স্যাম্পল, কি টেস্টার! জীববিজ্ঞান, কি বিজ্ঞাপন!
পারিবারিক কারণে অফিস-কামাইয়ের তৃতীয় দিন, আর তার বদৌলতে ব্লগ-কামাইয়ের টানা পঞ্চম দিন, গাড়িতে বাড়ি যেতে যেতে সকাল সকাল ভাবি- অফিস ফিরে ভালো কিছু লিখবো এবার ব্লগটগ, উর্বর হবো একটু। যেতে পথে শুনতে পাই- খালাতো বোন (যার ক্যান্সার ধরা পড়ে কিছুদিন আগেই কেবল, বিয়োন্ড-কিওর সাব্যস্ত হয়ে যে এই ক'দিন আগেই ফেরত গ্যালো বাড়িমুখে) যে আবার সদর হাসপাতালে শয্যা নিল দু'দিন আগে, তার অবস্থা বেশিই খারাপ। সহোদর ছোটবোনকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধের সো-ফার-বিফল পাট চুকানোর পর হোস্টেল থেকে তুলে নিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিতে মেলা করা আমি ভাবি- নাজু আপাকে শেষ-দেখারই বুঝি ব্যবস্থা হ'লো আমার।
বাসায় ওঠার আগে যখন হসপিটালে পা ফেললাম, যেখানে মা আর অন্য সহোদরাটিও আগে থেকেই ছিল আরো অনেক রক্তীয় নাতিদূর আত্নীয়ের মধ্যে, দেখলাম- দেখা হওয়ার অবস্থায় নেই সেই অগ্রজা আমার। আমিই দেখে গেলাম, দেখে এলাম- কীভাবে বালিশে উপুড়-নিবদ্ধ নাজু আপা না-দেখা দেশে না-দেখার দেশে পাড়ি জমানোর দিন গুনছে দমে দমে কতো বড় ঝড় তুলে অক্সিজেনের ছোট্ট বেলনে!
মরণের দাপাদাপিতেও থেমে থাকে না জীবনের অন্য কোনো তাড়াই খুব বেশিক্ষণ।
ভেজা ভারী মন নিয়ে আমরা আপাতত চ'লে গেলাম বাসায়। ঝড়োগতিতে খেয়ে দেয়ে মা-বোনদের জড়িয়ে পেঁচিয়ে আবার যাত্রা করলাম ঢাকার পালার দিকে।
ক্লান্ত শরীর-মন নিয়ে সারারাত ক্ষ্যান্ত থাকি গহন ঘুমের ন্যস্ত পাড়ানিতে।
ঘুম ভেঙে অফিস-যাত্রার প্রস্তুতি নিতে নিতে বড়ভাইয়ের কাছে খবর পাই- ওদিকে শুরু হয়েছে শবযাত্রা। রাত সোয়া দুইটায়, নাজু আপার শেষ শোয়া সম্ভব হয়েছে সেই উপুড়-ত্রিভঙ্গ আসন ছেড়ে।
সে আর নেই।
নানার বাবা, নানা (সেই বাবার বড় ছেলে), নানারও বড় ছেলে (মানে আমার বড় মামা)- সবাই আগেই পাড়ি দিয়েছে ওই পাড়ে, এই একই মারণব্যাধির টানে। এই প্রথম শিকার হ'লো ভাইবোনদের মধ্যে কেউ। মাতৃকুলের কাজিনদের মধ্যে সে-ই ছিল অগ্রজ। গ্যালোও সে-ই আগে।
আমরা তাকে না-যেতে-দেবার বেয়াদবিটুকুরও সাধ্য পাইনি কোনোভাবে। নিজেকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করি না এখনও খুব বেশি। সন্ত্রাসী জিন আর সন্ত্রস্ত মন নিয়ে আবার মনে করি, মনে মনে ভাবি- গতকাল ফেরার সময় আমার দুই সহোদরাকে জড়িয়ে ধ'রে মুখে বলা- "যা-ই হয় ডাক্তারের সাথে কথা বলবা, ছোট কিংবা অসংশ্লিষ্ট কি না সেটা ডাক্তার বুঝবে, তোমাদের কাজ হ'লো কিচ্ছুটি পুষে না রাখা", আর মনে মনে ভয়ে ভয়ে শিউরে ওঠা। নীরব কান্নায় ভেঙে ভেঙে পড়ি আজ। ভেঙে যেতে থাকি।
প'ড়ে যেতে থাকি।
[ব্যক্তিগত দুঃখকে গণসম্পত্তি না-বানানোর পক্ষে থাকতেই পারেন সম্মানিত পাঠক। তবু, ক্ষমা চেয়েই বলি অপারগতার কথা- ভালো কিছু শেয়ার করার মতো পেলাম না যে একেবারেই! আর সবাই অবশ্য পড়বেনও না এটা- তাও আমি মনে মনে জানি। এই ভরসাতেই বস্তুতই ভাসিয়েই দিলাম শেষমেশ এই ব্যক্তিগত মেঘ। মাফ করবেন।
]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।