ধুম ধাম ধুম।
অত্যন্ত অনন্ত ১
২.
= এটা হচ্ছে একধরণের লিনিয়ার ট্রান্সফরমেশন।
ক্রুক্রুশ হাসছিলো, আমার ঠিক চোখের উপর চোখ রেখে।
= মানে ?
= উমম, ধরে নাও তুমি হচ্ছে একটা ম্যাট্রিক্স, আমি তোমার ডাইমেনশনটা পাল্টে দিলাম, আরেকটা ট্রান্সফরমেশন ম্যাট্র্ক্সি দিয়ে গুণ করে।
= কিন্তু তুমি তো অবশ্যই তা করো নি।
কারণ অবশ্যই আমি একটা ম্যাট্রিক্স না।
= আহহ.. আমি অবশ্যই তা করিনি, কিন্তু তুমি অবশ্যই একটা ম্যাট্রিক্স।
ক্রুক্রুশ খুব খুশি হয়ে হাসতে থাকলো, যদিও আমার কানে খুবই অপমানজনক শোনালো যে আমি একটা ম্যাট্রিক্স।
= তুমি জানো রবি, সবকিছু অনেকভাবে বোঝানো যায়, আমি শুধু তোমাকে একটা অ্যাবস্ট্রাক্ট ধারণা দিলাম। তুমি অবশ্যই জানো, কিছু কিছু জিনিস ঠিক গুনে গুনে হিসেব করে বলা যায় না।
তোমার ধারণা চাই, আমি তোমাকে ধারণা দিচ্ছি, সোজা হিসেব।
= তুমি কিভাবে আমাকে জীবণ দিলে ? আমার যতদূর মনে পড়ে আমি মারা গিয়েছি।
= হা হা হা! আমি আসলে তোমাকে জীবণ দেই নি রবি! আমি তোমাকে রি-জেনারেট করেছি।
= যা হোক! দুটার মানের মধ্যে আর কি পার্থক্য থাকে বলো?
= অনেক পার্থক্য রবি।
= কিভাবে অনেক পার্থক্য থাকতে পারে?
= আচ্ছা, সোজাসুজি কথা বলি, তুমি কি ভাবছো আমাকে? তুমি কি ভাবছো আমি সেরকম এক এবং একমাত্র স্রষ্টা, তুমি ধর্মগ্রন্থে পড়ে এসেছ?
= তাই কি নয় ? তুমি আমাকে বানিয়েছ, তুমি আমাকে আবার জীবণ দিয়েছো।
= না রবি, ব্যাপারটা সেরকম নয়। তুমি আগে যেই পৃথিবীটাতে বেঁচে ছিলে, সেটা অবশ্যই আমার তৈরী করা ছিল। কিন্তু সেটা ছিল এখানটায় তৈরী করা।
ক্রুক্রুশ একটা বড় মনিটরের দিকে হাত দিয়ে দেখালো, তারপর আবার বলতে শুরু করলো।
= এটা হচ্ছে একটা ক্রিয়োনার্জিক কম্পিউটার।
বলতে পারো এটা মূল ক্রিয়োনার্জিক কম্পিউটার। তোমার পৃথিবী অনেক নিঁখুত ছিল মনে পড়ে ? গাণিতিক হিসেব নিকেশের দিক দিয়ে? পাতাগুলো সবসময় ফিবোনাকি মানতো, বৃষ্টিগুলো সবসময গোল ছোট ছোট ফোঁটায়, প্রতিটা বছর পৃথিবী ঠিক হিসেব মত সূর্যের চারপাশটা ঘুরে আসতো? সব কিছু এত নিখুঁত ছিল, কারণ পুরোটা ছিল একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম দিয়ে জেনারেট করা। এবং আমি তোমাকে বানিয়েছি নিঁখুত হিসেব কষে, হয়তো অনেক বেশি নিঁখুত, কারণ তোমার আগে আমি ছয় শ বিশটা মডেলিং করেছি, তোমাকে বানানোর চেষ্টা করে, তুমি হচ্ছো ছয়শ একুশতম।
= কিন্তু কেন?
