আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরকারী আইটি সিস্টেম টেকসই হচ্ছে না কেন? -- আমিনূল মোহায়মেন

আহসান মোহাম্মদ

সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমকে কম্পিউটারীকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অর্থ ব্যয়ে কার্পণ্য না করলেও বাস্তবে আশানুরূপ অগ্রসর হতে পারেনি। যে প্রবাসী শ্রমিকদের অর্থে এই মন্দার সময়েও আমদের অর্থনীতি সচল রয়েছে, তাদেরকে এখনও পাসপোর্টের জন্য রোদ-বৃষ্টিতে দিনের পর দিন লাইনে দাড়াতে হয়, বিভিন্ন ধরণের লাইসেন্স, অনুমোদন ইত্যাদির জন্য এখনও টেবিলে টেবিলে দৌড়াতে ও স্পীড মানি খরচ করতে হয়। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়টিকে যে গুরুত্ব দেয়া হয় নি, বা এ ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয়ে কার্পণ্য করা হয়েছে - এমনটি বলা যাবে না। এ উদ্দেশ্যে ২০০১ সালে তৎকালিন প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান করে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রকল্পও নেয়া হয় এবং তাতে যথেষ্ঠ পরিমাণ বরাদ্দও দেয়া হয়।

কিন্তু, এই বিপুল অর্থব্যয়, গুরুত্ব প্রদান ও ঢাক-ঢোল পেটানোর ফল জনগণ কতটুকু পেয়েছে, তা যে কোন সরকারী সেবা নিতে গেলেই বোঝা যাবে। সরকারী খাতসমূহকে কম্পিউটারীকরণের সীমিত সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, সরকারী আইটি সিস্টেমের সাসটেইনেবিলিটি বা টেকসইত্বের অভাব। আইটি সিস্টিম চালুর জন্য সরকার সাধারণতঃ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রকল্প শেষ হবার সাথে উক্ত আইটি সিস্টেমও বন্ধ হয়ে যায়। যেমন ধরুন, সরকার উদ্যোগ নিলো সার বিপনন ব্যবস্থাকে কম্পিউটারীকরণের।

সে উদ্দেশ্যে আইটি বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দেয়া হলো। তারা বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে ঠিক করলেন কি ধরণের সার্ভার, নেটওয়ার্ক ও সফটওয়্যার লাগবে। সেগুলি ক্রয়, সংগ্রহ ও স্থাপন করা হলো। তার উপর ব্যবহানকারীদেরকে প্রশিক্ষণও দেয়া হলো। এবার প্রকল্পের কাজ শেষ।

বিশেষজ্ঞগণ চলে গেলেন। তারপর আর কেউ সিস্টেমটি ব্যবহার করলো না। বিষয়টি অনেকটা এরকম - সরকার একটি ব্রীজ তৈরী করার প্রকল্প গ্রহণ করলো। কয়েক শত কোটি টাকা খরচ করে, দেশী বিদেশী এঙ্পার্টদের এনে সেই ব্রীজ তৈরী করা হলো, কিন্তু, প্রকল্প শেষ হবার পর সেটি আর ব্যবহার উপযোগী থাকলো না। বোঝাই যাচ্ছে, এ ধরণের ঘটনা ঘটলে তা সরকারের বিরাট আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়।

তাছাড়া, কম্পিউটারীকরণের বিষয়ে সরকারের ভিতরে বাইরে একটি নেদিবাচক ধারণারও জন্ম হয়। এখন প্রশ্ন হতে পারে যে, সরকারী খাতের অধিকাংশ উন্নয়নমূলক কাজই তো প্রকল্পের মাধ্যমে বেসরকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করানো হয়ে থাকে। যেমন একটি ব্রীজ তৈরী করতে হলে, সরকারী ইঞ্জিনিয়ার তার ডিজাইন করেন না, বা সরকারের কর্মচারীরা তাতে কাজ করেন না। বেসরকারী কোন প্রতিষ্ঠানকে কাজটির দায়িত্ব দেয়া হয়। সরকারের ভূমিকা সেখানে থাকে তদারকীর।

সে সকল ক্ষেত্রে সমস্যা না হলে, আইটি সিস্টিমের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে কেন? এর মূল কারণগুলো নিম্নরূপঃ ১. সরকারী আইটি সিস্টেমের টেকসইত্ব কম হবার প্রধান কারণ হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে সরকারের আত্মীকরণ ক্ষমতার অভাব। এর জন্য দায়ী আবার নীচের কারণগুলোঃ ক. বেসরকারী খাতে আইটি বিশেষজ্ঞরা যে ধরণের বেতন পেয়ে থাকেন, সরকারী খাতে বেতন তার থেকে অনেক কম। ফলে, একজন ভালো আইটি বিশেষজ্ঞ সরকারী চাকুরীতে আগ্রহী না হওয়াই স্বাভাবিক। এ কারণে আইটি প্রকল্পের কাজ বুঝে নেয়া এবং পরবর্তীতে সেগুলি চালিয়ে নেযার মত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নিজস্ব জনবল সরকারের থাকে না। খ. এ খাতে যত দ্রুত নতুন প্রযুক্তির প্রসার ঘটছে এবং পুরাতন প্রযুক্তি অচল হয়ে যাচ্ছে, প্রযুক্তির অন্যান্য শাখা, যেমন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংএ তেমনটি ঘটে না।

