I realized it doesn't really matter whether I exist or not.
অনুগ্রহ করে গল্পের ধারাবাহিকতা রক্ষা করুন।
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
============================================
সেদিন রাতে নকশীদের বাসাতেই থাকলাম। আন্টি আম্মুর সাথে ফোনে কথা বললেন এবং পরিস্থিতি বুঝিয়ে বললেন। আম্মু আবার দয়ালু মানুষ! তিনি আমাকে কিছু জিজ্ঞেস না করেই আমাকে যেতে দিতে রাজি হয়ে গেলেন। আমি আর কী করি! বাধ্য হয়েই রাজি হতে হলো।
এমনিতেই ভুত-প্রেত নিয়ে আমার ভয়ের কোন অন্ত নেই। তার উপর আবার সরাসরি ভুতের সাথে যুদ্ধে নামতে যাচ্ছি। একসাথে রোমাঞ্চ ও ভয় অনুভব করছিলাম।
পরদিন সকাল থেকে আন্টিকে খুব ব্যস্ত দেখলাম। এখানে সেখানে ফোন করছেন।
কীভাবে যাওয়া হবে, কোথায় যেতে হবে সব ঠিকঠাক করছেন। দুপুরের দিকে ঠিক হলো তার পরদিনই সকালে আমরা রওনা হচ্ছি। আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে আমি আর নকশী একা যাচ্ছি। আমি জিজ্ঞেস করলাম আন্টি বা শিহাব ভাইয়া আমাদেরকে এগিয়ে দিয়ে আসলে সমস্যা কোথায়? আন্টি বললেন, ঐ হুজুর নাকি বলেছেন সমগ্র পথ আমাদের একলাই পাড়ি দিতে হবে। আরো বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা দিয়ে দিয়েছেন তিনি।
যেমন, এই দীর্ঘ পথে আমাদের কারো সঙ্গে কোন ঘড়ি থাকতে পারবে না, যোগাযোগের মাধ্যম যেমন মোবাইল থাকতে পারবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। এজন্যই আমি আরো ভয় পাচ্ছিলাম। যদি কোন বিপদে পড়ে যাই, তাহলে তো সর্বনাশ। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফোন পাবো কোথায়?
পরদিন সকালে আমি আর নকশী বাসা থেকে রওনা হলাম। ডেসটিনেশন বিখ্যাত হুজুর গোফরান।
কোন একটা জঙ্গলে নাকি বাস করেন তিনি। সবার সমস্যার সমাধান দেন না। নকশীর মা’র পরিচিত বলে এই সমস্যার সমাধান দিতে রাজি হয়েছেন। যেহেতু একটু ব্যতিক্রমী হুজুর, তাই আমি একটু আশাবাদী হলাম। আমাদের দেশে তো আবার এই হুজুরগিরি নিয়েও ব্যবসা চলে।
প্রকাশ্যে লাইন ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে তারপর পড়া-পানি, তাবিজ-কবচ ইত্যাদি নিয়ে আসেন মানুষজনেরা। বিনিময়ে হাদিয়াস্বরূপ প্রদান করেন হাজার হাজার টাকা। তাদের প্রতি আমার বিশ্বাস হারিয়েছে অনেক আগেই। তবে গোফরান হুজুরকে নিয়ে একটু আশাবাদী হলাম আমি। ধারণা করলাম, তিনি সত্যিই এই ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন থেকে উদ্ধার করতে পারবেন নকশীকে, ও তার সাথে জড়িয়ে পড়া আমাকে।
কখনো বাস, কখনো রিকশা, কখনো পায়ে হেঁটে বিভিন্নভাবে এগিয়ে চললাম গোফরান হুজুরের উদ্দেশ্যে। এই সুদীর্ঘ পথটাকে ক্লান্তিহীন করে তুললো নকশীর উপস্থিতি। আগেই বলেছি ও অত্যন্ত মিশুক একটা মেয়ে। তাই ও বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা চালিয়ে গেল। এভাবে একসময় পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্যের কাছাকাছি।
সেই জঙ্গলের সামনে। দেখলাম ঘন হয়ে জন্মে উঠা গাছপালা। এর ভেতর দিয়ে কীভাবে যাব ভাবতেই গা শিরশির করে উঠলো। আরো ভয়ের কারণ হলো এই যে, তখন শেষ বিকেল। তাড়াতাড়ি করে পৌঁছতে না পারলে ভয়াবহ বিপদে পড়ে যাব।
সাথে অবশ্য টর্চ লাইট আছে, কিন্তু টর্চের ভরসা কি! এই ঘনবন পেরিয়ে সঠিক যায়গায় যাবার জন্য একটি ম্যাপ দেয়া হয়েছে। হাতে আঁকা ম্যাপ। মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, এই যুগে হাতে আঁকা ম্যাপ! যেখানে মানুষ মোবাইলে গুগল ম্যাপ দিয়ে চলাফেরা করে, সেখানে প্রস্তর যুগের……!