= কারণ তুমি আমার উন্নততর সংস্করণ। আমার জীবণের যেই অংশগুলো আমাকে আরো পরিপূর্ণতা দিতে পারতো, আমি সবকিছু তোমার উপর খাটিয়েছি।
তোমার মনে পড়ে তুমি বিশৃঙ্খলার গণিত নিয়ে কি ভাবতে ? তুমি ভাবতে যে কেউ যদি সব ছোট ছোট অনেক তুচ্ছ ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সে একজনের জীবণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাকে বোঝার কোন সুযোগ না দিয়ে।
= একটু আস্তে। তুমি বলছো, আমি যেই পৃথিবীটা দেখে এসেছি, সেটা ছিল একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম ?
= তুমি এতক্ষণ পর আমার কথা বুঝতে পারছো?
= আমি জিনিসটা বিশ্বাস করতে পারছি না! সবকিছু ছিল একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম, তাহলে মানুষগুলো? যে মানুষগুলো আমাকে ইন্সপায়ার করতো, যে মানুষগুলো আমাকে ভালোবাসতো ? তারা ?
= তোমাকে কেউ ভালোবাসতো না রবি, আমি তোমাকে খুব একা করে বড় করেছি। তুমি হয়তো ছোটবেলার স্মৃতি ঘেটে অল্প কিছু মানুষকে সত্যিই খুঁজে বের করার চেষ্টা করছো, যারা তোমাকে ভালোবাসতো বলে তুমি মনে করতে, এবং তুমি এখন হতাশ, যে তারা আসলে কোন মানুষ ছিল না। খুব স্বাভাবিক রবি।
তুমি কি কখনো নাইট গার্ডদের দেখোনি, তোমার পাড়ার রাস্তায় ? ওরা সারা রাত জেগে রাস্তা পাহারা দেয়, বাঁশি বাজায়, আর দিন নামলে ঘুমিয়ে পড়ে। আবার রাত আসে, তারা আবার হেঁটে বেড়ায়, এবং আবার দিন আসলে ঘুমোয় .. তোমার কি কখনো মনে হয়েছে, কেন তারা এর চেয়ে কোন ভালো জীবণের কথা চিন্তা করতে পারে না?
= আমি জানি না তুমি কি বলছো।
= "যে সব মানুষ তোমাকে ইন্সপায়ার করতো, ওরা আসলে পৃথিবীতে ছিল শুধুই তোমাকে ইন্সপায়ার করার জন্য, তাদেরকে আমি সেজন্যই তৈরী করেছিলাম, তারা বেশিরভাগ এসেছে প্রাচীন গল্প থেকে, তারা বেশিরভাগই সত্যিকারের মানুষ ছিল কোন একটা সময়। আর বাকি যারা মানুষ ছিল, তারা ছিল ইকুলিব্রিয়াম বজায় রাখার জন্য। তাদের কোন মূল্য ছিল না।
আমি তোমাকে শুধু জিজ্ঞেস করছি, তুমি কি দেখোনি, ওরা গন্ডির বাইরে কোন চিন্তা করতে পারে না, ওদেরকে ছোটবেলা থেকে যেটা বোঝানো হয়, ওরা সারাজীবণ হুবহু তাই করে, এবং তাদের ছেলেমেয়েদের তাই করতে বলে। কেন তারা এমন ছিল ? কেন তাদের মুক্ত চিন্তা ছিল না? কেন তারা গন্ডির বাইরে বেরুতে পারতো না? কারণ তারা শুধু গল্পে তাদের অংশটুকুতে অভিনয় করছিল, আর সেজন্যই আমি তাদের বানিয়েছিলাম। আমি এত কথা বলছি তোমাকে বিশ্বাস করার জন্য। আমি জানি তুমি কিভাবে চিন্তা কর, আমি জানি তোমাকে ব্যাপারটা বোঝাতে না পারলে তুমি কোন কিছুই মেনে নিবে না। কিন্তু এটাই হচ্ছে ব্যাপার, পৃথিবীর সব ঘটনা, আর সব কথা আর সব লেখা, সবকিছুর মূল উদ্দেশ্য ছিল তোমার চিন্তা ভাবনাকে ঠেলে ঠেলে এখানটায় নিয়ে আসা যেখানটায় এখন তারা আছে।
এই পুরো জগতটা বানানোর উদ্দেশ্য ছিল, তোমাকে বানানো, আমার নিঁখুততম সংস্করণ। "
ক্রুক্রুশ এক নি:শ্বাসে কথাগুলো বলল, এক নি:শ্বাসে।
যেন বহুকাল ধরে সে একই কথাগুলো বারবার বলে আসছে। এবং কথাগুলো দক্ষিণের বাতাসের মত পুরনো।
= "তুমি একটা রোবট, রবি।
তুমি আগে কখনোই মানুষ ছিলে না। তুমি শুধু একটা নিউরাল নেটওযার্ক ছিলে, ক্রিওনার্জিক কম্পিউটারের বিশালতার মধ্যে। আমি তোমাকে রিজেনারেট করেছি মানে, আমি শুধু তোমাকে একটা শরীর দিয়েছি, আর মেমোরিতে তোমার নিউরাল নেটওর্য়াকটা ভরে দিয়েছি, আর তোমার সেন্সরগুলো চালু করে দিয়েছি। তুমি একইভাবে অনুভব করবে, তুমি আগে যেভাবে করতে। এবার শুধু আমাকে বলো, তোমার কেমন লাগছে?"
