অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
রেলওয়ে স্টেশনের বারান্দায়, কিংবা বাস স্টেশনের চাতালে বিক্রী হওয়া বইগুলোর ভেতরে একটা সময়ে ডেল কার্ণেগীর বই পাওয়া যেতোই। নিজেকে ডেল কার্ণেগী ভাবতে খারাপ লাগছে, অন্তত সাফল্যের দশটা উপায়, জীবনে সফল হবেন কিভাবে? এইসব বিষয়ে উপদেশমূলক লেখা লিখবার যোগ্য মানুষটা আমি না। ঠিক সেভাবেই কিভাবে সম্পর্ক নষ্ট হয় এই বিষয়ে লিখবার উপযুক্ত মানুষও আমি না, যদিও সম্পর্ক নষ্ট করবার অভিজ্ঞতা আমার কম নেই।
স্বাভাবিক সুন্দর সমাপ্তি আমাদের বোধ হয় আনন্দিত করে না তেমন- সুতরাং কাজল রেখার গল্পের সমাপ্তিতে যখন তারা অতঃপর সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো পড়ি, কিংবা যেকোনো রুপকথার গল্পেই, যেখানে অবশেষে অভিশপ্ত রাজকন্যাকে উদ্ধার করে রাজপূত্র তার সাথে চিরকালীন সম্পর্ক তৈরি করলো তখন বিষয়টা অনেক সময়ই সান্তনাসূচক পরিসমাপ্তি মনে হয় আমার কাছে।
রুপকথার জগতও অতিমাত্রায় পুরুষতান্ত্রিক, পুরুষতান্ত্রিক ভীতি এবং পুরুষতান্ত্রিক গৌরবে পরিপূর্ণ।
আঁটকুরে রাজা একটা সন্তানের আকাংক্ষায় সন্যাসীর দুয়ারে গিয়েছেন কিংবা ফল এনে তার বৌদের খাওয়াচ্ছেন- এবং সেইসব বিবিদের ভেতরে পারস্পরিক বিদ্বেষ- সব সময়ই ছোটো বৌটিই উপেক্ষা এবং ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে যাবে, তাকে নির্বাসিত হতে হবে। আঁটকুরে রাজার সন্তান হবে, উপেক্ষিত বিবিকে নির্বাসন দিয়ে মনঃস্তাপে পুড়বেন রাজা- এই ধাঁচের গল্পের বাইরে আছে- পুরুষতান্ত্রিক গৌরবের গল্প-
হঠাৎ রাজপূত্র অকুলীন মেয়ের প্রেমে পড়বে- সেই মেয়ে সামাজিক মর্যাদায় হীন- এবং রাজপূত্র প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে সেই অকুলীন নারীকে নিজের গৃহিনী বানাবে- এইসব রোমান্টিক গল্প সব সময়ই মোনোগ্যামিস্ট- রুপকথার রাজারা পলিগ্যামিস্ট হলেও তাদের সন্তানেরা সব সময়ই মনোগ্যামিস্ট হয়ে থাকে। অন্তত এমন রুপকথা আমার স্বরণে আসছে না যেখানে সামান্য হলেও প্রেমের ছোঁয়া আছে এবং সেই প্রেম অবশেষে পরকীয়াতে সমাপ্ত হয়েছে।
অন্য ধাঁচের গল্পে আছে নারীকে উদ্ধার করে আনবার বীরত্ব, অনেক প্রতিকূলতা, সাত সমূদ্র তেরো নদী চৌদ্দ শত পাহাড় পর্বত ডিঙিয়ে অনেক ঝড় ঝঞ্ঝা অতিক্রম করে অবশেষে রাজপূত্র বন্দিনী রাজকন্যাকে উদ্ধার করে আনলো, রাজকন্যা ও অর্ধেক রাজত্ব পেলো। তুমি খুশী, আমি খুশী, সবাই উৎফুল্ল এবং অবশেষে মনোগ্যামিস্ট রাজপূত্র সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো।
