আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার ছ্যাক খাওয়ার কাহিনীগুলো ১

ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....

অনেকেই তাদের জীবনের সফল প্রেম কাহিনীগুলো ব্লগে প্রকাশ করে। নিজের চেহারার মতোই আমার প্রেমভাগ্যও ভালো না। সফল কোনো প্রেম করা হয়নি কখনো। আমার ধারণা ইউনিভার্সিটিতে থাকতে আমি প্রতিদিন গড়ে ৩টা করে ছ্যাক খেয়েছি। এ কথা আমার বন্ধুদের অবশ্য বিশ্বাস করাতে পারি না।

সবগুলো ঘটনা আবার আমার নিজেরও মনে নাই। কয়দিন আগে এক বন্ধুর সাথে আলাপ করার সময় ছ্যাক খাবার বেশ কিছু ঘটনা মনে পড়লো। এসব অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা উপন্যাস লেখার ধারণা মাথায় আসে। পরে ভাবলাম, উপন্যাস-টুপন্যাস আমার মতো গাধার দ্বারা হবে না। আমি যা পারি তা হচ্ছে, জীবনের অতি নির্মম সত্য এ ঘটনাগুলো একে একে ব্লগে প্রকাশ করা।

সেজন্যই এ ধারাবাহিক আয়োজন..... ইউনিভার্সিটিতে প্রথম ছ্যাকা: ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির পর প্রথম ছ্যাকটা খাই আমার এক ক্লাসমেটের কাছে। নতুন ক্লাস শুরু হলো। সব নতুন বন্ধু। এর মধ্যে একজনকেই মনে ধরলো। তার চেহারা, হাসি, কথাবার্তা সবকিছুই আমার খুব ভালো লাগতে শুরু করে।

অবশ্য নতুন এক উপদ্রবও শুরু হয়। আমাদের ক্লাসেরই আরেক ছেলে তার প্রেমে পড়ে যায়। সে যখন ওই মেয়ের সাথে কথা বলে তখন আমি খুবই মেজাজ খারাপ করি। আর আমি যখন তার সাথে গল্প করতে যাই, বা জরুরী কোনো কাজের ওছিলায় আলাপ জমাতে যাই সেই ছেলেটা তখন পিছে পিছে আঠার মতো লেগে থাকে। এক মেয়েকে নিয়ে দুজনের কঠিন টাগ অফ ওয়ার।

মাঝে মাঝে মনে হতো সে আমার থেকে ওই ছেলের দিকে সরে যাচ্ছে। তাই ওর ছোটখাট ফাই-ফরমাশ খাটা শুরু করলাম। যেমন চেয়ারটা এগিয়ে দেয়া, কলমটা পড়ে গেলে দ্রুত উঠিয়ে দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। এ ধরনের ছোটখাট কাজে আমি অনেক বেশী চটপটে। চোখের নিমেষে করে ফেলতাম।

ওই ছেলেকে এসব কোনো কাজে আমি চান্সই দিতাম না। সেই মেয়েও আমার এসব ব্যাপারকে বেশ উৎসাহ দিতো। কিন্তু আমার প্রতিদ্বন্দ্বী সেই ছেলে আবার বকবক করতে পারতো ভালো। এদিক দিয়ে আমি আবার একেবারেই কাঁচা। কোনোকিছু জিজ্ঞাসা করলে ঠিক ঠিক জবাব দিতে পারি বড়জোর।

তাই দেখতাম সে অনেক সময় ধরে তার সাথে বকবক করছে। মাঝে মাঝে মনে হতো সে আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মাঝেমাঝে ভাবতাম, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ওই ছেলেকে ধরে একদিন কঠিন মাইর দিবো। এর মধ্যে একদিন স্যারের নির্দেশে সবাই মিলে অডিটরিয়ামে গেলাম খেলা দেখতে। সেখানে আমাদের ক্লাসের ওই ছেলে সম্ভবত ছিলো না।

ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আমি তার সঙ্গে অনেক কথা বলার সুযোগ পেলাম। মনে মনে ভাবলাম কাজ অনেকদূর এগোলো। আমার দিকে তাকিয়ে তার অনাবিল হাসি দেখে অনেকটা নিশ্চিন্ত হলাম। আবার কয়েকদিনের মধ্যে সেই প্রতিদ্বন্দ্বী ছেলের অত্যাচারে আমার মেজাজটা খারাপ হতে থাকলো। এ সময় আমার সাথে বন্ধুত্ব হলো অন্য এক বন্ধুর ।

তার সঙ্গে আমি সে সময় এ ধরনের সব ব্যাপার শেয়ার করা শুরু করলাম। তার কাছে আমার এই প্রেমের ব্যাপারটা আর আমাদের দুই বন্ধুর দ্বন্দ্বটা খুলে বললাম। সে বন্ধু জানালো, ওই ছেলে তোর কাছে কোনো পাত্তাই পাবে না। তার ধারণা, সেই মেয়ের চোখে আমি অনেক বেশী যোগ্য। সে বন্ধুর উৎসাহে আমি আবার নতুন করে মেয়ের মন জয় করার চেষ্টা করা শুরু করলাম।

