এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে সৈয়দ আশরাফ রাত আটটা সাত মিনিটে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। মির্জা ফখরুল বেরিয়ে যান আটটা ২০ মিনিটে। তাঁরা দুজন দুই দিক দিয়ে বের হয়ে যান।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এই আলোচনার জন্য সৈয়দ আশরাফ ও মির্জা ফখরুল দুই দলের দুই শীর্ষ নেত্রীর কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওমরাহ হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে যাওয়ার আগে সৈয়দ আশরাফকে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন।
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া এর আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে দুই দলের সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে আলোচনা শুরুর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ব্যবসায়ীদের ওই প্রতিনিধিদল এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করেন।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, গতকালের বৈঠকে দুই নেতা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের দাবিগুলো লিখিতভাবে সৈয়দ আশরাফকে দেওয়া হয়েছে। তিনি দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। পরে সৈয়দ আশরাফ এসব দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে আবার বৈঠক হবে বলে মির্জা ফখরুলকে জানান।
ওমরাহ পালন শেষে শেখ হাসিনা আজ দেশে ফিরবেন। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে তিনি আজ বেলা তিনটায় গণভবনে বৈঠক করবেন।
ধারণা করা হচ্ছে, মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে সৈয়দ আশরাফ আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন।
এদিকে গত রাতেই মির্জা ফখরুল ইসলাম সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে তাঁর আলোচনার বিষয়বস্তু বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে অবহিত করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, মির্জা ফখরুল গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনকে জানিয়েছেন যে, তিনি সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে বিএনপির দাবিগুলো লিখিতভাবে দিয়েছেন। সৈয়দ আশরাফ তাঁকে জানিয়েছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান শেখ হাসিনাই থাকবেন।
তবে গত রাতে গুলশান কার্যালয়ে এ বিষয়ে মির্জা ফখরুলকে জিজ্ঞেস করা হলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে তাঁর কোনো বৈঠক হয়নি।
সরকারি সূত্র জানায়, গতকাল দুপুরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফকে টেলিফোন করেন। তাঁরা বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। পরে গতকালই মুখোমুখি আলোচনার জন্য সময় ও স্থান নির্ধারণ করে সন্ধ্যায় বৈঠক করেন তাঁরা।
গত ১৮ অক্টোবর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় সরকার গঠনের ঘোষণা দেন এবং বিএনপিকে ওই সরকারে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। এর তিন দিন পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে নির্দলীয় সরকারের পাল্টা প্রস্তাব তুলে ধরেন।
ওই প্রস্তাবের একটি কপিসহ আলোচনায় বসার জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফকে চিঠি দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তাঁরা দুজন ফোনেও কথা বলেন।
গত ২৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করেন। তিনি খালেদা জিয়াকে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আমন্ত্রণ জানান। খালেদা জিয়া সেই আমন্ত্রণে সাড়া দেননি।
সর্বশেষ ১৮ নভেম্বর মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের শপথ নেওয়ার পরদিন খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সংলাপ ও সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। এরপর ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনানিবাসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁর দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে দুই দলের সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে আলোচনাকে সংকট নিরসনের শেষ সুযোগ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
সংলাপে বসে সমাধান খুঁজতে দীর্ঘদিন ধরেই দুই দলের ওপর বিদেশি কূটনৈতিকদের চাপ রয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে সমঝোতার আহ্বান জানান।
সর্বশেষ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা বিসওয়াল দেশাই দুই দলের সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ আগে জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো বাংলাদেশ সফর করে দুই নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে সংলাপের আহ্বান জানান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।