বিষয়গুলো সব সময়ই কি এ রকম? রূপকথার শুভপরিসমাপ্তি কি সব সম্পর্কেই বিদ্যমান? এমন কি রোমান্টিক ভাবধারা আচ্ছন্ন জীবনেও যেখানে মনোগ্যামিকে চুড়ান্ত রোমান্টিক বিবেচনা করা হচ্ছে এবং অবধারিত ভাবেই সামাজিক অনুশাসন বহুগামীতার বিপক্ষে গিয়ে ক্রমাগত একগামী হয়ে উঠবার চাপ তৈরি করছে- এই পরিস্থিতি এবং সামাজিক অনুশাসনের উপস্থিতি সত্ত্বেও বিবাহিত পুরুষের শতকরা ৪০ জন বিবাহিত জীবনের কোনো না কোনো সময় অন্য একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।
সম্পর্ক গড়ে উঠবার ব্যকরণ নেই কোনো- অন্তত শাররীক আকর্ষণের বাইরে মানসিক আকর্ষণ একটা বড় বিবেচনার বিষয় হতে পারে-তবে এমন কোনো নিশ্চিত তত্ত্ব নেই যা দিয়ে সরাসরি বলা যায় এই কারণেই মানুষ প্রেমে পড়ে কিংবা এই কারণেই মানুষ দাম্পত্যে জড়ায়।
তোমাকে ছাড়া জীবনকে আমি কল্পনা করতে পারছি না, আমাদের জন্মই হয়েছে পরস্পরের সঙ্গে থাকবার জন্য। তুমি আমাকে পরিপূর্ণ করেছো। এতদিন জীবনটা সুন্দর ছিলো, তবে তোমাকে দেখবার পরে মনে হয়েছে এই সম্পূর্ণ জীবনেও কোথাও না কোথাও একটা শুন্যতা ছিলো।
তোমার উপস্থিতি এই শূন্যতাকে ভরে দিয়েছে। প্রেমের কথা বলবার উপযুক্ত মানুষ আমি না, আমার প্রেমের সংলাপগুলো অধিকাংশ সময়ই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে মাঝপথে।
চিঠিতে হয়তো অনেক কিছুই বানিয়ে লেখা যায়, পারস্পরিক দুরত্বে আকর্ষণের রসায়ন অক্ষুন্ন থাকে। চিঠি অনেক বেশী আবেগী ও অনুভুতিপ্রবন হয়ে উঠতে পারে, অন্তত মাঝে অনেকটা জায়গা শূন্য থাকে। সেখানে ঘনিষ্ট জীবনযাপনের মোহটা অন্তত টিকে থাকে- তবে যখন একত্রবাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, যখন দুজন মানুষ একই বিছানা ব্যবহার করছে, একটা শোবার ঘরেই দুজনকে ভাগাভাগি করে থাকতে হচ্ছে- চিঠির অনুরাগ কিংবা এসো মিলে যাই পরস্পরেজাতীয় আকুতি কিংবা বিচ্ছিন্নতাবোধগুলো লুপ্ত তখন অনেক কিছুই বিবেচনায় চলে আসে।
জীবনানন্দের আট বছর আগের এক দিন কবিতা অনেক বেশী প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ, একটা প্রায় নিশ্চিত দাম্পত্য, একটা পরিবার, সন্তানের প্রিয় মুখ, কোনোটাই এই আত্মহত্যাকে ঠেকাতে পারে নি। বরং নিঃশব্দে লাশ কাটা ঘরে শুয়ে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে মানুষটা- এই সংবাদটুকুই আদতে সবটুকু নয়।
জীবনানন্দের অনেক কবিতাই বার বার পড়া হয়েছে তবে এই কবিতা হয়তো জীবনানন্দের দাম্পত্যজীবনের প্রতিচ্ছবি। তার উপন্যাসের স্ত্রী চরিত্রগুলো যেমন ডমিনেটিং এবং যেমন বস্তুবাদী নিরাবেগী, এমন স্থুল চরিত্র বোধ হয় উপন্যাসে কমই চিত্রিত হয়েছে। সব উপন্যাসিকই কোনো না কোনো সময় একটু কোমলতা দিয়ে নারীকে চিত্রিত করেছেন উপন্যাস কিংবা গল্প কিংবা কবিতায়, জীবনানন্দের কবিতার নারীরা এমন সাধারণ আবেগ নিয়ে আসে না।
