পর্যটক
"আয়ান হারসা আলি একজন "মুসলমান-নাস্তিক" শিরোনামে "এস্কিমো" নিকের লেখা একটা পোষ্ট Click This Link দেখেছিলাম আজ সকালে।
ওখানে কিছু মন্তব্য করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু লিখতে গিয়ে দেরি করে ফেলেছি, আবার মন্তব্যও যথেষ্ট বড় - এই দুই বিবেচনা থেকে এই আলাদা পোষ্টের চিন্তাটা আসে।
ওখানে পোষ্টটা মূলত, কানাডার ষ্টার পত্রিকা আয়ান হারসা আলির একটা ইন্টারভিউ থেকে পাওয়া তথ্যকে ভিত্তি করে। আমাদের মনোযোগ আকৃষ্ট ও নজর করানোর সব কৃতিত্ত্ব অবশ্যই "এস্কিমো" এর প্রাপ্য।
"এস্কিমো" কে ধন্যবাদ। তবে একটা ছোট্ট তথ্যগত ভুল-পাঠ আছে বলে আমার মনে হয়েছে, ওটাকে উছিলা করেই আমার কথা আগাবো।
কোথায় জন্ম: কানাডার ষ্টার পত্রিকা ইন্টারভিউ বলছে,
The Somali-born Hirsi Ali, 36, আবার অন্য জায়গায়,
A year later, the family went into exile, first in Saudi Arabia and Ethiopia। ,,,,,,,,, In 1992, when she was 22
অর্থাৎ ১৯৭০ সালে আয়ান সোমালিয়ায় জন্মগ্রহণ করে; এরপর যখন তাঁর ছয় বছর বয়স তখন, তাঁর পরিবার সৌদি আরব ও পরে ইথিওপিয়ায় প্রবাসী হয় ও তা ছিল আরও প্রায় ছয় বছর। এরপর আরও ১০ বছর তাঁর প্রবাস জীবন কাটে কেনিয়ায়।
তাহলে দাড়ালো আয়ান "ইথিওপিয়ায় জন্ম গ্রহণকারী" নন, সোমালিয়ায় তাঁর জন্ম। ইথিওপিয়ার সাথে তাঁর প্রবাস জীবনের সম্পর্ক বড়জোর ছয় বছরের, ১২ বছর বয়স পর্যন্ত।
ইথিওপিয়ার (জাতির ভিত্তিতে বিভক্ত) চার প্রদেশের মধ্যে একটার আনুষ্ঠানিক নাম "সোমালি রিজিয়ন", সোমালিয়া বর্ডার প্রান্তে যার অবস্হান। মূলত জাতিগতভাবে সোমালি ও ধর্মে ইসলাম হলেও এরা রাস্ট্রীয় পরিচয়ে ইথিওপিয়ান। কিছুটা আমাদের সাথে পশ্চিমবঙ্গের মত।
তবে আমাদের ক্ষেত্রে যেমন অন্তত ভাষার উচ্চারণ বা একশেন্টের তফাতে বুঝা সম্ভব হয় কে বাংলাদেশের কে পশ্চিমবঙ্গের, ওদের ক্ষেত্রে ওটাও সম্ভব নয়। তবে ইন্টারভিউয়ের তথ্য মতে তাঁর জন্ম ইথিওপিয়ার "সোমালি রিজিয়নেও" নয়।
আফ্রিকার ভুগোলের এই কোণ এর সমাজ সম্পর্কে কিছু তথ্য; যা আয়ান হারসা আলি মানসিক গড়ন সম্পর্কে একটা ধারণা করতে পাঠককে সাহায্য করবে।
সারা আফ্রিকাতে বিশেষত কেনিয়া থেকে পুরা উত্তর-পূর্বের ও সারা উপকূল এলাকার দেশগুলোতে (সোমালিয়া, জিবুতি, ইথিওপিয়ার "সোমালি রিজিয়ন", কেনিয়ার অংশ বিশেষ, তানজানিয়ার অংশ বিশেষ) মুসলমান জনসংখ্যার মধ্যে ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন বা বাচ্চাবয়সে মেয়েদের clitoris খতনা দেওয়ার একটা রেওয়াজ আছে। এর নীট পরিণতি হলো, যৌন-অনুভূতি অসাড় করে দেয়া।
এখানে লক্ষ্য করা গেছে, clan বা গোত্রভিত্তিক আফ্রিকান সমাজে নগরায়ন যত কম বা রাজধানী থেকে যত দূরে ইসলামের নামে এই প্রথা তত বেশী প্রচলিত।
আফ্রিকার উত্তর-পূর্বের ও সারা উপকূল এলাকার দেশগুলো ভৌগলিক অবস্হানের দিক থেকে দেখলে মাঝে রেড সী বা লোহিত সাগরের অপর পারেই হোল আরব দেশ, পুরা মিডল ইষ্ট। গোত্রভিত্তিক আফ্রিকান মুসলমান সমাজ ওখানকার বৈশিষ্ট। কয়েকশ বছর আগে থেকে উপকুলীয় বাণিজ্য সূত্রে গোত্রভিত্তিক সমাজে ইসলামের আগমন ঘটেছিল ওখানে। কিন্তু মেয়েদের খতনার এই রেওয়াজ কোথা থেকে আসলো তা এক গবেষণার বিষয়, কারণ আরব দেশের কোথাও এই রেওয়াজ আছে বা ছিল বলে শুনা যায় নাই।
ফলে এই রেওয়াজ কতটা ধর্মীয় বা কতটা গোত্র সমাজের পুরানো ঐতিহ্য-লক্ষণ অথবা একটার সাথে আর একটার পাঞ্চ, তা বের করা এক নৃতাত্ত্বিক গবেষণার বিষয়। তবে মূলকথা হলো, এই রেওয়াজ ঐ ভুগোলে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। আমাদের আলোচ্য আয়ান হারসা আলিকে ঐ ভয়াবহ নিষ্ঠুর অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে শৈশব পার করতে হয়েছে।
আয়ান হারসা আলি এর ইসলাম সম্পর্কে বর্তমান চিন্তাভাবনা মনগঠনে তাঁর শৈশব অভিজ্ঞতা এক গুরুত্ত্বপূর্ণ অধ্যায়। তবে সেই সাথে পরিণত বয়সে নেদারল্যান্ডের Leiden University তে political science পড়ার সময় Karl Popper এর Open Society বিষয়ক চিন্তার প্রভাব - তাঁকে আজকের অবস্হায় নিয়ে হাজির বা উপস্হাপন করেছে বলে আমার ধারণা।
তবে এর সাথে আরও কিছু আছে। বিশেষত ৯\১১ এর পর পশ্চিমা মন ইসলাম সম্পর্কে কী মনোভাব ও মোকাবোলা-ষ্ট্রাটেজি নিয়েছে - সেই বড় ক্যানভাসের ভিতরেও এসব কিছু ডালপালা মেলেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।