আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়: রাষ্ট্রপক্ষ অসন্তুষ্ট, ক্ষুব্ধ মানুষ

মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে বসতে ভা্ল লাগে....। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। সাধারণ জনগণের অনেককে এই রায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে ট্রাইব্যুনাল চত্বরসহ আশপাশের এলাকায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা এ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

হতাশ সরকারের আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামও। অসন্তুষ্ট অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ প্রগতিশীল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা রায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজধানীসহ দেশব্যাপী মিছিল করেছে। তবে এ রায় প্রত্যাখ্যান করে জামায়াত আজ বুধবার আবারও দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। একাত্তরের ২৪ এপ্রিল ৩৪৪ জনকে হত্যা এবং ২৬ মার্চ মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ধর্ষণের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পরও কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার কারণেই এ সন্দেহ, ক্ষোভ।

শহীদের রক্ত আর নারীদের সম্ভ্রমহানির পরও কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় ভীষণ এক অন্তরজ্বালার কথা বলেছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ, জাসদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা ঘোষিত রায় সংশোধন করে কাদের মোল্লার ফাঁসি দেয়া না হলে ট্রাইব্যুনাল ঘেরাও করার কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ছাত্রনেতারা এজন্য প্রয়োজন হলে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করার কথাও বলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘এই রায়ে অপরাধের উপযোগী শাস্তি নিশ্চিত হয়নি। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলছে, এতে আমরা খুশি।

’ শহীদজায়া বেগম মুশতারি শফি রায় ঘোষণার পর গণমাধ্যমকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এটি একটি প্রমোশনাল রায় হয়েছে। কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কোনোভাবেই উপযুক্ত রায় নয়। ’ বিচারের রায়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই রায়ের পর আমার মনে হচ্ছে, অন্য আসামিদেরও বিচার হবে না। হলেও উপযুক্ত বিচার হবে না। ’ তিনি রায় প্রত্যাখ্যান করে মানবতাবিরোধী অপরাধের আসামিদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন মানবকণ্ঠকে বলেন, ‘এই রায়ে আমি ক্ষুব্ধ এবং ব্যথিত। ’ তিনি বলেন, এই রায়ে মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং আড়াই লাখ মা-বোনকে অপমান করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষকে অপমান করা হয়েছে। ’ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর চেয়ে কম অপরাধে বাচ্চু রাজাকারকে ফাঁসি দেয়া হলে কাদের মোল্লাকে কেন ফাঁসি দেয়া হলো না?’ মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ খান বলেন, ‘এ রায় আমরা মেনে নিতে পারি না। কাদের মোল্লার অবশ্যই ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল।

একই ধরনের অপরাধে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসি হলে কাদের মোল্লার কেন হলো না?’ এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক এমএ হাসান বলেন, ‘মিরপুরের এ কসাইয়ের হত্যাকাণ্ড যেখানে প্রমাণিত সেখানে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে কখনো যাবজ্জীবন দণ্ড হতে পারে না। যারা মিরপুরে শহীদ হয়েছেন, যারা ভুক্তভোগী, তাদের কাছে এ রায়ে আশার প্রতিফলন হয়নি। ’ ট্রাইব্যুনালের আদেশ পর্যালোচনা করছেন জানিয়ে এ গবেষক বলেন, ‘আমরা পুরো বিষয়টি অবলোকন করছি। যারা যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে তাদের বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী?’ তিনি বলেন, ‘এখন ভবিষ্যৎ রায়গুলোর অপেক্ষায় আছি।

’ রায়ের পর সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘এ রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছি। এ রায় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ’ তিনি বলেন, সোমবার জামায়াতের যে চেহারা দেখেছি তা দেখেছি ’৭১ ও ৭৫-এ। প্রয়োজন হলে সাংস্কৃতিক কর্মীরাও মাঠে নামবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। রায়ে বিস্ময় প্রকাশ করে মুক্তিযোদ্ধা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হওয়ার পরও কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের যে রায় দেয়া হয়েছে, আমি তাতে হতাশ হয়েছি।