বরং একটা প্রশান্তির খোঁজ পাওয়া যায় জীবনানন্দের কবিতায়। জীবনানন্দ নিরাশ্রয় হয়ে কবিতায় আশ্রয় খুঁজছেন, নিজের প্রিয় মানবীর মুখচ্ছবি আঁকতে চাইছেন। এমনটাই মনে হয় বারবার। সেই শান্তি আর স্নিগ্ধতা হয়তো জীবনানন্দ কখনই পান নি। তবে এই আকাঙ্খা তাকে চালিত করেছে।
অনুভুতিপ্রবন মানুষের ভেতরেই দীর্ঘ দাম্পত্যের একটা পর্যায়ে এই অনুভুতি তৈরি হতে পারে। রূপকথার অতঃপর তার অনন্তকাল সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো বাক্যটাই বিভ্রান্তিকর। এমন নিরবিচ্ছিন্ন শান্ত দাম্পত্য জীবন বোধ হয় রূপকথার পাতাতেই থাকে, বাস্তবের দাম্পত্য অনেক বেশী উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে যায়, অনেক বেশী ভঙ্গুর এবং নাজুক পরিস্থিতি অতিক্রম করে একটা স্থিরতা পায়।
এমন কি অনেক দম্পতিই শুধুমাত্র অভ্যস্ততার কারণেই একত্রবাস করছে। তাদের ভেতরে প্রেম নেই, আকাঙ্খা নেই, উদ্দামতা নেই, পরস্পরকে কাছে টানবার কোনো চাহিদাও নেই।
বাস্তবতা হলো প্রতিটা মানুষই কোনো না কোনো সময় এসে স্খলিত হয়, সেটা মেয়ের ক্ষেত্রেও সত্য- ছেলের ক্ষেত্রেও সত্য- প্রত্যেকের চাহিদা পুরণের মাত্রা, আকাঙ্খা এবং প্রত্যাশা পুরণ হওয়া , না হওয়ার উপরেই দাম্পত্যের স্বাস্থ্য নির্ভর করে। এবং বিবাহিত পুরুষের শতকরা ৪০ জন একটা পর্যায়ে অন্য একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।
স্বাভাবিক ধরে নিলে বলা যায় একই ভাবে শতকরা ৪০ জন মেয়ে অন্য কোনো একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বে বিবাহিত জীবনের কোনো না কোনো সময়ে।
বিষয়টা ঘটছে, খুবই স্বাভাবিক ভাবেই ঘটছে। আমার পরিচিত এক বন্ধুর সাথে তার স্ত্রীর প্রেম তলানির দিকে, বন্ধু আক্ষেপ করে বলছে সি ইজ টু ডিমান্ডিং, এন্ড বিকামিং মোর ইনভ্যাসিভ।
বাসায় যাই, গিয়ে বাচ্চার সাথে খেলি, টিভি দেখার উপায় নেই, ভয়ে সিগারেটও টানতে যেতে পারি না। সারাক্ষণ ঝাড়ির উপরে আছি।
বন্ধুর স্ত্রীর সাথেও কথা হলো। তার বক্তব্য-
ও যেনো কেমন হয়ে গেছে। কোনো উদ্যম নেই, ম্যান্দামারা হয়ে গেছে।
চুপচাপ বসে থাকে ঘরে।
হয়তো তাদের ভেতরে কোনো সমস্যা নেই, প্রকট কোনো সমস্যা নেই, মেয়েটা চেষ্টা করছে একটা স্থির নিশ্চিত জীবনের দিকে অগ্রসর হতে। ছেলেটাও নিশ্চয়তা চাইছে। তবে কোথাও না কোথাও চাকার একটা দাঁত ভেঙে গেছে। ঘটাং ঘটাং আওয়াজ করছে সেটা।
অধিকাংশ সম্পর্কই এই পর্যায়টা অতিক্রম করে। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না, আমাকে উদ্ধার করো নারী- তুমিই আমার উজ্জ্বল উদ্ধার, তুমিই আমার ধ্রুবতারা জাতীয় বাক্যগুলোও বিবাহিত জীবনের পঞ্চম বর্ষে এসে পানসে হয়ে যায়। মাঝের সামান্য একটু জায়গার জন্য লড়াই করে বিবাহিত মানুষেরা।
আই নিড সাম মোর স্পেস, ইউ আর টু মাচ ডিমান্ডিং, ইউ আর আস্কিং ফর মোর এন্ড মোর,
