চতুর্মাত্রিক.কম (choturmatrik.com)
আজ সকালে ঘুম ভেঙেছে খুব অদ্ভুতভাবে। আমার মাথার কাছে একটা চড়ুই এসে ডেকে ডেকে আমাকে তুলেছে। এটা একটা অসম্ভব চিন্তা। পুরোপুরি বেমানান। তারপরও আমার ঘুম ভেঙেই মনে হলো আমার মাথার কাছে একটা চড়ুই বসে আছে।
কিচ্কিচ্ পিচ্পিচ্ করে ডাকছে। ডাকটার মানবিক অনুবাদ অনেকটা " এই এই রোজারিও, উঠে পড়ো উঠে পড়ো" শোনাচ্ছে। এতই বাস্তব লাগছিলো যে আমি ধড়মড় করে উঠে বসলাম। ঘুম মুহূর্তেই উধাও! কোন পাখি নেই মাথার কাছে, কীভাবে থাকবে? আমার ঘর পুরোটাই আটকানো। হালকা বিজবিজ শব্দে এসি চলছে, পর্দা টানা সামনের বারান্দার দরজার, তার ফাঁক দিয়ে একটা হলদে আলোর তরমুজের মত ফালি আমার পায়ের নখে।
থাই কাঁচ ভেদ করে আসতে গিয়ে বেচারা আলোর চেহারা বদলে গেল! তখনই আমার মাথায় চিন্তাটা এল। ঘুম ভাঙার পর প্রথম চিন্তা।
সারাজীবন শিখেছি আলোর গতি পরম, আলোর মধ্যে সব রং মিশে আছে, ধ্রুব সত্য ধরনের একটাই বস্তু আছে, তা হলো আলো। সেই আলোও তুচ্ছ থাইগ্লাসের হাতে পড়ে ভোল পাল্টে ফেলেছে! এই পর্যন্ত ভাবনায় মন শান্ত ছিল, কিন্তু এরপরেই একদম ঝাঁ ধাক্কায় গতরাতের কথা মনে পড়ে গেল, সেইসাথে গত একমাস, দুঃসহ রাতগুলো আর দিনগুলো! মাথার যন্ত্রণাটাও সাথে ফিরে এলো। মুখের মধ্যে বিস্বাদ তেতো......এক গ্লাস লেবুর শরবত খেতে হবে।
দিন বাড়তে বাড়তে যখন প্রায় দুপুর তখন আমি খুব আনমনে হাঁটতে হাঁটতে খেয়াল করলাম আমি একটা ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে। সামনে পাশে চারদিকে গাড়িগুলো সার সার ডিসপ্লে-র মত সাজানো, গরুর গাড়ির মত ধীরে ধীরে এগুচ্ছে, আর অনেক অনেক মানুষ হেঁটে হেঁটে সেগুলোর আগে চলে যাচ্ছে।
কারওয়ানবাজার। রোদ। ভ্যাপসা গরম।
ধোঁয়া। অকটেনের গন্ধ।
আজকে আমার উপমার সাথে দেখা করার কথা! উপমা! উপমা! ও এই মুহূর্তে কোথায়? মনে হয় বাসা থেকে বের হবার জন্য তৈরি হচ্ছে, একটু টান টান করে চুল বাঁধছে, কাজল দিচ্ছে, ওড়না ঠিকঠাক করছে, স্যান্ডেল পরে হাতব্যাগটা নিয়ে দরজার দিকে যাচ্ছে। আমি পুরো সেলুলয়েডের পর্দার মত যেন সব দেখতে পাচ্ছি। উপমা আজকে খুব কষ্ট পাবে।
দেখা হবে না। ওর মোবাইল চুরি হয়েছে তিনদিন আগে, শেষ কথা হবার পরে পরেই। ঐদিন রাতে অচেনা একটা নম্বর থেকে জানালো চুরির কথা, আমার কেমন জানি স্বস্তি লাগলো শুনে, ভালো হয়েছে। কালকে জানিয়ে দিতে পারলে ভালো হত, আজকে তাহলে ওর কষ্ট করে অপেক্ষা করতে হত না। অবশ্য যে গরম আর রোদ, বেশিক্ষণ থাকতেও পারবে না।
এই রোদে দাঁড়িয়ে, মানুষ আর গাড়ির ভীড়ে আমার চোখে সব ছবি সরে গিয়ে কেন জানি উপমার ছবিটাই ভেসে উঠল। সবুজ!!! উপমার কথা ভাবলেই চোখে ভাসে এই রঙটা, উপমার প্রিয় রং, সবুজ রঙের কত জামা যে ওর আছে! হালকা, গাঢ়, কালচে, নীলচে, লালচে, হলদেটে কত অজস্র মিশ্রণ সবুজের। একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, "এই সবুজপ্রীতি কেন তোমার?" বলেছিলো, "সবুজ রঙের ঘাসে মাথা দিয়ে একদিন মরে যাবো, সব শেষ হয়ে যাবে, তুমি আমি আর চারপাশের এই বায়বীয় অনুভুতিগুলো, তাই সবুজ, শুধুই সবুজ। "
আজকে এই পোড়া ছাইমাখা রাস্তার পাশে আমি চোখে সবুজ আলো দেখতে পেলাম। পাগল হয়ে যাচ্ছি নাকি? কোথায় যেন শুনেছি মানসিক ভারসাম্য হারানোর আগে মানুষ খুব অগোছালো চিন্তা করে, নানান ছবি, রং আর ঘটনা দেখতে পায় যা বাস্তবে নেই।
আমারও কি ওরকম কিছু হচ্ছে? কারণ ঠিক মনে করতে পারছি না কেন এইখানে এসেছি, কী কাজে। পাশ দিয়ে হন্তদন্ত যাবার সময় একজন ধাক্কা দিল। আমি পড়ে যেতে যেতে তাল সামলালাম। ক্ষুধা লেগেছে, আমি আন্ডারপাসের দিকে হাঁটা ধরলাম, ওপাশে গিয়ে খেয়ে নিই , এই রোদে মাথা কাজ করছে না।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।