আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবারো হরতাল এবং বিশ্বজিৎ এর কাছে এক বন্ধুর লেখা চিঠি(কাল্পনিক)

যারা অসংখ্য মানুষের ভালবাসা অর্জন করে তারা হলো সৌভাগ্যবান, আর যারা মানুষকে ভালবাসতে পারে তারা হলো আকাশের মতো মহান। আমি কোন যোগ্যতা ছাড়া অকারণেই খুব সৌভাগ্যবান, তাই এখন স্বপ্ন দেখি আকাশ হবার... দোস্ত, বিপিএল টা দেখে যেতে পারলি না। খেলা দেখতে দেখতে তোর কথা খুব মনে পরছিল। তাই লিখতে বসলাম। কালকে আবার হরতাল।

সরি দোস্ত,মন খারাপ করিস না, তোকে খুনের বিচারের দাবিতে কোন হরতাল ডাকা হয়নি। তুই তো মারা যাবার আগে কোন পলিটিক্স করতে পারিস নি। একটু বুদ্ধি করে মারা যাবার আগে কোন দলের পক্ষে যদি কথা বলে যেতে পারতি,দেখতি তোকে নিয়ে কতো মাতামাতি হয়। সরকারি দল এর পক্ষে বলে গেলে তোকে “দেশপ্রেমিক-টেমিক” টাইপের খেতাব দিয়ে দিত। বড় বড় নেতারা প্রাডো গাড়ীতে পতাকা টানিয়ে তোর বাসায় যেত,ছলছল চোখে বিবৃতি দিতে ক্যামেরার সামনে,৪৮ ঘন্টার মধ্যে কিছু ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়ে যেত।

আর যদি বিরোধী জোটের পক্ষে বলতি,তোর কাঁটা ছেড়া লাশটাকে মাথায় তুলে মিছিল হতো,লাগাতার হরতাল চলতো,আরো ভাংচুর হতো,ওদের নাগরিক অধিকার আদায় হতো। হয়তো সেই মিছিলের পর ওদের অধিকার আদায় করতে গিয়ে আরো কিছু নিরীহ বিশ্বজিৎ বলি হতো। তুইও কিছু সংগী পেতে পারতি। কি আর করা। যা হয়নি তা নিয়ে আফসোস করে কি হবে?শোন দোস্ত,তুই তো হিন্দু ছিলি,পুনর্জন্মে বিশ্বাস করতি।

আবার যদি জন্মানোর সুযোগ পাস সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করিস যেন সাধারণ হয়ে আর না জন্মাতে হয়। তুই যে আর বাঙ্গালী হয়ে জন্মাতে চাস না তা তো বোঝাই যায়। তাও যদি বাংলাদেশে জন্মাতে চাস তবে জীবনানন্দ বাবুর শঙ্খচিল-শালিক হয়ে আসিস। নিজের মৃত্যুর ভিডিওটাতো দেখে যেতে পারলি না, আকাশে উড়ে উড়ে দেখতে পারবি কি ভাবে ধাওয়া করে টেনে হিচড়ে লাঠি,চাপাতি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে ওরা মানুষ মারে। চাইলে উড়ে যেয়ে দেখে আসতে পারবি ওদের বাবা-মার পরিচয়।

দেখে আসতে পারবি ওদের ভাই-বোন-স্ত্রী-সন্তানদেরকে। জানি তাদের জন্য তোর করূণা হবে,পশুর সাথে যারা বাস করে তাদের তো দেখলে করূণা হবেই। যদি এই দৃশ্য দেখলে খুব বেশি কষ্ট লাগে তাহলে আরেকটা মজার দৃশ্য বলতে পারি। শকুন হয়ে তুই দেখিস যখন দশ জন নরপাপী রক্তের নেশায় মাতাল হয়ে ওঠে তখন শত শত লোক কত শখ করে ভিডিও করে। আগের দিনের ওয়েস্টার্ন গল্পগুলোতে যেমন কাউকে প্রকাশ্যে ফাসী দেয়া হলে সবাই বিকৃ্ত উল্লাসে হুমড়ি খেয়ে পরত, ঠিক সেরকম।

আবার জন্ম নিতে বেশি দেরী করিস না,সামনে অনেক রক্তগঙ্গা বইবে,মিস করিস না। তবে কবিতার মতো এদেশকে ভালোবেসে আবার আসতে তোকে বলছি না। কি করে বলি বল? একটা কথা বলে শেষ করি। আমি যখন প্রথম তোকে হত্যার ভিডিওটা টিভিতে দেখি,তখন অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম। মাঝখান থেকে খবর দেখছিলাম তো,প্রথম অংশটুকু দেখতে পাই নি।

তোকে তো কখনো লাল শার্ট পরতে দেখিনি,তাই হঠাৎ চিনতে পারিনি। পরে আবার দেখে বুঝলাম তোর শার্ট লাল ছিল না,অন্য রং এর ছিল। তোর শরীরে এত রক্ত ছিল জানতাম না তো। কি অদ্ভুত টকটকে তাজা লাল রক্ত। আচ্ছা,তোর অনেক কষ্ট হচ্ছিল না রে?ব্যথায় না অভিমানে?কাদের প্রতি অভিমান হচ্ছিল বেশি,ওই জারজগুলোর প্রতি;নাকি তোর প্রবল আকুতি স্বত্ত্বেও আমরা যারা তথাকথিত সাধারণ জনগণ ঝামেলা এড়াতে তোকে বাঁচাতে যাই নি তাদের প্রতি?রাগ রাখিস না দোস্ত,অভিমান করিস না,তুই তো চলে গেছিস রাগ-অভিমানের উর্ধ্বে।

পারলে আমরা যারা রয়ে গেলাম তাদেরকে কিছুটা করুণা করিস। আর...পারলে ক্ষমা করিস। ইতি--তোর এক অচেনা বন্ধু ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।