আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার ছ্যাক খাওয়ার কাহিনীগুলো ৪

ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....

মেয়েটার নাম ছিলো শান্তি। আমি তখন খুব ছোট। স্কুলের সিক্স কি সেভেনে পড়ি। সেও ছিলো আমার সমান বয়সী। আমরা ছিলাম বাসার তিন তলায়।

তারা ছিলো দুই তলায়। ঠিক আমাদের নিচের ফ্ল্যাটে। একমাত্র সন্তান হওয়ায় আমার সারাদিন বাসায় একা থাকতে হতো। বাসায় খেলার সঙ্গী কেউ ছিলো না। তাই সারাদিন বাইরে বাইরেই ঘুরতাম।

আর বাসায় থাকলে একা একাই সব খেলাধূলা করতাম। এ সময় আমার প্রধান খেলাধূলা ছিলো বাসায় বসে বসে সারাদিন বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে খুটখুট করা। ছোটখাট যন্ত্রপাতি নিয়ে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক এক্সপেরিমেন্ট করতাম। মাঝে মাঝে মেঝেতে হাতুড়ি দিয়েও ঠাস ঠুস করতাম। সে সময় একদিন যখন মেঝেতে হাতুড়ির বাড়ি দিয়ে পেরেক সোজা করছি তখনই বাসায় আগমন হয় শান্তির।

সে বাসায় নক করে জানিয়ে যায় আমাদের বাসায় খুবই শব্দ হচ্ছে। এভাবে শব্দ করা যাবে না। ইত্যাদি। বাধ্য হয়ে সেদিনকার মতো এক্সপেরিমেন্ট বন্ধ করতে হলো। পরদিন দুপুরে আর শান্তির কথা মনে ছিলো না।

নতুন করে এক্সপেরিমেন্ট শুরু করলাম। সে সময়ই আবার শান্তির আগমন। চোখে চোখ রেখে এক্সপেরিমেন্ট বন্ধ করার আদেশ দিয়ে গেলো। পরদিন আমার শান্তির কথা মনে ছিলো ঠিকই। কিন্তু ভাবলাম, একটু ঠুসঠাস করি।

দেখি আজকে কি বলে যায় । বরাবরের মতো সে আসলো, চোখে চোখ রেখে ঠাস ঠুস বন্ধ করার জন্য বলে গেলো। সে সময়ই হয়তো আমার শান্তির প্রতি একটা দূর্বলতা তৈরি হয়েছিলো। আমিও একটা নতুন বুদ্ধি বের করলাম। যখনই ওকে দেখতে ইচ্ছা করতো তখনই মেঝেতে ঠাস-ঠুস শব্দ করতাম।

সে আসার পর হালকা কথাবার্তাও বলতাম। মাঝে মাঝে অস্বীকার করে বলতাম, কই কোনো শব্দ করিনি তো। তখন মিথ্যা মিথ্যা ঝগড়া হতো দুজনের। আবার পরে মিল হতো। শান্তিও ব্যাপারটা হয়তো বুঝতে পেরেছিলো।

তাই আমি একটু ঠুস ঠাস করলেই সে এসে পড়তো। সপ্তাহের দিনগুলিতে আমার মা সকালে অফিসে যেতেন বিকালে আসতেন। কিন্তু ছুটির দিনে প্রায় সময়ই বাসায় থাকতেন। সে সময় আমার বুদ্ধি আরো কম ছিলো। তাই এমন এক ছুটির দিনে বাসায় হঠাৎ আমার মনে হলো এখন শান্তিকে তলব করলে কেমন হয়।

চিন্তা মতো মেঝেতে দুই-তিনটা বাড়ি দিলাম। শান্তিও সময় মতো এসে হাজির হলো। কিন্তু বাদ সাধলো আমার মা। তিনি ব্যাপারটা ভালো চোখে দেখলেন না। শান্তি যাবার পরে আমাকে বেশ কড়া ভাষায় শাসিয়ে দিলেন।

ওই মেয়েকে বাসায় ঢুকতে দিবি না আমার বেশ মেজাজ খারাপ হলো। চিন্তা করে দেখলাম, মা কি মনে করলো যে, আমি ওই মেয়ের প্রেমে পড়েছি? যদি মনে করে থাকে, তাহলে আমি যে প্রেমে পড়িনি সেটা প্রমাণ করা দরকার। আর সেটা প্রমাণ করার একমাত্র উপায় হলো ওর সাথে আর কোনো সম্পর্ক না রাখা। এছাড়া সম্ভবত মা ওদের বাসায় গিয়েও কিছু বলে এসেছিলো। এর পর মাঝে মাঝে দুপুরে মেঝেতে ঠাসঠুস শব্দ করে শান্তির অপেক্ষায় থাকতাম।

কিন্তু শান্তি আসতো না। খুব বেশী শব্দ করলে আসতো অন্য মানুষ। শান্তি আর আসেনি। ওর সাথে আর কখনো দেখা হয়নি। এভাবেই আমার জীবনের প্রথম ছ্যাকাটা খাই সে ঘটনার প্রায় দুই দশক হয়ে যাচ্ছে।

এতো বছর পরেও অনেক চিন্তা করে দেখলাম শান্তিকে আজও ভুলতে পারিনি। তাই চিন্তা করে দেখলাম শান্তিই ছিলো আমার প্রথম প্রেম। আর তার ছ্যাকাটাও প্রথম ছ্যাকা হিসেবে হৃদয়ে দাগ কেটে গেছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।