আত্মবিশ্বাসহীনতায় প্রকট হচ্ছে আত্মার দেউলিয়াত্ব, তবুও বিশ্বাস আগের মতই নিশ্চল..
পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গেছে। যে কয়দিন হলে আছি সময় কাটানোর মাধ্যম হিসেবে ব্লগের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মাধ্যম কি হতে পারে আমার মত 'পঞ্জম প্রজাতির গর্দভ ব্লগারের কাছে। অতএব জয় বাবা ব্লগনাথ!
গতকাল ব্লগার ফারিহান মাহমুদের একটি পোষ্ট পড়ে কৈশোরের দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছিলাম। আমি ছড়া-গল্প লিখি ক্লাস থ্রি থেকে, তবে তা একেবারে বিপদজনক চরম আকার ধারণ করে নাইন-টেনে পড়ার সময়, এবং সেটা এতটাই যে টেনের প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় জীবনে প্রথমবারের মত গণিত+উচ্চতরগণিতে লেটারমার্ক পাই তো না-ই বরং নম্বরগুলো ছিল সেইরকম: ৫৪ এবং ৪৭!
আপাতত কোন কাজ যেহেতু নেই, তাই আমার পুরনো ডায়েরী ঘেটে সেই সময়কার লেখা শিশুতোষ কবিতাগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের সামান্য শখ হয়েছে। এই শখের সৌজন্যে হলেও এতদিনপর সেই পুরনো ডায়েরীটা নতুন করে খুললাম।
এখানকার বেশিরভাগ কবিতাই ক্লাস সেভেন-ক্লাস টেন এর মধ্যবর্তী সমযকালে লেখা। । । । আরও আগের লেখাগুলো এই মুহূর্তে হলে নেই।
ছুটিতে বাসায় গেলে খুজতে হবে।
শ্রদ্ধেয় যতিন সরকারের একটি বইয়ে পড়েছিলাম " ম্যালেরিয়া এবং কাব্যরোগ বাঙালি জীবনে অনিবার্য। ম্যালেরিয়া হতে যদিওবা রেহাই পাওয়া যায়, কাব্যরোগ থেকে নিষ্কৃতির আশা দুরস্থান!"- আপনাদের দোয়ায় ম্যালেরিয়া তো শৈশবে হয়েছেই, কাব্যরোগটাও এমন বাড়াবাড়ি রকম হয়েছিল যে সেটা ঘোড়ারোগে রূপ নিয়েছিল। সেই ঘোড়ারোগের দৃণ্টান্তগুলো ব্লগে প্রকাশ করতে চাইছি। এবং সম্পূর্ণ ধারাবাহিকটি উৎসর্গ করছি শ্রদ্ধেয় ব্লগার ফারিহান মাহমুদকে
২১. ব্যতিক্রমী সম্ভার
নিওনাকো মনে রোষ
ব্যতিক্রমী সাজতে গেলেই পদে পদে হয় দোষ।
কেউ বলবে অহংকারী, কেউ আবার উন্মাদ
এসব শুনে কে হবে বল নতুনের সম্বাদ?
এ দুনিয়ার সবকিছুতে ব্যতিক্রমের ছোয়া
তবুও কেন যাবেনা বল ব্যতিক্রমী হওয়া?