ফলে, এই আইটি কর্মজীবিদেরকে প্রতিনিয়ত তাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান হাল নাগাদ করতে হয়। কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজন না হলে এবং তার জন্য যথাযথ উৎসাহের ব্যবস্থা না থাকলে অনবরত নতুন প্রযুক্তি শেখা এবং কাজে লাগানোর আগ্রহ না থাকাটাই স্বাভাবিক। গ. যে সকল তথ্য প্রযুক্তি কর্মী সরকারী চাকুরীতে নিয়োজিত, পৃথক তথ্য প্রযুক্তি ক্যাডার না থাকায় তাদের উপরে ওঠার পথও অনেকটাই রুদ্ধ। ফলে তারা অল্প দিনেই হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েন এবং প্রযুক্তির এই অতি দ্রুত বিকাশমান ধারার সাথে তাল মেলানোর জন্য যে অতিরিক্ত শ্রম ও কর্মতৎপরতার প্রয়োজন, সে বিষয়ে তাদের উৎসাহ তাকে না। ঘ. সরকারী কর্মকর্তাগণের বদলী আইটি সিস্টিমগুলোর টেকসয়ত্বকে ক্ষতিগ্রস্থ করে থাকে।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিদেশ থেকে বিপুল অর্থ ব্যয় করে যাদেরকে কোন বিশেষ সফটওয়্যারের উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হলো, তিনি প্রশিক্ষণ শেষে এমন কোথাও বদলি হয়ে গেলেন যেখানে কম্পিউটার ব্যবহারেরই কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। ২. আইটি প্রকল্প পরিকল্পনা ও মনিটরিং এর ক্ষেত্রে সরকারের দুর্বল অবকাঠামোর কারণেও টেকসয়ত্ব ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে। মূলতঃ দুইভাবে সরকার প্রকল্প পরিকল্পনা ও মনিটরিং করে থাকে। যে মন্ত্রণালয়/বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়, সেই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা এবং নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। পাশাপাশি পরিকল্পনা বিভাগ এবং বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) নামক দুটি সরকারী সংস্থা স্বাধীনভাবে প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তাবয়ন মনিটরিং করে থাকে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রকল্প মনিটরিং এর জন্য যে ধরণের যোগ্যতার লোকবল প্রয়োজন, তা সরকারের থেকে থাকে। যেমন, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত প্রকল্প মনিটরিং করার জন্য বাস্তাবায়নকারী সংস্থা ও আইএমইডিতে অভিজ্ঞ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে। কিন্তু, একটি আইটি প্রকল্প মনিটরিং এর জন্য যে ধরণের আইটি বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন, সরকারের সে ধরণের জনবল নেই। ফলে, আইটি প্রকল্প পরিকল্পনায় সরকার যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে না বা সঠিকভাবে মনিটরিংও করতে পারে না। যেমন ধরুণ, সরকার চাইলো বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালের ওষুধের স্টকের হিসাব-নিকাশ রাখার জন্য একটি আইটি সিস্টেম তৈরী করতে।

এই প্রকল্পটি সঠিকভাবে মনিটরিং করার জন্য সরকারের এমন আইটি বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন যারা দেখতে পারবেন যে, সঠিক স্পেসিফিকেশনের সার্ভার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে কি না, যে সফটওয়্যারটি তৈরী করা বা কেনা হচ্ছে, তা সঠিকভাবে চাহিদা মেটাবে কিনা, যে ধরণের ব্যবহারকারীদের তা ব্যবহারের কথা সফটওয়্যারটি তাদের উপযোগী কিনা, বাংলাদেশের সরকারী অফিসের কালচারের সাথে তা সামঞ্জস্যশীল কিনা ইত্যাদি। আবার স্থানীয়ভাবে তৈরী সফটওয়্যারে 'বাগ' বা ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা খুব বেশী থাকে। এ জন্য সফটওয়্যারটি সঠিকভাবে টেস্ট করা হয়েছে কি না তাও দেখা দরকার। পর্যাপ্ত মান ও অভিজ্ঞতার আইটি বিশেষজ্ঞ না হলে এই কাজগুলো সঠিকভাবে করা সম্ভব নয়। ৩. আমাদের দেশে তথ্য প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করতে গিয়ে প্রথম দিকে একে একটি 'জাদুর কাঠি' হিাসবে উপস্থাপন করা হয়েছিল।

