হাঁটা পথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে হে সভ্যতা। আমরা সাত ভাই চম্পা মাতৃকাচিহ্ন কপালে দঁড়িয়েছি এসে _এই বিপাকে, পরিণামে। আমরা কথা বলি আর আমাদের মা আজো লতাপাতা খায়।
রিফাত হাসানের ফাজলামোর একটা সীমা থাকা দরকার Click This Link লেখাটি আমার দৃষ্টি থেকে মস্তিষ্ক মায় মন পর্যন্ত আকর্ষণ করে ফেলেছে। সত্যিই তো ফাজলামোর একটা সীমা থাকা দরকার।
কিন্তু সীমাটা কে ঠিক করবে? উত্তর হবে, যার সেই ক্ষমতা আছে। বাংলাদেশে সীমা ঠিক করবার ক্ষমতা আছে রাষ্ট্রের_ যে রাষ্ট্র লুটেরা পুঁজিপতিদের ক্লাব, এবং যে রাষ্ট্র সাম্রাজ্যবাদের লিঙ্গও বটে। আপাততদৃষ্টে মনে হয়, হুজুরেরা বোধহয় রাষ্ট্রের সীমা ঠিক করাকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তারা এখানে রাষ্ট্রের সঙ্গে কোলাবরেটই করছে। আর তাতে অনেকের লোম জ্বালা করা শুরু হয়েছে।
তারা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত কালচারাল এলিট তথা ’জাতীয়তাবাদী অসাম্প্রদায়িক’। এর বাইরে আরেকটি অংশ আছে। তারা এই ঘটনাকে রাষ্ট্র-মিলিটারি-মোল্লা অরে সঙ্গে জনগণের সাংষ্কৃতিক প্রতিরোধের দার্শনিক প্রতীক লালনের লড়াই হিসেবে গণ্য করেন, এবং এর মধ্যে বর্তমান শাসকদের প্রতিবিপ্লবী রাজনৈতিক চাল উদ্ঘাটন করেন। এ নিয়ে এখানে Click This Link আমি আমার অবস্থান খোলা করার চেষ্টা করেছি। এখানে বরং রিফাত হাসানের লেখা থেকে নাজেল হওয়া কয়েকটা প্রশ্ন নিয়ে কথা বলা যাক।
রিফাত লিখেছেন,
কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে, তাদের আগ্রহের জায়গা লালন, নাকি কউমি মৌলভিদের প্রতি তাদের আক্রোশ, এই প্রশ্নটা আমার মনে জোরভাবে পয়দা হয়েছে। [/si গুড। প্রশ্নটা সঙ্গত, কিন্তু রাষ্ট্র কেন এই মুহূর্তে কউমি মৌলভিদের আষ্ফালনের স্পন্সর হচ্ছে, সেই প্রশ্নটিও সমান ভাবে ওঠা উচিত ছিল না কি? নাকি, এই ভাঙ্গার ব্যাপারে তাঁর সমর্থন মোল্লা-মিলিটারি আর ইংরেজি শিক্ষিত এলিট আমলাদেরই সঙ্গে???