বিভিন্ন প্রজাতির লতা-গুল্ম পেরিয়ে সামনে এগোচ্ছি। ভয় পাচ্ছি কোন সাপ আবার কাটে কিনা। যা ঘন হয়ে জন্মে উঠেছে গাছপালা, সাপ দশটা একসঙ্গে বসে থাকলেও দেখা যাবে না।
এদিকে সূর্য সেদিনের মত বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। ইতিমধ্যেই বনের মধ্যে গাছের ছায়া পড়ে অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। ম্যাপ দেখে আন্দাজ করলাম আর বেশি দূর নেই। সূর্য পুরোপুরি ডুবে যাবার আগেই পৌঁছতে পারবো।
আরো বিশ মিনিট পর।
সূর্য আর অর্ধেক ডুবতে বাকি আছে। বনের মধ্যে ফাঁকা একটি জায়গা দেখতে পেলাম। তার কাছেই দুইটি কুঁড়েঘর দেখতে পেলাম। আমাদের পায়ের আওয়াজ শুনতে পেয়ে বেরিয়ে এলেন সাদা দাড়িওয়ালা একজন বৃদ্ধ। নাহ, তাকে ভন্ড বলে মনে হচ্ছে না।
মাগরিবের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমাদের দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরাই নকশী আর সুমন না? আমি বললাম জ্বী আমরাই। তিনি বললেন, তোমরা একটু বসো। আমি আগে নামাজটা পড়ে নেই। তুমি নামাজ পড়তে চাইলে একটু দূরে পুকুর আছে।
ওজু করে এসো। আর নকশী চাইলে ঘরের ভিতরে নামাজ পড়তে পারে।
আমি ভাবলাম, নামাজ পড়ে ফেলাই ভাল। এটা অবশ্য অধিকাংশ মানুষেরই বদঅভ্যাস। বিপদে পড়লে নামাজের কথা মনে হয়, অন্য সময় মনে থাকে না।
পুকুরটা দেখতে পেলাম। পরিষ্কার পানিতে ওজু করে হুজুরের কাছে গেলাম। তিনি বোধহয় আমাকে নামাজ পড়তে প্রস্তুত হতে দেখে খুশি হলেন। তিনি বললেন, এসো ঘরে। তিনি দ্বিতীয় কুঁড়েঘরটিতে গেলেন।
ভিতরে অনেক কিছু দেখতে পেলাম। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হলো এই যে, তার কিছুই চিনতে পারলাম না। এককোণে নামাজের জন্য একটু ফাঁকা জায়গা। সেখানে দাঁড়িয়ে আমি আর গোফরান হুজুর নামাজ পড়ে নিলাম।
নামাজ শেষে বাইরে এসে বসলাম।
নকশী তখনো আগ্রহের চোখে চারপাশ দেখছে। হুজুর খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মানুষ। তার এলাকায় এতটুকুও আবর্জনা নেই। দেখলে মনে হয় বনের মধ্যে ছোট্ট একটা সভ্যতা।
হুজুর সব কিছু জানতেন।
তাই নতুন করে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। অন্ধকারের মধ্যেই মশাল জ্বালালেন দুইটি। আঙ্গিনায় বড় একটা পাটি বিছালেন বসার জন্য। সেখানে নকশীকে বসতে বললেন। নকশীর চোখেমুখে ভয় দেখতে পেলাম।
