আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্পিত [পর্ব ১]

I realized it doesn't really matter whether I exist or not.

অর্পিত গল্পটির সংশোধিত সংস্করণ পিডিএফ/ইবুক আকারে বেরিয়েছে। ডাউনলোড করতে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। ধন্যবাদ। ডাউনলোডঃ Click This Link =========================================== অর্পিত গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক মস্তিষ্কের অবদানে রচিত একটি কল্পকাহিনী মাত্র। বাস্তবের কোনকিছুর সাথে মিল রেখে গল্পটি রচিত হয়নি।

এরপরও পৃথিবীর হাজারও ঘটনা ও হাজারও চরিত্রের সাথে গল্পের চরিত্র বা ঘটনা মিলে যেতেই পারে। সেক্ষেত্রে ঘটনাটি কাকতালীয় ঘটনা বলেই বিবেচিত হবে। - লেখক ============================================ ১. তিন ঘন্টা হলো বসে আছি। একটি বিশেষ কাজে ঢাকার বাইরে এসেছিলাম। আজ ফিরছি।

দেশের রাজনৈতিক অবস্থা উত্তাল। জনগণ ঘরের বাইরে খুব একটা বের হয়না। আমার কাজটা জরুরি হওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই বেরিয়েছি। ভাগ্যক্রমে এখনো কোন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হইনি। বাস ষ্টেশনে বসে আছি বাসের অপেক্ষায়।

ফাস্টার এক্সপ্রেসের টিকেট নিয়েছি। নাইট কোচ। ঢাকা পৌঁছতে প্রায় দুপুর হয়ে যাবে। মিছিল-মিটিং-সংঘর্ষ-লাঠিচার্জ ইত্যাদি এড়াতে রাতের বাসে ঢাকা যাচ্ছি। ৬০ টাকা বেশি দিয়ে ফাস্টার এক্সপ্রেসের টিকেট নিয়েছি।

এরা সত্যিই বাস খুব দ্রুত চালায়। ট্রাফিক জ্যামে না পড়লে বাস থামায়ই না। অবশ্য দ্রুত চালানোর সুনামের আড়ালে পাঁচবার ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটানোর স্ক্যান্ডাল আছে এদের। ফাস্টার এক্সপ্রেসের একজন চালক আমার পরিচিত। নাম মুহিব।

মুহিব মামা বলে ডাকি। ঢাকার রাস্তায় ঘটনাচক্রে একদিন পরিচয়। সেই থেকে প্রায়ই রাস্তায় চলাফেরার সময় দেখা হয়। মাঝেমধ্যে তার গাড়িতে ফাও ট্রিপও মারি। এমনি সময় তর্জন-গর্জন করতে করতে ফাস্টার এক্সপ্রেসের বিশাল কালো রঙ্গের এসি গাড়িটা এসে থামলো।

এমনিতে চলতে সময় কোন শব্দ হয় না। চালক ইচ্ছে করেই নিউট্রাল অবস্থায় এক্সেলেটর গুঁতাগুঁতি করছেন। তাতেই শব্দটা হচ্ছে। নির্ধারিত স্থানে এসে থামলো বাসটা। সুপারভাইজরকে দেখে পরিচিত মনে হলো।

একটু চিন্তা করতেই মনে পড়লো এ সেই বাসের সুপারভাইজর, যেই বাসের চালকের সাথে আমার পরিচয়। আরো নিশ্চিত হবার জন্য বাসের ভিতরে উঁকি দিলাম। হ্যাঁ, মুহিব মামার গাড়িটাই। মুহিব অত্যন্ত মিশুক একজন ব্যক্তি। ইউনাইটেড স্টেটসে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা আছে তার।

পরবর্তীতে কোন এক কারণে দেশে ফিরে আসেন তিনি। পূর্বের পেশাতেই যোগ দেন নতুন করে। ফাস্টার এক্সপ্রেসের সবচাইতে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ড্রাইভার তিনি। রাতের কোচে তাকে পেয়ে অনেকটা স্বস্তি বোধ করলাম। মুহিব মামার সাথে কিছুক্ষণ আলাপচারিতা শেষে অদ্ভূত একটা তথ্য জানলাম।

