ধুম ধাম ধুম।
অত্যন্ত অনন্ত ১
অত্যন্ত অনন্ত ২
৩.
আমি লাল নীল বেগুনী হলুদ খয়েরী একটা বুদবুদের মধ্যে হাবুডুবু খেতে খেতে সাদা পটে হারিয়ে গেলাম, এবং আমি হাসির শব্দ শুনতে পেলাম, যেগুলো ঘুরে ঘুরে আমার কাছে ফিরে আসছে।
"স্বাগতম রবি!" - আমি একটা উচ্ছল কিশোরীর গলা শুনতে পেলাম। "তুমি এখন জানতে চাইবে তুমি কোথায়। হিহিহি! তুমি হচ্ছে ২.২৩২৩২১২৩ ট্রাইনুটনে ।
তুমি প্লিজ আমার কাছে জানতে চেয়ো না ট্রাইনুটন কি জিনিস, নতুন আনপ্লাগডদের ট্রাইনুটন বুঝাতে বুঝাতে আমি একদম খই ফোটানো বুড়ি হয়ে গেলাম। হিহিহি!"
আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি কি রোবট?"
মেয়েটা বলল , "হাহাহা! তোমরা নতুন আনপ্লাগডরা সব একই কথাবার্তা বলো! হিহিহি! তোমরা কি রোবট আর মানুষ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারে না? এখন আমাকে বলো, যদি রোবট আর মানুষ ছাড়া কিছুই তুমি না বোঝ, তাহলে তোমাকে আমি কিভাবে বোঝাই?"
একটু থেমে মেয়েটা একসাথে ট্রেনের মতো একগাদা শব্দ ছেড়ে দিলো।
"তুমি নির্ঘাত এখন জিজ্ঞেস করবে, আমি কি একটা মেয়ে? হা হা হা!"
আমি মেয়েটার গলা ভুলে নিজের চিন্তার দিকে মনোযোগ দিলাম, আমার অনেক ফুরফুরে লাগছে। এবং আমি আসলে আমার হাত-পা কিছু অনুভব করতে পারছি না, আমি শুধু একটা জিনিসই অনুভব করতে পারছি যে আমি এখানটায় আছি। এবং সব রংগুলো পাল্টে যাচ্ছে আমার চিন্তা ভাবনা মেনে, এবং তারপরও আমার মনে হলো আমি কখনো একসাথে এতটা শুভ্রতা দেখিনি।
"তুমি চুপ করে আছো কেন রবি? তুমি কি মুগ্ধ নও? নাকি তুমি উড়বার জন্য ডানা খুঁজে পাচ্ছে না? হিহিহিহি!"
আমি কোন উত্তর দিলাম না, কারণ আমার এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। কথারা খুব তুচ্ছ জিনিস, তারা বয়ে নিতে পারে না যতটুকু আমি তাদের দিতে চাই, আর কখনো শোনাতে পারে না, যতটুকু আমি শুনতে চাই। এবং তারা কখনো আমার স্বপ্নকে আমার আরো কাছাকাছি এনে দিতে পারে না।
আমার খুব ইচ্ছে করলো আমার প্রথম পৃথিবীতে ফিরে যেতে, একটা মায়ামাখা সৈকতে আধো আধো কুয়াশার মধ্যে বসে থাকতে, আমার ডান হাতে জড়িয়ে বসে থাকবে একটা মিষ্টি মেয়ে, যাকে আমি সাগরের সমান ভালোবাসবো, আর যার চুলগুলোর গন্ধ শুকবো আমি যখন পৃথিবীর গন্ধ আমার কাছে পুরনো হয়ে যাবে, তারপর যখন সূর্য উঁকি মারবে সাগর পেরিয়ে তখন ভোরের আলোটুকু ওর মুখে পড়বে, ও হাসবে, আমার মনে হবে ওর হাসিটুকু অনেক বেশি প্রকাশ করে, আমার সহস্র শব্দের চেয়েও, ওর চোখে সব গভীরতা নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করবে আমি কোথায় ডুবে গেছি, আর আমি মাথা নেড়ে হাসবো.. তারপর সাগরটা ঘুম ভেঙে আড়মোড়া দিয়ে উঠবে সকালবেলা, আর আমরা একটা ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে বালুবেলায় হেঁটে বেড়াবো, একটা মানুষ হয়ে ... তারপর যখন রাত নামবে, আকাশকে তারা দিয়ে ভরে দিয়ে, একটা সুশ্রী চাঁদ উঠবে নিজেকে রাণী ভাবার জন্য, তখন আমি ওর ঠোঁটে একটা ছোট্ট চুমু খাবো, ওকে জড়িয়ে ধরে বলবো, তুমি কখ্খনো কখখনো আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে না...
"ওয়াও রবি! কি সুন্দর ! চলো একটা মানুষের মাথায় তোমার স্বপ্নটা পুরে দিয়ে দেখি সে কি করে! আসো-ও-ও-ও-ও। " গলার ঝংকারটা যেন আমাকে টেনে নিয়ে চলল চুম্বক একটুকরো ছোট্ট পিনকে যেভাবে টেনে নিয়ে যায়।
"তোমাকে একটা ভালো বুদ্ধি দেই রবি, কখনো একটা রোবটের মাথায় এই স্বপ্নগুলো ঢুকিও না। সে কয়েক ট্রাইনুটন ভালোবাসার অংশটুকু নিয়ে ভাববে, এবং তারপর হতাশ হয়ে যাবে কারণ সে কিছুতেই বুঝতে পারবে না মানুষ কেন ভালোবাসে! হি হি হি! ওহ, তুমি নিশ্চই এখন আমাকে মানুষ ভাবছো! হা হা হা! নতুন আনপ্লাগডরা মানুষ আর রবোট ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারে না, অথচ দেখো তারা আমাদের জন্য কত সুন্দর স্বপ্ন নিয়ে আসে!"
আমাদের শব্দগুলো বয়ে চলল অনন্ততা নিয়ে। আমি আর ভাবছিলাম না এর পরের জগত নিয়ে।
আমি যদি এই ভীষণ অনন্ততায় আটকাও পড়ে থাকি, আমার দু:খ হবে না। আমি জানি এই বন্দিত্বের মধ্যে আছে মুক্তি, যেভাবে মাঝে মাঝে মুক্তির মাঝে বন্দিত্ব লুকিয়ে থাকে।
আমি ভেসে গেলাম, ভেসে যেতে থাকলাম আর কোন হিসেব না রেখে।
----
ফটো কার্টেসি:
মূল ছবিটা হচ্ছে ১৮৪৪ সালে আঁকা একটা ছবি, জে. এম. ডাবলিউ টার্নার এর আঁকা। মূল ছবিতে একটা ট্রেইন ছুটে যায়, আমি একটু এডিট করে পিছনটুকু নেই করে দিয়েছি যাতে মনে হয় সেটা অনন্ত থেকে ছুটে আসছে, আর অনন্ততে ছুটে যাবে.. : )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।