আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার ছ্যাক খাওয়ার কাহিনীগুলো ৩

ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....

যতোদূর মনে পড়ে এর পরের বড় ধরনের একটা ছ্যাক খেয়েছিলাম জুনিয়র এক মেয়ের কাছে। তার জন্য যে কতো কিছু করেছিলাম তা ভাবলে এখনো লজ্জা পাই। সে আমার ইউনিভার্সিটিতে পড়তো না। পড়তো অন্য জায়গায়। ওর সাথে পরিচয় হয়েছিলো একটা সংগঠন করার সময়।

আমি সেই সংগঠনের লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ, লেখালেখি ইত্যাদি নানা কাজে জড়িত হয়েছিলাম। সে সময়ই নানা কাজের সূত্রে ওর সাথে আমার বন্ধুত্বটা গড়ে উঠে। ওর ফিগার, চেহারা যেমন সুন্দর ছিলো তেমন আচার আচরণও খুব ভালো ছিলো। কথাবার্তা, স্মার্ট অমলিন হাসি কিংবা শক্ত হয়ে চুপ করে বসে থাকা তার সবকিছুই ভালো লাগতো আমার। তার আচরণের সবচেয়ে ভালো দিক ছিল তার সংযত ভাব।

এদিক দিয়ে সে ছিল অদ্বিতীয়। কখনোই সে মাত্রা ছাড়াতো না। ওরা থাকতো পুরনো ঢাকায়। পড়াশুনাও করতো সেখানকারই এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও আমি আর সে একই সাবজেক্টে পড়তাম।

এই সূত্রেই সে একবার আমার কাছে কয়েকটা সাবজেক্টের নোট চেয়ে বসে। আমার দিক থেকে নোট দেয়ায় আগ্রহের কোনো অভাব ছিলো না। আমি প্রায়ই হলে থাকতাম। তাই হলের সবার সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। যে কোনো নোট জোগাড় করা আমার জন্য কঠিন কাজ ছিলো না।

ওদের সাবজেক্ট বিন্যাসগুলো আমার থেকে আলাদা ছিলো। তবে খুজে বের করা খুব একটা সমস্যা ছিলো না। ওর চাহিদার সবই খুজে পেতে বের করলাম। আমার নিজের খুব একটা ভালো নোট জোগাড় করার দরকার পড়তো না। তবু ওর জন্য আমার বন্ধু আর বড়ভাইদের থেকে খুজে পেতে ভালো নোটগুলোই জোগাড় করলাম।

প্রতি সপ্তাহে একদিন আমাদের দেখা হতো। তবে এসব নোট দেওয়ার জন্য আমি একটু কৌশলেরও আশ্রয় নিয়েছিলাম। সবগুলো একসাথে দিতাম না। এতে এসবের অছিলায় তার সাথে বেশী বেশী আলাপ করার সুযোগ পেতাম। সে সময় দেশে মোবাইল ফোনের তেমন চল ছিলো না।

মোবাইলের দাম যেমন অনেক বেশী ছিলো তেমন এসব মেইনটেইন করার খরচও কম ছিলো না। এর মধ্যেই সে একটা মোবাইল কিনে ফেললো। আমাকে নাম্বারটা দিয়ে দিলো। আমার কাছে তখনও মোবাইল ফোন ছিলো না। আমি বাসার টিএন্ডটি থেকে ফোন করতাম।

তার মোবাইলে তখন টিএন্ডটি ইনকামিং আছে কিন্তু তা অনেক টাকা বিল কাটে। রাত ১১ টার পরে অবশ্য বিল কিছুটা কম কাটতো। আর আমরা যেহেতু পড়াশোনার কথা বলি তাই নিশ্চয়ই বিলের বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করলে চলবে না। আমার বাসার টিএন্ডটি ফোনের প্যারালাল লাইন ছিলো। আমি কি কথা বলছি কেউ ইচ্ছা করলে সেটা পাশের রুম থেকে সেট উঠিয়ে শুনতে পারতো।