আমি ওকে সাহস দিয়ে বললাম যাও বসো। আমি এখানে আছি। কোন চিন্তা নেই। অনেকটা বাচ্চা মানুষের মত হয়ে গেল নকশীর আচরণ। সে ধীরে ধীরে গিয়ে বসলো পাটিটাতে।
হুজুর বসলেন আরেক প্রান্তে। তারপর শুরু হলো যথারীতি হুজুরের কাজ, যা বিভিন্ন হরর ফিল্ম বা হিন্দি সিরিয়ালেই দেখেছি এতদিন। কি সব কাজ যেন করলেন একটি পাত্রে রাখা পানির উপর, বেশ কিছু চিরকুটে অনেক দুর্বোধ্য অক্ষরে লেখা ছিল। সেগুলো পানিতে ডুবিয়ে ধীরে ধীরে ঘষে লেখাগুলো পানির সাথে মিশিয়ে দিলেন অদ্ভূত কায়াদায়। এসব তিনি খুব ধীরস্থিরভাবে করে যাচ্ছিলেন।
আমিও মনোযোগ দিয়ে আগ্রহসহকারে দেখছি কী করছেন তিনি। কী মনে হতে যেন আমি নকশীর দিকে তাকালাম। আশ্চর্য, ও একটু আগে নিচে বসতে ভয় পাচ্ছিল। আর এখন ওর চোখ দিয়ে আগুন ঝড়ছে! প্রচন্ড রাগে ফুসছে সে। তার চোখ হুজুরের কাজের দিকে নিবদ্ধ।
বেশ কিছুক্ষণ পর হুজুর নকশীর গায়ে সেই পাত্রের পানি ছিটিয়ে দিলেন। আর এতে ছটফট শুরু করলো নকশী। বুঝতে পারলাম ওর ভেতরের ভ্যাম্পায়ার সত্তাটা জেগে উঠছে। ও প্রচন্ড ছটফট করছে। হুজুর আমাকে চোখের ইশারায় ডাকলেন।
ডেকে তিনি ঘরের ভেতরে চলে গেলেন। আমি ঘরের ভিতরে গেলে তিনি বললেনঃ তোমাকে একটু দূরে থাকতে হবে। অন্যথায় আমি নকশীর সাথে কথা বলতে পারবো না। আমি বললামঃ কিন্তু নকশী যদি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে? তিনি বললেনঃ আমি আত্মরক্ষা করতে জানি।
আমি পুকুরপাড়ে চলে এলাম।
ভিতরে ভিতরে উত্তেজনায় ফেটে যাচ্ছি আঙ্গিনায় কী ঘটছে জানার জন্য। প্রায় আধঘন্টা অপেক্ষা করলাম। তারপর আর থাকতে না পেরে আঙ্গিনার দিকে রওনা হলাম। পথিমধ্যে দেখা হলো গোফরান হুজুরের সাথে। তিনি আমার কাছেই যাচ্ছিলেন।
দেখা হয়ে যাওয়ায় বললেনঃ আমি সমস্যাটা ধরতে পেরেছি। আমি তোমাকে বিস্তারিত বলছি। মন দিয়ে শোনো।
পুকুর পাড়ে গিয়ে বসলাম। হুজুর বলা শুরু করলেন, নকশীর উপর দেয়া অভিশাপটির কারণেই নকশীর আজ এই দুর্দশা।
ওর মধ্যে দুইটি সত্তা গড়ে উঠেছে এবং এরা প্রতিক্ষণ একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে চলেছে। ওর যখনই প্রচন্ড রাগ উঠবে কিংবা ওর ভ্যাম্পায়ারত্বের বিরুদ্ধে কেউ কিছু করতে যাবে, তখনই ওর ভ্যাম্পায়ার সত্তাটা সক্রিয় ও শক্তিশালি হয়ে উঠবে। এই সত্তাটাকে ধ্বংস করার আগ পর্যন্ত ও মোটেই নিরাপদ নয়। ওর এই সত্তাকে ধ্বংস করতে হলে প্রয়োজন মাত্র দুই মিনিট।
আমি অবাক হয়ে গেলাম।
মাত্র দুই মিনিট!