এ শতাব্দীর ঊষালগ্নে আমি এক ভবঘুরে
সকল বাধন ছিন্ন করে দিন কাটে ঘুরে ঘুরে।
তুও নেইকো ক্লেশ
পথে পথে ঘুরে পেয়েছি খুজে নতুনের সন্দেশ।
জীবনের কোলাহল
আমার কাছে প্রহেলিকা সবই, বৃথা শুধু জঞ্জাল।
মিথ্যে সকল স্মৃতি
স্মৃতি শুধুই বেদনা হয়ে বাড়ায় দুর্গতি।
জীবন ছন্নছাড়া
এ জীবনের সবকিছু তাই ব্যতিক্রমে ভরা।
মনের আকাশে ঘনমেঘ জমে সূর্য করে আড়াল
আশা-ভালোবাসা সবই যেন ব্যর্থমনের খেয়াল।
মন নিয়ে শুধু ছিনিমিনি খেলি, ভাবিনাক চারিপাশ
আসলে আমি মানুষ নেই আর, মানুষরূপী পিশাচ।
নেইকো সঙ্গীসাথী
আমি আজ হইনা কারো ব্যথায় সমব্যথী
মিথ্যে যত ভালোবাসাবাসি, বৃথাই কালক্ষেপণ
সস্তাদরে বিকায় সবই; বৃথা যত আস্ফোলন।
কাউকে তাই আর ভালোবাসিনা, নিজেকে নিয়েই থাকি
বলতে গেলে এসব নিয়েই_ অন্তরালে আমি।
চারদিকে দেখি আঁধার
সুখ নেই প্রাণে, আছে শুধুই ব্যথার বিশাল পাহাড়।
আমার নেই কোন পিছুটান
আমি ভেঙ্গে ফেলি সব নিয়ম-কানুন, হয় যত গুঞ্জন।
আমি এক বাজিকর
জীবন নিয়ে বাজি ধরে মেনে নিয়েছি হার।
আমি চিরকালই একরোখা
তাই পারিনি মনের ভুলেও হতে কারো সখা।
নেই কোন অনুতাপ
আমার কাছে বেঁচে থাকাটাই বাঁচার অভিশাপ।
আমি তাই বহুরূপী
একখানি দেহে শতরূপের করেছি প্রতিলিপি।
নিজেকে বড় ঘেন্না লাগে, দেখিনা নিজের মুখ
এ প্রাণ কিছুই চায়না দিতে, নিতে সদা উন্মুখ।
হাসতে আমি ভুলে গেছি, তাই হাসিনা'ক বহুদিন
হাসতে গেলেই মাথাচাড়া দেয় আমার সকল ঋণ।
আমি এক মরীচিকা
অদ্যাবধি পাইনি খুজে নিজের সীমারেখা।
রোজ প্রভাতে জেগে উঠে, রোজ নিশিতে মরি
ডুবতে ডুবতে চলছে ভেসে আমার জীবন তরী।
এ দনিয়ার মানব-মানবী সকলে তোমরা শুনো--
আমার সাথে চলতে গিয়ে হয়োনা'ক শেষ
আমার মাঝে ভালোবাসা নেই, আছে শুধু বিদ্বেষ।
। ।
২২.বর্ষার কন্যা
প্রকৃতির হে অভিমানী কন্যা
তোমার ক্রন্দনে পৃথিবী হয় নিথর
জমিন ভেসে যায় তোমার অশ্রুতে
তোমার ক্রন্দন যেন বাজে নুপুরের ছন্দে।
মনে দোলা লাগায়_ শিহরিত হই প্রতিক্ষণে
হে কন্যা, কেন তোমার এ অভিমান?
তোমার ক্রন্দনে সিক্তধরা হয়ে পড়ে স্তম্ভিত
তবুও কেন তোমার এ নিথরতা?
তোমার সখা কি আজও ফেরেনি?
নাকি, তুমি প্রতারিত হয়েছো?