আজকের এই নাইট কোচের যাত্রী নাকি মাত্র দুইজন। একজন তো আমি। অপরজন কে জানতে পারলাম না। মুহিব মামা অফিসের ভেতর দিকে গেলেন। আমি বসে রইলাম।

আধঘন্টা পর বাস ছাড়বে। ততক্ষণ বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। আশেপাশের দোকানগুলো বন্ধ হয়ে গেছে আরো আগেই। রাস্তায় টহল পুলিশের গাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে অলস ভঙ্গিতে। আবহাওয়া অত্যন্ত ঠান্ডা।

থেমে থেমে দমকা হাওয়া একরাশ ধুলো উড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় পায়ের শব্দে ফিরে তাকালাম। মুহিব মামা সিগারেট হাতে দাঁড়িয়ে। বললেনঃ চলেন মামা, যাওয়া যাক। যা শীতের রাত, আজ রাতে আর কেউ আসবে না।

শুধু শুধু বসে থাকার চেয়ে চলে যাওয়াই ভালো। পরে ঝড় আসলে বিপদে পড়বো। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ তা মামা, আমার ভ্রমণসঙ্গীটা কে? কথাবার্তা বলা যাবে? নাকি না? মুহিব মামার চোখেমুখে হালকা হাসির আভা দেখা গেল। বললেনঃ শুধু কথাবার্তা না, ইতিহাসও রচনা করা যেতে পারে। আমি কিছুই না বুঝে তাকিয়ে রইলাম।

মুহিব মামার পিছনে পিছনে বাসে গিয়ে উঠলাম। নিজের সিটে বসে পিছন দিকে ফিরে তাকালেন মামা। বললেনঃ বাড়ি থেকে রাগ করে বেরিয়ে আসা এক ছাত্রী আজ রাতে আমার কোচের দ্বিতীয় যাত্রী। বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

আমি অবশ্য বলেছি আপনার কথা। বলেছি আপনিও ঢাকায় যাচ্ছেন। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ আমি কি সিকিউরিটি গার্ড নাকি! আর আমাকে নিরাপদই বা মনে করবে কেন? তিনি বললেনঃ আমরা সবাই ভরসা দিয়েছি। আমার প্রচণ্ড রাগ লাগলো মামার উপরে। কোথায় একটু আরাম করে বাড়ি ফিরবো।

তা না, কোত্থেকে এক মেয়ে জুড়ে দিয়েছে। এখন মেয়েটা নাকউঁচু স্বভাবের না হলেই রক্ষা। গাড়িতে উঠে বসে রইলাম। মোবাইল সেটটা বের করে গেমস খেলতে থাকলাম। বিশ্ববিখ্যাত স্ন্যাকস গেম।

এই গেম বোধহয় মানুষ শত শত বছর ধরে খেলে আসছে। এই গেমটা কে আবিষ্কার করেছে খুব জানতে ইচ্ছে করলো। কে জানে, হয়তো কোথাও কোনো রেকর্ড সংরক্ষিত নেই এই গেমের আবিষ্কারক কিংবা বৈবর্তনিক ধারা সম্বন্ধে কোন তথ্য। এতসব ভাবছি, এমন সময় মিউজিক বেজে উঠলো বাসের সেটে। চেনা চেনা লাগলো সুরটা।

মস্তিষ্ক খুব ব্যস্ত ছিল বিধায় সুপরিচিত জনপ্রিয় গানটি চিনতে দেরি হলো। গানের মাঝে মুহিব মামার ডাক শুনতে পেলাম। ড্রাইভিং সিটে বসে আছেন তিনি। আমাকে তার চোখ দিয়ে জানালার বাইরে পেছনের দিকে ইশারা করলেন। আমি কিছু না বুঝেই পাশের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম।

চোখে পড়লো তখনই। অসাধারণ রূপবতী একটা মেয়ে হেঁটে আসছে। কাঁধে একটা ব্যাগ ঝোলানো। চিকন গড়নের মেয়েটার চুলগুলো খোলা। প্রবল বাতাসে সবগুলো চুল উড়ছে।

বাতাসের কারণে সামনে এগোতে পারছে না মেয়েটা। অবশ্য এর কারণ বাতাসের বেগ নয়, বাতাসের সাথে উড়ে চলা বালু। বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে আবার বালুর অভাব নেই। একটু জোরে বাতাস বইলেই সেরেছে, চোখ বাঁচিয়ে হাঁটাই মুশকিল হয়ে পড়ে। যেমনটি হয়ে পড়েছে এই মেয়েটির।

