আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে একদিন (২) - অতল খাতের গহীন বিষ্ময়

জাদুনগরের কড়চা

(প্রারম্ভ ) (পর্ব ১ ) গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে যাওয়ার রাস্তাটা দেখলে বোঝা যায় না, পুরো এলাকাটা সমূদ্রসমতল থেকে এতো উঁচু। আসলে পুরো এলাকাটা মালভূমি - তাই পাহাড় পর্বত বেশি নেই। উইলিয়ামস নামের ঐ শহরটা থেকে পরদিন সকালে রওনা হলাম আমরা, প্রায় ৫০ মাইল দূরে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্কের অবস্থান। পার্কে ঢোকার আগে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটা ছোটখাটো সিনেমা হল আছে, আইম্যাক্স থিয়েটারে দেখানো হয় এই গিরিখাতের পুরো ইতিহাস। হাতে সময় আছে, তাই ঠিক করলাম ওখানে একবার ঢুঁ মেরে যাই।

এ এলাকায় সাদা মানুষের আসার অনেক আগে, সেই ৪০০০ বছর আগে সেখানে আদিবাসীদের বসতি ছিলো। সেই প্রাচীন শিকারী যাযাবর আদিবাসীদের খুব বেশি নিদর্শন নেই, কেবল বাচ্চাদের জন্য গাছের ডাল আর সুতা/লতা দিয়ে তৈরী করা কিছু কাঠের খেলনা পাওয়া গেছে, যা ৪০০০ বছরেরও বেশী পুরানো। এই যাযাবরদের পরে অনেক দিন কেটে যায়, তার পর এখানে আসে "আনাসাজি" নামের আদিবাসীরা। আজ থেকে ২৫০০ বছর আগে থেকে এদের বসবাস শুরু হয়, পাথরের ঘরবাড়ি তৈরী করে বাস করতো তারা এখানে। ১২শ শতকে এখানে প্রচণ্ড খরার মুখোমুখি হয়ে আদিবাসীরা চলে যায় অন্যত্র।

এর পরে অনেকদিন জনমানবহীন কাটার পরে নতুন পাইউতে আদিবাসীরা আসে। আর শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে স্পেনীয় অভিযাত্রীরা এখানে আসে ষোড়শ শতকে, আর পরে উনবিংশ শতকে প্রথম চেষ্টা চালানো হয়, নৌকায় করে এই ক্যানিয়নের তলায় অবস্থিত কলোরাডো নদী পাড়ি দেয়ার। অনেক অভিযাত্রীর মরণের পরে সম্ভব হয় প্রথম এটা পাড়ি দেয়া, আর এই এলাকার মানচিত্র তৈরী করা। আজ অবশ্য এতো ঝামেলা পোহাতে হয়না, আইম্যাক্স থিয়েটারে বসে চোখের নিমেষে নেমে এলাম ক্যানিয়নের উপর থেকে এক মাইল গভীরে, খরস্রোতা কলোরাডো নদীর স্রোতের সাথে ভেসে চললাম ক্যানিয়নের তলদেশ ধরে, দেখতে পেলাম গভীরের সেই গুহাগুলো, যেখানে এক সময় আদিবাসীদের বসবাস ছিলো। দিব্য চোখে দেখতে পেলাম হাজার বছর ধরে বিষ্ময়ে অভিভূত মানুষদের ... প্রকৃতির প্রকাণ্ডতার কাছে নিজের সামান্যতা বোঝার মতো এরকম জায়গা দুনিয়াতে কমই আছে।

---------- ক্যানিয়ন পার্কে ঢুকতে গাড়ি প্রতি ২৫ ডলার লাগে, সেটা দিয়ে দিলে ভেতরে ঢোকা যায় ৭ দিন। আমাদের অবশ্য একটা দিনই সম্বল। মার্কিনীরা অভিযানপ্রিয়, তাই অনেকে আরভি-তে করে রীতিমতো সংসার নিয়ে পার্কে চলে যায়, এখানেও তার ব্যতিক্রম দেখলাম না। পার্কের ভেতরে এইসব ঘরবাড়ি মার্কা গাড়িগুলো পার্ক করে রাখার জায়গা আছে আলাদা। তবে নির্দিষ্ট জায়গার পরে আর গাড়ি নিতে দেয় না, পার্কের নির্ধারিত বাসে করে ঘুরতে হয়।

---------- সময় মাত্র এক দিন, কিন্তু দেখার আছে অনেক কিছু। ঠিক করলাম বাসে করে পশ্চিম দিকের পয়েন্ট গুলো দেখবো। পার্কের কেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রায় মাইল দশেক জায়গা জুড়ে পর্যটকদের দেখার জন্য বিভিন্ন স্থানে ব্যবস্থা করা আছে। পার্কে ঢুকতেই শুরুতে পড়ে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ভিলেজ, যেখান থেকে শাটল বাসগুলোর যাত্রা শুরু। গাড়িটা পার্ক করে আমরা দুজনে প্রথমে কাছের পয়েন্টটাতে সরাসরি চলে গেলাম।

ইয়াভাপাই অবসারভেশন স্টেশন নামের এই জায়গাটা আসলে নামেই গালভরা ... প্রকৃতির সৌন্দর্যকে নষ্ট হতে না দেয়ার জন্য অল্প একটু রেলিং দেয়া একটা জায়গা। সেখানে পৌছে যখন তাকালাম সামনে, এক অভাবনীয় দৃশ্য ভেসে এলো চোখের সামনে, লাল গোলাপী কমলা রঙের পাহাড় যেন এক অজানা ভাষ্কর খোদাই করে রেখেছে চোখের সামনে। রেলিং এর উপর দিয়ে সাহস করে নিচে তাকালাম, খাড়া নেমে গেছে পর্বত, ১ মাইল গভীরে। এর আগে শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ারের উপরে উঠেছিলাম, সেটা বড়জোর ১৪০০ ফুট (৪৪০ মিটার) উঁচু, আর সেই তুলনায় এখানে পর্বত খাড়া নেমে গেছে ১ মাইল (৫০০০+ ফুট!!)। গাইডেরা বার বার সাবধান করে দিচ্ছে ছবি তোলার উৎসাহে বেশি এগিয়ে না যেতে, একটু বেখেয়াল হলেই পপাৎ ধরণীতল, সেই ১ মাইল গভীরে পড়ে মৃত্যু নিশ্চিত।

কিন্তু আমাদের মনে তখন আর নেই শংকা, অপার বিষ্ময়ে দেখে চলেছি প্রকৃতির এই ভাষ্কর্যরাশি। (চলবে)


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.