আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সন্তানের সিজার বনাম নর্মাল ডেলিভারী; বাস্তবতার প্রেক্ষিত (রিপোস্ট)


[ পোস্টটা ১৫ই নভেম্বরে দিয়েছিলাম। এবার এতে আসা উল্লেখযোগ্য মন্তব্যগুলো যোগ করে নতুন ভাবে পোস্ট করলাম। ] মূল লেখা: Click This Link --------------------------- গতকাল ও আজ সকালে আমাদের বাসার পাশে দুই জন মহিলা দু'টি সন্তানের জন্ম দিলেন। দু'টোই খুব সাধারণ পরিবেশে কোন ছুরি কাঁচির সাহায্য ছাড়াই, যাকে বলা হয় নর্মাল ডেলিভারী। মা ও বাচ্চা দুটোই সুস্থ্য আছে।

যে প্রসঙ্গে এই ঘটনার অবতারণা তা হল এদের দুইজনাই নেহায়েৎ দরিদ্র পরিবারের। কনসিভ করা থেকে ডেলিভারী অবধি কোন স্পেশালিস্ট এর শরনাপন্ন হবার সৌভাগ্য হয়নি; কপালে দামী দামী ব্রান্ডের পুষ্টিকর খাবারও জোটেনি; সৌভাগ্য হয়নি দু দন্ড বসে জিরিয়ে নেবার। তাহলে সংসার সামলাবে কে? এর পরেও এদের সন্তান প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই জন্ম নেয়; বড় হয়। এই দুই মা'য়ের একজনের মা (তাঁকে আমরা ভাবী ডাকি) আবার অন্যের বাড়ীতে কাজ করেন। তাঁকেও দেখেছি, ফি বছর একটা করে সন্তানের জন্ম দিতে।

জন্মের সময় বাচ্চাগুলো এতই দুবলা পাতলা হত যে মনে হত এই বুঝি ধরলেই মরে যাবে। কিছুদিন পরে দেখা যায় সেই বাচ্চা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে আর রাস্তার ধুলা ঘাঁটছে। সবাই ভাবি, হায় হায় না জানি কোন রোগে ধরে ! কিন্তু এখন সেই ছেলে গুলো সবাই এক একটা দশাসই শরীরের যুবক। যাদের শক্তির কাছে আমরা কিছুই না। আমার এই লেখার পেছনের উদ্দেশ্য পরিস্কার।

আমরা যারা মোটামুটি অবস্থা সম্পন্ন হতে বিত্তশীল; তাদের ঘরে সন্তান আগমনের বাতাস বইলেই প্রথম খবর কানে যায় গাইনোকলজিস্টের। তিনি সব টেস্ট করে একটা প্রেসক্রিপশান, একটা ডায়েট চার্ট আর কমপ্লিট বেড রেস্ট এর পরামর্শ দিয়ে কত সাবধানে থাকতে হবে নচেৎ সন্তানের কি কি ক্ষতি হতে পারে তা সবিস্তারে বর্ননা করে সম্ভাব্য দম্পতিকে বিদায় করেন। এর পরের ঘটনা সবাই জানি। নিয়মিত ডাক্তারের কাছে চেকআপ, আল্ট্রাসাউন্ড ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপরে আসে সেই মহেন্দ্রক্ষন।

সন্তান আসবে দুনিয়ায়। ডাক্তার এবার জানান (প্রায় সব ক্ষেত্রেই) কি ভাবে সিজার করা লাগবে, কত খরচা হবে, স্টিচ না কসমেটিক কোনটা ভাল হবে, নরমাল ডেলিভারী তে সন্তানের কি কি সমস্যা হতে পারে.. সিজারে কি কি সুবিধা আরও কত কি। এরপর জন্ম নেয় সন্তান। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের বাত্যায় ঘটিয়ে। এবং তারপর শুরু হয় শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে ধর্ণা দেয়া।

তিনি জানান, শিশুর সিজার ডেলিভারী হওয়ার কারণে রেজিস্ট্যান্স পাওয়ার কম বিধায় কোন কোন সমস্যা কত দিন চলতে পারে, কি ভাবে তাকে শীত গ্রীষ্ম, রোদ ধূলো থেকে দূরে রাখতে হবে তার বিস্তারিত উপদেশ। হাঁচি হলে উমুক ঔষধ, কাশি হলে তমূক এ্যান্টিবায়োটিক, দূর্বল বোধ হলে কত সী'জ এর ভিটামিন আর কত বলব। এই হল দুই ধরনের মায়ের সন্তান জন্মদান ও তাদের মানূষ করবার মাঝে তফাৎ। প্রথমোক্ত সন্তান এত কম পুষ্টি পাওয়া মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়েও তার জন্মের স্বাভাবিকতা, বালাই প্রতিরোধের ক্ষমতা আর আমাদের আদরের দুলাল দের রোগে ভুগে কষ্টকর এক শৈশব অতিবাহিত করা। এর পরে কি একবারের জন্যও মনে হবেনা, আমাদের ডাক্তারেরা আমাদেরকে অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক দিশায় পরিচালিত করেন না।

