মাথার ঝাঁপিতে বন্দি কবিতার দল.....
সকাল থেকেই লোহিতের মন খারাপ। দাত ব্রাশ করতে করতে আয়নায় তাকিয়েছিলো ঘুম জড়ানো চোখে। ব্যস, মনটা খারাপ হয়ে গেল। কোন কারন ছাড়াই।
একবার বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে হয়েছিল,সেকেন্ডের ভেতরে মত পাল্টালো।
মন ঠিক করতে টি.ভি দেখার চেষ্ঠা করলো। কবিতার বই,গল্পের বই পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ওল্টলো। অযথা!শেষমেশ বিরক্ত হয়ে আবার ঘুমোতে যাচ্ছিল,মা ডেকে কারেন্ট বিলের কাগজ ধরিয়ে দিলেন। ইচ্ছে না থাকলেও বেরিয়ে এলো সে।
বাইরে ঝাঁঝালো কড়া রোদ।
সবকিছু পুড়িয়ে ফেলতে চাইছে যেন। ভ্র“পে করলো না লোহিত। হেটে এলো অনেক খানি পথ। কেমন যেন নেশা নেশা ভাব এ রোদের মাঝে। মন অনেক খানি ভাল হয়ে গেল।
ভাবলো সে,ও রোদ আমাকে জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দাও। মিশিয়ে নাও তোমার মাঝে। বড় ভাল লাগা তোমার মাঝে যেন লুকিয়ে আছে। পরণেই ভাবলো,এসব কী ভাবছি আমি পাগলের মত?মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি?সন্দেহ হতে থাকে তার।
আরেকটু হাটার পর মনে হলো রিকশা ছাড়া আর হচ্ছেনা।
দাড়িয়ে পড়লো সে। এমন রোদের মাঝে রিকশা পাওয়াও কঠিন। ওর ভাগ্য ভাল মোড় ঘোরে একটা খালি রিকশা আসতে দেখা গেল। ডাক দিল,এই রিকশা!সাথে সাথে প্রতিধ্বনিত হলো যেন,এই রিকশা!এক সেকেন্ড নিজের কন্ঠের সুরেলা প্রতিধ্বনি মনে করেছিল। পেছনে তাকাতে ভুল ভাঙলো।
ফুটপাথে একজন তরুণীও রিকশার আশায় দাড়িয়ে। হাত কপালের ওপর রেখে রোদ থেকে চোখ বাঁচাবার চেষ্ঠা করছে। লোহিত অবাক হয়ে দেখলো তরুণীর গালে রোদের প্রতিফলন। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সুন্দরতম একটি দৃশ্য। ভাগ্য গুণে তার মত এক অভাগার সামনে ঘটছে।
উচিত ছিল কোন কবি বা গল্পকারের সামনে ঘটার। লেখার জন্য এমন দৃশ্যের তুলনা মেলানো ভার। অসাধারণ!আবারো ভাবলো সে।
লোহিতই আগে ডেকেছিল তাই রিকশাওয়ালা তার কাছে এসে থামলো। রিকশায় উঠতে যাবে,কি মনে আবার পেছনে তাকালো।
তরুনীর চেহারায় হতাশার ছায়া স্পষ্ট। রিকশাওয়ালাকে তার দিকে ইঙ্গিত করে সোজা হাটতে লাগলো সে। পেছনে তাকালে দেখতে পেত সেই তরুণীর চোখে-মুখে ঘন কৃতজ্ঞতা মেশানো হাসি।
ফুটপাথ ধরে হাটছে লোহিত। ঠিক সামনে সামনে হাটছে একজন স্কুলগামী কিশোর।
ভারি ব্যাগ কাঁধে ঘেমে নেয়ে উঠছে। কাশ শুরু হতে বেশি সময় বাকি নেই,তাই অত্যাবশ্যক ভারি ব্যাগটা নিয়ে জোরে জোরে হাটছে কিশোরটি।
গম্ভীর চেহারার একজন বৃদ্ধ ভিখারী পাশ কেটে গেল। লোহিত লক্ষ্য করলো ভিখারীটির পা খালি। অবাক হল সে!রোদে সবকিছু গরম হয়ে তেতে আছে।
জুতো পরেও হাটা দায়,আর লোকটা দিব্যি খালি পায়ে হেটে যাচ্ছে।
না বোধক ভাবে মাথা নাড়তে লাগলো সে। বিশ্বাস হতে চায় না।
কিছুটা দূরে কয়েকটা কাক ডাস্টবিন ঘাটছে। গলা টেনে টেনে কা কা করছে।
সব সময়ের কালো বিষন্ন চোখ গুলো যেন আরো বিষন্ন হয়ে বলছে পানি চাই,ছায়া চাই।
এই স্কুলগামী কিশোর,বৃদ্ধ ভিখারী আর কাকের কথা ভাবলো লোহিত,এরা যদি রোদকে হার মানাতে পারছে আমি কেন পারবোনা?আমি হাটবই। রোদকে জিততে দেব না!
বায়ে উপরের দিকে তাকাতেই দাড়িয়ে পড়লো সে। একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ। ঘন সবুজ পাতা আর লাল টুকটুকে ফুল।
কিছুটা দূর থেকে লাগছে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি পতাকা বাতাসের সাথে উড়ছে। রোদে উজ্জ্বল হয়ে আছে পতাকা গুলো। অভিভূত হয়ে দেখছে লোহিত। এও দেখি পৃথিবীর অন্যতম সৌন্দর্যের একটি। মনে মনে হাসলো সে,এভাবে যদি খালি পৃথিবীর সৌন্দর্য খোঁজে বেড়াই,তাহলে আমার কাজ গুলো করবে কে?হাটতে থাকলো সে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।