আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নৃশংসতা আর নির্মমতার এই তান্ডবের অবসান চাই!



আমাদের দেশে, এক শ্রেনীর জনগোষ্ঠি আছে- যাঁরা দেখতে মানুষের মতো হলেও আমাদের কাছে ঠিক মানুষ নন। বাসার ঘর মোছা কাপড়টি হারিয়ে গেলে যতোখানি বিচলিত হই, তার হাজার ভাগের এক ভাগ বিচলিত বোধ করিনা মানুষের মতো দেখতে তাঁদের কেউ অকালে হারিয়ে গেলে! অতি তুচ্ছ সামান্য জিনিসের প্রতি যতোখানি মমতাবোধ করি তার হাজার ভাগের একভাগ সহানুভূতি এই জনগোষ্ঠির প্রতি অনুভব করিনা। অত্যন্ত তিতকূটে হলেও এটাই বাস্তব, এটাই সত্য। এমন এক জনগোষ্ঠির একজন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের পন্চান্ন বছরের হতভাগ্য রিক্সাচালক আব্দুর রশিদ। হতদরিদ্র আব্দুর রশিদদের প্রায় সারা বছরই রোজা রাখার মতোই উপোস করে কাটাতে হয়, তবু হয়তো রমজান মাসে পূণ্যলাভের আশায় শত কষ্টের মাঝেও তাঁরা সিয়াম সাধনা করেন।

এই রমজানের এক দুপুরে গ্রামের বাজারে বসেছিলেন আব্দুর রশিদ, হঠাৎ করে মানুষের মতো দেখতে একদল হায়না এসে তাঁর উপর হামলে পড়ে! শ্যামল কুমার নামক এক নরপশুর নেতৃত্বে জোর করে ধরে নিয়ে যায় তাদের অফিস নামের নরকে। সেখানে শুরু হয় তাঁর প্রতি অমানুষিক নির্যাতন। আব্দুর রশিদের অপরাধ! হতভাগ্য দরিদ্র রশিদের স্ত্রী মোমেনা আক্তার এই নরপশুদের প্রতিষ্ঠান থেকে পঁচিশ হাজার(ভিন্ন একটি সুত্র মতে উনত্রিশ হাজার) টাকা ধার করেছিলেন। দারিদ্রের সাথে সংগ্রামে বার বার পরাজিত হয়ে কয়েক কিস্তি পরিশোধের পর নিজের অক্ষমতার কাছে পরাজয় স্বীকার করে তিনি গ্রাম থেকে পালিয়ে যান। ঋনগ্রহীতা নেই তাতে কি হয়েছে? নরপশুর দল কি এতো সহজে কাউকে ছেড়ে দিতে পারে! তারা তাদের সমস্ত পাশবিকতা দিয়ে চড়াও হয় এই অসহায় মানুষটির উপর, কিছু খেয়ে রোজা ভাঙ্গার আগেই হয়তো ভেঙ্গে দেয়া তাঁর মেরুদন্ড আর পাঁজরের হাড়!! সন্ধ্যায় তাঁর সন্তান ও শশুরের কাছে গিয়ে হুমকী দিয়ে আসে, "বারো ঘন্টার মধ্যে টাকা পরিশোধ করা না হলে আব্দুর রশিদের লাশ গাছের সাথে ঝুলানো অবস্থায় পাবে।

" বারো ঘন্টা সময়সীমা পার হবার আগেই তাঁর হতবিহ্বল স্বজনেরা আব্দুর রশিদের লাশ "ব্রাক কার্যালয়" নামের এই নরকের পিছনে গাছের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পায়!!! একটি প্রতিষ্ঠানের কতোখানি ধৃষ্টতা হলে তারা একজন মানুষকে হত্যা করে ঝুলিয়ে দেবার হুমকি দিতে পারে! কোন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের উচ্চাশা তাদের কতোখানি বিবেক ও আদর্শবর্জিত করলে নিরীহ মানুষের লাশের উপর দাঁড়িয়ে তারা সাফল্যের হাসি হাসে! ঘটনার নির্মমতা, নিষ্ঠুরতার এখানেই সমাপ্ত নয়। মাত্র পঁচিশ হাজার টাকার কিছু অংশের জন্য যারা একজন মানুষকে হত্যা করে, সেই নারকীয়তা, সেই হত্যাকান্ড ধামা চাপা দিতে শুরু হয়ে যায় লাখ টাকার খেলা। অসহায় আব্দুর রশিদের হতদরিদ্র পরিবারটিকে চোখ রাঙ্গানি আর হাতে কিছু পয়সা গুঁজে দিয়ে থানায় হত্যা মামলার পরিবর্তে অস্বাভাবিক মামলা দায়ের করাতে বাধ্য করে। স্থানীয় থানার ওসি'র ভূমিকা সবচেয়ে দৃষ্টি কটু ও নিন্দনীয়। এই নির্মম হত্যাটিকে আত্মহত্যা বলে চালাতে "ব্র্যাক" কর্মীদের চেয়ে তার গরজ যেন অনেক বেশি!!! অতি দ্রুত ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চাওয়ায় কিছু খোঁজখবরের পর যা জানা যায় তাতে যেন মেরুদন্ড দিয়ে আতংকের শীতল স্রোত বয়ে যায়!! কিছুকাল পূর্বে কেরানীগন্জ থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকাকালীন সময় ওসি মুস্তাফিজুর রহমানের কর্মকান্ড থেকে আর যাইহোক তার কাছে থেকে সুবিচার বা ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান আশা করা যায়না।