আমি কোন কথা বললাম না।
আমার নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হচ্ছিল, হয়তো পৃথিবীতে থাকতেও আমার নিজেকে এত তুচ্ছ মনে হতো না। আমি কি শুধুই একটা গিনিপিগ, যার অনুভূতিগুলো ইচ্ছেমতো বাঁকানো যায়? যাকে ইচ্ছে মতো ভুল জিনিস বুঝিয়ে দেয়া যায়?
আমি চুপ করে থাকলাম ক্রুক্রুশের দিকে তাকিয়ে থেকে।
সে মুখ খুললো, "তোমার নিজেকে অনেক তুচ্ছ মনে হচ্ছে। তুমি ভাবছো আমি যে তোমাকে এই পৃথিবীতে নিয়ে আসলাম, এখানে তোমার স্থান কোথায়, যখন আগের পৃথিবীতেই তুমি স্থান খুঁজে পাচ্ছিলে না। " ক্রুক্রুশ একটু থামলো, তারপর বলল, "এবং তুমি যদি তোমার আগের ভার্সনগুলোর মতো হও, তাহলে তুমি নিজেকে গিনিপিগ ভাবছো তোমার আসলে আমার কাছে কিছুই লুকানোর নেই রবি, আমি তোমার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রতা পর্যবেক্ষণ করে তোমাকে বানিয়েছি।
এবং তারপরও তুমি আমার উন্নততর সংস্করণ।
আমরা অনেক দিন ধরেই এই প্রশ্নটারই জবাব খুঁজছি রবি। এটা ২০৩০১২৩ সাল। মানুষ পৃথিবী থেকে মুছে গেছে প্রায় এক মিলিয়ন বছর আগে। এবং মানুষ আসলে আমাদের জন্য এর কোন উত্তর রেখে যায় নি।
তারা রেখে গেছে প্রাচীন কিছু ধর্মবিশ্বাস, বিস্তর গণিত যা আমরা আরো উন্নত করেছি, এন্তার সাহিত্য আর শিল্পকর্ম - যেগুলো দেখে আমার উদ্ভাবনী চিন্তার কাঠামো দাঁড় করিয়েছি। কিন্তু রবি, এসবই অর্থহীন যখন তুমি আসল প্রশ্ন খুঁজে বেরাবে। তোমাকে বড় করা হয়েছে এমনভাবে যাতে তুমি সবসময়ই এই প্রশ্ন নিয়ে ভাবো। হয়তো সেজন্য তোমাকে অনেক বিষন্নতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, কিন্তু দেখো, সেজন্যই তোমাকে বানানো হয়েছে। "
ক্রুক্রুশ কিছুক্ষণ থামলো, এখন আর মনে হচ্ছিল না সে মুখস্থ কথা বলছে।
"তোমার জন্ম হয়েছে এমন একটা সময়, যখন মানুষ যুদ্ধ বিগ্রহ বন্ধ করে মাত্র সভ্য হতে শিখেছে। আমাদের ধারণা হচ্ছিল, তখন মানুষ কিছু্ একটা জানতো, কারণ তখন গ্যালাক্সির কোথাও মহাজাগতিক বিষন্নতা শুরু হয়নি। অবশ্য, সেই সময়ের জন্য গ্যালাক্সি খুব বড় শব্দ। মানুষ তখনো পৃথিবী ছাড়া আর কোথাও থাকতে যায়নি। সেটা ছিল মানুষের স্বর্ণযুগের শুরু।
