আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“ভালবাসায় বদল

"You may like a situation which is not good for you And You may dislike a situation which is good for you." (Al- Quran)

মুশফিক খুব ক্লান্ত। আজ সারাদিন বাসা পরিবর্তন করতে গিয়ে অসহ্য ধকল পোহাতে হয়েছে। সাধারণত বেকার যারা তাদের দিয়ে খুঁটিনাটি কাজকর্ম গুলো বেশি করিয়ে নেয়া হয়। আর আজকাল মাস্টার্স পাশের আগেই অনেকে চাকরি করে বিধায় অনার্সে পড়াশোনা রত যারা তাদের “বেকার” উপাধি দেয়া হয়। (অ) সভ্যতা আরও একধাপ এগিয়েছে এত কোন সন্দেহ নেই !! মুশফিক শেষ প্যাকেটটা নিচ থেকে তুলে ড্রয়িংরুমে সটান শুয়ে পড়ে।

আজ আর কিছু সে করতে পারবে না.. .. পরের দিন সকালে আবার মেজাজ খারাপ। আজকে আবার সব জিনিসপত্র জায়গায় জায়গায় বসাতে হবে। যদিও বাইরে থেকে লোক আনা হবে তবু অনেক কাজ। আগের বাসায় তার রুমটা অনেক খোলামেলা ছিল। সে জানালা খুলেই পুরো আকাশটা দেখতে পারত।

এ বাসায় তার জানালাটা পশ্চিম দিকে। সে জানালাটি খুলে ফেলে । চিরপরিচিত ঢাকা শহরের দৃশ্য। খুব কাছাকাছি আরেকটা বাড়ি। তিনতলায় ওর বাসা সোজা বাসাটার জানালা দেখা যাচ্ছে.. .. ওর মেজাজ এবার চরম খারাপ হল.. .. যাহ্ শালা !! এই রুম থেকে আর আকাশ দেখা যাবে না .. .. তাহলে দেখবে টা কী ?.. . সেদিন সারাদিন হাড়গভাঙা খাটুনির পর মুশফিক বাসায়ই ছিল।

সন্ধ্যার পর সে সাধারণত বাসায় থাকে না। নাহ্! আজ আর বাইরে যাওয়া হবে না.. .. খুব টায়ার্ড লাগছে.. সে “ আলপিন” ম্যাগাজিন নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়.. .. কিন্তু ক্লান্তি জিনিসটা অন্য রকম। যে আলপিন পড়লে ও হাসি থামাতে পারত না সে আলপিন এখন সুঁই আলপিন হয়ে ওকে খোঁচা দিচ্ছে ! আলপিনটি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ও বিছানায় পাশ ফিরে শোয়। .. .. ক্লান্তি ওর চোখে ঘুম এনে দিল । গভীর ঘুম.. .. অনেক্ষণ পরে মুশফিক মোবাইলের শব্দে জেগে ওঠে।

জিয়াদের সাথে কথা বলে ও টাইম দেখল... ১২ঃ৩৯..ভাত খাওয়া হয়নি.. .. সে জানে ডাইনিং এ ভাত দেয়া থাকবে। .. .. সে গিয়ে খাবার খেয়ে আসে। ... মাথাটা কেমন যেন তার ঝিমঝিম বোধ হচ্ছে। .. .. এখন তো আর ঘুম আসবে না । সন্ধ্যা থেকেই সাড়ে পাঁচ ঘন্টা ঘুমিয়েছে।

.. .. .. কী করা যায় ও ভাবছিল। বই পড়া যায়.. .. ছবি দেখা যায়.. .. নাহ্ মনে হচ্ছে কোনকিছুই জমবে না .. .. রাতের আকাশটা দেখতে পারলে ভাল লাগত। কিন্তু এমন এক বাসায় উঠল যে আকাশ দেখার কোন ব্যবস্থা নেই ...তবু অভ্যাসবশতঃ সে পশ্চিমের জানালাটা খুলে পর্দা সরিয়ে দেয়.. .. পাশের বাসায় লাইট জ্বলছে.. অবশ্য পর্দা দেয়া। জানালা খুলে পাশেই বাসা দেখলে ওর মেজাজ বিগড়ে যায়। মন খারাপ করে সে জানালার পাশে ওর টেবিলটাতে আলপিন নিয়ে বসল।

এবার আলপিন পড়তে ওর আর খারাপ লাগছে না। .. এভাবে অনেকক্ষণ পর সে নড়েচড়ে ওঠে। হঠাৎই পাশের বাসার জানালায় চোখ পড়ে যায়। এবার সে বাসার পর্দা সরানো। .. .. দুটি সুন্দরী মেয়ে পাশাপাশি টেবিলে বসে কী যেন লিখছে... একটি মেয়ের সাথে তার চোখাচোখি হয়ে গেল।

মুশফিক অবশ্য দ্রুতই চোখ নামিয়ে নেয়। দেয়াল ঘড়ি রাত দুটার সংকেত দেয়। .. মুশফিক লাইট নিভিয়ে দিয়ে পর্দা টানতে যাবে এমন সময় দেখে পাশের বাসার লাইটটিও নিভে গেল। .. .. মুমফিক একটু অশ্চর্যই হয় ! .. কাকতালীয় না কী ! মুশফিক পাঁচ মিনিট পর আবার লাইটটি জ্বালায়। কী আশ্চর্য ! পাশের বাসার লাইটটিও জ্বলে ওঠে ! মুশফিক মজা পেয়ে গেল ।