বলা হতো, মাউস ক্লিক করলেই সব সব তথ্য পাওয়া যাবে। তথ্য প্রযুক্তি সেবার গ্রাহকেরা এখনও এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন নি। স্বাভাবিকভাবে সরকারের নীতি নির্ধারকগণও এর বাইরে নন। ফলে, অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তব পরিস্থিতি এবং করণীয়গুলোকে বিবেচনা না করে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প নেয়া হয়ে থাকে। ৪. হার্ডওয়ার, সফটওয়্যার ও নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারের দুর্বলতা আইটি সিস্টেমের টেকসয়ত্বকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং জনগণের অর্থের অপচয়ের কারণ হয়ে দাড়ায়।

কম্পিউটার, প্রিন্টার ইত্যাদির খুচরা যন্ত্রাংশ বা সামগ্রী কেনার জন্য বাজেট বরাদ্দ পেতে হলে সেগুলিকে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে রক্ষিত যন্ত্রের তালিকা বা টেবল অব ইকুইপমেন্টস এ অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। অধিকাংশ প্রকল্প এ কাজটি করতে যথা সময়ে উদ্যোগ নেয় না। ফলে প্রকল্প শেষ হয়ে যাবার পর মূল্যবান যন্ত্রগুলো মেরামতের অভাবে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ৫. অধিকাংশ আইটি সিস্টেম প্রবর্তনের সাথে কর্মপদ্ধতিসহ বিভিন্ন মাত্রার সংস্কার জড়িত থাকে। সংস্কার একটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ বিষয়।

আবার সংস্কারকে বাধাগ্রস্থ করতে বিভিন্ন স্বার্থ সক্রিয় থাকে। ফলে, এ ধরণের ক্ষেত্রে স্বল্প মেয়াদের কারিগরি সহায়তা তেমন কোন উপকারে অঅসে না। তবে আশার কথা হচ্ছে, সরকারের সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ/প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে সমভাবে পিছিয়ে নেই। কিছু কিছু বিভাগ ও অফিস যেমন অর্থ বিভাগ, হিসাব মহা নিয়ন্ত্রক (সিজিএ) অফিস যা এজিবি নামে বেশী পরিচিত, বিনিয়োগ বোর্ড - ইত্যাদি কম্পিটারীকরণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা তাদের সাফল্যের থেকে শিক্ষা নিতে পারি।

তথ্য প্রযুক্তি টেকসইভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবথেকে বেশী সাফল্য অর্জন করেছে অর্থ বিভাগ ও হিসাব মহা নিয়ন্ত্রক (সিজিএ) অফিস। নীচে তাদের সাফল্যের কারণসমূহ বিশ্লেষণ করা হলো। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত অর্থ বিভাগ ও এজি অফিসে কম্পিউটারীকরণের কাজ শুরু হয় নব্বই দশকের মাঝামঝি। বর্তমানে দেশের সকল বিভাগীয় ও জেলা হিসাব রক্ষণ কার্যালয়, ঢাকাস্থ ৪৯টি প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় এবং ১৯ টি মন্ত্রণালয়ের বাজেট সংশ্লিষ্ট শাখাকে একটি ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্কের অর্ধীনে নিয়ে এসে সেগুলিতে সমন্বিত বাজেট ও হিসাব রক্ষণ সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে। বর্তমানে জেলা পর্যায় পর্যন্ত সকল হিসাব রক্ষণ অফিসে সংঘটিত প্রতিটি লেনদেন সংরক্ষিত থাকছে অর্থমন্ত্রণালয়ে স্থাপিত একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজে।

এই সফটওয়্যারটিকে আবার সংযুক্ত করা হয়েছে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে অবস্থিত সে সব ব্যাংকের সাথে যারা সরকারী অর্থ লেনদেন করে। ফলে, একদিকে যেমন এই অফিসগুলো দ্রুততার সাথে গ্রাহক সেবা দিতে পারছে, সেখানে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আরও ভালোভাবে অডিট করার পথ তৈরী হয়েছে, তেমনি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আথিক পরিকল্পনাকারীরা জানতে পারছেন প্রতিদিন সরকারের কোষাগারে কত জমা পড়ছে আর কত খরচ হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি সত্যিই অকল্পনীয় যে প্রত্যন্ত এলাকার জেলাগুলোতেও বৃটিষ আমলের জরাজীর্ণ অফিসে বসে সরকারের হিসাব কর্মীরা সকল হিসাব নিকাশ করছেন অন লাইন সফটওয়্যার ব্যবহার করে। অপরদিকে অর্থ বিভাগের বাজেট শাখা বাজেট তৈরীর সকল কাজ সম্পন্ন করছে নিজেদের তৈরী সফটওয়্যারের মাধ্যমে। তারা ১৯ টি মন্ত্রণালয় এবং বেশ কয়েকটি বিভাগকেও তাদের সাথে সংযুক্ত করেছেন।

