শুধু বিদেশী কূটনীতিক নয়, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে ভিয়েনা কনভেনশন বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট গ্রুপ (এনআইজি)। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশী কূটনীতিকদের অবারিত হস্তক্ষেপের পেছনে দুই নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাসহ রাজনীতিবিদদের দৈন্য, তথাকথিত সুশীল সমাজ নামধারী এনজিওগুলোর তৎপরতা আর ব্যবসায়ী-আমলাসহ সুবিধাভোগী মহলের উৎসাহকেই দায়ী বলে মনে করে এ সংস্থা। গতকাল সংস্থার তরফে বাংলাদেশে বিদেশী কূটনীতিকদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ নিয়ে ত্রৈমাসিক রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন সংস্থার সমন্বয়কারী সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান, দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদক আতাউস সামাদ ও বিশিষ্ট কলামনিস্ট ফরহাদ মজহার।
মাহমুদুর রহমান এদেশে বিদেশী কূটনীতিকদের অনাকাকাক্ষিত হস্তক্ষেপের পেছনে তথাকথিত সুশীল সমাজের ভূমিকাই বেশি বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, এ দেশের দারিদ্র্য ফেরি করে যারা পকেট ভারি করেছে তারা এখন রাজনীতিকেও নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। স¤প্রতি নিউ ইয়র্ক সফরকালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিচার্ড বাউচারের সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করার অঙ্গীকার করেছেন। একইভাবে ভারতের মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলার পর দক্ষিণ এশিয়ার টাস্কফোর্স গঠনে প্রস্তাব দিয়েছেন। দখলদার শক্তির আরেকটি নাম হচ্ছে টাস্কফোর্স। এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে মার্কিন ও ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের শিকার বানানোর চেষ্টা চলছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
সিপিডি’র সঙ্গে তার মানহানির মামলা তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিউটেনিসের মধ্যস্থতায় সমাধান হয়েছিল উল্লেখ করে তার ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হলে জোট সরকারের সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধেই আমাকে এ সমঝোতা করতে হয়েছিল। আমি তখন সরকারে ছিলাম। স্বাধীন ছিলাম না। তিনি ওই সমঝোতার জন্য এখন বিব্রতবোধ করেন কিনা প্রশ্ন করা হলে বলেন, সুশীল সমাজ সারেন্ডার করেছিল। আমি করিনি।
তারা বিউটেনিস-আনোয়ার চৌধুরীকে ধরে ছিল। এতে আমার পরাজয় হয়নি। তাদের পরাজয় হয়েছে।
আতাউস সামাদ বলেন, বিদেশী কূটনীতিকদের মূল্যায়ন করা দুই নেত্রীর রক্তের মধ্যে ঢুকে গেছে। শেখ হাসিনার উচিত ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা।
তিনি উপ-সচিব মর্যাদার বাউচারের সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। বাউচারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তিনি তার সহকারী হাসান মাহমুদকে পাঠাতে পারতেন। তিনি আরও বলেন, বিদেশী কূটনীতিকদের এই অতিরিক্ত নাক গলানোর পেছনে দুই নেত্রী তাদের ভূমিকা অস্বীকার করতে পারেন না। পাবলিক ডিপ্লোম্যাসির কথা বলে তারা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন। তবে তাদের কর্মকাণ্ড কিছুতেই পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি হতে পারে না।
আতাউস সামাদ বলেন, কূটনীতিকদের এ বাড়াবাড়ির পেছনে মুখ্য ভূমিকা হচ্ছে সুশীল সমাজ ও এনজিও সেক্টরের। তাদের আশকারা পেয়েই কূটনীতিকরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অ-কূটনৈতিক ভূমিকা রাখার সুযোগ পাচ্ছে।
ফরহাদ মজহার বলেন, এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর চরিত্র হচ্ছে দলবাজি, মাস্তানি, চুরি, ডাকাতি, লুটপাট, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন। এটা কোন অর্থেই রাজনীতি নয়। তিনি আরও বলেন, জাতীয় স্বার্থ হচ্ছে নির্দলীয় রাজনৈতিক প্রশ্ন।
আর আমরা বহু গোষ্ঠীতে ও স্বার্থে খণ্ড-বিখণ্ড। রাজনীতির এই দুর্দশা এ দেশকে বিপজ্জনক ও ভয়াবহ অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে। ২০০৭ সালের এক-এগারোকে কূটনৈতিক মিশনগুলোর সহায়তায় বেসরকারি লেবাসে সামরিক অভ্যুত্থান হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের একটি রাজনৈতিক দলও পরাশক্তির এই হস্তক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম হয়নি। তার মতে, বিদেশী কূটনৈতিক মিশনগুলোর এই নাক গলানোর ধৃষ্টতা মোকাবিলার শক্তি বাংলাদেশের নেই।
অনুষ্ঠানে এনআইজি’র ত্রৈমাসিক রিপোর্টের একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করা হয়।
এতে বিভিন্ন কূটনীতিকদের গত তিন মাসে ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘনের উদাহরণ তুলে ধরা হয়। এ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া, এনআইজি আটটি দাবিও জানিয়েছে। এর মধ্যে ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন করলে যে কোন বিদেশী রাষ্ট্রদূত বা কূটনীতিককে পারসোনা ননগ্রাটা বা অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি রয়েছে। এছাড়া, রাজনৈতিক দলগুলোকে ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলা, গণমাধ্যমকে কূটনীতিকদের রিপোর্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হওয়া ও দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়।
এছাড়াও এনআইজি কূটনৈতিক মিশনগুলোকে নিয়মিত ভিত্তিতে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশী সাক্ষাৎকারীদের তালিকা প্রকাশ ও দূতাবাসের বাইরে সব ধরনের অনুষ্ঠান বা সাক্ষাৎকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানানোর আহ্বান জানিয়েছে।
(দৈনিক মানবজমিন, ৭/১২/২০০৮)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।