গোসলের পর তাদের প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে। নাপাকি হোক কিংবা ভিন্ন ধরনের লিঙ্গ হোক। বিধাতা ক্ষুধাটাতো সকলকেই দিয়েছে। প্রতিটি মানুষের ক্ষুধা লাগবেই। এটাইতো স্বাভাবিক।
প্রতিটি জীব খাবারের জন্য সংগ্রাম করে যা চলে মৃত্যু পর্যন্ত। যদি ক্ষুধা নামক কোনো কিছুর অস্তিত্ব না থাকতো তবে এ জগতে হয়তো মানুষ আরো সুন্দর করে বাঁচতে পারতো। সে যাই হোক। হিজড়াদেরও তো পেট আছে। দৈহিক যৌন চাহিদা হয়তো তারা স্বাধারণ মানুষদের মতো মেটানোর সুযোগ পায় না।
কিন্তু খাবারের সুযোগ করে দেয়া তো বিধাতারই দায়িত্ব ছিল। দূর্ভাগ্যক্রমে তাদের সেখান থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। অবশ্য তা বিধাতার দোষ কোথায়! দোষ হচ্ছে সামাজের, দোষ হচ্ছে সমাজের কুসংস্কারের। সমাজ তাদের কোনো কাজ করতে দেয় না। সমাজ তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিতেও অপারগ।
স্বাধারণ ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে তাদের স্কুলে ভর্তি করা যাবে না। তাহলে কোনো এক অজানা অভিশাপে অন্যরা অভিশপ্ত হবে। মাধুরীও একবার এক স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। ক্লাস ফোর পর্যন্ত সে অনেক সাবধানে নিজেকে লুকিয়ে রেখে পড়াশুনা করেছে কিন্তু শেষমেষ আর টিকতে পারে নি। মেয়েলি স্বভাব আর মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার কারণে স্কুলের শিক্ষকরা তার লিঙ্গ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে।
এবং পরে প্রধান শিক্ষকের রুমে নিয়ে তাকে লিঙ্গ প্রমাণের জন্য বলা হয়। সে অস্বিকার করে। সে বরাবরই বলে এসেছে সে ছেলে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক এক পর্যায়ে তাকে উলঙ্গ হয়ে লিঙ্গ প্রমাণের জন্য বলে। এই হলো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা।
যেখানে শিক্ষা মূল বিষয় নয়। মূল হয়েছে লিঙ্গ। বর্তমান সংস্কার যুগে ছেলে কিংবা মেয়ে হলে পড়াশুনা করা যাবে কিন্তু হিজড়া হলে পড়াশুনা করা যাবে না। এই হচ্ছে আমাদের আধুনিকতা!
বিধাতা কুকুরের প্রতি সদয় হতে বলেছেন, তুচ্ছ তুচ্ছ কীট পতঙ্গের প্রতি সদয় এবং দয়াময় হতে বলেছেন। আমাদের হুজুররা তো তাই বলেন কিন্তু বিধাতা তো তৃতীয় লিঙ্গ নিয়ে কিছু বলেছেন কিনা আমরা জানি না।
কোরআনে বারবার নারী-পুরুষের কথা উঠে এসেছে কিন্তু হিজড়াদের কথা এসেছে কিনা আমার জানা নাই। মাধুরীর মনে এই প্রশ্ন শুরু থেকেই। এই বিশ্বের অপার সৌন্দর্য দিতে বিধাতা কোনো কার্পন্য করেননি কিন্তু তাদের সৌন্দর্য কেনো বিধাতা দিলেন না! যদি এটা অভিশাপের জন্য হয়। তবে অন্যের অপরাধের শাস্তি তাদের কেনো দেয়া হবে।
বিধাতাতো মানুষকে মনও দিয়েছে।