আমি আমার সিটে সোজা হয়ে বসলাম। মেয়েটির উপর থেকে খেয়াল সরে আসতেই টের পেলাম জান্নাতের গানটি এখনো বাজছে। বুঝতে পারলাম মুহিব মামা একটা নাটকীয় কাণ্ড ঘটিয়েছে। রাগ লাগলো। কিন্তু কিছু বললাম না।

শিক্ষিত মানুষ। এমনিতেও খুব ভালো চরিত্রের। একটু দুষ্টুমি করতেই পারে। এসব ভেবে আর কিছু বললাম না। আধঘন্টা পর।

বাস দ্রুতগতিতে চলছে। আমি দারুণ রোমাঞ্চকর একটা যাত্রা উপভোগ করছি। গভীর রাত। বাইরে ঝড়ো হাওয়া। বিশাল একটি বাস।

প্রায় খালি। ভাবতেই অন্যরকম লাগে। পুরো ব্যাপারটা আমি বেশ উপভোগ করছিলাম। এরইমাঝে মুহিব মামার সাথে অনেক কথা বললাম বিভিন্ন বিষয়ে। তিনি আমার পড়ালেখা ও অন্যান্য বিষয়ে খোঁজখবর নিলেন।

লক্ষ্য করলাম, মুহিব মামা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমার সব ব্যাপারে কথা বলছেন। মনে হচ্ছিল কাউকে আমার সম্বন্ধে পরিষ্কার একটা ধারণা দিচ্ছেন। কাকে দিচ্ছেন সেটা বুঝতে দেরি হলো না। নাহ, মুহিব মামার দুষ্টুমি মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কিছু একটা করা দরকার।

কিন্তু কী করবো বুঝলাম না। অবশ্য মেয়েটাকে দেখলাম আমাদের কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। বিশেষ করে আমি যখন কথা বলি, আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। আমি অবশ্য ওর দিকে খুব একটা তাকাতে পারিনি। মেয়েদের দিকে আমি বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারিনা।

আর চোখাচোখি হলে তো কথাই নেই, আপনা-আপনি চোখ সরে আসে। অবশ্য মেয়েটার প্রতি আমার কোন আগ্রহ নেই। শুধু জানতে ইচ্ছে করছে কী জন্য বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল মেয়েটা। ওর জন্য একটু মায়াই লাগছে। চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।

বোঝা যাচ্ছে এই দীর্ঘ পথ একটা ড্রাইভার, সুপারভাইজর আর অচেনা একটা ছেলের সাথে কাটাতে সে ভয়ই পাচ্ছে। আপাতত তার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিলাম। ২. রাত দেড়টা। মহাসড়কে গাড়ি উঠে আসার পর মুহিব মামার সাথে আর কোন কথা হয়নি। এত আরামের রাত, কিন্তু ঘুম আসছে না মোটেই।

চোখ বন্ধ করলেই মনে হচ্ছে অত্যন্ত সুন্দরী একটা মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকছে। মেয়েটা কী করছে দেখতে সামনের দিকে তাকালাম। দেখলাম মেয়েটা সিট থেকে উঠে এদিকেই আসছে। ভাবলাম, ফ্যানের নিচে বসতে যাচ্ছে। বাইরে প্রচণ্ড বাতাস থাকায় ড্রাইভার এসি চালাননি।

জানালার কাঁচ খোলা তো অসম্ভব। বাতাসে সিটসহ উল্টে যেতে হবে। সব জানালা বন্ধ থাকায় বাসের ভিতের গুমোট গরম অনুভূত হচ্ছিল। তাই মাথার উপরে ফ্যানগুলো চালিয়ে দেয়া হয়েছে। মেয়েটা যেখানে বসেছিল, সেখানে ফ্যান নেই।

তাই হয়তো ফ্যানের নিচে বসতে যাচ্ছে। এসব ভেবে যখনই মাথা আবার তুললাম, দেখলাম মেয়েটা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমে পায়ের দিকে তাকালাম। হ্যাঁ, দাঁড়িয়েই আছে। তারপর মেয়েটার দিকে তাকালাম।