আই আম ট্রাইং মাই এ্যাস অফ ইউ বিচ পর্যায়ে চলে যাওয়ার একটা পর্যায়ে দাম্পত্যের রসায়ন আর কোনোভাবেই যুক্ত রাখতে পারে না।
দাম্পত্যে অস্বাভাবিকতা থাকবেই, উত্থান পতন দাম্পত্যের স্বাভাবিক বিষয়।
সমস্যার ধরণ জানা থাকলে এড়ানো সম্ভব হয়, এমন কি সমস্যার স্বরূপ বোঝা গেলে অনেক আগেই সাবধান হওয়া যায়, সম্পর্ককে জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রাখবার আগেই সাবধান হয়ে সম্পর্ককে সুন্দর একটা পরিণতি দেওয়া সম্ভব,
সম্পর্ক নষ্ট হয় কেনো? যৌনঅতৃপ্তি সম্পর্ক ভাঙবার গৌন একটা কারণ, অধিকাংশ সম্পর্কই নষ্ট হয় প্রত্যাশা পুরণ না হওয়ার জন্য। নিয়মিত যৌনসম্পর্ক হয়তো এই নষ্ট হওয়ার বাস্তবতাকে কয়েকটা দিন পিছিয়ে দিতে পারে, তবে প্রত্যাশা মূলত শুধুমাত্র শাররীক তৃপ্তি নির্ভর নয় বরং দাম্পত্য সম্পর্কে অনেক বেশী চাহিদা থাকে। এবং সেই চাহিদাগুলো পুরণ হওয়া এবং না হওয়ার উপরেই সম্পর্কের স্বাস্থ্য নির্ভর করে।
তুমি আমাকে আগের মতো চাও না। আগের মতো আবেগ নেই তোমার।
এই অভিযোগ নিয়মিতই শোনা যায়, প্রতিটা পরিবারেই এই বিষয়ক মনোমালিন্য আছে। তবে সম্পর্কের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে ধারাবাহিক অবহেলাই সম্পর্কের টানকে কমিয়ে দিয়েছে।
আমি সাত সকালে বের হয়ে সন্ধ্যায় হাঁফাতে হাঁফাতে ফিরে আসি, এসে এই নেই, সেই নেই, এটা চাই, ওটা চাই- এইসব ক্যাঁচাল শুনতে ভালো লাগে না, আল্লার দোহাই, একটা দিনও কি বাসায় এসে সব কিছু স্বাভাবিক দেখতে পারবো না?
সব দিনই কেনো এটা নেই, সেটা নেই, তোমাকে তো টাকা কম দেওয়া হচ্ছে না। সেই টাকা কোথায় যাচ্ছে? সময় মতো সব কিনে রাখতে পারো না?
এটাও একটা স্বাভাবিক দাম্পত্য সংলাপ পৃথিবীতে। অবশ্যই জীবনে অনেক কিছুর প্রয়োজন আছে, সংসারের সব জিনিষ সব সময়ই উপস্থিত থাকবে এমনও না, কিন্তু দেখা মাত্রই ঝাপিয়ে পড়ে চাহিদার কথা জানানোর মানে হয় না।
বিষয়টা ক্রমশ দুরত্ব বাড়ায়। বিষয়টা শুরু হয় একেবারে সাধারণ ঘটনা থেকেই, দুরত্ব বাড়তে বাড়তে একটা পর্যায়ে ফিরে না আসবার জায়গায় গিয়ে পৌঁছায়।
ঘটনাগুলো ঘটবার ক্রম হয়তো ঠিক থাকবে না, তবে অধিকাংশ যুগল যাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে, তাদের বিবাহবিচ্ছেদ পুর্ববর্তী দৈনন্দিন জীবনকে দেখলে দেখা যাবে, বাইরে থেকে ছেলেটা এসেছে, এসে নিজের মতো খুটখাট করছে, হয়তো ছবি নামিয়ে পরিস্কার করছে, হয়তো বই সাজাচ্ছে, হয়তো বাইরে গিয়ে বসে আছে, হয়তো টিভি দেখছে,
একই সময়ে মেয়েটাকে দেখা যাবে রান্না ঘরে বসে আছে, কিংবা অন্য কোনো ঘরে যেখানে ছেলেটার উপস্থিতি নেই। দুজন দুজনকে এড়িয়ে চলছে। তারা নিজেরা যতটুকু কথা না বললেই না ততটুকুই বলছে।
