আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরা হেটে চলছি একটি নির্দিষ্ট নির্ধারিত পথে!



ধর্ম নিয়ে যে কোনো কিছুই স্পর্শকাতর। কারণ, ধর্মের বিরুদ্ধে যেমন অনেক বক্তব্য অনেকে মেনে নিতে পারে না, আবার ধর্মের অনেক বক্তব্যও অনেকে মেনে নিতে পারে না। যারা ধর্মের নিয়ে কথা বলতে চান তাদের সব-সময় দুটো ভাগে ভাগ হয়ে যেতে দেখা যায়। এক পক্ষ প্রমাণ করতে চায় ধর্ম সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত বিধান। আর অন্য পক্ষ প্রমাণ করতে চায়।

মানুষ অন্ধ বিশ্বাস থেকে সৃষ্টিকর্র্তাকে মেনে নিতে চায়। সে যাই হোক। ধর্মে কিন্তু বলা হয়েছে (আমি ধর্ম বলতে শুধু ইসলাম ধর্মকে বোঝাচ্ছি), যারা ঈমান আনে নি কিংবা ইসলামকে বিশ্বাস করেনি তাদের কেয়ামতের ময়দানে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। আমার আলোচনা সেই বিষয়েই। সেদিনকার সেই মানুষগুলোর অবস্থা সম্পর্কে ধর্মগ্রন্থগুলোতে কি বলা হয়েছে।

যেমন বলা আছে, যারা পৃথিবীতে বিভিন্ন অন্যায়-অবিচারে লিপ্ত ছিল এবং যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করতো না; এ সমস্ত মানুষগুলোকে যখন কেয়ামতের ময়দানে হাজির করা হবে তখন তারা আল্লাহ পাকের দরবারে লজ্জিত হয়ে মাথা নত করে দাড়িয়ে থাকবে। এবং বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমরা সবকিছু দেখেছি, সব কিছু শুনেছি, আমাদের অন্তরে বিশ্বাস জন্মেছে যে তুমি সত্য, তোমার রাসূল সত্য, তোমার কালাম সত্য, এ অবস্থায় যদি আমাদের দয়া করো এবং পৃথিবীতে আবার যেতে দাও তবে আমরা অনেক ভালো কাজ করবো, কেননা আমরা পূর্ণ বিশ্বাসী হয়ে হয়েছি। তাদের এই আকুতি দরবারে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। কারণ, আল্লাহপাক যুগে যুগে পৃথিবীতে তাঁর বিশেষ দূত প্রেরণ করেছেন এবং পথ নিদর্শনের জন্য মহান গ্রন্থ আল কোরআন নাজিল করেছেন। কিন্তু এ সকলের তোয়াক্কা না করে যেই মানুষগুলো তাদের ইচ্ছে মতো চলেছে তাদের কোনক্রমেই তিনি বিশ্বাস করবেন না।

আসলে বিশ্বাসের প্রশ্ন নয়, তিনি জানেন, এদের পুনরায় পৃথিবীতে পাঠালে তারা তাদের সেই কু-কর্মই করে যাবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, যদি তাদেরকে ফেরত পাঠানো হয় তবে তারা পুরাতন অভ্যাসেই মেতে উঠবে, তাদের জন্যে যা নিষিদ্ধ তা তারা করবে, নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী। সুতরায় এ থেকে বোঝা যায়, মহান সৃষ্টিকর্তা সব কিছু সম্পর্কেই অবগত। এমনকি তিনি এও নির্ধারণ করে রেখেছেন, কারা জাহান্নামী হবে এবং কারা জান্নাতবাসী হবে। এ সম্পর্কে হযরত আলী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, প্রিয় নবী (সাঃ) এরশাদ করেছেন, তোমাদের প্রত্যেকের জন্য দোযখ অথবা জান্নাতে ঠিকানা পূর্বেই লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূল তাহলে আমরা কেনো সেই লেখার উপর ভরষা করে থাকি না? আর কেন এই আমল পরিত্যাগ করি না? তখন প্রিয় নবী বললেন, তোমরা আমল করতে থাকো, প্রত্যেককে সে কাজেই নিয়োগ করা হয়, যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে, যাকে ভাগ্যবান লেখা হয়েছে, তার জন্য নেককার ভাগ্যবানদের আমল সহজ করা হয়, আর যাকে হতভাগা লেখা হয়েছে, তার জন্যে হতভাগাদের আমল সহজ করা হয়। এখন প্রশ্ন আসতে পারে আল্লাহ যদি পূর্বে থেকেই সব ঠিক করে রাখেন, তাহলে আর পাপ-পূন্যের বিষয়টি আসে কেনো! এসম্পর্কেও বলা হয়েছে যে, সবাইকে আল্লাহ পুর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। তিনি কারও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেননা। যেমন এরশাদ আছে, যার ইচ্ছা ঈমান আন যার ইচ্ছা কাফের হও। তাই কারো উপর ঈমান আনার জন্য তিনি জোর-জবরদস্তি করেননি।

এবং করতে বলেনও নি। তবে তিনি যদি চাইতেন তবে সবাইকেই হেদায়েত করতে পারতেন কিন্তু তিনি করেননা। এ প্রশ্নের উত্তরও তিনি দিয়ে দিয়েছেন। আমি যদি ইচ্ছা করতাম তবে প্রত্যেককে হেদায়েত দান করতাম, অর্থাৎ তার প্রকৃতি পরিবর্তন করে তাকে হেদায়েত গ্রহণে বাধ্য করতাম, কিন্তু তা করা হয় না। তাই ইতিপূর্বে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, জ্বীন ও মানুষ দ্বারাই যে দোজখকে পরিপূর্ণ করা হবে-তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

সুতরাং মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা সয়ং স্রষ্টাই দিয়ে দিয়েছেন। এখন পরকালে সেই স্বাধীনতা কে কিভাবে ব্যাবহার করেছে তার জবাবই দিতে হবে। কাফেরদের কোনো ধরনের আকুতিই সেখানে পাত্তা পাবে না। তাদের তখন বলা হবে, তোমরা যেভাবে এ দিনের আগমনকে ভুলে রয়েছিলে, আমিও তোমাদেরকে এভাবেই ভুলে রইলাম, অতএব তোমরা সেই ভুলে থাকার স্বাদ ভোগ করতে থাকো। সেই স্বাদ হলো চিরস্থায়ী আর তা হবে তোমাদের কৃতকর্মের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি স্বরুপ।

তাই আমরা মানুষরা যদি ভেবে থাকি, আমরা একটি অনির্দিষ্ট পথে হেটে যাচ্ছি তবে তা ধর্মের দৃষ্টিতে ভুল। আমরা হেটে চলছি একটি নির্দিষ্ট নির্ধারিত পথে। যা আমাদের ভাগ্যে নির্ধারিত ছিল। যা সৃষ্টিকর্তা লিপিবদ্ধ করেছেন আমরা শুধু তাই করছি। আমাদের ভালো-মন্দ সব কিছু নির্ধারক ঐ একজনই।

আর এভাবেই একদিন নির্ধারিত দিনে আমাদের পথ চলা শেষ হবে। এবং একদিন মুখোমুখি হবো সেই দিনটির। এবং সেইদিন জবার দিতে হবে তারই নির্ধারণ করে দেওয়া কাজগুলোর।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।