মডারেট মুসলিম বলবার একচ্ছত্রক্ষমতাধারী মার্কিনমদদপুষ্ট সাম্রাজ্যবাদী শক্তিটি রাষ্ট্রের শ্রেণিভুক্তি করবার সময় তাদের নিজস্ব প্রয়োজনেই কোনো কোনো দেশকে মডারেট মুসলিম রাষ্ট্রে বলে থাকে। প্রতিটি রাষ্ট্রই নিজস্ব অর্থনৈতিক প্রয়োজনকে বিবেচনা করে অন্য সব রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে।
রাষ্ট্রের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, তাকে নিজের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি মনে করা এবং না করা, যেহেতু সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর প্রধান হয়ে উঠবার কারণেই নিজস্ব রাষ্ট্রীয় ভান্ডার হতে কাকে কতটুকু অনুদান দেওয়া হবে এইসব নির্ধারণ করে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে স্থাপিত গবেষকদের তথ্য ও বিশ্লেষণ বিবেচনা করে। যারা তথাকথিত জঙ্গীবাদী দেশ তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলোকে বাধাগ্রস্ত করা এবং অনুদানগৃহীতার ভুক্তি থেকে তাদের মুছে ফেলে নির্দিষ্ট কয়েকটি শর্ত পুরণের নির্দেশনা দেওয়া, এবং এই সূচকগুলো নিয়মিত প্রকাশ করে যাওয়া- মুসলিম প্রধান দেশগুলোর জন্য একটা রাষ্ট্রীয় মাত্রা নির্ধারিত আছে এই প্রক্রিয়াটিতে। সেই সূচকগুলোর কোনো কোনোটা যখন উর্ধমুখী হয়ে উঠে তখন দেশটি মডারেট মুসলিম রাষ্ট্র থেকে জঙ্গীবাদী রাষ্ট্রের দিকে যাত্রা করে।
অবশ্যই এই বিবেচনাটুকু যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের গবেষকদের বিশ্লেষণের ভিত্তিতেই নির্ধারিত।
সুমন রহমানের এই বক্তব্য শুনে আপত্তিকর মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে জ্ঞানবমক সুমন রহমান মূলত এখানের আলোচনার বাইরে টেক্সট আর কনটেক্সটভিত্তিক হয়ে উঠবার বৃথা চেষ্টা করেছেন। এখানে আলোচনার ভিত্তি ছিলো ব্যক্তি। ব্যক্তি মানুষ যিনি ইসলামকে নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস মনে করেন, তার পক্ষে নিজেকে মডারেট মুসলিম ঘোষণা দেওয়া সম্ভব কি না।
তবে সুমন রহমানের বক্তব্যে এটা প্রতিষ্ঠিত হলো এখন থেকে সনদধারী মডারেট মুসলিম হয়ে উঠবার একটি সম্ভবনার ক্ষেত্র তৈরি হলো। এখন এই বিষয়ক একটি অর্থনৈতিক চক্রও তৈরি হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা প্রবল। কোনো কোনো এজেন্সী এখন কিছু বিষয়ে পরীক্ষাগ্রহন করে ব্যক্তিকে মডারেট মুসলিম সনদ দিয়েও দিতে পারে।
আমাদের মডারেট মুসলিম সূচকে আপনি পাশ করতে পারেন নি সুতরাং আপনি মডারেট মুসলিম নন। এই পরীক্ষাগ্রহনকারী প্রতিষ্ঠানটি অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র সরকার কতৃক অনুমোদিত হতে হবে।
কোনো ব্যক্তি যখন নিজেকে মডারেট মুসলিম বিশেষণে বিশেষায়িত করতে চান তখন তিনি কেনো নিজেকে এই নির্দিষ্ট বিশেষণের ছাতার নীচে রাখতে চান? আমি এই নির্ধারিত ধর্মবিশ্বাসটির অনুসারী এবং এটার যেসব নির্দেশনা বিদ্যমান তার অনেকগুলোই আমি আধুনিক বিবেচনা করি না, সুতরাং কেতাববর্ণিত সকল ইসলামি অনুশাসন এবং নির্দেশনা আমি অন্ধের মতো অনুসরণ না করে বরং নিজস্ব বিবেচনাশক্তি ব্যবহার করে কল্যানকর এবং শুভ অনুশাসনগুলোর চর্চা করি।