সেই মন থেকে এই সমাজ, এই মানুষগুলো কেনো তাদের স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারে না? মানুষের ভিড়ে তারা কেনো যেতে পারে না! মাধুরী এসব নিয়ে একসময় প্রচুর ভাবতো কিন্তু এখন ভাবনার হাল ছেড়ে দিয়েছে। হিজড়া পল্লীতে নিজের নাম লেখানোর পর থেকে কোনো সংস্কারক চিন্তা তার আর করতে ইচ্ছে হয় না। তাদের মতোই আক্রমণাত্বক হতে তাকে বাধ্য হতে হয়েছে। খাবার চাইলে খাবারও পাবো না.....কাজ করতে চাইলে কাজও পাবো না...এটা তো হতে পারে না। তাই প্রতিবাদ।
জঘন্যতম নির্লজ্জ প্রতিবাদ। কখনও মানুষের উপর ঝাপিয়ে কখনও লেংটা নাচ দিয়ে সবাইকে বিব্রত করে দাবি আদায়। এ সমাজ সহজভাবে তাদের কিছু দিবে না এটা তারা জানে তাই সব-সময় লজ্জাকে ভুলে থাকে। বিধাতা যখন তাদের দিকে তাকায় নি তখন বিধাতার দিকে তাকানোর সময়ও তাদের নেই। আর তাই সমাজের দিকে তাকানোর তো কোনো প্রশ্নই হয় না।
ক্ষিধা নিয়ে তারা তিনটি বাড়ির সামনে গিয়ে ভালোমতো খাবার চেয়েছে। কিন্তু কেউ দরজা পর্যন্ত খুলে নাই। কারো দরজা তাদের জন্য খোলা যেনো নিষিদ্ধ। হাটতে হাটতে তারা একটি জরাজির্ন বাড়ির সামনে এসে দাড়ায়। বাড়ির উঠোনে গাছের শুকনো পাতার স্তুপ।
ঘরের চালে অসংখ্য ফুটো। বৃষ্টির সময় এই ঘরে থাকার কোনো মানে হয় না। দরজা-জানালা খোলা। মনে হয় নিশ্চিন্ত মনে কেউ আছে এই ঘরে। যার কিছু হারানোর ভয় নেই।
অথবা হতে পারে এই ঘরে কেউ থাকে না। তারপরও বাইরে একটি শাড়ি শুকাতে দিয়েছে কেউ। তাই তারা ভাবছে হয়তো কেউ আছে এই ঘরে। উঠানে শুকনো পাতার উপর দাড়াতেই পাতার মড়মড় শব্দে যেনো ঘরের নিস্তব্ধতা বোঝা যায়। বোঝা যায় অনেকদিন এই ঘরে কেউ কথা বলে না।
উঠানে দাড়িয়ে তারা খেয়াল করলো বামপাশের আমগাছের নিচে সারিবদ্ধ ভাবে চারটি কবর।
- আম্মাজানেরা আসেন।
এক বৃদ্ধ মহিলার কন্ঠ। মানুষের সাথে হাসি তামাশা করা এবং জোর জবরদস্তি করে নিজেদের দাবি আদায় করা এই তিন হিজড়া কোনো দিন আব্বা কিংবা আম্মা ডাক শুনতে পায় নি। আর আজ তাদের কেউ একজন বলছেন আম্মাজান।
পরম মমতা ভরা সে কন্ঠ। সেই কন্ঠের মধুর আওয়াজ তাদের অন্তরে প্রবেশ করে শিহরণ জাগায় পুরো শরীরে। কারিশমা ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় সামনে। বৃদ্ধাকে দেখা যায় না। তিনজনের চোখই খুজতে থাকে সেই কন্ঠের মানুষটিকে।
মাধুরী বলল, মাগো..আপনে আমাগো আম্মা বলতাছেন কেন? আমরা তো অন্যজাত।
কবরের পাশে একটি ছোট্ট ছাউনিতে তারা দেখতে পায় বৃদ্ধ মহিলাকে। বৃদ্ধ মাহিলাটি সেখান থেকে বের হয়ে আসেন। তাদের সামনে এসে বলেন, আপনারা আমার আম্মাজান। অন্যজাত বলে এই দুনিয়াতে কিছু নাই।
আমরা সব্বাই মানুষ। আপনেরা আমার আম্মাজান। না মানলেও আপনাগোরে আম্মা কইয়াই ডাকুম।
তারা তিনজনই অবাক হয়ে বৃদ্ধার দিকে চেয়ে থাকে। বৃদ্ধার শরীরে ছেড়া শাড়িটি সে কোনো মতো পরে আছে।
বোঝাই যাই নিছক লজ্জা নিবারণের জন্য পোষাক পরিধান করা। গায়ের চামড়া কুচকে গেছে। চোখগুলো ভেতরে ঢুকে গেছে। বয়সের ভারে সোজা হয়ে দাড়াতে পর্যন্ত পারে না।
করিশমা নিচু স্বরে প্রশ্ন করে, ঐডা কি কব্বর।
- যে আম্মা। ঐডা কবর।
- কার কব্বর?
