আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সম্মানিত স্যার, শুনতে পাচ্ছেন কি..........

মনুষ্যত্ব, মানিবকতা এবং ভালোবাসা

সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ নং অনুচ্ছেদের এই ঘোষণা অনেকটা কাগুজে হয়ে পরেছে। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান হওয়ার কথা বলা হলেও অনেকেই আছেন যারা দেশীয় আইনের উর্ধ্বে। এই যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় বিশিষ্ট এবং বৈশিষ্টপূর্ণ শিক্ষকবৃন্দ। যাদের কর্মকান্ড অনৈতিক কিংবা দেশের স্বার্থবিরোধী অথবা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হলেও তারা আইনের উর্ধ্বে।

বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু প্রগতিশীলতার সাইনবোর্ডধারী চরম প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষকদের ক্ষেত্রে একথা সম্পূর্ণ সত্য। কয়েকদিন আগে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলছে মাদরাসা থেকে পাশ করে আসা বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নানা ধরণের প্রতিবাদ কর্মসূচী। অবশ্য এই আন্দোলনে শুধুমাত্র মাদরাসা শিক্ষার্থীরাই সমর্থন দেয়নি বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সচেতন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদেরও অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। কেননা জাতিকে সত্যিকারের মেধাশূণ্য করার লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ঢাবির কয়েকটি বিষয়ে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে যে অতিরিক্ত শর্তারোপ করা হয়েছে তা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আরো স্পষ্ট হয়ে গেছে ঢাবির কয়েকজন জাঁদরেল শিক্ষকের সরাসরি আইন ভাঙ্গার ব্যাপারটি।

যে আইন দ্বারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় সেই Dhaka University Order, ১৯৭৩ -এর ৬ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, The University shall be open to all persons of either sex and of whatever religion, race, creed, class or colour. এখানে কোন বিশেষ সম্প্রদায়, গোষ্ঠী বা বর্ণের প্রতি বৈষম্য করা হয়নি। তবে কেন মাদরাসা থেকে পাশ করা শুধুমাত্র মুসলিম সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। আইনের এই বিধানকে লঙ্ঘন করে কিছু শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের কারণে মাদরাসা থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের সরকার স্বীকৃত সমমান পাওয়া স্বত্ত্বেও ঢাবির আটটি বিভাগে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বেআইনি এই কাজ করতে সামান্য লজ্জাবোধ করেননি কিছু জাঁদরেল শিক্ষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে একমাত্র মানদন্ড করা হয়েছে মেধাকে যার মূল্যায়ন পদ্ধতি হবে লিখিত ভর্তি পরীক্ষা।

যেমনটি বলা আছে Dhaka University Ordinances and Regulationsএর Chapter !! Gi 3(!!)-এ, Candidates shall be admitted on the basis of merit based on written test to be conducted by the respective Unit and according to the availability of number of seats fixed by the General Admission Committee. অথচ কর্তৃপক্ষ ভর্তির মূল ভিত্তি নির্ধারণ করেছেন এমন একটি বিষয়কে যার উল্লেখ ভর্তি সংক্রান্ত আইনের কোথাও নেই। এছাড়াও কয়েকটি বিভাগে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভর্তির প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে কয়েকজন বিভাগীয় চেয়ারম্যানগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে বিভাগীয় চেয়ারম্যানকে এধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো অধিকার দেওয়া হয়নি। একই আইনের ২ ধারায় ভর্তির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে General Admission Committee -কে। আর এই কমিটি গঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হবেন চেয়ারম্যান এবং রেজিস্টার হবেন কমিটির মেম্বার সেক্রেটারী।

কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হবেন প্রো-উপাচার্য, ট্রেজারার, সকল ফ্যাকাল্টির ডিন, সব হলের প্রোভোস্ট, সকল বিভাগের চেয়ারম্যান, সকল ইনস্টিটিউট এর পরিচালক এবং প্রোক্টর। আইন অনুযায়ী এই কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা ৯০ জনের উপরে এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যান সেখানে একজন সাধারণ সদস্য মাত্র। অথচ একজন বিভাগীয় চেয়ারম্যান কিনা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ভর্তির ব্যাপারে একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। তবে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত আরেক খবরে জানা যায় সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় চেয়ারম্যানগণ এ সিদ্ধান্ত নেননি। কেননা লোক প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেছেন, তার বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজীতে কমপক্ষে ১৪ নম্বর পেতে হবে (প্রথম আলো, ২০ অক্টোবর’০৮) ।

ঠিক এমনটি উল্লেখ আছে ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি নির্দেশিকায়। কিন্তু একই বিভাগে ‘ঘ’ ইউনিট থেকে ভর্তির ক্ষেত্রে নতুন শর্তারোপ করা হয়েছে। তাহলে কি আমরা ধরে নেবো ‘ঘ’ ইউনিট অর্থাৎ সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. হারুন অর রশিদ হয়তো তার মতাদর্শী আরো দু’একজন শিক্ষককে সাথে নিয়ে সবার অগোচরে সুস্পষ্টভাবে আইন অমান্য করে এধরণের অন্যায় কাজ করেছেন? যেমনটি তিনি নিজেই বলেছেন, বাংলা ও ইংরেজী বিভাগে গত ১০ বছর আগেই এ নিয়ম করা হয়েছিলো। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগেও গত বছর এবং এবার আরো ৫টি বিষয়ে ২০০ নম্বরের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া (আমার দেশ, ২০ অক্টোবর’০৮)।

ড. হারুন অর রশিদ এর আইন ভাঙ্গার চলমান প্রক্রিয়ার বলি হবে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা? জনাব স্যার! এ কেমন খামখেয়ালীপনা আপনার? সবকিছুর পিছনে নাটের গুরু হিসেবে কি আপনিই ক্রমাগত আইন ভেঙ্গে বাহাদুরীর সাথে ফলাও করে ঘোষণা দিচ্ছেন? সত্যিই আপনি খুব শক্তিশালী। আপনাকে ধরা-ছোয়ার ক্ষমতা আইনের নেই। তবে জনাব স্যার! একটা বিষয় সবসময় মনে রাখবেন। আপনি গ্রেফতার হওয়ার পর ঢাবির শিক্ষার্থীরাই আপনাকে মুক্ত করে এনেছিলো। অন্যায়ের প্রতিবাদ তারা করতে জানে, সর্বদা করে।

আপনার কৃতঘœতা এবং গাদ্দারীর জবাবও তারা দিতে জানে, হয়তো সময় মতো দিবে। আপনার কাছে অনুরোধ ‘প্রস্তুত থাকুন’।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.