চতুর্মাত্রিক.কম (choturmatrik.com)
ধু ধু বিবর্ণ মাঠের পাশ দিয়ে যেখানে চোখ পিছলে যেতে যেতে আটকে যায় প্রখর রোদে আমি তার পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম। চোখ মেলে চাইলে শুধুই ঝলসে যেতে চায় আলোর ঝাপটায়। অজান্তেই হাত চলে যায় কপালে। হাঁটতে হাঁটতে একটু থেমে থেকে থেকে তাকাচ্ছিলাম মাঠের অপরপাশে যে বড় বটগাছটা আছে সেটার দিকে। রোজারিওর আসার কথা।
দুপুর দেড়টা বাজে। আরো বিশ মিনিট আগে, একটা দশে ওর আসার কথা। বিশ মিনিট ধরে আমি মাঠের ধার ধরে হাঁটছি। মাথার উপরে সূর্য মনে হয় মশকরা করার জন্যই তাপের উত্তাপ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। রোজারিও কি আজকে আসবে না? আমাকে তো বলল যে আজকে আসবে।
ওর কাছে যে জিনিসটা আছে ওটা আমাকে দিবে। আমি কতদিন ধরে ওকে বলছি, অনুরোধ করছি, অনুনয়-বিনয়ে মাটিতে মিশে কতবার গলায় আবেগ এনে কাঁপা কাঁপা গলায় বলেছি। রোজারিও আমাকে ঘোরাচ্ছে।
মাথায় রোজারিও আমার চাইতে একটু লম্বা। শ্যামলা গায়ের রঙ, মুখটা শুকনো, চুলগুলো পাতলা, হাত-পা টিঙটিঙে।
পুরো অবয়বে খালি ওর চোখ দুটোই অসাধারণ, একদম অন্যরকম, জ্বলজ্বলে, তীব্র ধারালো। সবসময় মনে হয় তাকিয়ে আছে শুধু ভিতরটা দেখে ফেলার জন্য। মাঝে মাঝে কথা বলতে বলতে ও যখন চুপ করে গিয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে আমি তখন ভয় পেয়ে যাই। আজকে আসার কথাটা রোজারিও আমাকে বলেছে তিন দিন আগে, বৃহস্পতিবার বিকালে, তার পর থেকে আমি অপেক্ষা করছি আর প্রার্থনা করছি যেন ও আজকের কথা ভুলে না যায়।
মাঠের এই পাশটাতে কতগুলো ইট থরে থরে সাজিয়ে রাখা, বালু, কয়েক বস্তা সিমেন্ট, লোহার রড এলোমেলো করে রাখা।
কোনো একটা কনস্ট্রাকশন সাইট মনে হয় এটা! কয়েকজন মজুর পাশে ইটের ছায়ায় বসে মাথা গামছা দিয়ে ঢেকে ভাত খাচ্ছে। লান্চ ব্রেক! খাবার দেখেই পেটে কেমন একটু মোচড় দিয়ে উঠল। সকাল থেকে খাওয়া হয়নি, ঘুম থেকে উঠে দেখা করার কথা ভাবতে ভাবতে আর খাওয়া হয়ে ওঠেনি। ভেবেছিলাম রোজারিও এলে ওর সাথে কোথাও বসে খেয়ে নেব। আসছে না কেন এখনও রোজারিও টা?
হাত উঠিয়ে ঘড়িতে দেখি বাজে একটা আটত্রিশ।
মাত্র আট মিনিট গেছে!! সময় কি থেমে গেল নাকি? গরম অসহ্য লাগছে। আমি উল্টো ফিরে হাঁটা ধরলাম, আজকে আমি আর অপেক্ষা করতে পারবো না। রোজারিও যখন এসে দেখবে আমি আসিনি, নিজেই যোগাযোগ করবে।
হন্ হন্ করে হেঁটে আমি মাঠের পাশের রাস্তায় উঠে পড়লাম। একটা রিকশা পেলে ভালো হতো।
এই রোদে হেঁটে ফেরাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।