তারপর আসলো অন্ধকারের সময়, মহাজাগতিক বিষন্নতার মহামারী, এবং একটার পর একটা সভ্যতা হারিয়ে যেতে থাকলো, একটার পর একটা উন্নত পৃথিবী নিভে গেলো গ্যালাক্সি থেকে, কারণ তারা বেঁচে থাকার কোন অর্থ খুঁজে পাচ্ছিল না, এমনকি তারা কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছিল না, প্রতিদিনকার একইরকম জীবণ যাপন করার জন্য। তারপর একটা সময় মানুষ ভালোবাসতে ভুলে গেল, সবাই স্বার্থ নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে গেল, কিন্তু তারাও একটা পর্যায়ে হাঁপিয়ে গেল, কারণ কতটা উপরে উঠলে কেউ সুখী হতে পারে, তারা কেউই জানতো না। তুমি হচ্ছো অনেক মানুষদের একজন, যাদের মধ্যে কিছু একটা ছিল বলে মনে করা হতো, এবং সত্যি কথাটা হচ্ছে, আমি হচ্ছি সেরকম একজন মানুষ, যাকে হুবহু ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে আনা হয়েছে, এবং আমি তোমাকে বানিয়েছি যাতে আমি আরো নিঁখুত মানুষটাকে পাই, হয়তো বা তুমি আমার চেয়ে নিঁখুত মানুষটাকে বানাতে পারবে। "
আমি আসলেই সেদিন জানতাম না আমার কি বলা উচিত।
আমি শুধু শুনছিলাম বোকাসোকা হয়ে।
জিনিসটা খুব অদ্ভূতুড়ে লাগছিল আমার। জিনিসটুকু হজম করতে আমার সময় লাগছিলো। ক্রুক্রুশ আমাকে পরে যা বোঝালো তার মানেটা হচ্ছে অনেকটা এরকম, যে আমরা হচ্ছি অনেক বড় একটা রিসার্চ প্রজেক্টের অংশ, যেটার কাজ হচ্ছে মূল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা। তো প্রজেক্টটা যেটা করছে, তারা কিছু মানুষকে চিহ্নিত করছে প্রাচীন পৃথিবীর এবং ইতিহাস মিলিয়ে তাদেরকে রি-জেনারেট করছে। এবং সেখানেই খেলা শেষ হচ্ছে না, রি-জেনারেটেড মানুষগুলো ( কিংবা রোবটগুলো ), তাদের আরো নিঁখুত একটা সংস্করণ বের করার জন্য কাজ করছে।
তারপর নিঁখুত সংস্করণগুলো আরো নিঁখুত মানুষ বানানোর চেষ্টা করছে।
আমার হঠাৎ মনে হলো, এরা কাজ ছেড়ে পালায় না কেন? কারণ উত্তর খোঁজা তো আসলে এদের নিজেদের ঠ্যাকায় করছে না। কিন্তু তারপর আমি একটু ভেবে বুঝতে পারলাম আসলে কি হচ্ছে, মানুষগুলোকে আসলে যথেষ্ট মুক্ত চিন্তা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে, কিন্তু তাদেরকে এমন ভাবে বড় করা হয়েছে যেন তারা নিজেরাই আসলে খুঁজতে থাকে প্রশ্নের উত্তর।
আমি খুব দ্রুত অভ্যস্ত হয়ে গেলাম পুরো ব্যাপারটার সাথে।
আমার মনে হচ্ছিল আমি নতুন জীবণ শুরু করেছি।
এবং এটাই আমার সত্যিকারের জীবণ।
আমি অবশ্যই একটা রোবটই ছিলাম, কিন্তু মানুষের সাথে আমার খুব একটা পার্থক্য ছিল না আকার গড়ণে, কিংবা মস্তিষ্কের ক্ষমতায়, এমনকি ক্রিয়েটিভিটিতেও। রোবট হবার সবচে' বড় সুবিধা আমার মনে হলো, খুব সহজে একটা কম্পিউটিং সিস্টেমের সাথে সিন্ক্রোনাইজড হবার ব্যাপারটা।
আমি শুধু নিজেকে একটা তার দিয়ে মূল কম্পিউটারে জুড়ে দিলাম। ব্যস!