হ্যাঁ, মাত্র পাঁচ মিনিট। তবে আমি শঙ্কিত তুমি বা তোমরা কেউ এই পাঁচ মিনিট সময় পাবে কি না।
আমি কিছু না বুঝে তাকিয়ে রইলাম। হুজুর বলতে শুরু করলেনঃ আমার কাছে একটি ছোট্ট মালা আছে। এই মালাটিকে নকশীর গলায় দুই মিনিট পরিয়ে রাখতে পারলে ওর মধ্যের ভ্যাম্পায়ার সত্তা ধ্বংস হয়ে যাবে।
কিন্তু কথা হচ্ছে, যেই এই মালাকে ওর গলায় রাখতে যাবে, নকশী তাকেই মেরে ফেলতে উদ্যত হবে। এবং ওর ভয়ঙ্কর ক্ষমতা ও শক্তির কথা নিশ্চয়ই তোমাদের কারো অজানা নয়।
আমি চুপ করে রইলাম।
হুজুর বললেনঃ তবে আমি তোমাকে একটি পরামর্শ দিতে পারি। নকশীর নিজস্ব সত্তাটিকে যদি তোমরা এই দুই মিনিটের জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন কোন বিষয়ে ব্যস্ত রাখতে পারো, তাহলে এই কাজ সম্ভব।
অর্থাৎ এমন কোন জিনিসের প্রতি যদি ওকে ব্যস্ত রাখা যায় কিংবা ওর মনকে আটকে দেয়া যায়, যার উপর থেকে সহজে ওর মনোযোগ সরবে না, তাহলে ওর ভ্যাম্পায়ার সত্তাটা হার মানতে বাধ্য হবে। অর্থাৎ, ওর ভ্যাম্পায়ার মনটাকে চাপা দিয়ে রেখে এই কাজ সারতে হবে।
বিষয়টা আমি বুঝতে পারলাম। বললামঃ তাহলে আমাকেই প্রয়োজন হবে কেন? কাজটা তো যে কেউ করতে পারে।
হুজুর বললেনঃ না।
যে কেউ গলায় মালাটা পরাতে পারে। কিন্তু ওকে ব্যস্ত রাখার দায়িত্ব তোমার। ওকে ভালো করার সবচেয়ে বেশি চান্স আছে যদি তুমি নিজেই একাধারে ওর মনকে আকৃষ্ট করতে পারো অন্য কোন কিছুর উপর আর মালাটা ওর গলায় পরাতে পার।
হুমম। বিষয়টা বুঝলাম।
কিন্তু আপনি কি কোন পরামর্শ দিতে পারেন কীভাবে ওর নিজস্ব সত্তাকে অন্য কিছুর উপর সাময়িকভাবে আকৃষ্ট করা যায়। কিংবা কীসের উপরই বা ওকে আকৃষ্ট করা যায়?
মাথা নাড়লেন হুজুর। আমি দুঃখিত বাবা। আমি সেটা জানিনা। তবে একটা কথা মনে রেখ, একবার যদি কেউ মালা পরাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে বেঁচে গেলেও, নকশী ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তার ঝুঁকি কিন্তু থেকেই যাবে।
হুজুর চলে গেলেন। আমি পিছন পিছন হেঁটে চললাম ধীরগতিতে। কোনভাবেই এর শেষ দেখতে পারছিনা। শুধু নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব ঘটছে।
হঠাৎই এক চিৎকারে থমকে দাঁড়ালাম।
পরমুহুর্তেই বুঝতে পারলাম চিৎকারটা আঙ্গিনা থেকে এসেছে। দৌড়ে গেলাম। এমন একটি দৃশ্য দেখলাম, যা কখনো দেখব বলে ভাবিনি। পাটির উপরে হুজুর ছটফট করছেন দাঁড়িয়ে। আর তার ঘাড়ের উপরে নকশীর মুখ।
বুঝতে অসুবিধা হলো না তার শ্বদন্ত হুজুরের ঘাড়ের রগ থেকে রক্ত টানছে!
[চলবে]
চতুর্থ পর্ব।
মন্তব্য করার জন্য সিরিজ পড়তে থাকার অনুরোধ করা গেল। শেষ পর্বে মন্তব্য গ্রহণ করা হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।