আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাজায় নিহত ১৪০ জন মানুষের প্রতি সমবেদনা-



সকল আস্থা, আশার আধার নিজেই মানুষ- শেষ পর্যন্ত এই আশাবাদে আস্থা রাখতে চাই। ধর্ম কি খুব বড় বিবেচনা এখানে? একদল মানুষের ভালোত্ব কিংবা মন্দত্ব কি তার ধর্মবিশ্বাসের সাথে সংযুক্ত? আমার নিজের বিশ্বাস ধর্মভক্তির উপরে মানুষের ভালোত্ব কিংবা মন্দত্ব নির্ভর করে না। সীমান্তের এই পারে কিংবা অন্য পারে কি মানুষ অবিবেচক মানুষহত্যা চায়? বিভক্তি আর বিদ্বেষের রাজনীতি বলবত থাকলে অবশ্যই সীমিত কয়েকজন মানুষ এইসব নির্মমতাকে অন্ধের মতো সমর্থন করে যায়, তবে যদি সাধারণ মানুষের দুয়ারে যাওয়া যায়, তারা নিশ্চিত ভাবেই এইসব নির্মমতার বিপক্ষে থাকবে? জনাকীর্ণ কোনো বসতিতে সন্ত্রাসী নির্মূল অভিযান চালিয়ে ১৪০ জন মানুষকে হত্যা করা কি বৈধ আচরণ? কিংবা নিজের ভুখন্ড আক্রান্ত হলে পেশাদার সৈন্যবাহিনীর সাথে লড়াই না করে অপেশাদার গেরিলা দল, যারা সাধারণ মানুষের ভেতরে থেকেই যুদ্ধ করে যায়, তাদের নির্মূলের জন্য সাধারণ মানুষকে হত্যা করা কি বৈধ? এইসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে না। এইসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই আদতে। যুদ্ধকৌশল, নিরাপত্তা ও সীমান্ত প্রতিরক্ষা, রাষ্ট্র এবং রাজনীতি, এবং একই সাথে সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিবেচনার উপরে নির্ভর করে এইসব প্রশ্নের উত্তর।

রাষ্ট্র যখন আগ্রাসী হয়ে উঠে, তখন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বৃহত্তর মানুষের স্বার্থের কথা বলে এই নির্মমতাকে সমর্থন করে যান। সামরিক নেতৃত্ব ,যা অধিকাংশ সময়ই রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করার কথা, অনেক সময় তারা সাময়িক বিবেচনায় নিজের মতোই সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। সুতরাং যখন গাজায় বোমা হামলা হলো দুপুরে, তখন নিহত পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা জানতেন না তারা একটা যুদ্ধকালীন অবস্থায় বসবাস করছেন। সাধারণ মানুষেরা জানতো না যেকোনো মুহূর্তে বিমান হামলায় তাদের পরিজন নিহত হবে, তাদের নিজেদের জীবন বিপন্ন হবে। তবে সল্প মেয়াদের একটা বিমান হামলায় আজ ১৪০ জন নিহত হয়েছে গাজায়।

হামাসের যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে অস্বীকার করা এবং না করা নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তিতে এই হামলা হয়েছে, হামাসের নেতাদের বক্তব্য তারা এখনও যুদ্ধবিরতির পক্ষে- তবে ইসরাইল যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করে বিমান হামলা চালিয়েছে, অন্য দিকে ইসরাইলী সেনাবাহিনীর বক্তব্য গতকাল হামাস যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভঙ্গ করে ইসরাইলের বসতিতে রকেট নিক্ষেপ করেছে। এখানে দুটি দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের ধর্মের দোহাই দেওয়া উচিত হবে না। মুসলিম বলেই ইহুদীরা এই জাতিগত সহিংসতার লিপ্ত হয়েছে এমনটা বলা যাবে না। তবে ইসরাইলের সহিংস আচরণ নিশ্চিত ভাবেই একটা তীব্র ইহুদী বিদ্বেষের জন্ম দিয়েছে প্যালেস্টাইনে। সেখানে এখন শতকরা ৯৫ শতাংশ বাসিন্দা মুসলিম।

আরব ভুখন্ডের স্বাভাবিক জনসংখ্যার বিন্যাস ভেঙে পড়েছে গাজা কিংবা রামাল্লা কিংবা প্যালেস্টাইন আর ইসরাইলের সীমিত ভুখন্ডে এসে। এইসব সাধারণ মানুষের মৃত্যু কি প্রয়োজনীয় ছিলো? কোনো নৈতিকতাই সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে নিজের বৈধতা প্রমাণ করতে পারে না। তবে পৃথিবীর এই সীমিত ভুখন্ড হয়তো পৃথিবীর বাইরের কোনো স্থান। এখানে যাবতীয় মানবিকতাবোধ লুপ্ত- এখানে সাধারণ মানুষের প্রানহানী নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এখানে মানুষের জীবনের দাম এমন কি নুন-চাল- আটার চেয়েও কম।

সমস্ত প্যালেস্টাইন, বিশেষত গাজা উপত্যকা দীর্ঘ অবরোধের পরে এখন নৈরাজ্যিক- এখানে প্রচলিত আইন কানুনের বালাই নেই- এখানে মানুষ প্রকাশ্যে চোরাচালান করছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র কালোবাজারে চলে যাচ্ছে। সার্বক্ষণিক যুদ্ধাকালীন অবস্থা এখানে। এই সব অমানবিকতার পেছনেও অর্থনীতি সক্রিয়। এখানেও ভাগ-বাটোয়ারা চলছে, ক্ষমতা ভাগাভাগির দ্বন্দ্ব চলছে। সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপনন করে ক্ষমতা দখলের লড়াই চলছে।

হামাসের কর্মী ও সমর্থক,ইসরাইলের রাজনৈতিক ও সামরিক কর্মী ও কর্মকর্তা, ফাতাহ পার্টির রাজনৈতিক কর্মীদের বাইরে যেসব সাধারণ মানুষ, তাদের ভেতরে কি এই নৈরাজ্যকে সমর্থনের তাগিদ আছে? অন্য সব সাধারণ মানুষের মতো তারা কি স্বাভাবিক নিরাপদ জীবনের স্বপ্ন দেখে না। আমার নিজের এই প্রশ্নের আশাবাদী উত্তর- এইসব সাধারণ মানুষ নিশ্চিত- নিরাপদ জীবন চায়- তবে তাদের এই স্বাভাবিক দাবি কি পৃথিবী শুনতে পাচ্ছে। এই ভুখন্ডে জন্ম নেওয়া ধর্মগুলোতে বিশ্বাস করে পৃথিবীর ৮০ শতাংশ মানুষ- তবু এইখানে ইশ্বর মৌন ও বধির। এখানে ইশ্বরের মৃত্যু হয়েছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.