সুন্দর একজোড়া চোখে চোখ পড়লো। মেয়েটা সুমিষ্ট কণ্ঠস্বরে জিজ্ঞেস করলোঃ আমি কি আপনার পাশে বসতে পারি, ভাইয়া? আমি সোজা উপরেরর দিকে তাকালাম। আমার উপরেই ফ্যানটা ঘুরছে। আমি বাসের বামপাশের সিটে বসেছিলাম। জিজ্ঞেস করলামঃ আপনি কি জানালার পাশে বসবেন নাকি ভিতরের দিকেই বসবেন? মেয়েটা বললোঃ আমি ভিতরের দিকেই বসতে পারবো।

জানালার দিকে সরে বসে ওকে জায়গা করে দিলাম। আমার পাশে বসলো ও। কিছুক্ষণ ইতস্তত করলো। বুঝতে পারলাম কিছু বলতে চাচ্ছে। সময় দিলাম।

এতক্ষণে একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে গেল। ওর মধ্যে তেমন একটা জড়তা নেই। ভালোই হলো। আমার মধ্যে জড়তা আছে। দুজনের মাঝেই জড়তা থাকলে কথা বলা মুশকিল হয়ে যেত।

অবশেষে আমার দিকে সরাসরি তাকালো মেয়েটা। বললোঃ আমি নকশী। ঢাকার বনানীতে বাসা। আপনি? বললামঃ আমি সুমন। মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের দিকেই থাকি।

এরপর কথা হারিয়ে গেল। চুপচাপ বসে বাইরের অন্ধকার প্রকৃতি উপভোগ করলাম। কিছুক্ষণ পর মেয়েটা মানে নকশী বললোঃ বাইরের আবহাওয়াটা কেমন না? প্রচণ্ড শীত, সেইসঙ্গে বাতাস। মাথা ঝাঁকালাম। হ্যাঁ, অদ্ভূত আবহাওয়া।

বাসায় থাকলে ঘুমানো যেত আরামে। নকশী বললোঃ আমি অবশ্য ঘুমাতে পারতাম না। এমন দিনে আমার ঘুম ভালো হয় না। ও। আমার ভালই হয়।

অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি ভাল। আবার কিছুক্ষণ চুপচাপ। ও বাসা থেকে কেন বের হয়েছে সেটা এখনো জানতে ইচ্ছে করছে। তাই শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেই ফেললাম। তো আপনি এতদূরে কি কোন কাজে এসেছিলেন।

হাসলো নকশী। আমার এক বান্ধবীর বাড়ি এদিকেই। একাই যেতে চেয়েছিলাম। বোকামি করেছি। এসেই যখন পড়েছেন দেখা করেই যেতে পারতেন।

মাথা নাড়লো নকশী। এখন আর যেতে ইচ্ছে করছে না। এছাড়াও বাসার সবাই নিশ্চয়ই চিন্তিত হয়ে পড়েছে আমার জন্য। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ বাসায় যোগাযোগ করেছেন? না-সূচক মাথা নাড়লো নকশী। বললামঃ করা উচিৎ ছিল তো।

কিছু বললো না নকশী। আমি বললামঃ আপনি চাইলে আমার মোবাইল ফোনটা ব্যবহার করতে পারেন। দেখলাম দ্বিধা করছে নকশী। আমি আমার সেলফোনটা ওর হাতে দিলাম। বাসায় ফোন করতে বললাম।

নকশী কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে একবার আমার দিকে তাকাল। তারপর বাসায় ফোন করল। কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফোনটা আমার হাতে দিয়ে বললো তার মা নাকি আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন। আমি জানতাম তিনি চাইবেন। মেয়ে কার সঙ্গে আছে সেই খোঁজ তিনি অবশ্যই নেবেন।

ফোনটা হাতে নিয়ে কানে ঠেকালাম। সালাম দিলাম প্রথমে। ওপাশ থেকে সালামের উত্তর দিলেন নকশীর মা। কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারলাম মেয়ের দুশ্চিন্তায় অনেক কেঁদেছেন তিনি। কুশল বিনিময়ের পর অনেক কথা বললেন তিনি।

