একজন ইউনুস খান বেঁচে থাকতে চান গণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং উদ্যেগ গ্রহণের মাঝে।
গেরুয়া বসন। সাদা পাকা দাড়ি। পরনে লাল শালু। মুখের দিকে তাকালেই কেমন জানি একটা মায়া অনুভব করতাম।
কিছুটা পাগল কিসিমের লোক। আমাদের বাজারে যেদিন থেকে এসেছে সেদিন থেকেই সবার প্রিয় পাত্র হয়ে গেলেন। রহস্য আসলে মায়াবী মুখ আর ভুবন ভুলানো হাসি। তার আগমনটাও ছিলো খুবই ব্যাতিক্রম।
ডাক দিয়েছেন দয়াল আমারে রইবোনা আর বেশীদিন তোদের মাজারে।
--- ঠিক এই গানটি বেহালায় বাজিয়ে লোকটির আমাদের বাজারে প্রবেশ করে। অজস্য উৎসাহী লোক তার পিছু নিয়েছে। সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই। তার দৃষ্টি সেই দিগন্ত আছড়ে পড়া কোন এক জায়গায়। আমাদের বাজারের মাঝখানে একটা পুরাতন বটগাছ ছিলো।
লোকটি সেই বটগাছের নিচে বসে পরলো। আমরা সবাই তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছি। লোকটিকে অনেকেই অনেক প্রশ্ন করলো, লোকটি শুধু হাসে। সবাই বলতে লাগলো পাগল। আমার দিকে বেশ কয়েকবার তাকালো এবং মিটিমিটি করে হাসলো।
আমি সারারাত লোকটির কথা ভেবেছি। তার ভুবন ভুলানো হাসি আর সাদা-পাকা দাড়ি কিছুতেই ভুলতে পারছিলাম না। সকাল হতেই আমি দৌড়ে বটগাছটির নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম। লোকটি বেহালার তারে টুংটাং আওয়াজ তুলছিলো। আমি ডাক দিলাম।
আমার ডাকে লোকটির ধ্যান ভেঙ্গে গেলো। আমাকে দেখেই হাসলো, কাছে ডাকলো। আমি গিয়ে উনার পাশে বসলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম কিছু খেয়েছেন। আবাও সেই হাসি।
আমি উনাকে বললাম আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসছি। বাসা থেকে খাবার দিয়ে আসলাম। লোকিটর সাথে আমার ভালো একটা খাতির জমে গেলো।
একদিন আমাকে বললো আসো তুমাকে আমি একটা জিনিস দেখাই। আমি বললাম কি জিনিস।
আমাকে বললো তাহলে আমার সাথে বটগাছে উঠো। আমি উনার পিছনে পিছনে বটগাছে উঠলাম। উনি একটা গর্ত থেকে দুইটি সাদা পেঁচার বাচ্চা এনে দেখালো এবং বললো সবাই সাদা প্যাচা দেখেনা, দেখে শুধু ভাগ্যমানরা। উনি বাজারে আসার পর থেকেই বাজারে চুরি-ডাকাতি বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। আমাদের বাজারে আগে কিছুদিন পর পর চুরি ডাকাতি হতো।
লোকটি মাঝে মাঝেই গভীর রাতে চিৎকার করে কাঁদতো আর বেহালায় একটি করুন সুর তুলতো। সেই বেহালার কান্নায় আমার ঘুম ভেঙ্গে যেতো। আমিও যেনো সেই বেহালার সুরে ভেসে যেতাম। একদিন আমি উনাকে সন্ধার সময় বললাম আচ্ছা আপনার কিসের এত দুঃখ আমাকে বলতে হবে। উনি হাসে।
আমি উনার সাথে রাগ করলাম। ফলে সে আমাকে বললো ঠিক আছে কালকে সকালে শুনাব।
আমার সারারাত ঘুম হলোনা। ঐ দিনরাতে উনার বেহালার সুরও বাজলোনা। আমি উৎকন্ঠিত হয়েই সকালে সেই বটগাছের নিচে গেলাম।
গিয়ে দেখি উনি নেই। আমি সারাবাজার তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম কিন্তু সেই বেহালা বাজানো লোকটাকে আর পেলাম না। আমি সারাদিন কান্না করলাম। বটগাছে উঠলাম কিন্তু সেই সাদা প্যাঁচার বাচ্ছাগুলোও আর দেখলাম না।
এরপর থেকেই আমি প্রায়ই রাত্রে উনার সেই বেহালার সুর শুনতাম।
কিন্তু উনাকে আমি আর কোনদিন দেখি নাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।