চতুর্মাত্রিক.কম (choturmatrik.com)
অকস্মাৎ ঝাপটা দেয়া ঢেউয়ের মতো কিছু কিছু ব্যাপার কীভাবে নাড়া দিয়ে যায়? বসে বসে টুকটাক খটখট করছিলাম কী-বোর্ডে। পাশে এক গ্লাস পানি, মনিটরের পাশে ঝুলানো হেডফোন, অন্যপাশে কয়েকটা ডিভিডি, মানিব্যাগ, মোবাইল ইত্যাদি।
ফোন এলো একটা।
"ভাইয়া কি ব্যস্ত?"
"না, বলো। "
"একটু একুশে-তে দেখেন, সুমনের (কবীর সুমন) গান দেখাচ্ছে।
"
"আচ্ছা দেখছি। "
একটা গান শুনতে পেলাম শেষ হবার আগে। বব ডিলানের গানের সুর কথা দিয়ে লেখা গানটা। তেমন আহামরি লাগছিলো না, সাধারন একটা গান, একই কথা ইংরেজি থেকে বাংলা করেছে। সাথে গায়কী সুমনীয়, একটু থেমে থেমে কথা বলার মতো করেই।
বুড়ো হয়ে গেছেন অনেক! একটা সময় আদি শৈশবে বড়ো নাড়া দিয়েছিলো সুমনের ম্যাগনেটিক টেপের ক্যাসেট দুতিনখান। গানগুলো বারবার শুনতাম। ক্যাসেটের গায়ে ছিল "জীবনবাদী" বা "জীবনমুখী" গান এরকম কিছু লেখা। তখন ব্যাপারটা ঠিক বুঝি নাই। অনেক পশ্চিমবঙ্গীয় শব্দ বুঝতাম না।
তবে ধরতে পারতাম মূলসুরটা হয়তো। গুনগুনিয়ে উঠতাম কখনও...
মাঝে কবীর সুমনের ধর্মান্তর আর বিয়ে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। ভালো লাগে নাই। আদি শৈশবের নায়ক/ভালো লাগা ব্যক্তিত্বদের একটা আলো থাকে। বয়স বাড়লে তাদের চারপাশের সেই আলোটা কমে যেতে থাকে।
ওঁরটা অনেকদিন ছিলো। যখন কমলো তখন সেজন্যেই ভালো লাগে নাই। তবে ধরে নিতে শিখেছি, বিশুদ্ধতা বা "পার্ফেকশন" একটা মিথ-ধরনের কিছু। আছে, থাকবে, কিন্তু সেটাকে ধরাছোঁয়া যাবে না। কেউ কেউ আমির খানের মতো ৩৫ টেকে সেটাকে রপ্ত করার চেষ্টা করবে কিন্তু আসবে না।
এটাই- এই খুঁত থেকে যাওয়াটাই হয়তো সৌন্দর্য, হয়তো মানুষ হয়ে ওঠা!
গান শেষ হলে গীটারের সুরটায় শেষ স্ট্রোক পড়লে ফিরে ববডিলানেরটা শুনতে শুরু করলাম। হঠাৎ করে মনে পড়লো আজকে একজন মরে গেছিলো অনেক বছর আগে! কিন্তু তার আত্মাটা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদের চারপাশে-দেয়ালে-দেয়ালে-চাদরে-বালিশে-টেবিলে-ক্যালেন্ডারে-টিশার্টে-ক্যাপে সাদা কিংবা রঙিন ছবি হয়ে গেছেন তিনি। খেয়াল করিই না বলতে গেলে যে মানুষটা আর তার আইডিয়াটা কীভাবে অবলীলায় কর্পোরেটের যাঁতায় বিক্রি হতে হতে বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। এখানেও নিখুঁত থাকা যায় না, যায় না!
আমি আপাদমস্তক লোভী, স্বার্থপর মানুষ।
সংকীর্ণমনাও হয়তো অনেকখানি। নিজেকে ভালবাসতে ভালবাসতে নার্সিসিস্ট হয়ে গেছি। যারা আমাতে মুগ্ধ হয়, আমাকে পছন্দ করে, তাদের মূল্যবান মনে করি, আর যারা আমাকে ঘৃণা করে নানান কারণে তাদের আমিও কিছুমাত্রায় ত্যাগ করি মনে-মননে। শহর জুড়ে অশ্লীল ভোগবাদ দেখে তাতে আমিও গা ভাসাই। তাবৎ উপকরণ যা কিনে আনি, ব্যবহার করি, মনে একবারও আসেনা তার বদলে আর কী কী কৃচ্ছতা পালন করতে পারতাম!
কথা শুরু করেছিলাম ঝাপটা দেয়া ঢেউয়ের মতো আবেগজড়িত ব্যাপার নিয়ে।
তাড়িত হয়েছি মনে হয় (যেরকম আবোলতাবোল বকছি তাতে সেরকমই ধারণা হচ্ছে!)। চে আর বব আর সুমন ঝাপটা দিছে। বসে বসে গীটার ঝঙ্কারে দুকান আর আমার ঘরের দুজানালা ভাসায়ে দিলেও টের পাই এসবই ক্ষণিক তোলপাড়। সমুদ্র তো নই যে অবিরাম বিক্ষুব্ধ হতে পারবো? নেহাতই এভাবে ভাবছি। চে-ও জানতো কেউ কেউ মনে রাখবে তাকে সবসময়, বাকিরা একদিন সবকিছুই মেনে নিবে খুব সহজে।
রবিবাবুর দুইলাইনে শেষ করি। খুব হালছাড়া পথে চলাচল করি, পথের পাশে এই মাতাল বিভ্রান্ত শহরের রাস্তায় কোথাও একফোঁটা শান্তি দেখি না। ঘরে ফিরে একটা শ্বাসে ভিতরে বাতাস টেনে নেয়ার সময়ে টের পাই বেঁচে থাকাটাই একটা আনন্দ-স্বরূপ!
তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা
এ সমুদ্রে আর কভু হবো নাকো পথহারা।
***
৯.১০.৮
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।