শেষে অনুরোধের স্বরে বললেনঃ যদি সম্ভব হয়, নকশীকে তুমি একটু কষ্ট করে বাসায় পৌঁছে দিয়ে যেও। আমি বললাম আচ্ছা। ফোন রাখার পর চিন্তা করলাম, নকশীর অভিভাবকত্বের যোগ্যতা আমার নেই। আমি আর নকশী সমবয়সী। অচেনা এই পথে মুহিব মামাই আমাদের দুজনের অভিভাবক।

তার প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে আমার। তাই এতক্ষণ নিশ্চিন্তেই ছিলাম। কিন্তু ঢাকায় পৌঁছে নকশীর দায়িত্ব আমার একার উপর বর্তাবে। সেটা ভেবে একটু চিন্তিত হলাম। গুরুত্বপূর্ণ একটা দায়িত্ব কাঁধে পড়েছে।

আল্লাহ যেন সহায় হোন, দোয়া করলাম মনে মনে। সময় আর পথ, দুটোই গড়িয়ে চললো একত্রে পাল্লা দিয়ে। মুহিব মামা আর একটিবারের জন্যও পিছন দিকে ফিরে তাকাচ্ছেন না। খুব মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। একেই বলে স্টেটসের ড্রাইভার! রাত দুইটা বাজলো।

আড়াইটা বাজলো। নকশীর সাথে অনেক কথা হলো। সময় ভালো কাটছিল। খুব কাছ থেকে চিনলাম ওকে। সহজেই বুঝতে পারলাম, খুব সহজ সরল অমায়িক খোলামেলা মনের অধিকারী একটা মেয়ে নকশী।

ওর মতো মেয়ে সচরাচর দেখা যায় না। খোলা মনের একজন মানুষকে ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে পেয়ে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিলাম। অনেক কথা হলো নকশীর সাথে। সহজেই আমার সাথে ক্লোজ হয়ে গেল সে। এরইমধ্যে আমাদের সম্বোধন আপনি থেকে তুমি-তে আপগ্রেড হয়ে গেছে।

আপগ্রেডের কাজটা অবশ্য আমিই করেছি। কারণ, আমার মতে, কাউকে কাছ থেকে চিনতে বা জানতে হলে, কারো সাথে খুব ফ্রি হতে চাইলে আপনি শব্দটা বর্জনীয়। সরাসরি তুই-ও বলা যায় না। তাই তুমি শব্দটার বিকল্প নেই। আমি সবসময়ই সবার ভেতরে যাবার চেষ্টা করি।

খুব কাছ থেকে জানার চেষ্টা করি। খুব ভালো বন্ধু হবার চেষ্টা করি। রাত ২টা ৪৫ মিনিট। হঠাৎই নকশীর হাতের শীতল স্পর্শ অনুভব করলাম। দেখলাম ও আমার হাতের উপর হাত রেখেছে।

ওর দিকে তাকালাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে বললোঃ আজ থেকে আমরা দুজন বন্ধু। কেমন? মৃদু হেসে মাথা ঝাঁকালাম। কি সরল তার ভাষা। সহজেই কাউকে আপন করে নিতে পারে সে।

হাতটা ছাড়লো না নকশী। আমিও ছাড়ালাম না। ছাড়ালে হয়তো মতে করবে আমি বিষয়টাকে সহজভাবে নিচ্ছি না। আমি শুধু দোয়া করলাম ঢাকার রাস্তায় যেন ও আমার হাতটা না ধরে। তাহলে আশেপাশের মানুষ বিষয়টাকে সহজভাবে নিবে না।

যদিও আমি আর নকশী জানি এই হাত ধরার মধ্যে কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই, নেই কোন গর্হিত চিন্তা। খেয়াল করলাম, নকশীকে আগের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দরী লাগছে। ও এখন আমাকে বিশ্বাস করতে পারছে। তাই অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতা আর দুশ্চিন্তা বিদায় নিয়েছে ওর মন থেকে। চেহারা থেকে দুশ্চিন্তার ছাপ উঠে যাওয়ায় ওকে অসাধারণ লাগছে।

মনে মনে সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা না করে পারলাম না। কি নিখুঁতভাবেই না তিনি সৃষ্টি করেছেন তাকে! কি নিপুণ কারিগর তিনি! কি অসাধারণ সৌন্দয্য তিনি দিয়েছেন নকশীকে। এরপর কিছুক্ষণ চুপচাপ কাটলো। এরপর হঠাৎ খেয়াল করলাম, নকশীর হাত গরম হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎই কোত্থেকে যেন তাপ ঢুকে যাচ্ছে ওর দেহে।

