বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন নির্বাচন নিয়ে গত তিন তিনবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাবের হোসেন চৌধুরী এবং প্রতিবারই প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে। স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও নির্বাচনে অংশ নিবেন জানিয়েছেন বিসিবির সাবেক সভাপতি। অবশ্য গতকাল যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তার অধিকাংশ সময়ই সমালোচনামুখর ছিলেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ২০১২'র সংশোধিত গঠনতন্ত্র নিয়ে। এনএসসির বিষোদগার করার ফাঁকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিসিবির বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে বিতর্কের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করায়। আহ্বান জানিয়েছেন আগামীকাল যে কোনো সময়, যে কোনো স্থানে মিডিয়ার মুখোমুখিতে বিসিবির বর্তমান সভাপতিকে বিতর্কে বসার।
দ্বিতীয় সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতিকে উন্মুক্ত বিতর্কে বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন সাবের হোসেন। জানিয়েছিলেন, এতে করে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। বিসিবির বর্তমান সভাপতিও সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে জানিয়েছিলেন যে কোনো দিন, যে কোনো সময় বসতে প্রস্তুত। এজন্য পাপনকে সাধুবাদ জানান সাবের হোসেন, 'অনেকদিন ধরেই বলে আসছিলাম আমি ও পাপন সাহেবের মধ্যে উন্মুক্ত আলোচনা হওয়া উচিত। আমরা দুজনেই জনপ্রতিনিধি।
দুজনেই ক্রিকেটের উন্নয়নে অবদান রাখতে চাই। আমি ওনাকে সাধুবাদ জানাই যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে উন্মুক্ত বিতর্কে বসতে রাজি হওয়ায়। এই আলোচনা আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। এতে ক্রিকেটেরই লাভ হতো। ' পাপন কখন, কোথায় বসবেন না জানালেও সাবের হোসেন আগামীকাল শনিবার বসতে প্রস্তুত জানান, 'আমি সব সময়ই বসতে প্রস্তুত।
পাপন সাহেব কখন বসবেন সেটা তো জানি না। তবে আমি আগামীকাল বসতে প্রস্তুত। যদি কাল (আজ) বসতে চান, তাতেও আমি রাজি। '
গঠনতন্ত্রের সমালোচনা করেছেন কঠোরভাবে। সমালোচনা করেছেন সরকারি প্রতিষ্ঠান এনএসসিওর।
অথচ তিনি একজন সরকার দলীয় জনপ্রতিনিধি। বিসিবির আগের কমিটির সংশোধিত গঠনতন্ত্রকে আড়ালে রেখে বর্তমান কমিটির চাহিদা অনুযায়ী গঠনতন্ত্র তৈরি করেছে এনএসসি। এমন অভিযোগ এনে এনএসসিকে বিসিবির বর্তমান কমিটির সমর্থক পার্টি বলতেও কার্পণ্য করেননি তিনি, 'জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বর্তমান কমিটির সমর্থক একটি পার্টি। এখানে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা রাখা উচিত। ' যে গঠনতন্ত্রের পক্ষে কথা বলছেন বিসিবির সাবেক সভাপতি, সেখানে ক্যাটাগরি ৩ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল ক্রিকেটারদের এবং ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াবকে।
এ বিষয়ে সাবের হোসেন বলেন, 'আমি সব সময়ই ক্রিকেটারদের সম্পৃক্তার পক্ষে। তবে ক্রিকেটারদের সার্বিক সম্পৃক্ততা থাকলেই ভালো। ' তিনি জানান, বিসিবির বিভিন্ন পদে সাবেক ক্রিকেটাররা সম্পৃক্ত এবং মাসে ২০ লাখ টাকা বেতন গ্রহণ করেন। নির্বাচনে তাদের সরাসরি অংশগ্রহণের বিষয়ে সম্মতি জানাননি। আবার অস্বীকারও করেননি, 'ক্রিকেটাররা যদি কাউন্সিলর হয়ে নির্বাচন করেন, তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই।
'
কাউন্সিলরদের চিঠি না পাঠানোর সমালোচনায় জর্জরিত করেছেন বিসিবির বর্তমান কমিটিকে। না পাঠানোর একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বিসিবির সাবেক সভাপতি, '১২ আগস্ট, ২২ আগস্ট কাউন্সিলরদের চিঠি পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু পাঠানো হয়নি। না পাঠানোয় আমি উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমি মনে করি তারা একটি ছক অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করতে চাইছেন।
যারা করতে চাইছেন, তারা প্রক্রিয়া ঠিক করতে পারছেন না বলেই চিঠি পাঠানো হচ্ছে না। আমি চাই জেলা, বিভাগ ও ক্লাবগুলোর কাউন্সিলরদের নাম যখন পাঠানো হবে, সঙ্গে যেন রেজিউলেশন থাকে। তাতে স্বচ্ছতা থাকবে। ' তিনি বর্তমান কমিটিকে পদত্যাগ করে নির্বাচন করারও অনুরোধ জানান, 'সম্প্রতি হকি ফেডারেশনের নির্বাচন হয়েছে। সেখানে সবাই পদত্যাগ করে নির্বাচন করেছেন।
বিসিবির বর্তমান কমিটিও যদি পদত্যাগ করে নির্বাচন করেন, তাহলে ভালো হবে। ' পদত্যাগ করে নির্বাচন করার কথা বললেও গঠনতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে, 'আমি একটি টেকশই নির্বাচন চাই। যে নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে না। স্বচ্ছ নির্বাচন হবে।
তবে আমি সংশয়াচ্ছন্ন। কেননা আমি মনে করি তারা একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন চাইছেন। আর তাদের রাস্তা পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে। ' যদিও বিসিবি সভাপতি কয়েকদিন আগে মিডিয়াকে জানিয়েছেন, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজনের ইঙ্গিত দিলেও এখনো নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়নি।
নির্বাচন কমিশন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিসিবির সাবেক সভাপতি, 'ক্রীড়া পরিষদকে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হবে কমিশনে, তাদের বিরুদ্ধে যেন কোনো প্রকার অভিযোগ না থাকে। ' নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না বলেই বিশ্বাস করেন তিনি, 'আমি জানি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন চান। '
গঠনতন্ত্র, নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেশবাসীকে প্রকৃত বিষয় জানাতেই নির্বাচন করতে চাইছেন সাবের হোসেন চৌধুরী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।