অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
আপাতত সন্দেহের তীর অনেক দিকেই ছোঁড়া যায়, রক্তের দাগ শুকিয়ে গিয়েছে হয়তো ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাসে, হোটেল তাজ আর ওবেরয়ের বাহ্যিক কাঠামোতে লেগে থাকা আগুণের কালচে ছাপও সময়ের সাথে মুছে যাবে, নতুন করে, নতুন সাজে আবার সাজবে এইসব বাণিজ্যিক ভবন। মানুষকে গন্তব্যে যেতেই হয়, ঘরে ফেরা কিংবা ঘর ছাড়া যে কোনো কারণেই হোক মানুষ যাবে ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাসে।
পৃথিবীতে তেমন অদল বলদ ঘটবে না, নিজের নিয়মেই পৃথিবী চলবে, শুধু ৫০০ পরিবার স্মরণ করবে প্রতি নিয়ত মানুষের নৃশংসতার বিভীষিকা। এদের ভেতরে ২০০ জন তাদের অভিজ্ঞতা কখনই বলতে পারবে না, বাকি ৩০০ জন তাবত জীবতকাল বলে বেড়াবে তাদের মমর্মান্তিক অভিজ্ঞতার কথা।
তবে সন্দেহের তীর এদিক ওদিক ছোঁড়া হতেই থাকবে, কেউ কাউকে একবিন্দু জমি ছাড়তে নারাজ, মতাদর্শ, অর্থনীতি, রোজকার হিসেব নিকেশ চুকিয়ে ফেলেছে মৃতরা, জীবিতরা নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনায় ব্যস্ত।
মুম্বাই ৬০ ঘন্টা কার্যত অবরুদ্ধ ছিলো গোয়েন্দা সংস্থার হিসেবে মাত্র ১২ জন উন্মাদের হাতে, ১২ জন উন্মাদ একটা শহরকে ত্রস্ত করে রাখতে পারে, স্বাভাবিক জীবন যাপন প্রক্রিয়াকে স্তব্ধ করে দিতে পারে, বিভীষিকার মতো ২টা দিন উপহার দিতে পারে একটা মেট্রোপলিটন শহরকে। ১২ জন মানুষের হাতে জিম্মি হয়ে থাকা একটা জনপদ পুনরায় সস্তি ফিরে পেয়েছে।
সবচেয়ে আশ্চর্য হলো এই ১২ জনের কোনো দাবি নেই, চাহিদা নেই, তারা হঠাৎ কোনো এক দিন সকালে উঠে উপলব্ধি করলো তাদের মানুষ শিকার করতে হবে, কোনো আদর্শিক যোগাযোগ থেকে নয়, বরং আচমকা তাদের মনে হলো ধরা যাক দুই একটা ইঁদুর এবার।
তারা জনাকীর্ণ একটি স্টেশনে বন্দুক তুলে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করলো, এরপর তারা ১০টি স্থানে গোলাগুলি করে অনেকগুলো মানুষকে হত্যা করবার পরে ৪টা ভবন দখল করে সেখানের মানুষগুলোকে জিম্মি করে রাখলো ৬০ ঘন্টা।
প্রাথমিক হিসেবে হামলাকারীর সংখ্যা ৪০ থেকে বেড়ে ১০০, ১০০ থেকে বেড়ে ২০০, এবং এরপর আচমকা শেয়ার বাজারের মতো গোত্তা খেয়ে ১২তে এসে স্তব্ধ হলো, এদের ভেতরে ১১ জন নিহত হয়েছে, জীবিত একজন পুলিশের হাতে আটক, সেই বলেছে অবশিষ্ট হামলাকারীদের নাম।
আপাতত নাগরিক সংবাদসংস্থাগুলো এই নিয়ে ব্যস্ত। ব্লগে এই পক্ষ- অন্য পক্ষ বিভাজন। হিন্দু জঙ্গীবাদী হামলা এটা নাকি এটা মুসলীম জঙ্গীবাদ এই নিয়ে বিতর্ক, প্রত্যেকেই অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে সিংহ শিকার করেছেন বলে দাবি করছেন।
ঘটনার অদ্যোপান্ত জানা যাবে না, বিশেষত যখন উপমহাদেশের পুলিশী জেরায় এমন কি হরিণও স্বীকার করে নেয় যে বাঘ মেরে খেয়ে ফেলেছে। সুতরাং আমাদের হাতে এমন কোনো প্রমাণ নেই যার ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি হামলাকারীর ধর্মীয় পরিচয় কিংবা উদ্দেশ্য কি ছিলো, আমরা এমন কি এও বলতে পারবো না আদৌ যেই ১১ জনকে মারবার কৃতিত্ব দাবী করছে কমান্ডো দল তারা আদৌ সন্ত্রাসী কি না।
এমন কি ধৃত একজন বাদ দিলে অন্য কেউ নিহত হয়েছে কি না এটাও আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব হবে না কোনো দিন।
তারা সংখ্যায় যে কয়জনই হোক না কেনো, তাদের ধর্মীর পরিচয় যাই হোক না কেনো, এটা কোনো উদ্দেশ্য পূরণের পন্থা হতে পারে না। সামরিক বিশ্লেষকেরাও অনেক দিকে আঙ্গুল তুলছেন, মুসলিম নিষ্পেষণ, সংখ্যালঘু নিষ্পেষণ, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রতি প্রতিবাদ, তবে যেহেতু এই খুনীগুলো কোনো দাবিদাওয়া না জানিয়েই নির্বিচারের খুন করা শুরু করেছে সুতরাং তাদের পরিচয় আমরা জানবো না, তাদের উদ্দেশ্য আমরা জানবো না।
আমাদের সীমাবদ্ধ তথ্যভান্ডারে হয়তো কখনই পৌঁছাবে না এর বিশদ সংবাদ, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা তত্ত্বের বেড়াজালে এই তদন্তের সব সংবাদ হাপিশ হয়ে যাবে।
মানুষের নৃশংসতা আমাকে আশ্চর্য করে।
কোনো কারণ ছাড়াই, কোনো বিশাল মাপের অর্জনের লোভ ছাড়াই মাত্র ১২ জন নেশাসক্ত মানুষ একদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই মানুষ খুন করতে শহরের রাস্তায় নেমে পড়লো বন্দুক হাতে, আর এই হামলা করবার প্রস্তুতি তারা নিয়েছে অনেক আগে থেকেই, নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিয়ে করা এই হামলা আদতে আমাদের নিজেদের মানবীয় মানসিক বিকারের বাইরে আর কি প্রকাশ করলো?
ফুট নোট:
আমার নিজের সন্দেহ, অনেক জঙ্গী কিংবা উন্মাদ এই হামলা চালানোর পরে নির্বিঘ্নে সটকে পড়েছে, তাদের আটক করা সম্ভব হবে না।
আমার নিজের সন্দেহ এটা কোনো উটকো জঙ্গী দলের কাজ নয়, বরং প্রশিক্ষিত সেনাসদস্যদের কাজ,
আমার সন্দেহ এই উন্মাদ মানুষগুলো অনেক দিন ধরেই বসবাস করছে তাজ এ নিয়মিত অতিথি হিসেবেই, তাদের অর্থের কমতি ছিলো না, এমন কি সেই দিন উপস্থিত অতিথীদের তালিকায় এদের নাম থাকবে।
আমার বিশ্বাস নিহত ২০০ মানুষ কখনই জীবিত হবে না, মৃত মানুষের জীবিত হওয়ার অলৌকিক ঘটনাগুলোর সমাপ্তি হয়েছে যীশুর মৃত্যুর সাথেই ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।