একদিন তাকে পটিয়ে ইউনিভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়াতে নিয়ে গেলাম। একটা অ্যাসাইনমেন্টের ওছিলায় বেশ কিছুক্ষণ আলাপ করলাম। আর প্রতিদ্বন্দ্বী ওই ছেলেকেও কোথাও দেখলাম না। কিন্তু যেইমাত্র অ্যাসাইনমেন্টের কথাবার্তা শেষে আলাপটা একটু জমিয়ে এনেছি ওমনি এক বড় ভাইয়ের আগমন। তার সাথে কয়দিন আগেই পরিচয় হয়েছিলো।

সেই সূত্রেই সে আমাদের দুজনের সাথে আলাপ জমাতে এসেছে। মহা ঝামেলা। তাড়াতাড়ি কথাবার্তা শেষ করে আমরা সেখান থেকে বিদায় নিলাম। আলাপটা আর জমানো গেলো না। একদিন এক বন্ধু জানালো, ওই মেয়ে কিন্তু বিবাহিত।

মাঝে মাঝে তার স্বামী দেখা করতে আসে। আমি বিশ্বাস করলাম না। কারণ এর আগে ক্লাসে একদিন স্যার জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তোমাদের মধ্যে বিবাহিত কে কে। সে ক্লাসে থাকলেও স্বীকার করে নাই। আর সবাই জানতো, দেখা করতে আসে তার ভাই।

কিন্তু মেয়েটার আচরণ আমার কাছে বড়ই রহস্যময় মনে হতো। কখনো আমার সেই প্রতিদ্বন্দ্বী বন্ধুকে খুবই পাত্তা দিতো। তাদের আলাপের মাঝে আমি গিয়ে হাজির হলে কথার প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে ফেলতো। তারা খুব রহস্যময় কোনো বিষয়ে কথা বলছিলো কিন্তু আমি গিয়ে ডিস্টার্স করলাম, এমন একটা ভাব করতো। আবার মাঝে মাঝে ওই ছেলের দিকে তাকাতোই না।

আর যদি আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিতো তাহলে তো আমার অবস্থা পুরোপুরি শেষ। সারাদিনই তার নেশায় বুদ হয়ে থাকতো মন। আবার কখনো কখনো সে আমাকেই পাত্তা দিতো। ওই ছেলেকে কাছেই ঘেষতে দিতো না। মেয়েটা বিবাহিত, এমন গুঞ্জন বন্ধুদের মাঝে প্রায়ই শুনতাম।

কেউ এমন কথা বললেই মেজাজটা খুব খারাপ হতো। কিন্তু তাকে কখনো জিজ্ঞাসা করতে পারিনি। তুমি কি বিবাহিত? এমন কথা কি কোনো মেয়েকে জিজ্ঞাসা করা যায় নাকি? একসময় তার প্রেমে আমার পুরো হাবুডুবু খাওয়া অবস্থা। দিন-রাত তার কথা ভাবি। এ সময় একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম ওর সাথে একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে।

ও কি আসলে আমাকে ভালোবাসে নাকি ওই ছেলেটাকে। এভাবে বহুদিন আমাদের দুজনকে অনেক নাকানি চুবানি খাওয়ানোর পরে একদিন মেয়েটা নিজেই একটা ছেলের ছবি নিয়ে আসলো। সাগরের ধারে তোলা খুব সুন্দর একটা ছবি। তার স্বামীর। পরে জেনেছিলাম, সে সময় বিবাহিত মেয়েদের হলে থাকা যাবে না- এমন ধরনের এক ধারণার কারণে সে তার বিয়ের খবরটা গোপন রেখেছিলো।

………………………………………………………. বিবাহিত হলেও যে কারো সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না এমন কোনো কথা নাই। সেই মেয়ের সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়। পরে নানা কাজে সে আর তার স্বামী আমার বাসায় বহুবার এসেছে। পড়াশুনা শেষ হবার পর যখন চাকরিতে ঢুকলাম সে সময়ও তাদের সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিলো। এখন আমি বিদেশে আসার পর তাদের সাথে যোগাযোগ নাই অবশ্য।

যেই বন্ধুর কাছে সেসময় প্রেম বিষয়ক পরামর্শ নিয়েছিলাম তার সাথে শেষ যখন দেখা হয় তখন ওই প্রসঙ্গ উঠেছিলো। আমরা দুজনে বেশ হেসেছিলাম। এমন এক মেয়ের প্রেমে দুইজনে টাগ অফ ওয়ার করলাম যে মেয়ে কিনা আগেই বিবাহিত। এমনই বুদ্ধি আমাদের। সেই প্রতিদ্বন্দ্বী ছেলেটা পরে আমার বিশিষ্ট বন্ধু হয়ে গেছে।

কথা একটু বেশী বললেও সে আসলে খুব ভালো একটা ছেলে। কয়দিন তার কথা খুব মনে পড়ছিলো। তাই অনেক কষ্টে তার ফোন নাম্বার জোগাড় করে ফোন করলাম। সে জানালো, “দোস্ত, বিশ্বাস করবি কিনা জানিনা। তোর কথা খুব মনে পড়ছিলো।

কিছুক্ষণ আগে তোর ফোন নাম্বার জোগাড় করলাম। তোর কাছে ফোন করতেই যাচ্ছিলাম। ” মনটা খুব ভালো হয়ে গেল। বন্ধুর জন্য গর্ব অনুভব করলাম। আর মনে মনে হাসলাম, এ বন্ধুর সাথেই এক মেয়ের প্রেমে পড়া নিয়ে কতো টাগ অফ ওয়ার হয়েছিলো।

ভাবা যায়?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।