অবাক হলাম। বিস্ময়ের কোন সীমা থাকলো না যখন দেখলাম নকশী আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো এবং বললো, তোমার শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কেন? সত্যিই আমার শরীর বরফের মত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। এবং সেটা এত দ্রুত যে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। নকশী কপালে হাত রাখলো। বললোঃ এত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কেন তোমার শরীর? কী হয়েছে? বিমূঢ়ের মত মাথা নাড়লাম।

মাথা প্রচণ্ড ব্যাথা করছে। ঝিম মেরে আছে। মনে হচ্ছে ঘাড় থেকে ছিঁড়ে যাবে। শরীরটা ছটফট করছে। সিরে হাতল আঁকড়ে ধরে কোনমতে সিটে বসে আছি সোজা হয়ে।

মাথার ঝিমঝিমানিটা ক্রমেই বেড়ে চললো। নকশী আমার ডানদিকে ছিল। ওর চোখেমুখে উদ্বেগের ছাপ দেখলাম। সিটের হাতল থেকে আমার হাতটা সরিয়ে ওর দুইহাত দিয়ে আমার হাতটা ধরলো ও। এতে অবশ্য আমার অসুবিধা হলো।

সিটের হাতলে সমস্ত শক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরে বসেছিলাম। ও ডানহাতটা ধরে রাখায় এখন সমস্ত শক্তি বামহাতে দিতে হচ্ছে। সমস্ত শক্তি! শরীরে কোন শক্তিই নেই। হৃদপিণ্ড থেকে সারা শরীরে রক্ত পাম্প করা হয় বলে জানতাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সারা শরীর থেকে মাথা বা ঘাড়ের দিকে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে।

আর সহ্য করতে পারলাম না। শরীরটা নিথর হয়ে গেল। ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এতকিছুর মাঝেও নকশীর জন্য চিন্তা হলো। ওকে বাসায় পৌঁছে দেবার দায়িত্বটা আমাকে দেয়া হয়েছিল।

আর কিছুক্ষণ পর চোখ বন্ধ হয়ে গেল। আশেপাশের শব্দ আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল। মাথাটা সিটে আঁছড়ে পড়লো। তারপর সব অন্ধকার। ৩. টিইট...টিইট...টিইট...টিইট...টিইট...টিইট বিরক্তিকর যান্ত্রিক শব্দে ঘুম ভাঙলো।

ঘুম ভাঙলো নাকি জ্ঞান ফিরল ঠিক বুঝলাম না। দেখলাম বাস শহরে ঢুকছে। ইন্ডিকেটর লাইটের শব্দটাই আমাকে জাগিয়ে দিয়েছে। মাথার ঝিমঝিমানিটা যায়নি। কী হয়েছিল মনে করার চেষ্টা করলাম।

নাহ, কিছুই মনে আসছে না। মনে পড়ে সবশেষ ঘড়ি দেখেছিলাম পৌনে তিনটায়। বাসের ঘড়ির দিকে তাকালাম। ১৭ সেপ্টেম্বর ৪.৩০ এ.এম। নকশীর দিকে তাকালাম।

আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে ও। দুই হাত দিয়ে আমার বাহু জড়িয়ে ধরে রেখেছে। বেচারি শীতে এমনটা করেছে। আমারও তখন শীত করছিল। নকশীকে জাগালাম না।

লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা রাস্তায় ঘুমানোই মুশকিল। একবার যখন ঘুমিয়েই পড়েছে, এখন জাগালে দ্বিতীয়বার আর ঘুমুতেই পারবে না। কয়েকঘন্টা পর। বাস গন্তব্যে পৌঁছল। নামার সময় মুহিব মামা অবাক হয়ে বললেন, সেকি! আপনার শরীরের এই অবস্থা কেন? রাতে শরীর খারাপ করেছিল নাকি? বললামঃ হ্যাঁ, একটু খারাপই করেছিল।

তিনি বললেনঃ আমাকে বলেননি কেন? ওষুধের ব্যবস্থা করতাম। আমি বললামঃ নাহ থাক, ঠিক আছে। ধন্যবাদ। আমি এখন সুস্থ বোধ করছি। আরেকদফা বাস জার্নি শেষে নকশীকে সঙ্গে নিয়ে রিকশায় উঠলাম।