সমস্ত সৃষ্টিকূলের সিজার দরকার পড়েনা, মানব কূলেরও ক'দিন আগেও পড়তনা; তাহলে আজ এই প্রবণতা কেন। কেন শুধু অবস্থাসম্পন্ন ঘরের সন্তান ছুরি কাঁচি দিয়ে কেটে পৃথিবীতে আনতে হবে,মায়েদের নিতে হবে নয় মাসের বেড রেস্ট আর সমস্ত সংসার সামলে, শত কায়িক শ্রম করেও হত দরিদ্র মায়েদের ছুরি কাঁচির নিচে যাওয়ার দরকার হয়না। আমার এক ডাক্তার বন্ধু একবার বলেছিল," আমাদের দেশের মায়েদের গড় উচ্চতা কম, তাদের গর্ভাশয় তুলনামূলক ছোট, তাই সন্তানের নর্মাল ডেলিভারী কঠিন। " আমি হেসে তাকে বলেছিলাম, আমার মা ছিলেন ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি, তিনি তিনটে সন্তান নর্মাল ভাবে জন্ম দিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন একজন ব্যস্ততম ব্যাংকার। বেড রেস্টের সুযোগ হয়নি।

আমার নানী আরও খাটো, তিনি আট সন্তানের মা, সব নর্মাল জন্ম। যে দুই মায়ের কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, আমার বন্ধুর কথার প্রেক্ষিতেই বলি, "তাঁরাও ৫ ফুটের অনেক খাটো। ----------------------------------------------- ------------------------------------------------ বিডি আইডল বলেছেন: অনেকগুলো বিষয় আছে: ১. ডাক্তাররা ৫০-৬০% ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র ব্যাবসায়িক কারণে সিজারিয়ানে যায় ২. আমাদের মেয়েরা ছোটবেলা থেকেই (এখনকার সময়ে) বাজে খাদ্যাভাস এবং পরিশ্রম না করে বড় হয়, শারিরীক সক্ষমতা কম থাকে ৩. শেষ প‌্যারায় যে উচ্চতার কথা বলেছেন সেটাও অনেক ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা ৪. বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর বহুমূখী ব্যবহার ৫. দেরী করে বাচ্চা নেয়া ----------------------------- বিডি আইডল বলেছেন: ধন্যবাদ নুশেরা আপু। বাইরে আসার পর তো দেখেছি এখানে ডাক্তাররা কি করে। সেদির এক বন্ধুর বাচ্চা হবে।

২ দিন ধরে লেবার পেইন নিয়ে স্ত্রী অপেক্ষায়, ব্যাথার চোটে ডাক্তারের হাত-পায়ে ধরছে সিজারের জন্য...তাও করেনি। ডাক্তাররা বলছিল শুধুমাত্র মা বা সন্তানের ঝুকি দেখলেই আমরা সিজার করবো..পরে স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়। ------------------------------ নুশেরা বলেছেন: @বিডি আইডল-- বিদেশে এর উল্টো একটা দিকও আছে, ক্ষেত্রবিশেষে চরম। সিজারিয়ানের হার কম হলে হেলথ ইন্সুরেন্স কোম্পানী থেকে চিকিৎসকের প্রাপ্তিযোগ ঘটার একটা ব্যাপারও থাকে। সেক্ষেত্রে জোর করে নরমাল ডেলিভারী ঘটাতে গিয়ে ফরসেপ, ভ্যাকুয়াম ইত্যাদির মাধ্যমে বাচ্চার মাথায় ভয়ংকর চাপ ফেলা; থার্ড ডিগ্রী টিয়ার করে প্রসূতিকে সিজারিয়ানের চেয়েও বেশী যন্ত্রণায় ফেলা-- এই ব্যাপারগুলো ঘটার কথা আগে জানা ছিলনা।

অস্ট্রেলিয়ায় আমার পরিচিত দুই ভুক্তভোগীকে দেখে বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছি। একজনের বাচ্চার মস্তিষ্ক আজীবনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত (এখন রিটার্টেড); আরেকজন মহিলা দশ বছর ধরে ফিজিও থেরাপি নিয়ে চলেছৈন। অবশ্য এগুলো ১-২% এর বেশী হবে না। ------------------------------------- মিছে মন্ডল বলেছেন: "শিশুর সিজার ডেলিভারী হওয়ার কারণে রেজিস্ট্যান্স পাওয়ার কম " এটা নেহায়তই একটি ভুল ধারণা। যদি কোন শিশু চিকিৎসক এটা বলে থাকেন তাহলে আমি বলবো মিথ্যা বলেছেন।