তাই তিনি লিখতে পারেন,
মৌলভিদের প্রতিবাদের উত্তরে প্রতিক্রিয়াশীল মধ্যবিত্তিয় অবস্থান ও অবস্থান-সঞ্জাত ভাষাকে মোকাবেলা করার ...যা কিনা একই সাথে আমাদের রাষ্ট্রের বর্তমান সংকটের মূল বিন্দুসমূহের একটি গুচ্ছকেও নির্দেশ করে বলে আমার মনে হয়। কিন্তু কী নিদের্শ করে তা বলা হল না দেখে বোঝাও গেল না। যেহেতু করনেওয়ালা মোল্লারা করেছে আমরা বকাউল্লারা তার একটা বুদ্ধিবৃত্তিক সাফাই গেয়ে এই পালা শেষ করি? ব্যাপারটা তাই না কি? তারপরও কয়েকটা দাগ এঁকেছেন রিফাত।
সেই দাগ থেকে একটা চিন্তার ছবি ধরার চেষ্টা করে দেখি না কেন? তিনি মৌলভিদের ভাস্কর্য ধরে রশি দিয়ে টানাটানিকে বলছেন প্রতিবাদ অর্থাত উচিত কাজ এবং যে ক্যাম্প থেকে এর প্রতিবাদ হচ্ছে, সেই বাঙালি জাতীয়তাবাদী, শিল্পবাদীদের প্রতিক্রিয়াশীল। ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলতা আর জাতীয়তাবাদী এলিটদের প্রতিক্রিয়াশীলতার মধ্যে কোনটা কম বেশি সেই তর্কে না গিয়ে বলতে হয়, ভাস্কর্য ভাঙ্গাই যদি প্রগতিশীলতা হয় তাহলে সাদ্দামের মূর্তি ভেঙ্গে বুশও একজন দশাশই প্রগতিশীল। সত্যিই কলিকালে জরুরি অবস্থার দশচক্রে পড়ে ভগবান ভুত, আর ভুতই হয় ভগবান। দেখি তো কেমন প্রতিবাদ তা? খতমে নব্যুয়তের নেতা জানিয়েছেন, কোনো একজন ‘সব অর্থ দিচ্ছেন; কিন্তু তিনি নাম প্রকাশ করতে রাজি নন’ (সমকাল, ১৮ অক্টোবর)। আমিনী গং-য়ের হুঙ্কারে সরকার নড়েছে, নাকি সরকারেরই খুঁটির জোরে তারা মূর্তি বা ভাস্কর্য টেনেছে তা নিয়ে কেউ বিতর্ক করতে পারে।
কিন্তু আমরা পত্রিকা মারফত জানছি যে, সিভিল এভিয়েশনের উচ্চশিক্ষিত চেয়ারম্যানও ভাস্কর্যবিরোধীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বলছেন, ‘কেবল ওরাই মুসলমান নয়, আমরাও মুসলমান’, (সমকাল ১৮ অক্টোবর) সুতরাং ‘যে প্রতিবাদ সরকার স্পন্সরড এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ একটি কর্পোরেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিও যখন সহমত, তখন তা প্রতিবাদ না প্রতিবিপ্লব, তা বোঝায় মারেফতি জ্ঞানের দরকার পড়ে না। কথা এখানেই শেষ নয়,
শিক্ষিত মধ্যবিত্ত্ব, যারা বেশীরভাগ সময়ই জরুরী মুহূর্তে কোন রেডিক্যাল অবস্থান নিতে পারে না হরেক সুবিধাবাদিতার কারণে, তাদের একটা আক্রোশ অবশ্যই আছে অশিক্ষিত মৌলভিদের প্রতি, যারা জরুরী অবস্থায় কথা বলে, প্রতিবাদ করে, ভাঙ্গে, পৌত্তলিক সমাজের দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য আইকনগুলো। বেশ ভাল কথা। উভয় সংস্কৃতির পারস্পরিক আক্রোশের ব্যাপারটা আমি বুঝি, কিন্তু জরুরি অবস্থার মধ্যে মৌলভিদের কোন প্রতিবাদ জনগণের দিক থেকে জরুরি ও রেডিক্যাল ছিল তার হদিস পেলাম না। আমাদের কর্পোরেটপুষ্ট শিক্ষিত কলোনিয়াল মধ্যবিত্ত আর মধ্যপ্রাচ্যপুষ্ট মৌলভিদের মধ্যে একটা স্বার্থগত দ্বন্দ্ব আছে জানি।
উভয়েই যে রাষ্ট্রের দুধ-মধু-ঘি খাওয়ার জন্য কামড়াকামড়িরত, তাও তো দেখা। এর বাইরে মৌলভিদের কোনো সত্যিকার রেডিক্যাল অংশ নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু দেখিয়ে দেবেন কি তারা কারা?