... খেলাটি চলতে থাকে .. ওর কাছেই ভাল ই লাগছিল.. ও ভাবছিল বোন দুটি তো দুষ্টু আছে! মনে হয় জমজ হবে। কারণ ও যত জমজ বাচ্চা দেখেছে সবকটা বদের হাড্ডি!.. অবশ্য সেও কম দুষ্টু নয়। ভালই জমবে মনে হচ্ছে.. .. পরের দিন সকালে উঠেই মুশফিক জানালার পর্দা সরিয়ে দেয়। আশ্চর্য ! মেয়ে দুটি এখনও টেবিলে বসে কী যেন লিখছে.. মুশফিক টেবিলে ক্লাসের বই নিয়ে বসে। বই নিয়ে বসলেও বইয়ের পাতায় ওর মন নেই ।

কাল রাতের বাতি জ্বালানো নেভানোর খেলা এবং মেয়ে দুটির চিন্তাই তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। হঠাৎই পাশের জানালা থেকে একজন বলে ওঠে,” ওরে আমার পড়–য়ারে.. পাতা ওল্টাচ্ছে না একঘন্টা ধরে। ” সে বুঝতে পারে তাকে শুনিয়েই মেয়েটি কথাটি বলেছে। মুশফিক একটু লজ্জাই পায়। তাই সে বইয়ের পাতা ও্ল্টাতে থাকে একটির পর একটি.. .. এবার মেয়েটি তাকে আাবার শুনিয়ে বলে ,” লাবনী..এটা কী বই রে!! প্রথম একপাতা পড়ল ঘন্টাখানেক।

পরের পাতাগুলি পড়তে দেখি কয়েক সেকেন্ডও লাগছে না !!!! বলেই মেয়েটি ও লাবনী নামের মেয়েটি প্রায় দুই মিনিট ধরে হাসতে থাকে। ... লজ্জায় তো মুশফিক প্রায় লাল হবার যোগাড়। সে উঠে গিয়ে জানালার পর্দা টেনে দেয়। .. .. পর্দা টানার সাথে সাথেই সে শুনতে শুনতে পায়.. “কাপুরুষ”!!! এবার ওর গায়ে লাগে। বাস্তবে সে কাপুরুষ নয়।

সে পর্দা আবার মেলে ধরে ..এই যে শুনুন!! আমাকে কী কিছু বললেন? ওপাশের জানালা থেকে জবাব আসে “ আপনাকে বীরপুরুষ বলেছি!!” ঃ না আপনারা বীর পুরুষ বলেন নি! ঃ তাহলে আপনিই বলুন কী বলেছি.. ঃ আপনারা বলেছেন কাপুরুষ ! ঃ তো শুনছেনে যখন জিজ্ঞেস করেন কেন? ঃ এইজন্যই জিজ্ঞাসা করি যে আপনারা মেয়েরা কোন যুক্তি-প্রযুক্তি দিয়ে নির্ধারণ করেন কে কাপুরুষ আর কে বীরপুরুষ? ঃ কথাতো ভালই জানেন দেখছি.. ঃ কেন আপনাদের কী ধারণা আমি বোবা কালা ? ঃ (মেয়ে দুটি এবার একটু দমে যায়) আচ্ছা ঠিকাছে “কাপুরুুষ” বলার জন্য দুঃখিত। তো বীরপুরুষ ভাই আপনি কী করেন? ঃ আমার একটা নাম আছে “মুশফিক”। আর আমি গরু-ছাগলের কলেজে পড়ি। ঃ গরু ছাগলের কলেজ মানে? ঃ মানে ঢাকা কলেজে .. এ্যাকাউন্টিং থার্ড ইয়ারে পড়ি। একজন গর্বিত বেকার।

আপনারা কী করেন? ঃ প্রথমে নাম বলি? ঃ জী ফরমান.. ঃ আমি লাবনী । আর ও আমার বান্ধবী লিপি। আমাদের বাসার নিচতলায় থাকে। আমরা ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়েছি । এখন রাত জেগে প্র্যাকটিক্যালের লেখা লিখছি।

ঃ ও আচ্ছা ! ভাল লাগল আপনাদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে। ফান জিনিসটা আপনারা ভালই বোঝেন মনে হচ্ছে.. ওকে বেস্ট অব লাক!! সেদিনের মত আলাপ ওখানেই শেষ হয়। মুশফিক প্রতিদিন বাসায় ফেরে রাত দশটার দিকে। খাওয়া দাওয়া করে পড়তে বসে.. .. যদিও মেয়ে দুটির জ্বালায় পড়ালেখা এখন কোমায় গেছে.. । সেও বেশ মজা পেয়ে যাচ্ছে... প্রতিদিন রাতে বাতি জ্বালানো-নেভানোর খেলাটা বেশ উপভোগ্যই হয়ে উঠেছে।

আজ মুশফিক ঠিক করে একটু পড়াশোনা করবে। যদিও জানালার পর্দা খোলা রেখেছে। মুশফিক পড়ায় ডুবে গিয়েছিল । একটু পর ওর টেবিলে বরই বিচি এসে পড়ে.. .. লাবনীদের জানালায় চোখ রাখে। কিন্তু জানালা খোলা হলেও পর্দা টানা ।

মুশফিক আবার পড়ায় মন দেয় .. .. কিন্তু একটু পর আবার বরই বিচি এসে পড়ে। এবার সে বুঝতে পারে.. .. চেয়ার ছেড়ে উঠে সে জানালায় হেলান দিয়ে দাঁড়ায়.. .. আশ্চর্য !! পাশের বাসার জানালার পর্দাও সরে যায় । সুন্দরী দুই বান্ধবীর হাসি হাসি অপরাধী মুখ দেখা যায়.. (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।