এই সকল মন্ত্রণালয় একন নিজেদের বাজেট নিজেরা তৈরী করে অর্থ বিভাগে অন-লাইনে পাঠাচ্ছে এবং তাদের নিজেদের বাজেটের বিপরীতে সারা দেশ জুড়ে যে খরচ হচ্ছে, তার হিসাব পাচ্ছে। টেকসইভাবে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে অর্থ মন্ত্রণালয় ও সিজিএ অফিসের সাফল্যের কারণগুলো নিম্নরূপঃ ১. একবারে সব কিছু করার চেষ্টা না করে ধাপে ধাপে করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট দফতর একটি ধাপকে যথেষ্ঠ পরিমাণে আত্মীকরণ করার পর পরবর্তী ধাপে পা দেয়া হয়েছে। ২. যারা বাস্তবে কাজ করে থাকে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণের উপর জোর দেয়া হয়েছে। বর্তমানে এমন কোন সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পাওয়া যাবে না যারা বাজেট তৈরী বা হিসাব রক্ষণেন সাথে জড়িত কিন্তু কম্পিউটারের উপর প্রশিক্ষণ পান নি। তবে একটি ক্ষেত্রে সিজিএ অফিস থেকে সরকারের অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের একটি ভিন্ন বৈশিষ্ট রয়েছে।

হিসাব রক্ষণ অফিসগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বদলী হলেও তাদের কাজের ক্ষেত্র পরিবর্তন হয় না, তারা বড়জোর এক অফিস থেকে অপর অফিসে স্থান্তরিত হন। এ কারণে বদলীর ফলে তাদের প্রাপ্ত প্রশিক্ষণের অপচয় হয় না। ৩. আইটি সিস্টেম মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি আউটসোসিং করা হয়েছে। সরকারী ও বেসরকারী আইটি বিমেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ফাইনান্সিয়াল সিস্টেম সাপোর্ট ইউনিট নামে একটি সেল গঠন করা হয়েছে। ফলে প্রকল্প শেষ হলে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কোন সমস্যা হবে না কেননা, তারা এখনই কাজটি করে অভ্যস্থ।

৪. সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কম্পিটারীকরণের বিষয়ে শুধু যে উৎসাহই দেয়া হয়েছে, তাই নয়, বরং তাঁরা সক্রিয়ভাবে এই সিস্টেমগুলো ব্যবহার করছেন। এখানে উল্লেখযোগ্য যে বর্তমান অর্থ সচিব ও সিজিএ এবং তাদের পূর্বসূরীগণ নিজেরা তাঁদের অফিসের আইটি সিস্টেমের সরাসরি ব্যবহারকারী। টেকসইভাবে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য সরকার নিম্নলিখিত সুপারিশসমূহ বিবেচনা করতে পারেঃ ১. অন্যান্য কারিগরি বিষয়ের মত পৃথক আইটি ক্যাডার প্রতিষ্ঠার এখন কোন বিকল্প নেই। তথ্য প্রযুক্তিবিদদের জন্য আলাদা ক্যাডার থাকলে একদিকে যেমন এই ক্যাডারের কর্মকর্তাগণের পদোন্নতির পথ খোলা থাকতো, ফলে তারা প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে প্রযুক্তিতে হালনাগাদ করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত হতেন, তেমনি সরকারী চাকুরীর সম্মান, ক্ষমতা - ইত্যাদির কারণে মেধাবী তথ্য প্রযুক্তিবিদগণ অপেক্ষাকৃত কম বেতনেও সরকারী চাকুরীর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। ২. বদলীর ফলে যাতে আইটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্তগণের কাজের ক্ষেত্রের পরিবর্তন না হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. বিসিএস ও অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যেন পদের সাথে সর্ম্পকযুক্তদের অগ্রাধিকার দেয়া হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। ৪. আইএমইডিতে আইটি প্রকল্পগুলো মনিটরিং এর জন্য বিশেষ সেল খোলা প্রয়োজন। উক্ত সেলে আইটিতে শিক্ষাপ্রাপ্তদেরকে পোস্টিং দিতে হবে এবং তাদেরকে আইটি প্রকল্প মনিটরিংএর উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ৫. যে সকল ক্ষেত্রে আইটি সিস্টেম প্রবর্তনের সাথে কর্মপদ্ধতিসহ বিভিন্ন মাত্রার সংস্কার জড়িত থাকে, সে সব ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তার মেয়াদ এরকম পরিমাণ থাকা দরকার যাতে, নতুন পদ্ধতিতে সকলে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে এবং পুরানো পদ্ধতিতে ফেরার সুযোগ না থাকে। e-mail:


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.