হয়তো এই কথা হওয়া না হওয়ার মাঝখানেও নিয়মিত যৌনসম্পর্ক আছে। তবে সল্প শাররীক ঘনিষ্ঠতায় নিরাপত্তার আশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে না। ছেলে এবং মেয়ে উভয়েই সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার শঙ্কায় নীল।
এর ঠিক পরের পর্যায়ে মেয়েটা কিংবা ছেলেটা অন্য কোনো মানুষের সাথে মানসিক যোগাযোগ খুঁজে পাচ্ছে, অন্য ব্যক্তি যেভাবে তাকে বুঝছে তার সঙ্গী তাকে ঠিক সেভাবে বুঝছে না। বিষয়টা পারস্পরিক আলোচনার এটা উপলব্ধি না করেই তারা নিজেদের কাছে পরিস্কার না হয়ে এই সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করছে রাজ্যের সব মানুষের সাথে।
এই পরিণতি এড়ানো যেতো সহজেই, যদি যোগাযোগটা অক্ষুন্ন থাকতো। যদি সঙ্গী নিজেকে আকাঙ্খিত মনে করতো। পৃথিবীর সব কিছুর চেয়ে বেশী মূল্যবান আমি, এই বোধটুকুই একজন মানুষকে অন্য একজন মানুষের সাথে যুক্ত রাখে। যেখানে এই বোধ এবং নিশ্চয়তাটুকু পায় মানুষ, সেখানেই সম্পর্কের নোঙর ফেলে তারা।
কোনো সম্পর্কে জটিলতা তৈরি হয়েছে বুঝবার অব্যর্থ উপায়-
০১- দম্পতিযুগল পরস্পরকে এড়িয়ে চলছে,
০২- তাদের ভেতরে অর্থনৈতিক আলোচনার বাইরে তেমন আলোচনা হচ্ছে না।
০৩ - তারা অন্য কোনো শখ নিয়ে মেতেছে কিংবা তাদের দৈনন্দিন জীবনে নতুন কোনো অভ্যাস যুক্ত হয়েছে।
এমন কি অতিরিক্ত ঘর গোছানোর প্রবনতাও কিংবা অতিরিক্ত শুঁচিবায়িতাও সম্পর্কের দুর্বল স্বাস্থ্যের চিহ্ন।
০৪- তারা সঙ্গীর বাইরে অন্য কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে উচ্ছসিত।
যারা পরকীয়া করতে আগ্রহী এবং কখনই সঙ্গীর কাছে সেটা স্বীকার করতে নারাজ, তাদের জন্য একটাই উপদেশ-
নিজের ভেতরে গুটিয়ে থাকা ভালো। অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস এবং স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্যুতি আপনার নতুন সম্পর্কের আভাস।
--------------
পৃথিবীতে প্রায় নষ্ট কিংবা দুর্বল দাম্পত্য সম্পর্কের গল্প একটাই, তুমি আমাকে বুঝো না, তুমি আমাকে আমার মতো গ্রহন করতে পারছো না, অথচ ঠিক একই সময়ে অন্য কেউ কিভাবে যেনো এই বিষয়টাই ঠিকঠাক বুঝতে পারে। সেই তৃতীয় পক্ষের সাথে যোগাযোগের কারণ যৌনতৃষ্ণা নিবৃতি নয় বরং বলা যায় এই উপলব্ধিটুকু, ইউ মেড মি ফিল এলাইভ। তোমার কাছে এসেই আমি আমার আমার মতো থাকতে পারি, একেবারে নির্ভেজাল, নিজের ইচ্ছামতো চলতে পারি। তোমার কাছে এসেই বুঝতে পারলাম আসলে এত দিন দাম্পত্যে আমি ঠিক কোন শূন্যতার বোধটা নিয়ে ছিলাম।
এটা শতকরা ৮০ শতাংশ মানুষের গল্প।
বাকী ২০ শতাংশ মানুষ নিজের যৌনতৃষ্ণা নিবৃতিজ জন্যই বিবাহবহির্ভুত সম্পর্কে জড়ায়। যদি এমন কেউ সঙ্গী হয়ে যায় তবে ইউ আর ফাকড আপ ম্যান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।