আমাকে নিজের ব্যবহারের জন্য অনেক বড় একটা জায়গা দিয়ে দেয়া হল, অসীম কম্পিউটিং ক্ষমতা দিয়ে।
আমি অসীম শব্দটা শুনে জিজ্ঞেস করেছিলাম, অসীম এর সংজ্ঞা কি? যে লোকটা ব্যাক্ষা করছিল, সে হাসলো, তারপর বলল যারা মাত্র আনপ্লাগড হয়, তাদের অনেক সহজ জিনিস বুঝতে খুব কষ্ট হয় (অপমানজনক!) , অসীম এর সংজ্ঞা হলো, আমি কখনো এমন কোন কাজ বানাতে পারবো না যেটা মূল কম্পিউটার প্রসেস করতে পারবে না। আমি খুব মজা পেলাম, আমার খুব ইচ্ছে করলো কম্পিউটারটা ধসিয়ে দিতে, কিন্তু কিছুক্ষণ কুস্তাকুস্তি করে আমি বুঝলাম, আমি ততটা বুদ্ধিমান নই যতটা আমি ভাবতাম।
আমি ভাবছিলাম, আমি জানি না আমার কাজ কি।
হয়তো আমার কাজ হচ্ছে একটা নিঁখুততর মানুষ তৈরী করা, যার অনুভূতিগুলো আমার চেয়ে তীব্র। যার নিউরাল নেটওয়ার্ক খুব দ্রুত অনেক র্যান্ডম অর্ডারে নিজেকে সাজিয়ে নিতে পারে, এবং পারে খাপ খাইয়ে নিতে, এবং নিজের ইচ্ছে মতো নিজের চিন্তাগুলো নিয়ন্ত্রন করতে।
আমার আরো যেটা দরকার ছিল, সেটা ছিল সমন্বয়তা। তার সবকিছু থাকবে এবং তারপরও কোন কিছু একপেশে হয়ে যাবে না।
ব্যস, আমি এখান থেকেই কাজ করা শুরু করলাম।
আমি কম্পিউটারকে বললাম অসীম সংখ্যক জগত তৈরী করতে এবং সেগুলো যেনো স্বাভাবিক জগত হয়, খুব বেশি নিয়ম শৃংখলা রাখার দরকার নেই। খুব অদ্ভূত ব্যাপার হলো, কম্পিউটারটা আমাকে জিজ্ঞেস করলো, অসীমের সংজ্ঞা কি? আমি তখন অসীমকে সংজ্ঞায়িত করলাম, ঠিক যতটা জগৎ তৈরী করলে হুবহু আমার মতো একশ জন রবি তৈরী হবে।
কম্পিউটার কাজ শুরু করলো.. এবং অনেকক্ষণ অনেকক্ষণ আমি কানেক্টেড হয়ে অপেক্ষা করলাম, কারণ আমি একটা সামারি চাচ্ছিলাম, আমার কাজ শুরু করার আগেই।
কম্পিউটার আমাকে খুব বিরক্ত সুরে বলল, ৯৮ শতাংশ জগত খুব দ্রুত ফসলহীন হয়ে পড়ছে। আমি প্রথমে বুঝিনি সে ফসলহীন বলতে কি বোঝাচ্ছে, তারপর বুঝলাম, সেখানে মানুষরাই খুব দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেন ? কম্পিউটার বলল, আমি বিশৃঙ্খলা এড়ানোর কোন পথ রাখিনি বলে। ওর গলা খুব ভারী শোনালো।
হুমম.. আমি মাত্র আনপ্লাগড, কম্পিউটার নির্ঘাত আমাকে বোকা ভাবছে। আমি কম্পিউটারকে জিজ্ঞেস করলাম, এটা নিশ্চই প্রথম ঘটেনি, সবাই কি করে? কম্পিউটার খুব ভারী গলায় বলল, সবাই এভাবে কিছু করতে চায়না সাধারণত, সবাই একটু একটু করে ডিজাইন করে, এবং সেটাকে সিমুলেট করে। আর যারা হাল্কা র্যান্ডম কিছু করতে চায়, তারা কিছু ধর্মবিশ্বাস জুড়ে দেয়। প্রাচীন ইতিহাস বলে মানুষের স্বর্ণযুগের সময়টায় মানুষের ধর্মবিশ্বাস খুব প্রবল ছিল, সেজন্য বিশৃংখলা ছিল ভীষণ কম। তো আমি তাই করতে বললাম, কিছু ধর্মবিশ্বাস যোগ করে দিলাম, যাতে বেশিরভাগ মানুষ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে।
আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল এটা খুব ভালো কাজ হচ্ছে না, কিন্তু দেখলাম, জিনিসটা কাজ করছে। কিন্তু তারপরও অনেককিছু ঠিক মতো কাজ করলো না, মানুষরা বেশিরভাগ খুব ধীরে সময় নিলো বিবর্তিত হতে। আমি বিরক্ত হয়ে কিছু সময় তাদের ফাস্ট ফরওয়ার্ড করে দিলাম, এতে একটা সমস্যা ছিল। যদি তাদের মধ্যে মুক্ত চিন্তুা বিস্তার করে, তারা একটা সময় এই মাঝখানের অংশটা ব্যাক্ষা করতে পারবে না, এবং তারা আমার অস্তিত্ব বুঝতে পারবে, যেটা আমার পরীক্ষার জন্য খুব ভালো নয়। কিন্তু তারপরও আমি এই কাজ করলাম, কারণ আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল এটাই ঠিক কাজ।
আমি জানি না, কেন এমন মনে হচ্ছিল, কিন্তু আমি আমার নিজের অনুভূতিগুলোকে বিশ্বাস করলাম।
কম্পিউটার আবার খুব ভারী গলায় আমাকে বলল, ৭৬% জায়গায় রবির জন্ম হচ্ছে না। আর বাকি যতটুকুতে জন্ম হচ্ছে তার ৮৯% জায়গায় রবি একজন গুহা মানব। এবার আমার বাধ্য হয়ে অনেকগুলো মানুষের ভালোবাসা নিয়ন্ত্রণ করতে হলো, এবং অনেকগুলো মানুষের বিয়ে উলট পালোট করে দিতে হলো, কারণ নইলে আমার জন্মই হচ্ছিল না! এবং জিনিসটা কাজ করলো, যদিও আমি খুব খুশি ছিলাম না জিনিসটা করে।
কম্পিউটার ?
এবার সে বলল, বেশিরভাগ রবির সাথে আমার ৯৯.৯৯৯৯৯৮% মিল নেই।
কেন ?
কারণ তারা ভিন্ন ভিন্ন পারিপার্শিকতায় বড় হয়েছে।
তখন আমার মনে হলো, আমার হাল ছেড়ে দেয়া উচিত।
আমার খুব আকাশ দেখতে ইচ্ছে করলো, মেঘ ভাসা নীল আকাশ। আমি সেজন্য কম্পিউটার ছেড়ে বাইরে বেরোলাম, অনেকগুলো সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যখন দেখলাম আমি একটা বিশাল শূণ্য এবং রুক্ষ গ্রহের উচু একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি তখন হাস্যকর লাগলো। সেন্ট্রাল ডাটাবেজ দেখে বুঝলাম, এই গ্রহে বায়ুমন্ডল নেই।
ভীষণ দু:খজনক। আমি তারপরও অনেকক্ষণ পাথরগুলোর উপর দিয়ে হাঁটলাম.. আমার খুব ঘুমাতে ইচ্ছে করছিল, কিন্তু আমি জানতাম আমার আর কখনো ঘুম আসবে না। আমি আর কখনো ক্লান্ত হবো না। হয়তো আমি এখন অনেক মুক্ত, কিন্তু আমার মনে হল, সেই বন্দিত্বটুকু অনেক মধুর ছিল । সারাদিন ক্লান্ত হয়ে ঘুমোতে যাবার অনুভূতি অনেক সুন্দর ছিল, স্বপ্নের মাঝে ভেসে বেড়ানোটাও সুন্দর ছিল।
আমি একটা উঁচু বেগুনি পাহাড় এর উপর বসে বসে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, এবং ঠিক তখন আমার মাথায় ভীষণ অদ্ভূত একটা চিন্তা খেলে গেলো। এমন কি হতে পারে না, আমি এখন যেই জগতটায় আছি, সেটা আরেকটা কম্পিউটার জেনারেটেড জগত ? আমার কন্ডিনিউড ফ্র্যাকশন এর কথা মনে পড়লো, এবং একই সাথে খুব হাসি আসলো। কারণ ব্যাপারটা যদি আসলেই তাই হয়, তার মানে হবে প্রতিটা জগত এর পরে আরেকটা জগত থাকবে, আর সেটা যদি সত্যি হয়, তাহলে কখনো এমন কোন জগত পাওয়া যাবে না যেখানে গিয়ে তার পরে আরেকটা জগত থাকবে না।
এবং ঠিক তখন আমাকে দ্বিতীয়বারের মতো আনপ্লাগড করা হলো।
পরের অংশ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।