গন্তব্য নকশীর বাসা। রাস্তায় দুর্ভাগ্যক্রমে বন্ধু মারুফের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। সুমন একটা মেয়ের সাথে রিকশায়! প্রমাদ গুণলাম। এবার সর্বত্র ছড়িয়ে যাবে এই সংবাদ।

অনেকে অবশ্য সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে ঘুরতে পারলে সেটা নিয়ে বন্ধুমহলে বেশ ভাবসাব দেখায়। কিন্তু আমার সেটা পছন্দ না। ঠিক করলাম, আজই যে কোন উপায়ে মারুফের সাথে দেখা করে সব ঘটনা খুলে বলতে হবে। তা না হলে তার সন্দেহ যাবে না। নকশীর বাসায় নাকি ওর মা আর বড় ভাই থাকেন।

বাবা বিদেশে থাকেন। বনানীর একটা অ্যাপার্টমেন্টে বাসা। একটু ভয়ে ভয়ে বাসায় ঢুকলাম। কলিংবেল প্রেস করা মাত্রই দরজা খুলে গেল। বোধহয় নকশীর প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে দরজার কাছেই কেউ বসেছিল দরজা খোলার জন্য।

দেখলাম সুন্দর চেহারার একজন মহিলা দরজা খুললেন। আন্দাজ করলাম নকশীর মা হবে। আমার ধারণা সঠিক হলো। নকশীকে বুকে নিয়ে অনেকক্ষণ কাঁদলেন তিনি। ওর বড় ভাইও ওকে অনেকক্ষণ আদর করলো।

তারপর আমার দিকে নজর দিল ওরা দুইজন। আমাকে ভেতরে নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসানো হলো। অনেক দামি দামি আসবাবপত্রে সাজানো একটি ফ্ল্যাট। বোঝা যায় নকশীর মার রুচি খুব ভাল। ঘর সাজাতে জানেন।

এরপর অনেকক্ষণ কেটে গেল। নকশীর পরিবারের সাথে কথা হল। ওদের পরিবারের সবাই খোলা মনমানসিকতার। মানুষকে কাছে থেকে বুঝতে জানে। আমাকেও নকশীর মা ও ওর বড় ভাই শিহাব ভাই সহজেই আপন করে নিলেন।

কিন্তু সবকিছুর মাঝে একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম। নকশীর চেয়ে আমাকে নিয়েই যেন ছেলে ও মা'র চিন্তাটা বেশি। বুঝতে পারলাম না সমস্যাটা কী। নকশীর মা আর শিহাব ভাই বারবার একই প্রশ্ন করলেন, আসার পথে কোন সমস্যা হয়েছে কি না। প্রথম দিকে স্বাভাবিকভাবে না-সূচক উত্তর করলেও পরে বিষয়টা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াল।

মনে পড়লো, সমস্যা আসলেই হয়েছে। পৌনে তিনটা থেকে সাড়ে চারটা। এই সময়টা কীভাবে পার করেছি কিছু্তেই মনে করতে পারছি না। প্রথম দিকে সেই ব্যাপারটা চেপে গেলেও পড়ে বুঝলাম এটা গোপন করা ঠিক না। শিহাব ভাইয়ের সাথে বাইরে বের হলাম।

আমাকে একটা হোটেলে নিয়ে এলেন তিনি। খাবারের অর্ডার দিলেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন রাতে কী হয়েছিল। আমি সব খুলে বললাম। আমার বলা শেষ হলে দেখলাম বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি।

বললেনঃ এবার আমি যা বলছি শোন। আজ ১৭ই সেপ্টেম্বর না? আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আজ নকশীর ষোল বছর পূর্ণ হলো। আজ ওর জন্মদিন। ওর জন্ম হয় চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত একটা অঞ্চলে।

আমরা সবাই তখন বেড়াতে গিয়েছিলাম। তখনই রাত তিনটার দিকে ওর জন্ম হয়। তারিখটা ছিল ১৭ই সেপ্টেম্বর। ওর জন্মের পরপরই বুড়োমত একটা লোক এসে তার এলাকায় সন্তান প্রসব করায় হাদিয়া চাইলো। আমরা হাদিয়া শব্দটার অর্থ জানতাম না।