এই মৌলভিরা মোটেই অশিক্ষিত নয়, তারা রীতিমতো (আরবি-ফার্সি-ইংরেজি) শিক্ষিত। নানান এলেমদারির সঙ্গে তাদের কানেকশন। তাদের মধ্যে পশ্চিমা ভাবধারায় শিতি ধনীর দুলালেরাও যেমন আছে, আবার মোসাদের টাকার চ্যানেলও ফকফকা শোনা যায়। আবার ক্ষেত্রবিশেষে ঐ সিভিল এভিয়েশনের আমলা বা ফখরু সরকারের ড. ব্যা. অলা উপদেষ্টাদের সঙ্গে তাদের অর্থাৎ ঘোড়া আর গাধার মিলনও আকছারই তো দেখি।
ব্যারিস্টার মইনুলের আমলের কথা স্মরণ করতে বলি। স্মরণ করতে বলি, ঢাকা শহরের এন্তার শপিং মলগুলোতে সাজানো ইতর যৌনাবেদনমাতানো মেনেকিন মূর্তিগুলো বা আর বিশ পঞ্চাশটা জায়গায় বিভিন্ন কর্পোরেট স্পন্সরড ভাস্কর্য কিন্তু তারা ভাংতে যায়নি। কালচার ইন্ডাস্ট্রির রগরগে দৃশ্যসংষ্কৃতি ও পুঁজিবাদী পৌত্তলিক সমাজের সকল আইকনের সঙ্গে সহবাসে তারা রীতিমতো অভ্যস্ত। সাম্রাজ্যবাদের খনিজ লুণ্ঠন ও সোফা-হানা-পিএসসি, এফডিআই ইত্যাদির বিরুদ্ধে একটা ঢিলও তাদের চুঁড়তে দেখা যায়নি। মার্কিন দূতাবাস তাদের কাছ থেকে সর্বদা নিরাপদ।
সুতরাং পুঁজিবাদী সমাজের কোন কোন আইকন তারা আঘাত করে, ভাঙ্গে, কীভাবে তারা রাষ্ট্রবিরোধী হয়, তার সুলুক কিন্তু রিফাত হাসানের লেখায় নাই। যাহা নাই, তাহাকে আমলে নিই কীভাবে?
তারপর তিনি বলে যান, যারা কোন সুবিধাভোগি নয়, যারা এইসবকে প্রত্যাখ্যান করেছে, উদ্ধত, জঙলি এবং অসভ্য উপায়ে, সভ্য মানুষের ভাষায়। মচেৎকার!!!
বাংলাদেশের ইসলামী স্ট্যাবলিশমেন্ট টিকেই আছে রাষ্ট্রের সহযোগিতায় আর পুঁজির কারুণ্যে। দরিদ্র মাদ্রাসা ছাত্রদের কথা বাদ দিলে, এদের নেতারা সবাই সম্পত্তিবান শ্রেণীভুক্ত। কবে তারা সুবিধাভোগের বিপরীতে দাঁড়াল? গরিব, সবদিক থেকে নিপীড়িত সম্ভাব্য শ্রেণী সংগ্রামের অগ্নিগর্ভ নিম্নবর্গীয় হিসেবে এই শ্রেণীটির প্রতি আমাদের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও তাদের রাষ্ট্র যত অবিচার করেছে, তার সঙ্গে কৃষক শ্রেণীর ওপর চলা অবিচারের তুলনা চলে।
কোনো কাকতাল নয় যে, এরা সেই কৃষকদেরই সন্তান বা সন্তুতি। কিন্তু কবে, ইসলামপন্থি নেতারা সুবিধার মধুর নহর থেকে গা উঠিয়ে এদের সঙ্গে এককাতারে দাঁড়িয়েছে? আজিব, তবুও রিফাত বলতে কোশেশ করেন,
মৌলভিদের মূর্তিবিরোধিতার মোকাবেলায় অইটার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে ফ্যানাটিসিজম দিয়ে আলাপ সারা আর ফাজলামো করা একই কথা। কারণ এই আলোচনাটির সাথে দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিক আলোচনাটি জড়িত। আনকন্ডিশন, নিরাকারকে আকার প্রদান, ভারতীয় উপমহাদেশের দ্বিজত্বের ধারণা, পৃথিবীতে ধর্মের বিবর্তনের যে ইতিহাস, এইসব ব্যাপারগুলিতে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ এবং স্ট্যাণ্ডপয়েন্ট আলোচনায় আনতে হবে। অবশ্যই আনতে হবে, কিন্তু সবার আগে রাজনীতির বিষয়টা ফয়সালা করে নিয়ে।
বিষয়টাকে বিমূর্ত ধর্মতত্ত্বের আলোচনায় নিয়ে যেতে মুনতাসীর মামুন বা শাহরিয়ার কবির মার্কা বুশের ওয়ার অন টেররের পালক পুত্রদের সুবিধা হয়। কিংবা চারুকলা কেন্দ্রিক আন্দোলনকারীদের হঠাত লালনপ্রেমের নামে জাতীয়তবাদের কাঠামোর মধ্যে গরিবের সাংষ্কৃতিক নেতার আÍসাতকরণের দরকার পড়ে। এবং দেশ তালেবান হয়ে গেল বলে বা এদের ফ্যানাটিক বলে দেশে মার্কিন সেনা ডেকে আনার মওকাও কারো কারো হয়। হুজুরদেরও তাতে সুবিধা, কেননা ইসলামে নাজায়েজ পোপতন্ত্রের মতো ভূমিকা নিতে পারলে, তারা আর ধর্ম সমার্থক হয়ে যায়। আমাদের রাষ্ট্রেরও তাতে সায় থাকে।