তোমার প্রতিটি জলকণা
আমাদের করে বিমর্ষ।
হয়ত তোমার ক্রন্দনে আমাদের কোন কাজ থাকেনা
অলসভাবে বসে থাকি_কিংবা শোক ভুলতে ঘুমাই।
অভিমানী কন্যা তুমি ঝরাও অভিমান
তোমারই জন্য ধরার বুকেতে হয় শুধু পেরেশান। । ।
২৩.প্রত্যাশা
সুখ-দুঃখ নিয়ে গড়া বিচিত্র মানবজীবন
সুখে-দুখে জীবনটাকে আশাই করে বহন।
আশাবিহীন জীবন মলিন, মরুভূমির ন্যায় ধূসর
আশাই কেবল সরাতে পারে ব্যথার জমাট পাথর।
যদিও আশা মলিচিকা তবুও আশাই করি
বুকের মাঝে আশা নিয়েই অন্যায়কে লড়ি।
আশা আছে অনেক রকম , বহুরূপী তার ধরন
নিত্যদিনই এদের মোহেই কেটে যাচ্ছে জীবন।
বদলে গেল দুনিয়াদারী, বদল হয মানুষ
আশাগুলো সব মাটিভেদ করে আকাশে রঙিন ফানুস।
কচুরিপাতার পানির মত ছোট্ট একটা জীবন
আশার ধূলিতে বাধি খেলাঘর, এখানেই অবগাহন।
জীবনটা এক দুঃস্বপ্ন, স্মৃতির বালুচর
আশার স্পর্শে স্বপ্ন রঙিন, জীবন মনোহর।
২৪.অব্যক্ত স্মৃতি
আজ এ নিঝুম রাতে
মনে পড়ে যায় সেদিনের স্মৃতি, নতুনের মনোরথে।
সেদিন ছিল চৈত্রমাসের রৌদ্রজ্জ্বল দুপুর
পাখির কণ্ঠে শুনেছিলাম_ জীবন সুমধুর।
আকাশের ঐ বিশাল বুকের ছোট্ট একটা কোণে
মনের কথা লিখেছিলাম অতি সংগোপনে।
রেখাখানি আজও চিরঅম্লান, যায়নিক ধুয়ে-মুছে
এতবছরেও হয়নি পুরান, লেখা আছে সযতনে।
আজ এ নিঝুম রাতে
মন কেপে উঠে অজানা কোন এক পরিতোষ শিহরণে।
অজানাতে মন হারায়
ঐ মনেরই সন্ধান মেলে মুক্তপাখির ডানায়।
জীবনের যত ব্যথা
যতন করে সাজিয়ে রেখেছে স্মৃতির ধূসর পাতা।
অব্যক্ত আজও সে স্মৃতি
স্মৃতিটুকুই আকড়ে ধরে আজও বেঁচে আছি।
আজ এ নিঝুম রাতে
স্মৃতিচারণ করেই শুধু রাত্রি আমার কাটে। ।
।
টাইপ করতে গিয়ে হাসি থামিয়ে রাখাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল। । । বেচারা ছন্দ মেলানোর জন্য কিশোরমনের কি যে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা! ক্রিয়েটিভ কাজের ধরনটাই বোধহয় এমন_ পুরনো দিনের কর্ম দেখলে সেগুলোর অপরিপক্কতা হাসির খোরাক যোগায়।
তাইতো ব্লগে এখন যেসব লেখা দেই, ৫বছর পর হয়ত এগুলো পড়েই এখনকার চেয়েও বেশি হাসবো। । । এভাবে জীবনের সায়াহ্নে এসে হয়ত সারাজীবের কর্ম দেখেই হাসি চলে আসবে। মিল্টন কি সেজন্যই শেষের দিকে লেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন, ফ্রানজ কাফকা তার বন্ধুকে বলেছিলেন সকল পাণ্ডুলিপি পুড়িয়ে ফেলতে, এমনকি রবিঠাকুর স্বয়ং কবিতা লেখার চেয়ে চিত্রকলাতেই যে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন, তার নেপথ্য কারণও কি এই পুরনো লেখাগুলোকে হাস্যকর লাগা??? সৃজনশীলতার ধর্মই কি এমন???
ঘোড়ারোগের সময়টাতে আরও একটা রোগ ছিল সব লেখা কাউকে না কাউকে উৎসর্গ করা।
একটা সময় চলে আসল যখন পরিচিত একজন মানুষও বাদ ছিলনা যাকে একাধিক কবিতা উৎসর্গ করা হয়নি। । ।
ও হো, আসল কথাই তো বলা হয়নি সে সময় আমি বাংলা-ইংরেজি কবিতা লিখতাম
John F. Harton নামে। ধরতে পারেন এই কবিতাগুলো (!!)John F. Harton এরই লেখা!!! .........(চলবে).........
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।