মাধুরী তাকে আর প্রশ্ন বাড়াতে দেয় না। মাগো, আপনার কাছে একটু খাবার হইবো? দুইডা ভাত দেবেন? ভাত খামু।
বৃদ্ধা কথা শুনে তাড়াতাড়ি ঘরের দিকে দৌড় দেয়।
আর বলতে থাকেন, ওরে আল্লাহ, আমার আম্মাজানে গো ক্ষিদা লাগছে। তাগো লাইগা ভাত হইবো না। এইডা কেমুন কথা। হইবো হইবো। আম্মাজানেরা আসেন ভেতরে আসেন।
জরাজীর্ণ বাড়ির ভেতরে তারা তিনজনই ঢুকে। এত আদর আপ্যায়ণ তারা কখনও পায়নি। এতো মধুর স্বরে তাদের কেউ কখনও ঢাকে নি। তারা ছোট থেকে শুনে এসেছে মানুষের গালি। মানুষের কটাক্ষ, তাচ্ছিল এ সবই তারা পেতে পেতে বড় হয়ে উঠেছে।
আদর নামক শব্দটি তারা শুনেছে কিন্তু তা কেমন হয় তা অনুভব করার সৌভাগ্য তাদের হয় নি। কারণ তারা হিজড়া। হিজড়া সমাজের জন্য একটি গালি। তারা গালি হয়েই বেড়ে উঠেছে। কিন্তু আজ এই বৃদ্ধার আদুরে ভাব তারা মেনে নিতে পারছে না।
বিশ্বাস হচ্ছে না। মনে কিছুটা সন্দেহ হয়। কারিনা প্রশ্ন করে কারিশমাকে, বুরির মতলব তো বুঝি না। হালীর মতলব কি? এতো সোহাগ তো মাগী আর হুদাহুদি করতাছে না। কারিশমা মুচকি হাসি দিয়ে মাধুরীর দিকে তাকায়।
ওস্তাদ, হালী এমুন করে কেন?
মাধুরী গরম চোখ করে তাকায় দুজনের দিকেই। এরপর আর তারা পাল্টা কোনো প্রশ্ন করে না।
কিছুক্ষণ পর বৃদ্ধা ভাত আর আলু ভর্তা নিয়ে আসে তাদের সামনে।
- আম্মাজানেরা, আমি মহা গরীব মানুষ। যতটুকু পারছি আপনেগো লাইগা ততুটুকু ভাত আনছি।
পেট না ভরলে মাফ কইরেন।
মাধুরীর চোখে পানি চলে আসে। মাগো, আপনে খাইছেন তো। খাইলেও আসেন আমরা এক সাথে খাই।
ভালোবাসা আর মায়া থাকলে ভাতের দরকার হয় না।
কথাটা হয়তো ঠিক। অল্প কিছু ভাতে তাদের চারজনের পেট ভরে গেছে। বৃদ্ধা বলল, দেখছেন আম্মা, আপনেগো পাতে আল্লাহ বরকত দিছে। বলেন, শোকর আলহামদুলিল্লাহ।
এরপর তিনজনই চুপ।
ধর্ম কর্ম তারা কখনও করে নাই। ধর্মও যে তাদের জন্য নিষিদ্ধ! সমাজ যে তাদের তাই শিখিয়েছে। তারা তো মসজিদে ঢুকতে পারবে না। কোনো হুজুর তাদের ধর্ম শিক্ষা দিতে আসে নাই। আল্লাহ শব্দটিও উচ্চারণ করা যেনো তাদের পাপ।
সমাজ তো এগুলোই করেছে তাদের সাথে। তাই তারা চুপ করে আছে।
বৃদ্ধা আবারও বলল, আম্মাজান, আল্লাহ মানুষরে সৃষ্টি করছেন কোনো না কোনো উদ্দেশ্য নিয়া। এই সুন্দর পিরথীবেতে তিনি আমাগো পাডাইছেন এইডাই যথেষ্ট। এই রিজিক তিনিই আপনেগোরে দিছেন।
আমারে তো খালি উছিলা বানাইয়া দিছে। আসেন বলেন, আলহামদুলিল্লাহ।
তিনজনের সমুচ্চারিত কন্ঠে উচ্চারিত হলো, আলহামদুলিল্লাহ। বাতাস কম্পিত হলো। ঘর কম্পিত হলো।
আল্লাহর অশেষ রহমত যেনো জাগ্রত হলো তাদের জন্য। কারিশমা এবং কারিনা মনে এক অজানা তৃপ্তি পেলো। মনে হলো তাদের একটি পরিচয় আছে। তারা আবার বলল, আলহামদুলিল্লাহ.........