’ তিনি বলেন, ‘কাদের মোল্ল?ার বিরুদ্ধে গণহত্যা, ধর্ষণের মতো অভিযোগগুলো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তারপরও তাকে যাবজ্জীবনের এ রায় আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। ’ তিনি আরো বলেন, ‘রাষ্ট্রের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা উচিত। ’ শহীদ কবি মেহেরুননিসার বন্ধু কবি কাজী রোজী বলেন, ‘আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। এই রায় আমি চাইনি।

তিনি বলেন, আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে তুলনামূলক কম অভিযোগ ছিল। তার মৃত্যুদণ্ড হলেও কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। রাষ্ট্রপক্ষের উচিত এই রায়ের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আপিল করা। ’ রায়ে সন্তুষ্ট নন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ ও আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামও।

আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ আছে। প্রসিকিউশন টিম মনে করলে আপিল করতে পারে। আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, এ রায়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। জনগণ অন্য কিছু আশা করেছিল। তিনি বলেন, ‘এ রায়ে আমরা হতাশ।

’ রায়ে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে মন্তব্য করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘প্রত্যাশা করেছিলাম পাঁচ ও ছয় নম্বর অভিযোগে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড হবে। কিন্তু রায়ের মাধ্যমে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। জাসদ সাধারণ সম্পাদক শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, এই রায়ে আমি হতাশ। এটি আনফরচুনেট (দুর্ভাগ্যজনক)। শিগগিরই এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে থেকে আপিল করা হবে বলে আশা করি।

আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রেজা আকাশ জানান, রায়ে সন্তুষ্ট নয় ছাত্রনেতারাও। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা বলেন, কাদের মোল্লার ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল। তারা বলেছেন, ‘ঘোষিত রায় সংশোধন করে কাদের মোল্লার ফাঁসি দেয়া না হলে ট্রাইব্যুনাল ঘেরাও করার কর্মসূচি দেয়া হবে। রায় ঘোষণার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিল বের করে জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রীসহ বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। মিছিলে তারা কাদের মোল্লার ফাঁসি দাবি করে স্লোগান দেয়।

মিছিলটি মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু হয়ে দোয়েল চত্বর ঘুরে ট্রাইব্যুনাল-১ এর প্রবেশপথে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় জাসদ ছাত্রলীগ সভাপতি তাফসীর আহমদ, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি অভিনু কিবরিয়া ইসলাম প্রমুখ তাদের বক্তব্যে রায় প্রত্যাখ্যান করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, কাদের মোল্লার রায়ে ছাত্রসমাজের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। আমরা তার ফাঁসি প্রত্যাশা করেছিলাম। ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে জনমত গড়তে এবং কাদের মোল্লার রায় পুনর্বিবেচনা করে ফাঁসির দাবিতে আমরা সারাদেশে ছাত্রলীগের উদ্যোগে গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু করব।

যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় প্রত্যাখ্যান করে তার সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসির দাবি করেছে সাধারণ জনগণ। গতকাল সন্ধ্যায় শাহবাগ মোড়ে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বানে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ ট্রাইব্যুনালের রায় প্রত্যাখ্যান করে ফাঁসির দাবি জানায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সন্ধ্যার আগে থেকেই হাজার হাজার মানুষ ফাঁসির দাবি নিয়ে ব্যানার লিখে শাহবাগ মোড়ে এসে জমায়েত হয়। তারা সেখানে রাস্তা অবরোধ করে বসে পড়ে। এরপর মশাল মিছিল নিয়ে রাস্তা প্রদক্ষিণ করে।

আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ে ‘চরম’ হতাশা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম। গতকাল সংগঠনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বিচার গণহত্যা, খুন, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী ঘৃণ্য অপরাধের বহুবিধ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় জাতির প্রত্যাশা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এই রায় মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের পরিবার, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং দেশের আপামর স্বাধীনতাকামী মানুষের কাছে অগ্রহণযোগ্য। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম অবিলম্বে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে রাষ্ট্রপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। রায়ে জাতির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হয়নি উল্লেখ করে রায় প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন।

রায়ে জনগণ সন্তুষ্ট নয় উল্লেখ করে গণতন্ত্রী পার্টি, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছে। রায় প্রত্যাখ্যান করে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট রাজধানীতে মিছিল করেছে। তথ্য সূত্র: Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.