নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য একটি প্রস্তাব দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেওয়া এ প্রস্তাবে ক্ষমতাসীন মহাজোট থেকে পাঁচজন সাংসদ, বিরোধী ১৮-দলীয় জোট থেকে পাঁচজন এবং একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি (যিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন) নিয়ে সরকার গঠনের কথা বলা হয়েছে।
সংগঠনটির পক্ষে ‘বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সুজনের আহ্বান’ শীর্ষক লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রস্তাবটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের লক্ষ্যে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের নিয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে শর্ত সাপেক্ষে ১১ জনকে খুঁজে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। শর্তটি হবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে এবং নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন না।
বিকল্প প্রস্তাব
বিকল্প আরেকটি প্রস্তাবে সুজন মহাজোট থেকে পাঁচজন সাংসদ, বিরোধী ১৮-দলীয় জোট থেকে পাঁচজন এবং দলনিরপেক্ষ পাঁচজনকে (যাঁর একজন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন) নিয়ে সরকার গঠনের কথা বলা হয়েছে। তবে বিকল্প এ প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রক্ষার্থে দলনিরপেক্ষ পাঁচজনকে উপনির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ফোনালাপ নিতান্তই লোকদেখানো উদ্যোগ
লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ফোনালাপকে জনসংযোগের কৌশল (পাবলিক রিলেশন্স গিমিক) আখ্যায়িত করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ফোনালাপটি প্রকাশিত হওয়ার পর অনেকেই বলছেন এটি ছিল নিতান্তই একটি লোকদেখানো উদ্যোগ। অথচ দুই নেত্রীর ফোনালাপে আমরা আনন্দিত হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিরোধের একটি সমাধান হয়তো হবে।
’ ফোনালাপ রেকর্ড ও প্রকাশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এজন্য অনেকে তথ্যমন্ত্রীর দিকে অঙুলি নির্দেশ করছেন, যদিও মন্ত্রী এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে সন্দেহ দূর করা এবং দোষীকে চিহ্নিত ও শাস্তি দেওয়ার জন্য একটি তদন্ত প্রয়োজন। ’
লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে এখানে ‘সংবাদ সম্মেলন’ না লিখে ‘অরণ্যে রোদন’ লেখা যেত। নির্বাচন নিয়ে সংলাপ দরকার। তার চেয়ে দেশের ভবিষ্যত্ নিয়ে সংলাপ আয়োজন আরও বেশি দরকার।
সংসদে পাস হওয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ আরপিও অনুযায়ী চাইলে বেগম জিয়া বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে গোপালগঞ্জ থেকে নির্বাচন করতে পারবেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এস এম শাহজাহান বলেন, ‘সংলাপের সম্ভাবনা এখন সুদূরপরাহত হয়ে গেছে। সংলাপ যেন সংঘাতের কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে। জেদাজেদি গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। ’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দুই নেত্রী ভালো খেলোয়াড়।
তবে বেশি খেলতে গেলে মার খাওয়ার আশঙ্কা আছে। তখন আপনাদের মরিয়া প্রমাণ করিতে হইবে আগে মরেন নাই। ’
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচনী ক্ষণগণনার ৯০ দিনের মধ্যে সাত দিন চলে গেছে। সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। সাধারণ নাগরিকদেরও দলীয় আনুগত্যের বাইরে এসে কিছু করতে হবে।
তিনি বলেন, শুধু সাংসদরাই নির্বাচিত প্রতিনিধি নন। স্থানীয় সরকারেও অনেক নির্বাচিত প্রতিনিধি আছেন এবং বিদ্যমান সংকট নিরসনে তাঁরাও এগিয়ে আসতে পারেন।
সবশেষে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান ধন্যবাদ বক্তব্যে বিদ্যমান সংকট সমাধানে সব পক্ষ উদ্যোগী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।