তারা বৃদ্ধার বাড়িতে আজ রাতটা থাকবে। বৃদ্ধাই তাদের বলেছে তার ঘরে থাকার জন্য।
রাত হয়ে গেছে। আকাশে চমৎকার একটি মিষ্টি চাঁদ। চাঁদের মিষ্টি আলোর নিচে তারা চারজন উঠানে বসে আছে। কারিশমা সকালের প্রশ্নটি আবারও করলো, ঐ কব্বরগুলা কার?
- আম্মাজান, ঐহানে আমার তিনপুলা আর তাগো আব্বা ঘুমাইয়া আছে।
মাধুরী এই প্রশ্নটি করবেও ভেবেছিল।
কারণ বৃদ্ধার ঘর পুরো খালি। তবে মাধুরী প্রশ্নটি অন্যভাবে বলতে চেয়েছিল। সে বলতে চেয়েছিল, আপনার ঘরে আর মানুষ নাই?
কিন্তু কারিশমা এতো ঘুরানো পেচানো বোঝে না। তাই সে সরাসরি প্রশ্ন করেছে সেই কবরগুলো নিয়ে।
মাধুরী প্রশ্ন করলো, চারজনই মারা গেছে? কেমনে মা?
বৃদ্ধা যেনো একটু থমকে গেলেন।
একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। সেই দীর্ঘশ্বাসটি মিলিয়ে গেলো চাঁদের আলোতে।
- যুদ্ধ মাগো। যুদ্ধ খাইছে সবকিছু।
কিয়ের যুদ্ধ মা? কারিনা প্রশ্নটি করলো।
- স্বাধীনতার যুদ্ধ। আমার বড় পোলা মকবুল যুদ্ধে যাইবার চাইছিল। গেরামের মাতাব্বর শুইনা ফালাইছিল।
হঠাৎ এক রাতে আমার ঘরে ঢুইকা আমার বুকের ধনগুলারে জবাই দিছে। হে আল্লাহ......
বৃদ্ধার আর্ত চিৎকারে ফেলে পড়ে সমস্ত কিছু।
আমার সোয়ামি। আমার সোয়ামিরে সবার শেষে। হাত পাও বাইন্দা তারে মাটিতে শুয়াইয়া তার বুকের উপর খারাইছিল হারামজাদাটা। বন্দুকের সামনে ছুক্কা চুরি দিয়া আমার সোয়মির কপালের মধ্যি হানদায়া দিছে। ও আল্লাগো.....কি দেখলাম গো আল্লাহ.....রক্ত মাগো...রক্ত......আমার সুখের ঘরে কেউ নাই গো আম্মা।
আছে শুধু রক্ত। আছে চাইরডা কবর। হারাদিন কান্দি মাগো। হারাদিন। রাস্তায় রাস্তায় মাইনষের কাছে বিচার চাই।
কেউ বিচার দেয় না রে মা..... আমার সংসারের দিকে কেউ চায় না.......হগ্গলে কয় আমি বলে পাগল। বিচার চাইলে কেউ পাগল হয়?......পাগল হইলেও পাগল। তাও বিচার চামু। বিচার.......ঐ হারামজাদা এহন চেয়ারম্যান। তারেও কইছি তোর কাছে তোর বিচার চাই।
জানোয়ার.......আমার সব শেষ করছে। হারামজাদা কয় আমি পাগল। আমি পাগল......আমি পাগলী....আমি পাগলী মরীয়ম। ওহ আল্লাহ......