আমি অন্য মতের অস্তিত্বকে মেনে নিয়ে সহনশীল মুসলিম হয়ে উঠি। মডারেট আদর্শ সব সময়ই আদর্শের সবটুকু নিয়ে গঠিত হয় না, কিছু কিছু ক্ষতিকারকবিবেচিত আদর্শিক উপাদানকে গর্হিত জ্ঞান করেই এই উপাদানগুলোকে বর্জনের প্রচেষ্টা থাকে বিশ্বাসীর ভেতরে।
আমি জঙ্গীবাদী হয়ে উঠতে চাই না, আমি সংস্কৃতির চর্চা করতে চাই, আমি কর্মক্ষেত্রে নারীকে নিজের সমকক্ষ দেখতে চাই, নারীকে পুরুষের অধীনস্ত ভাবি না, সামাজিক ক্ষমতায়নের পর্যায়ে নারীকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে দেখতে চাই। মডারেট মুসলিম ভাবধারায় ধর্মের সামাজিকীকরণ বিষয়টা অনুপস্থিত।
অন্তত আমার নিজস্ব অভিমত এমনটাই।
ইসলামের দুটো দিক আছে, একটি ব্যক্তি মানুষের ইসলাম। যেখানে ব্যক্তির নিজস্ব দায়বদ্ধতা আছে, ইশ্বরের নির্দেশনা মেনে চলবার এবং ইশ্বরের আনুগত্যের প্রমাণ হিসেবে তার কৃতকর্তব্যাদি নির্দিষ্ট। ইশ্বরের অধিকার বান্দার উপরে যতটুকু সেটুকু পরিপূর্ণ পালন করবার প্রচেষ্টা।
এবং একই সাথে এই ধর্মের একটি সামাজিক দিক আছে।
যেখানে ব্যক্তি একক ভাবে কোনো কর্তব্য পালন করে না বরং সামগ্রীক ভাবে তাকে কিছু দায়িত্ব পালন করবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব, এইসব বিষয়াদি ব্যক্তির সাথে ইশ্বরের যোগাযোগের জায়গা। এখানে ইশ্বরের নিকটে দায়বদ্ধতা ব্যক্তির। এর বাইরে সামাজিক ইসলামের অংশ হিসেবে যাকাত আসতে পারে, পারস্পরিক অর্থনৈতিক লেনদেনে স্বচ্ছতা, ঘুষ গ্রহন দুর্নীতিগ্রস্ত না হওয়া, সুদের কারবার না করা। যদিও ব্যক্তিকেই এইসব কাজ করতে হয় নিজস্ব জায়গা থেকে তবে সামষ্ঠিক প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হয় সকল বিশ্বাসীকেই।
ইশ্বরের হক এবং বান্দার হক পুরণ করে পরিপূর্ণ ইসলামমনা মানুষেরা নিজেকে মুসলিম দাবি করতে পারে। যখন বান্দার হককে খর্বিত করে ইশ্বরের অধিকারকে পরিপূর্ণ করবার রীতি প্রচলিত হয়ে যায় তখন সেটা মডারেট মুসলিম হওয়ার প্রথম ধাপ।
মুসলিম সামাজিক মানুষ এবং মুসলিম ব্যক্তি, আধুনিকতায় ব্যক্তি চিহ্নিত হওয়ার পরে , বোধ হয় ভিন্ন। ব্যক্তিসাতন্ত্রতাবাদী আধুনিকতা মানুষের সম্মলিত ঐক্যের বিপক্ষেই কাজ করে, এমন কি সেটা মডারেট মুসলিম বিশেষণের আড়ালে বিচ্ছিন্নতার দিকেই নিয়ে যায় ব্যক্তিকে।
কথা হলো মডারেট মুসলিম রাষ্ট্র এবং মডারেট মুসলিম এই শব্দগুলোর ভেতরে কোনো ঐক্য আছে কি না? একটি রাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষ মডারেট মুসলিম হলেই কি সে রাষ্ট্র মডারেট মুসলিম রাষ্ট্র হতে পারে?
যারাই নিজেকে মডারেট মুসলিম দাবি করছেন মার্কিন-ব্রিটিশ সনদ হাতে না রেখে তাদের নিজস্ব অভিমত কি এই বিষয়ে।
আমি আমার অভিমত জানালাম। মডারেট মুসলিম বিষয়ে আমার সংজ্ঞার বাইরেও প্রতিটা মডারেট মুসলিমের নিজস্ব সংজ্ঞা রয়েছে। সেই সংজ্ঞাগুলোকে যাচাই করেই অবশ্যই সবার জন্যই গ্রহনযোগ্য একটা মডারেট মুসলিমের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা যাবে।
রাষ্ট্র নয় যখন ব্যক্তি বিবেচিত হবে মডারেট মুসলিম হিসেবে, যেটা নিয়ে মূলত এইখানে আলোচনা চলছে, তখন তাকে কার কাছে সনদ নিতে হবে? কি শর্ত পুরণ করতে হবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।