কেননা আদর্শিক সংকট এবং পুঁজির লুণ্ঠনকে একটা ধর্মীয় সামিয়ানায় ঢাকতে রাষ্ট্রও হালে ইসলামী পোপতন্ত্র খাড়া করতে চায়। এই জিনিষটা চোখে পড়ে না বলেই রিফাত হাসান বলে যান, কিন্তু এর সাথে রাষ্ট্রের একটা সম্পর্কের জায়গা আছে যেইটা আমরা বেমালুম ভুলে গেছি। মূলত রাষ্ট্র কোন চরম বা চুড়ান্ত কনসেপ্ট না। নাগরিকের কনসেন্ট, নাগরিকের সাথে একটি অলিখিত চুক্তি, যেইটারে আমরা সোশাল কন্ট্রাক্ট বলতে পারি, সেইটাই রাষ্ট্র গঠনে আপাতত বৈধতা তৈরী করে। Click This Link
রাষ্ট্র আমাদের এই ধারণা দিতে চায় যে, তা আমাদেরই সম্মতির ভিত্তিতে চলে।
কিন্তু রাষ্ট্রের বিরোধিতা করার মুহূর্তেই ধরা পড়ে যে, রাষ্ট্র আসল বলপ্রয়োগের ভিত্তিতে গড়া এবং সেটাই তার প্রধান তরিকা। হেগেল বলেছিলেন, যাহা বাস্তব তাহাই যৌক্তিক। এখানে বলা দরকার, যাহার বল আছে তাহাই বাস্তব। শক্তিই তার যুক্তি। আজকে মোল্লাতন্ত্রই হোক আর তাদের প্রতিপালক রাষ্ট্রই হোক আর হোক সাম্রাজ্যবাদ।
বিশেষত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী আধুনিকতা, এদের সকলেরই ভিত্তি বলপ্রয়োগের ওপর। সেই দিকটা খেয়াল না করলে আসল জিনিষটাই হারিয়ে যায়। এবং এই জরুরি অবস্থাতে আমরা দেখছি, আমিনী গংদের বলপ্রয়োগের ক্ষমতা আর রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগের শক্তি দুজনে দুজনার হয়ে কাজ করছে কোনো এক মায়াবির যাদুবলে। গত এক দশকে এই ঐক্যের ভুরিভুরি নজির হাজির হয়েছে। তা বাদ দিয়ে গায়েবি ইতিহাসের কোশেশ করায় কেন এত কসুর, তা জানতে সাধ হয়।
এই ঐক্যের রাজনীতিটি না বুঝলে সত্যের শাঁসই খাওয়া হয় না, ছালবাকলায় গাল ঘসাঘষি হয়। কেননা রিফাত নিজেই তো বলেছেন, শিল্প সংস্কৃতি এইসবের কোনটাই ধোয়া তুলসিপাতা নয়, এসবের রাজনৈতিক পাঠ জরুরী। সুতরাং আমিনী-খতমে নবাদের সংষ্কৃতির রাজনৈতিক চেহারাটি কী? বিপ্লবী, জনপ্রেমী নাকি সাম্রাজ্যবাদের পঞ্চম বাহিনীগিরি? এখানে বলে রাখি, আমাদের আওয়ামী কালচারাল বৃত্তের সাংস্কৃতিক প্রত্যয়ের মধ্যেও পশ্চিমাদের গোলামির ছিলছাপ্পর স্পষ্ট। এবারও তা খোলামেলা দেখা যাচ্ছে। বুঝতে হলে তো দুই দিকেই বুদ্ধিবৃত্তিকে নিয়োজিত করা উচিত।
দেখুন কেমনে তিনি বলে যান,
ষাট সত্তর দশকে ভারতের প্রভাবশালী নকশাল আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীরা প্রচুর ভাস্কর্য ভেঙেছে। মূর্তি নয় ভাস্কর্য, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ এলিট আইকনদের, এবং এলিট সংস্কৃতির বিরুদ্ধে বৈপ্লবিক অবস্থান নিয়েছে।
বেশ, এর অর্থ দাঁড়ায়, নকশালরা ভেঙ্গেছে বলে খতমেদের ভাঙ্গাটাও জায়েজ। অর্থাৎ ভাঙ্গাটা প্রধান নয়, কে ভাংছে সেটাই প্রধান। দেখা যাচ্ছে, তিনি লালনের মুর্তি ভাঙ্গার পক্ষে কারণ ইসলামপন্থিরা তা ভেঙ্গেছে।
নাকি? ফলে মূর্তি বা ভাস্কর্যের থেকে তেনার কাছে মূর্তিবিরোধীদের পলিটিক্সটাই বেশি গ্রহণীয়। তবে?