দুই শত বছর শোষনের পর ব্রিটিশ রাজ্যের অবসান ঘটলেও দেশ ছাড়ার পূর্বে নিন্দিত ইস্ট ইন্ডীয়া কোম্পানীর আত্মা যেন রয়ে যায় এই মাটিতে, পরবর্তিতে যা আমাদের দেশের "(?)গরীবের বন্ধু" এনজিও গুলোর শরীর ধারন করে! আর কেনই বা নয়। যে আন্চলের মাটি উর্বর সেখানে ফসল ভালো ফলবেই, ঠিক তেমনি যে অন্চলের মানুষের বিবেক বোধ, সচেতনতা শূণ্যের কোঠায় সেখানে সন্ত্রাসীরা ত্রাসে রাজত্ব গড়বে এমনটিই তো স্বাভাবিক। দিন দিন বোধশূণ্য হয়ে পড়ছি না অমানুষ হয়ে উঠেছি বুঝতে পারছিনা। চোখের সামনে ঘটে যায় কতো নির্মমতা, নৃশংসতা,- কতো সহজেই না পাশ কাটিয়ে চলে যাই! পত্রিকার পাতা খুলে দেখি আব্দুর রশিদের ঝুলন্ত লাশের ছবি, রাজপথে ছড়িয়ে থাকা পিতাপুত্রের টুকরো টুকরো লাশের সংবাদ, রাহেলার মতো অগুনিত ধর্ষিতা নারীর গলিত পচে যাওয়া শরীর পড়ে থাকে ঝোপ জঙ্গল আর ডোবানালায়! আমরা নির্বিকার ভাবে তাতে চোখ বুলিয়ে মনোযোগ দেই তার পাশের খবরটিতে, কোন রাজনৈতিক নেতার আঙ্গুল মচকে গেলো, কার ডান কানের ব্যাথা বাম কানে হলো- তা নিয়ে হৈচৈ শুরু করি। পাতা উল্টে মেতে উঠি স্বদেশ ও বিদেশের বিনোদন সংবাদে।

নিজে, পরিবার পরিচিতিজন, নিজ পেশা, প্রতিষ্ঠান, পছন্দের দলের কারো প্রতি নিষ্ঠুরতার লেশমাত্র হলেই তো ঝাঁপিয়ে পড়ি, প্রতিবাদ জানাই সাধ্যমতো- আর ভেবে আত্মতৃপ্তি লাভ করি মনুষত্ববোধ তো হারাইনি! সব ঠিকাঠাক আছে। এখনো আমরা মানুষ আছি!!! হতদরিদ্র আব্দুর রশিদের মতো মানুষ, যাঁদের বেঁচে থাকারই কোন মূল্য নেই আমাদের কাছে, তাঁদের মৃত্যুতে কি এসে যায়! রাহেলার মতো মেয়েরা নির্যাতিতা হবে, ধর্ষিতা হবে, লাশ হয়ে পড়ে থাকবে এরা.. এমনটিই তো স্বাভাবিক। আমাদের এহেন নির্লিপ্ততা বাড়িয়ে দেয় এসব কুলাঙ্গার খুনী সন্ত্রাসীদের সাহস। "ব্র্যাক"এর মতো এনজিও গুলো ধরে নেয় তাদের নির্মমতায় দু চারজন প্রাণ হারালে কোন কিছু এসে যাবেনা, টাকা ঢেলে দুদিনেই প্রশাসনের মুখ বন্ধ করা যাবে। বরং লাভ এই, ঋণগ্রহীতাদের সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে, তারা ভয়ে যেকোন মূল্যে দেনা পরিশোধে সচেষ্ট হবে।

সাধারন মানুষের প্রতি অন্যায় অবিচার আর নৃশংস আচরেন করার পর অন্য কারো জীবন কিভাবে স্বার্থকতা পায়, একটি প্রতিষ্ঠান কিভাবে সাফল্যের হাসি হাসে - জানা নেই। তবে আমরা যারা (!)শিক্ষিত সচেতন মানুষ আমরা কি এর বিরুদ্ধে কোনদিনই দাঁড়াতে পারবোনা? আমাদের বিবেক কিংবা মেরুদ্ন্ড কি এতোটাই অসাড় হয়ে গেছে যে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এসব নৃশংসতা, নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের "টুঁ" শব্দটি করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি!! দেশের সাধারান মানুষ, এই আমরা যদি এসবের প্রতিবাদ না করি, প্রতিকারের চেষ্টা না করি.. পাশবিকতার এই ধারা অব্যহত থাকবে। হতদরিদ্র এই জনগোষ্ঠিকে ছাড়িয়ে যা অচিরেই আমাদের মত (!)সুসভ্য মানুষদের আঘাত করবে। সেদিন হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে চাইবো, কে জানে.. ততোদিনে হয়তো অনেক দেরী হয়ে যাবে! দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, এখন অন্তত আমরা ঘুরে দাঁড়াই। প্রতিবাদ করি আব্দুর রশিদের মতি অসহায় হতভাগ্য মানুষটির সাথে করা অন্যায়ের- যাঁর হত্যার সুবিচার দাবী করার কেউ নেই।

