে তাতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের নিয়ে নির্দলীয় সরকারের পাল্টা প্রস্তাব দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। মহাজোট মন্ত্রিসভার ৩১ জন মন্ত্রী ও ১৯ জন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে কে কে সর্বদলীয় মন্ত্রিসভায় থাকছেন আর কারা বাদ পড়ছেন, সে বিষয়ে আজ ঘোষণা আসতে পারে। তবে মন্ত্রিসভার আকার আগের চেয়ে ছোট হবে। এ সরকার গঠনে ১২ নভেম্বরই প্রধানমন্ত্রীর হাতে পদত্যাগপত্র দিয়ে রেখেছেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।

বিকাল ২টা ৫৫ মিনিটে স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ, ছোট ভাই ও মহাজোট সরকারের একমাত্র জাপা মন্ত্রী জি এম কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, মজিবুল হক চুন্নুকে নিয়ে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

এর আগে বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রথম প্রবেশ করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তারপর একে একে আসেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট প্রধানমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বিকাল ৩টা ৬ মিনিটে দরবার হলে প্রবেশ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে হাস্যোজ্জ্বল দেখাচ্ছিল।

শপথ অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব উল্লেখ করেন, সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের ২ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, রাশেদ খান মেনন, রওশন এরশাদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে মন্ত্রী এবং মজিবুল হক চুন্নু ও সালমা ইসলামকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছেন।

তারপর তিনি প্রথমে মন্ত্রীদের শপথের জন্য আহ্বান করেন।

বিকাল ৩টা ১২ মিনিটে একে একে ৬ জন মন্ত্রী রাষ্ট্রপতির ডান পাশে দাঁড়িয়ে শপথবাক্য পাঠ করেন। তারপর তারা শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এর পর ৩টা ১৫ মিনিটে শপথবাক্য পাঠ করেন দুই প্রতিমন্ত্রী। নতুন মন্ত্রীরা মন্ত্রিত্ব ও রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার শপথ শেষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

শপথের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এরশাদকে কদমবুচি করেন অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম ও মজিবুল হক চুন্নু। বঙ্গভবন থেকে বের হওয়ার আগে এরশাদ ও তার দলের নতুন মন্ত্রীরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। নতুন মন্ত্রী এবং আগত রাজনৈতিক নেতারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে চা চক্রে অংশ নেন। পরে এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রুলস অব বিজনেসের ক্ষমতা অনুযায়ী তাকে এ পদে নিয়োগ দেন।

ওই পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালে জিয়াউদ্দিন আহমেদ মন্ত্রীর পদমর্যাদা, বেতন-ভাতাদি ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন।

শপথ অনুষ্ঠানে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ড. মশিউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শপথ গ্রহণ শেষে আমির হোসেন আমু বলেন, জাতিকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়াই হবে আমাদের কাজ। সংবিধান মোতাবেক যথাসময়ে নির্বাচন হবে। আশা করি সব দল এতে অংশ নেবে।

মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভায় আগে যোগ দেননি, অথচ এখন দায়িত্ব নিলেন কেন? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, তখনকার পরিস্থিতি ও এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন। তখন আমাকে শুধু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েই থাকতে হতো। সর্বদলীয় সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা ও নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা। সেই কাজের জন্যই এবার মন্ত্রিসভায় এসেছি। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য।

বিএনপি প্রত্যাখ্যান করলেও সর্বদলীয় সরকারে তাদের যোগ দেওয়ার সময় এখনো রয়েছে বলে জানান তোফায়েল। এখনো সময় আছে। প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়ে রেখেছেন। বিরোধী দল যদি আসে তাহলে দেশের স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।

সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, যে কোনো মূল্যে ২৪ জানুয়ারির আগেই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলই অংশগ্রহণ করবে বলেও আশাবাদী নতুন এ মন্ত্রী।

রাশেদ খান মেনন বলেন, নির্বাচন নিয়ে যে গণতান্ত্রিক সংকট তৈরি হয়েছে, সে অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষার জন্যই তিনি এ মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছেন। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য করাই সর্বদলীয় সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে মেনন বলেন, সর্বদলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, এমন পরিবেশ তৈরি হলেই আমি আশা করি বিএনপি নির্বাচনে আসবে। আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল অংশ নেবে এমন লক্ষ্যেই এ মন্ত্রিসভা কাজ করে যাবে।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বর্তমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণই নতুন মন্ত্রিসভার মূল চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন। তিনি বলেন, সরকারের কাজ হচ্ছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা ও নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে সহায়তা করা। জানুয়ারির প্রথমার্ধে আমরা নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করব। তিনি আরও বলেন, বিএনপিকে আমরা পাবলিকলি আমন্ত্রণ করেছি। আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয় আর নেই।

নতুনদের দফতর বণ্টন ও পুরনোদের ভাগ্য নির্ধারণ আজ : 'নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা'য় আগের মন্ত্রিসভার কারা থাকবেন, কারা বাদ যাবেন এ বিষয়টি এবং নতুন মন্ত্রীরা কে কোন দফতর পাচ্ছেন তা আজ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হবে। অবশ্য এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে গতকাল রাতেই রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের তথ্যানুসারে, মহাজোটের আগের মন্ত্রিসভার ১২ জন মন্ত্রীর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়া হয়নি। তাই তারা মন্ত্রী পদে বহাল থাকছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা হলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, জিএম কাদের, মতিয়া চৌধুরী, ওবায়দুল কাদের, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, ডা. দীপু মনি, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আবদুর রাজ্জাক, হাসানুল হক ইনু, মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও হাছান মাহমুদ।

তবে তাদের দফতর অপরিবর্তিত থাকবে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। বাকি মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। সূত্রমতে, পদে বহাল ওই ১২ জনের সঙ্গে সদ্য শপথ নেওয়া আটজন এবং প্রধানমন্ত্রীসহ মোট ২১ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে।

বঙ্গভবনে যাওয়ার আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নতুন মন্ত্রীদের প্রজ্ঞাপন জারি ও দফতর বণ্টনের বিষয়টি মঙ্গলবার হবে। সচিব আরও বলেন, আজকে নতুন মন্ত্রিসভার শপথের আগে ও পরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

জিয়াউদ্দিন বাবলুকে প্রথমে মন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও পরে উপদেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, শপথের পর প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেছেন। সে সময় অনেক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে এখনই এসব বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা যাচ্ছে না। সে জন্য আগামীকাল (আজ) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.