তিনি জানাচ্ছেন, আফগানিস্তানে যখন জাতিসঙঘের নিষেধাজ্ঞার কারণে অনাহারে প্রচুর শিশু মারা যাচ্ছিল, জাতিসঙঘ তখন বুদ্ধমূর্তি সঙস্কারের জন্য প্রচুর টাকা নিয়ে হাজির হলো- তালেবানরা তখন বলেছিল, আমাদের মূর্তির দরকার নেই, আমাদের শিশুদেরকে আহার দিন।
মুর্তি বনাম শিশু এই বাইনারি সাজিয়ে দিয়েছিল পশ্চিমা মিডিয়া ও তাদের প্রভুরা। দেখা গেল তালেবানরা সেই ফাঁদ ধরতে না পেরে মুর্তি ভেঙ্গে সাম্রাজ্যবাদী ওয়ার মেশিনের পিস্টনে এমন গতি আর প্রচারের পালে এমন হাওয়া দিল যে, শেষ পর্যন্ত আফগান নারী আর মুর্তি রক্ষার নামে সেখানে আগ্রাসন ঘটলো। আমাদের এনারাও তেমন ফাঁদে পা দিচ্ছেন সজ্ঞানে।
(সাম্রাজ্যবাদী নারীবাদ আর মানবতাবাদের সঙ্গে বিপ্লবী নারীবাদ ও মানবতাবাদ নিয়ে পরে আমাদের আলোচনা করতে হবে। আপাতত আমাদের পথে এগই। )
আখেরে রিফাত বলছেন, এটি কোন ধর্মীয় বিষয় নয়, এটি হল আইকনকে ব্যবহার করে রাস্ট্রের ধর্ম হওনের আকাঙ্ক্ষা, যেইটারে প্রতিরোধ করা সব নাগরিকের দায়িত্ব।
এই পয়েন্টে আমি আত্মহারা। আলবৎ এটা কোনো ধর্মীয় বিষয় নয়।
ক্ষমতা বিষয় রাজনীতির বিষয়। লালনের আইকনের বদলে তাহলে হজ্ব মিনারের আইকনটিই যে শ্রেয় হলো, সেটা বাংলাদেশের জনগণের কোন অংশের রাজনীতি এবং কোন অংশের ক্ষমতায়ন? রাষ্ট্র যেভাবে কয়েকজন লুঙ্গি পরা কৃষক বাউলের ভাস্কর্য লুঙ্গি পড়া মাদ্রাসা ছাত্রদের দিয়ে বেইজ্জত করালো, সেটা কি এলিট পাড়ার স্থাপিত বা সোনারগাঁ-শেরাটনের কোনো কিছুর বেলায় হতে দিত। এসব প্রশ্নে জবাব তাই আমাদের খুঁজতেই হয়। যতই খেলাফতের মোরতবা কানে বাজুক, যতই একদিকে ওয়ার অন টেরর অলা শিল্পবাদী-জাতীয়তাবাদী কলোনিয়াল এলিট আরেকদিকে মূর্তিবিদ্বেষী জেহাদিদের মাতম। আর রাষ্ট্র আধা সামন্তীয় ইসলাম আর আধা পুঁজিবাদের এক খচ্চর রাষ্ট্রধর্ম জন্ম দিক।
সেইটারে প্রতিরোধ করা কর্তব্য কি কর্তব্য না সেটা জানতে সাধ হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।