যাঁর ভাগ্য আর দারিদ্র পিষ্ঠ পরিবার অতি সহজে তাঁর হত্যাকারী হায়নাদের কাছে বিকিয়ে যায় পরদিনই। রাহেলা হত্যা মামলার মতো চার বছর পর নয় এখনই রুখে দাঁড়াই, প্রতিহত করি এই নরপশুদের। আমাদের সকলের সন্মিলিত প্রচেষ্টা যদি এই অসহায় মানুষটির হয়ে একটি প্রতিবাদী কন্ঠস্বর হতে পারে, অন্তত পূনরায় মানুষ হবার পথে কিছুটা স্বার্থক হবো। আব্দুর রশিদের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে, ময়না তদন্ত হয়তো এখনো হয়নি, তবে আমি হাজার হাজার মাইল দূরে বসেই বলে দিতে পারি রিপোর্ট কি হবে- " Cause of Death- A case of suicide" -"আত্মহত্যা জনিত কারনে মৃত্যু"! আমরা একটু সচেতন হয়ে সময় দিলেই এই অনিবার্য অন্যায়টিকে রোধ করতে পারি। "দৈনিক ইনকিলাব" ও "প্রথম আলো"র যে সাহসী সাংবাদিকরা এই নির্মম ঘটনাটিকে সততার সাথে তুলে ধরেছেন তাঁদের স্যালুট জানাই।

আপনাদের প্রতি অনুরোধ, এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম বন্ধ করবেননা। অন্যান্য সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ, আব্দুর রশিদের মতো অসহায় মানুষের পক্ষে এগিয়ে এসে সাধ্য মতো ঘটনাটি এবং এর পিছনের কুচক্রী মহলের মুখোস উন্মোচিত করুন। আমরা যারা সাধারন আমনুষ, যাদের হাতে শক্তিশালী কলম নেই, আমরা নিজ নিজ অবস্থানে বসেই সুবিচারের জন্য চেষ্টা করতে পারি। দেশ অথবা বিদেশে বসেই প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে ইমেইল ও ফোন করে এই নির্মমতার সুবিচারের দাবী জানাতে পারি। এই ব্লগে হয়তো অনেকেই আছেন যাঁরা ব্র্যাকে কর্মরত, তাঁরা এই অন্যায়ের প্রতিকারে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারেন! নিজেদের মধ্য থেকে প্রতিষ্ঠানের কাছে স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা আশা করতে পারেন।

এই নৃশংস হত্যাকান্ডটি যদি ব্র্যাকের প্রধান কার্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের নির্দেশে না ঘটে থাকে, তাহলে সত্যিকারের অপরাধীদের ধরিয়ে দেবার দাবী জানাতে পারেন। বর্তমান যুগের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর এমন নির্মম আচরনের ঘটনা দিনের পর ঘটে যায়, নিশ্চিন্তে নির্বিকার ভাবে তারা খুন করে যায় মানুষ। অর্থ, দম্ভ আর দুর্নীতির জোরে সব ঘটনা দুদিনেই ধামা চাপা পড়ে যায়, নৃশংস হত্যা কান্ড নিমেষেই হয়ে যায় "আত্মহত্যা"। আসুন আমরা একটু চেষ্টা করে দেখি। শুধু দুঃখ বা ঘৃণা প্রকাশ করে নয়, বিবেকবোধ সম্পন্ন সত্যিকারের মানুষের মতো রুখে দাঁড়াই হতভাগ্য এই মানুষ গুলোর পক্ষে, তাঁদের প্রতি ধারাবাহিক ভাবে করে যাওয়া এই নির্মম আচরেনর ইতি টানতে চেষ্টা করি।

কোন সরকার, সে তত্ত্বাবধায়ক, সামরিক কিংবা রাজনৈতিক সরকার হোক কেউ এই সমস্যার প্রতিকারে এগিয়ে আসবেনা। আপনি আমি, আমরা সন্মিলিত ভাবে প্রতিবাদ না জানালে, হত দরিদ্র অসহায় মানুষদের প্রতি ইস্টিন্ডিয়া কোম্পানীর প্রেতাত্মাদের এই নির্মম তান্ডবের অবসান ঘটবেনা কোনদিন। সকলের প্রতি অনুরোধ, আসুন আমরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাধ্যমতো প্রতিবাদ করে দেখি, সুবিচার চেয়ে দেখি!!! দৈনিক ইনকিলাব দৈনিক প্রথম আলো ছবি সুত্র: দৈনিক ইনকিলাব। হতভাগ্য আব্দুর রশিদের অসহায় পরিবার ও বর্তমান অবস্থার সচিত্র প্রতিবেদন

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.