আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার ছ্যাক খাওয়ার কাহিনীগুলো ২

ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....

ইউনিভার্সিটিতে ঠিক দ্বিতীয়বার কোন ছ্যাকটা খেয়েছিলাম তা আর এখন মনে নাই। তবে একটা মেয়ের প্রেমে বেশ ভালোমতো হাবুডুবু খেয়েছিলাম তা বেশ মনে আছে। সে সময়কার ছ্যাকটাও যথেষ্ট কড়া ছিলো। সেই মেয়েটার চেহারা বেশী ভালো ছিলো না। কিন্তু তার আচার আচরণে, কথাবার্তায় একটা অদ্ভূত সরলতা ছিলো।

হয়তো তার এ সরলতাই আমাকে আকর্ষণ করতো সবচেয়ে বেশী। খুব ভালোও লাগতো। সে আবার গানও গাইতে পারতো খুব সুন্দর। সে ছিলো অন্য ধর্মের। একসময় প্রতিদিন ক্লাসে তার জন্য অপেক্ষা করতাম।

সে না আসলে মনে হতো দিনটাই ব্যর্থ। পরে একসময় সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললাম। ওকেই আমার চাই। সে যে ধর্মেরই হোকনা কেন। ওসব বিষয় পরে আলাপ করা যাবে।

এদিকে আমাদের ডিপার্টমেন্টে দুই ধর্মের দুইজন দিব্যি প্রেম করছে (পরে তারা বিয়েও করেছে)। সেসব দেখেও আমার সাহসটা বেড়ে গেল। ভাবলাম ওকে পাবার জন্য আমি যে কোনো কিছু করতে পারি। সিদ্ধান্ত নিলাম ওকে ওকে প্রেমের প্রস্তাবটা এবার দিয়েই দিবো। কিন্তু এবারের প্রেমের বিষয়টা কারো সাথে শেয়ার করলাম না।

মনে হলো কারো সাথে শেয়ার করলে বিভিন্ন রকম বাধা-বিপত্তি আসতে পারে। যার সাথে পরামর্শ করবো, দেখা যাবে সেই বাধা দিচ্ছে। অনেক চিন্তাভাবনা করে বের করলাম ওই মেয়েকে কিছু উপহার দেয়া দরকার। সে সময় আমি পার্ট টাইম কাজ হিসেবে কম্পিউটারের বিভিন্ন কাজ করতাম, কম্পিউটার কম্পোজ, গ্রাফিক্স ইত্যাদি। একটা বেশ বড় বইয়ের ভালো কিছু গ্রাফিক্সের কাজ শেষ করেছিলাম।

সেই বইটা প্রকাশিত হলে তার একটা কপি ওকে উপহার দিয়েছিলাম। সে খুব খুশি হলো। জানালো তার বাসার সবাই বইটার কাজগুলো খুব পছন্দ করেছে। তার কয়দিন পরে চিন্তা করলাম এভাবে আর হয় না। ওকে আমার চাই-ই চাই।

প্রস্তাবটা দিয়েই ফেলবো। সে নিশ্চয়ই আমাকে না করতে পারবে না। কি উপহার দেয়া যায় একথা চিন্তা করতে থাকলাম। বহু চিন্তাভাবনা করে ওকে দুইটা গানের ক্যাসেট উপহার দিবো বলে ঠিক করলাম। সেই ক্যাসেটগুলোর ভেতরে একটা কাগজে লিখে দিবো আমার ভালোবাসার কথা।

কয়েকটা রোমান্টিক বাংলা গান সেসময় খুব ভালো লাগতো। বাণিজ্যমেলা থেকে বিদেশী কোম্পানির দামী অরিজিনাল ক্যাসেট কিনলাম। ছোট ভিজিটিং কার্ডের আকারের একটা শক্ত অ্যামবুশ কাগজে সবুজ কালিতে লিখলাম, “সাড়া দাও”। সেটা ক্যাসেটের ভেতরে ঢুকালাম। হ্যান্ডমেইড পেপার নামের এক ধরনের অ্যামবুশ পেপার পাওয়া যায়।

সেই পেপার দিয়ে প্যাকেট করলাম ক্যাসেটগুলো। আমার এক বন্ধু খুব সুন্দর ছবি আকে। সে প্যাকেটের ওপরে তুলি দিয়ে কিছু আঁকাঝোকা করে দিলো। সব মিলিয়ে দারুণ একটা গিফ্ট হয়েছিলো সেটা। ব্যাগে ভরে ক্লাসে নিয়ে গেলাম।

প্রথম দিন সেটা তাকে দিতে পারলাম না। কারণ আশপাশে সবসময়ই কোনো না কোনো বন্ধু ঘোরাঘুরি করছিলো। পরের দিন ক্লাসের এক ফাকে জিনিসটা তাকে দিয়ে দিলাম। অন্য কেউ এ ঘটনা দেখতে পায় নাই। আর দেবার সময় তাকে বললাম, তোমার জন্য একটা গোপন উপহার আছে।

অন্য কাউকে বলোনা প্লিজ। আর প্যাকেটটা বাসায় নিয়ে খুলো। সেদি রাতে আমার ঘুম হলো না। সে কি আমার এ ডাকে সাড়া দিবে? নাকি আমাকে তার পছন্দ না? পরদিন ক্লাসে গেলাম। তার মুখ থমথমে।

আগের সেই হাসিও মুখে নাই। সে আমাকে অন্য একটা প্যাকেট দিলো। বললো, “এটা তোমার”। ক্লাসমেটরা কেউ দেখার আগেই আমি সেটা ব্যাগে ভরে ফেললাম। সে জানিয়ে দিলো, এখানে খুলো না।

বাসায় নিয়ে খুলো। আমি তো খুবই টেনশনে আছি। আমাকে কি জিনিস দিলো সে? অন্য কোনো উপহার? তার কথামতো বাসায় নিয়েই প্যাকেটটা খুললাম। প্যাকেটের ভেতরে আমার দেয়া দুইটা ক্যাসেটই ফেরত দিয়েছে সে। বুঝতে পারলাম, উপহার যখন ফেরত দিয়েছে, তখন ছ্যাক খেয়েছি বলেই ধরা যায় ঘটনাটা গোপন রাখার আমার সেই অনুরোধও রাখে নাই সে।

আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধুকে এই ঘটনাটা জানিয়েছিলো। আর তার দুই-এক জন বান্ধবীর সাথেও এ ঘটনাটা শেয়ার করেছিলো। ফলে আমার ছ্যাক খাওয়ার লজ্জাটা অনেক বেড়ে গিয়েছিলো। সে সময় মন থেকে ওর ঘটনা মুছে ফেলে স্বাভাবিক হতে তখন বেশ সময় লেগেছিলো আমার। ------------------------------- ঘটনার ৪-৫ মাস পর সে খারাপ ব্যবহারের জন্য আর ঘটনাটা গোপন রাখতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলো।

আমিও তার উপর কোনো রাগ-দুঃখ রাখি নাই। আর তার কাছে ব্যাপারটা গোপন রাখার অনুরোধটা ছিলো কাঁঠালের আমসত্ত্বের মতোই অবাস্তব একটা বিষয়....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।