আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজীবন সংগ্রামী নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন এদেশের প্রকৃত গণমানুষের নেতা। সাম্রাজ্যবাদ এবং পুজিবাদ বিরোধী এই মহান নেতা কৃষক, শ্রমজীবী সহ সমাজের সকল স্তরের মানুষের অধিকার আদায়ে আজীবণ সংগ্রাম করেছেন। বৈচিত্রময় জীবনে তিনি শাসক শ্রেণীর বিরোধিতা করে কারাবরণ করেছেন অসংখ্যবার। ১৮৮০ সালে সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে মজলুম এই জননেতা জন্মগ্রহণ করেন। মওলানা ভাসানী প্রথম জীবণে মক্তবে শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং মক্তবেই কিছুকাল শিক্ষকতা করেন।

১৯০৩-এ সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন এবং ১৯০৭-এ দেওবন্দ গমন করেন এবং দুই বছর সেখানে পড়াশোনা করেন। ১৯১৯-এ তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন এবং খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং দশ মাস জেল খাটেন। ১৯২৬-এ তিনি আসামে কৃষক-প্রজা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটান। এ সময় তিনি কৃষকদের সংগঠিত করতে থাকেন এবং কৃষকদের বিভিন্ন সম্মেলনের আয়োজন করেন। ১৯৩৭-এ তিনি মুসলিম লিগে যোগ দেন।

১৯৪৪-এ তিনি আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি হন এবং পাকিস্তান আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৭-এ তিনি আসামে গ্রেফতার হন এবং ১৯৪৮-এ মুক্তি পেয়ে পূর্ব বাংলায় আসেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৯-এ তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করেন এবং এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন। এ সময় পাকিস্তান সরকারের নানা অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাড়ান। ভুখা মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে ১৯৪৯-এ তিনি গ্রেফতার হন।

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২-এর ৩০ জানুয়ারিতে তার সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদ গঠিত হয় এবং তিনি এর অন্যতম সদস্য হন। এ সময় ভাষা আন্দোলনের অভিযোগে তিনি ১৬ মাস জেল খাটেন। এর পর স্টকহোমে বিশ্বশান্তি সম্মেলনে যোগ দেন। পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে বিরোধের কারণে তার দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। ১১ মাস পর তিনি দেশে ফিরেন এবং পূর্ব পাকিস্তানে খাদ্য সরবরাহের দাবিতে অনশন ধর্মঘট শুরু করেন।

এর পর কোয়ালিশনে তার পার্টি পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসে। এ সময় পাকিস্তান-আমেরিকা সামরিক চুক্তি বাতিলের দাবিতে তিনি সরকার থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৫৭-এর ২৫ জুলাই তিনি ন্যাপ (ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি) গঠন করেন। কিছুদিন পর সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খান ন্যাপ সহ সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। সামরিক শাসক তাকে গ্রেফতার করে এবং ৪ বছর ১০ মাস পর ১৯৬২-এ তিনি মুক্তি পান এবং সম্মিলিত বিরোধী দল (কপ) গঠনে ভূমিকা পালন করেন।

১৯৬৯-এ তিনি আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফার প্রতি সমর্থন দেন। এ সময় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেন। ৪ ডিসেম্বর ১৯৭০-এ ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় মওলানা ভাসানী স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের দাবি জানান। ১৯৭১-এ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হলে তিনি ইনডিয়ায় যান এবং মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন।

১৯৭২-এ ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তির বিরোধীতা করেন। ১৯৭৬-এর ১৫ মে তিনি ফারাক্কা বাধের বিরোধীতা করে ফারাক্কা মিছিলের নেতৃত্ব দেন। তিনি শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। দেশের সমস্যা ও সমাধান (১৯৬২), মাও সে তুং-এর দেশে (১৯৬৩) দুটি প্রকাশিত বই। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

আজকে এ মহান নেতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। উইকিপিডিয়ায় দেখুন..... http://en.wikipedia.org/wiki/Maulana_Bhashani [ছবি : ইন্টারনেট]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।