তবে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হবার অনেক কারন, তার মধ্যে সবথেকে প্রধান হল আজকালকার মা'দের বুকের দুধ না খাওয়ানো। কিছুতেই কাউকে বুঝানো যায়না যে ৫ মাস বয়স পর্যন্ত যে কোন স্বাভাবিক শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধই যথেষ্ট। অনেক পরিবারই তা মানেন না এবং বাহিরের খাবার খাওয়ান, যা পরবর্তীতে শিশুর জন্য বিপদ ডেকে আনে। এছাড়া আরও কিছু ব্যপার আছে যা শুধু ব্লগে লিখে বুঝানো সম্ভব না। দ্বিতীয়ত, আজকাল সিজারিয়ানের হার বৃদ্ধির অনেক কারন।

এর মাঝে অবশ্যই প্রধান অবসটেট্রিসিয়ানদের ব্যবসায়িক মনভাব। একটি সিজার করতে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট প্রয়োজন, যেখানে নরমাল ডেলীভারি করতে অনেক বেশী সময়ের প্রয়োজন। তাছাড়া নরমাল ডেলীভারি অনেক কষ্টকর একটি ব্যপার মায়ের জন্য;এজন্য আমি দেখছি আজকাল অধিকাংশ মা'রাই সেই কষ্ট করতে ইচ্ছুক নন। আর মায়ের উচ্চতা অনেক বড় একটি সমস্যা । অবশ্য আমার মনে হয়না লেখক আপনাকে সেটা বঝানো যাবে।

@নুশেরা আপু, জোর করে নরমাল ডেলীভারি করানো কিংবা এপিসিওটমি দেয়া এগুলো সিজারিয়ান থেকে অনেক ঝামেলাপূর্ন ও কষ্টকর । এসম্পর্কে যদি সে জানতো তাহলে এভাবে লিখতো না। যাই হোক ইচ্ছে আছে নিরাপদ মাতৃত্ব সম্পর্কে পরবর্তীতে সম্পূর্ন একটি পোস্ট দেয়ার। -------------- মিছে মন্ডল বলেছেন: ফরসেপ বা ভ্যাকুয়াম ব্যবহার করে বাচ্চাকে সারা জীবনের জন্য সেরিব্রাল পলসির প্যাসেন্ট বানিয়ে ফেলা,সোজা কথায় প্রতিবন্ধি বানিয়ে ফেলা অথবা এপিসিয়টমি করার যন্ত্রনা কিংবা জোর করে নরমাল ডেলীভারি করাতে গিয়ে মায়ের থার্ড ডিগ্রী পেরিনিয়াল টিয়ার করে ফেলা অথবা ভেসিকো-ভ্যাজাইনাল/ ভেসিকো-রেক্টাল ফিস্টুলা করে সেই মা'কে চিরজীবনের জন্য ভোগানো সম্পর্কে আপনার বিন্দুমাত্র ধারনা না থাকায় আপনি সব দোষ ওই নন্দঘোষ চিকিৎসকের ঘারে দিয়েছেন। আর এখন তো এটা একটা ফ্যাসন হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সকল কিছুর জন্য একমাত্র দায়ী করা।

-------------------------------- মিছে মন্ডল বলেছেন: @লেখক -"আমি কিছুটা হলেও এ সম্বন্ধে ওয়াকিফহাল। তবে এটাকে জেনারালাইজড্ করে সব খাটোর ক্ষেত্রেই বলা মনে হয় যায়না। এখানে অন্যান্য ফ্যাক্টর গুলোও ভাববার মত। " ভাই মেডিকেল সাইন্স আবেগ দিয়ে নয়, গবেষণা দিয়ে চলে ; আপনি মানুন না না মানুন মেয়ে দের উচ্চতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। হাই রিস্ক মাদার বলে একটি ক্যাটাগরি আছে যেখানে অনেকগুলো পয়েন্ট আছে তার মাঝে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।

আর এটা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। "দম্পতি সার্জিক্যাল ডেলিভারী না চাইলেও নানা বুঝ দিয়ে সিজার করতে মোটিভেট করেন অধিকাংশ গাইনোকলোজিস্ট। কারন সময় বাঁচানো এবং পয়সা কামানো। আপনি এটা বুকে হাত রেখে অস্বীকার করতে পারেন?" আমি আমার মন্তব্যের প্রথমেই কিন্তু এটা স্বীকার করে নিয়েছি, আপনি মনে হয় খেয়াল করেন নি। তারপরও সেই লাইনটি আবার তুলে দিচ্ছি "আজকাল সিজারিয়ানের হার বৃদ্ধির অনেক কারন।

এর মাঝে অবশ্যই প্রধান অবসটেট্রিসিয়ানদের ব্যবসায়িক মনভাব" এবং আর একটি কথা বলে রাখি, অধিকাংশ চিকিৎসকই কিন্তু আজকাল নিজেদের ক্ষেত্রেও সিজারিয়ানই করান। ----------------------------------------------- ----------------------------------------------- মন্তব্যের জন্য বিশেষ ধন্যবাদ: শিবলী, মামু, আতিকুল হক , সুখী মানুষ, নির্বাক হাসান, প্রীটি সোনিয়া, মুনিয়া।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।