তাই আমি বুদ্ধি করে লাইনটা পাল্টিয়ে দিলাম। পাশের রুমের সেটটার লাইনে একটা সুইচ বসালাম। সুইচ অফ করলে পাশের রুমের সেটটা অফ হয়ে যায়। অন্য কেউ আমার কথা শোনার মতো থাকলো না। রাত ১১টার পর সেই সেটটা আমি প্রায়ই বন্ধ করে দিতাম।

তারপর আস্তে করে ফোন করতাম ওকে। অল্প সময়ের মধ্যেই নানা বিষয়ে আলাপ হতো আমাদের। পড়াশোনার বিষয় নিয়েই অবশ্য বেশির ভাগ আলোচনা। একদিন কথা প্রসঙ্গেই সে আমাকে জিজ্ঞাসা করে, “আপনাদের কি ঢাকায় বাড়ি আছে?” আমি কথাটার কোনো জবাব দেই না। প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে অন্য কথায় চলে যাই।

সেও আর এটা জিজ্ঞাসা করে না। এ সময়ই আমার মাথায় আসে একটা মোবাইল কেনা দরকার। তাহলে তার সাথে কথাবার্তা বলতে সুবিধা হবে। কারণ টিএন্ডটি থেকে তাকে ফোন করলে তার ইনকামিং বিল উঠে। নিশ্চয়ই এজন্য অসুবিধা হয়।

খুব স্বাভাবিকভাবেই মেয়েটার পরীক্ষার আগে যখন নোটপাতির দরকার পড়তো সে সময়ই সে বেশী বেশী যোগাযোগ করতো। আমিও সুযোগ বুঝে নানা অছিলায় দেরী করতাম। আমাদের সপ্তাহে একবার করে দেখা হতো সংগঠনের কাজে। সে সময় নোটগুলো লেনদেন করতাম। এক সময় তার চেয়ে আমার নোট দেয়ার আগ্রহটাই বেশী হয়ে উঠেছিলো।

একবার বেশ কিছুদিন তার নোটের দরকার ছিলো না। তারপর একদিন আমাকে ফোন করে নির্দিষ্ট একটা বিষয়ের নোট চায়। সেইদিন ওই নোট নিতে সে আসে নাই। আমি কাঁধে করে নোট নিয়ে গেলাম আবার বাসায় ফেরত নিয়ে আসলাম। মনটা খুব খারাপ, তার সাথে দেখা হলো না।

পরের সপ্তাহে নোটগুলো আর নেয়ার দরকার ছিলো না। তবু আমি সেই নোট বহন করে নিয়ে গেলাম। তার সাথে দেখা হয়ে গেল। বললাম, তুমি কি এখন নোটগুলো নিবে? মনটা খুব ভালো হয়ে গেল। সে নোটগুলো নিলো।

এ সময়ই কথা প্রসঙ্গে আবার আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো সে, “আপনাদের কি ঢাকায় বাড়ি আছে?” কথাটার আবারও কোনো জবাব দিতে পারলাম না। সম্পত্তি দেখিয়েই যদি প্রেম করতে হয় তাহলে আর সম্বন্ধ করে বিয়ের সাথে পার্থক্য থাকলো কি? ভালোবাসারই বা দাম থাকলো কি? তার নোটের প্রয়োজন কমে আসছিলো। আমি তবুও নানা ওছিলায় যোগাযোগটা বজায় রেখেছিলাম। এর মধ্যেই একদিন সম্পূর্ণ নিজের উপার্জনের ১০,০০০ টাকা দিয়ে একটা মোবাইল ফোন কিনলাম। সেখান থেকে তাকে ফোন করে জানালাম, এটা আমার ফোন।

কোনো দরকার হলে মিসকল দিলেই হবে। মাঝেমাঝে ভাবতাম এর পরেরবার যদি জিজ্ঞাসা করে আমাদের বাড়ি আছে কিনা তাহলে কি জবাব দেব। মাঝে মাঝে ভাবতাম সত্যি কথাটা বলেই দিবো। আরেকটা চিন্তাও মাথায় কাজ করতো, যাদের বাড়ি নাই তারাও তো প্রেম করে। তাহলে আমাকে কেন বাড়ি দেখিয়ে প্রেম করতে হবে।

