আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সমান্তরাল


রাতের ট্রেনটা সগর্জনে ছুটে চলেছে। পূর্ণিমা চলে গ্যাছে দু’দিন আগে। তবুও বিশাল চাঁদটা একটু মরা আলো নিয়ে ছুটে যাচ্ছে জানালার পাশে পাশে। ট্রেনে ওঠা আর একটু গুছিয়ে বসার সময় টুকু ছাড়া আগে পরে সারাক্ষণই কথা হচ্ছে পরীর সাথে। ট্রেনের শব্দ আর মোবাইল নেটওয়ার্কের লুকোচুরিতে খুব বেশী কথা হচ্ছিলো না।

তবুও ফোনটা দীর্ঘক্ষণ কানে চেপে থাকে দু’জনেই। এ যেনো দূরে থেকেও পরষ্পর ছুঁয়ে থাকা। ঘোলাটে আলোয় বাইরের পৃথিবীটাকে অদ্ভুত রহস্যময় মনে হয়। ট্রেন ছুটে চলে। সকালে পরীর অফিস।

কতোই আর জাগিয়ে রাখা যায় ওকে? পরীকে ঘুমাতে বলে ফোন ছেড়ে দেয় আকাশ। ফার্স্টক্লাস এর আরামদায়ক চেয়ারে শরীর এলিয়ে মাথা টা জানালায় রেখে আধো ঘুম আধো জাগরণে ভাবনায় ডুবে থাকে। ক’টা দিন যেনো পরীর খুব কাছে থাকা হলো। অফিসের সময় টুকু বাদে বাকী সময় টুকু দু’জনে দু’জনার। হয় ফোন, নাহয় নেট।

কি যে কথা হয় কে তার খবর রাখে? শুধু ওসবের মধ্যেই কাছে রাখা, একে অন্যকে ছুঁয়ে থাকা। আজ স্ত্রী, সন্তানের কাছে ফিরছে আকাশ। কতোদিন হলো দূরে আছে ওরা। যেতে একদিন দেরী হচ্ছে বলে অভিমানী বউটা গাল ফুলিয়ে বসে আছে। আকাশ জানে, ও গিয়ে পৌঁছলেই নিমেষে জমাট বাঁধা সব রাগ বাষ্প হয়ে উড়ে যাবে বউটার।

এদিকে পরীটারও মন খারাপ। ওর আপুনি (আকাশের স্ত্রী) এলে ফোনে কথা হবে না যখন খুশী। ঘুমিয়ে পড়েছিলো আকাশ। স্থিরতা আর মৃদু কোলাহলে ঘুম ভাংলো। নামফলকে ‘শান্তাহার’, ওর গন্তব্য।

হাতব্যাগটা নিয়ে প্ল্যাটফর্মে নেমে এলো। পরীকে ফোন করে পৌঁছানোর খবর জানালো। তারপর স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। পিছনে ভালোবাসা আর আকুলতায় মোড়া পরী, সামনে মায়াবতী, প্রশান্ত আর উদার স্ত্রী, আদুরে সন্তান। কোন দিকে যাবে আকাশ? ট্রেনটা ছেড়ে গ্যালো।

গভীর রাতের স্টেশনটা আবার নিস্তব্ধ হয়ে পড়ছে। বাড়ন্ত গতির ট্রেনটার দূরে চলে যাওয়া দেখতে দেখতে আকাশ ভাবে, দু’টো পথ তো বিপরীতমুখী নয় বরং সমান্তরাল। এগিয়ে যাওয়া মানেই কাছে যাওয়া। সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে পা বাড়ায় আকাশ। প্রতি পদেই এগিয়ে যায় তার ভালোবাসার মানুষগুলোর কাছে।

More about Pori & Akash
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।