মাধুরী, কারিশমা, কারিনা নিস্তব্ধ হয়ে রয়। বৃদ্ধাকে থামানোর ভাষা তাদের কাছে নেই।
তারা আকাশের দিকে তাকায়। তিনজনরই চোখের কোণে জমা হয়েছে একবিন্দু পানি। তখন চাঁদ মেঘের আড়ালে চলে গেছে। সেই মায়াময় চাঁদটি যেনো সেই মেঘের আড়ালে কান্না শুরু করেছে। এরকম মরীয়মের মতো না জানি কতো মা আড়ালে শুধু কেদেই চলেছে।
মরীয়মের মতো মাদের জন্ম যেনো বিধাতা কান্নার জন্যই দিয়েছেন।
সকালেই পাগলী মরীয়মের বাসা থেকে তারা বের হয়ে গেছে। তারা আবার গ্রামের রাস্তায় হেটে চলছে। হঠাৎ স্কুলের ছাত্ররা তাদের দেখে ঢিল মারা শুরু করলো। তারা ভয় দেখানোর জন্য তাদের দিকে দৌড় দিলে সাথে সাথেই সব ছাত্ররা এদিক সেদিক পালাতে যায়।
রাস্তায় তাদের সাথে দেখা হয় মোনায়েম মাষ্টারের সাথে। তাদের দেখেই থমকে গেলেন। মাধুরী ভাবলো এই লোক নিশ্চই তাদের দেখে কোনো কটাক্ষ করবে। তাই তার উপর হামলে পড়ার একটা প্রস্তুতি সে নিয়ে রাখলো। মাষ্টার সামনে আসা মাত্রই তিনি বললেন,
এই যে, আমি আপনাদের কাছেই যাচ্ছিলাম।
মাধুরী খুব তাচ্ছিল ভাবে প্রশ্ন করে, কেন? আমাগো কাছে কেন?
- আপনারা আসছেন এই গ্রামে। আপনাদের সাথে অনেক ধরনের অন্যায় চলতাছে। আমি শুনছি। আপনারা চাইলে আমার বাসায় থাকতে পারবেন। কেউ কোনো কিছু আপনাদের বলতে পারবে না।
কারিশমাও প্রশ্ন করলো, কেন? আপনে কিডা?
- আমি এই গ্রামের একজন শিক্ষক ছিলাম। আমাকে সবাই সম্মান করে। তাই আপনারা আমার বাসায় নিরাপদ।
মাষ্টারের কথায় তাদের বিশ্বাস হলো। তারাও মাষ্টারের সাথে হাটা শুরু করলো।
মাষ্টারের ঘরে গিয়ে দেখে তাদের জন্য আলাদা একটি কক্ষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন সে ঘর। মাষ্টার বলল, আপনারা একটু বিশ্রাম নেন। আমি বাজারে যাবো। কোনো সমস্যা হলে ঘরে একজন লোক আছে ওর নাম রফিক।
ওকে ডাকবেন।
রফিক তিনদিন ধরে মাষ্টারের বাসায় লুকিয়ে আছে। কারণ, চেয়ারম্যান তাকে খুজবে এটা সে জানে। তাই যেই ঘরটিতে তাকে আগুন লাগানো জন্য বলা হয়েছে সে সেই ঘরেই পালিয়ে আছে। তিনদিন সে এই ঘর থেকে বের হয়নি।
রফিক খুব বিব্রত বোধ করছে এই হিজড়াদের দেখে। তারা দূর থেকে তাকে দেখে মিটিমিটি হাসে। ইশারায় কি যেনো বলে। এসব রফিকের ভালো লাগছে না। আর ওর কেমন যেনো ঘিন্না ঘিন্না লাগছে।
আসলে এটা তো আর রফিকের দোষ না। এটা সমাজের দোষ। সমাজ যেভাবে বড় হয়েছে, সমাজ যেভাবে তাকে ভাবতে শিখিয়েছে সে তো তাই ভাববে। তাও মাষ্টার তাকে বলেছে, ওরা পুরুষ কি নারী কি হিজড়া সেটা বড় ব্যাপার না। বড় ব্যাপার হচ্ছে ওরা মানুষ।
মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাড়ানোই মানুষের আসল কাজ। তাই আমি ওদের পাশে দাড়াবো। আমি থাকতে বদরপুর গ্রামে তাদের কোনো সমস্যায় থাকতে দিবো না। এই অভিশপ্ত নামক কুসংস্কার থেকে মুক্তি পেতে হলে সবাইকে বোঝাতে হবে।
তাই রফিক সব মেনে নিয়েছে।
সব সাভাবিক ভাবে নেয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু কোনো মতে পারছে না।
চলবে................
১ম-৩য় পর্ব: Click This Link
৪র্থ পর্ব: Click This Link
৫ম পর্ব: Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।