এসব ভাবতে ভাবতেই বাড়ি আছে কি নেই, এসব কোনো কথা তাকে কখনোই বলা হয়নি। যতোদূর মনে পড়ে নানা প্রসঙ্গে কথাটা মোট তিনবার সে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো। তার সাথে প্রেমের ব্যাপারটার মিমাংসা করা দরকার ছিলো। তাই ভাবলাম সামনে পহেলা বৈশাখেই একটা হেস্তনেস্ত করবো। পহেলা বৈশাখে ঢাকায় রঙ্গীন পোশাকের ঢল নামে।

আমার যেসব বন্ধুরা সাজগোজ করে প্রেমিক-প্রেমিকা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তাদের দেখে খুব হিংসা হয়। ভাবলাম প্রস্তাবটা দিয়েই ফেলি। শুরু হলো আমার আবার বিনিদ্র রজনী যাপন। কিভাবে প্রস্তাবটা জানাবো তাকে? সে যদি রাজি না হয় তাহলে কি হবে? পরে অনেক চিন্তাভাবনা করে খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রস্তাবটা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। স্বাভাবিকভাবে বললেই সে বুঝবে।

বাড়তি নাটকীয়তা করে ঝামেলা বাড়ানোর কোনো দরকার নেই বলেই মনে হলো। তাই পহেলা বৈশাখের একদিন আগেই তাকে জিজ্ঞাসা করলাম পহেলা বৈশাখে তোমার কি কোনো প্রোগ্রাম আছে? সে বললো যে তার কোনো প্রোগ্রাম নাই। বললো, কোথাও গেলে আমাকে জানাবে। পরেরদিন আমি আবার ফোন করলাম। বললাম, “কালকে তো পহেলা বৈশাখ।

তুমি কি কালকে আমার ইউনিভার্সিটিতে আসবে। আমরা অনেক মজা করবো। ” এ সময় তার কথার সুর পাল্টিয়ে গেল। সে জানালো, যাবে না। কিন্তু তার গলার স্মরে এমন একটা রুক্ষতা ছিলো যেটা আমি আগে কখনো শুনিনি।

তাই মনটা খুব খারাপ হলো। আমার সাথে খারাপ ব্যবহারের পর আমার পক্ষে আর ফোন করার কোনো উপায় ছিলো না। অনেকদিন অবশ্য অপেক্ষায় ছিলাম। যদি সে কল করে। প্রথম কয়েক মাস মনটা খুব খারাপ ছিলো।

পরে আবার ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে গিয়েছিলো। সে আমার মোবাইলে কখনো ফোন করে নাই। সম্ভবত নাম্বারটা সেভই করে নাই কখনো। আর এভাবেই আমার এ প্রেম পর্বের ছ্যাক খাওয়া সম্পন্ন হলো --------------------------- ঘটনার ১ বছরেরও বেশী সময় পরে সে আমার বাসার টিএন্ডটিতে ফোন করেছিলো। আমি বাসায় ছিলাম না।

কিন্তু টেলিফোনের পাশে কাগজে লিখে রাখা তার নাম্বারটা দেখেই চিনতে পেরেছিলাম। আমাকে কলব্যাক করার ম্যাসেজ রেখেছিলো। হয়তো নতুন কোনো নোটের প্রয়োজন কিংবা ওর বিয়ের দাওয়াত দুটোর একটা হবে বলে মনে হয়েছিলো। আমি অবশ্য কখনোই কলব্যাক করিনি। কিজন্য সে ফোন করেছিলো তা আজও জানা হয়নি।

এখনো মাঝে মাঝে ওর কথা ভাবি আর দুঃখ করি। আমাকে বোকা পেয়ে কি নাচটাই না নাচিয়েছিলো...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।