তখন তিনি বললেন টাকা দিতে। বেশ মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে তিনি। আমরা অকারণে তাকে টাকা দিতে যাব কেন? তাই তাকে ফিরিয়ে দিলাম। যাবার সময় তিনি তার পরিচয় দিলেন। তিনি নাকি কোন যুগের তান্ত্রিক।

নিষ্পাপ নকশীকে অভিশাপ দিয়ে গেলেন, ওর যখন ষোলো বছর পূর্ণ হয়ে সতেরো বছরে পা দিবে, তখন নাকি ওকে ভ্যাম্পায়ার নামক কী একটা জিনিস আক্রান্ত করবে। ভ্যাম্পায়ার বলতে আমরা সাধারণত রক্তচোষা কাল্পনিক ভুতকে চিনি। কিন্তু মানুষ ভ্যাম্পায়ার হয় এমন কথা কখনো শুনিনি। তাই বৃদ্ধের কথা বিশ্বাস না করে তাকে তাড়িয়ে দিলাম। পরবর্তীতে অবশ্য কবিরাজের কাছে গিয়েছি কয়েকবার।

কবিরাজ বলেছেন ঐ বৃদ্ধের অভিশাপ ফলে পড়তে পারে। অভিশাপ থেকে বাঁচার একটাই উপায়, ১৭ই সেপ্টেম্বর ওকে ঘরের বাইরে যেতে না দেয়া। বিশেষ করে ওর জন্মের সময়টা। আমি অবাক হয়ে শুনছিলাম শিহাব ভাইয়ের কথা। তিনি আবার বলতে শুরু করলেনঃ এইসবের কিছুই বিশ্বাস করতো না নকশী।

ওকে সতেরো তারিখ ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করায় ও আগের দিনই ঘর থেকে বের হয়ে গেল। শপথ করে গেল, ওর জন্মের মুহুর্তটা ও বাইরেই কাটাবে। তাই আমরা সবাই এতটা চিন্তিত ওকে নিয়ে। তিনটার সময় তুমিই ওর সাথে ছিলে। তাই আমার ধারণা ছিল, তুমি হয়তো কিছু দেখেছো ওর মধ্যে কোন পরিবর্তন হয়েছিল কি না।

এখন দেখছি তুমিই অজ্ঞান ছিলে। আশ্চর্য! মাথা ঝাঁকালাম। বললামঃ কেন যে অজ্ঞান হলাম ঠিক বুঝলাম না। শুধু শুধুই হঠাৎ জ্ঞান হারালাম। জ্ঞান ফিরলে দেখলাম নকশী আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।

শিহাব ভাইকে ব্যাপারটা খোলাখুলি বললাম। জানতাম তিনি কিছু মনে করবেন না। মনে করলেনও না। কিন্তু একটু অবাক হলেন। চোখদু'টো আরো বিস্ফোরিত হলো।

ভ্রু কুঁচকে গেল। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলামঃ কী হয়েছে ভাইয়া? শিহাব ভাই কিছু বললেন না। ওয়েটারকে ডাকলেন। জিজ্ঞেস করলেন ছোট সাইজের একটা আয়না পাওয়া যাবে কি না। কিছুক্ষণ পর ওয়েটার একটা আয়না নিয়ে এসে হাজির হলো।

শিহাব ভাই আমার সামনে আয়নাটা ধরলেন। আস্তে আস্তে আয়নাটা বাম দিকে ঘোরালেন। আয়নায় আমার চেহারা সরে গিয়ে কান দেখা গেলে। তারপর ঘাড়। শিহাব ভাইয়ের মতই আমিও বিস্ফোরিত চোখে লক্ষ্য করলাম আমার ঘাড়ে দু'টো ক্ষত।

বাদামী রং ধারণ করেছে। তবে ক্ষতগুলো বেশি আগের না বোঝা যায়। একটা ক্ষত থেকে আরেকটা ক্ষতের দূরত্ব মানুষের উপরের মাড়ির এক শ্বদন্ত থেকে আরেক শ্বদন্তের দূরত্বের সমান! ক্ষতটা কামড়ের দাগ! [চলবে] গল্পটির দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশিত হয়েছে। দ্বিতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন। মন্তব্য করতে পারবেন সর্বশেষ পোস্টে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.